নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত - মায়াজম

Breaking

২৪ জানু, ২০১৬

নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত

                                              বীভৎস কথা













তাকাতে পারছিলাম না। মা কে বার বার বলে চলছিলাম, “ভয় করছেঅরুণ বরুণ কিরণমালাসিনেমা টার নাম। এখনও বীভৎস কিছু থেকে বাঁচবার জন্যে চোখ খুলে রাখতে পারি না।কিন্তু এখন আর পালিয়ে থাকতে পারছি কই। বিষাক্ত ,বদ্ধ,দগ্ধ, চারিদিক। সেটা যাপন করতে হয়। রোজ হয়ত আগেও এটা ছিল। মানুষ কে যুদ্ধ দেখতে হয়েছে।খাদ্যহীন, নিরাপত্তা হীন,হয়ে মৃত্যু কে পাসে নিয়ে নিয়ত বেঁছে থাকতে হয়েছে।কিন্তু আজকাল বড় বেশী বীভৎস রস মানুষের হৃদয় কে পান করতে হয়। সেটা অদরকারী। আমরা আসল সমস্যা, সত্যি কারের দায়িত্ব থেকে অনেক অনেক দূরে যাচ্ছি। আর হলাহল তৈরি করে পান করছি। দিদার কাছে শোনা একটা বীভৎস কথা। বাঙালি তখন সদ্য উদ্বাস্তু ।লালগোলার সীমান্ত পার করছিল সদ্যজাত সন্তান নিয়ে বউটি। পায়ের নীচে রোদেপোড়া আগুন সাদা বালি। সদ্য মা হওয়া বউটি বাচ্চা টিকে বালিতে ফেলে দেয় । তার ওপর উঠে দাঁড়ায়। শারীরিক কষ্ট মানুষ কে কত টা বীভৎস আর স্বার্থপর করে তোলে।আদতে আমরা খুব নির্মম। যুদ্ধ, সন্ত্রাস, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসব বড় আকারে এসে উৎসবতৈরি করে।
কিন্তু এছাড়াও আছে। যেমন, গণপিটুনি, গণধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, আরও হাজার হাজার পদ্ধতি আর তার প্রয়োগ। আবার তার ভিডিও করণ। পাড়ার ইস্কুলের মাস্টার দোষ করেছে । প্যাদাও। ছবি তোলও। অপূর্ব উৎসব। সিরিয়াল দেখে দেখে ক্লান্ত চোখ কিছু রক্ত দেখুক। অনেকে মুণ্ডছেদের ভিডিও ক্লিপ নিজের মোবাইলে রাখে। ৭০ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়ি কে ভয়ঙ্কর ভাবে মারার ভিডিও মোটামুটি সাইনি লিয়নের মতো ফেমাস। আসলে আঁচরে কামড়ে মারার ইচ্ছা সক্কলের মধ্যে আছে। আছে? ছিল। আর থাকবেও। না হলে সিনেমায় বিস্ফোরণের দৃশ্য গুলোতে মানুষ এভাবে আনন্দের পায় কি করে।যে নায়ক হয় তাকে আরও ভীষণ ভাবে প্রতিশোধ নিতে হয়। সিনেমায় সবচেয়ে বেশী মানুষের মনোরঞ্জনের মাপকাঠিতে একটা চরম পাল্টা বিধ্বংসী প্রতিশোধ না থাকলে হয় না। সেই জন্যে ওটা থাকবেই। রাখতেই হয়। নাহলে চলে না।ছোটবেলায় অন্তর টিপুনিবলে একটা কথা চালু ছিল। সেটা আবার প্রয়োগ করে নিউজ চ্যানেলরা। প্রিয় জনের মৃত্যু নিয়ে হতবুদ্ধি কোন দিন ক্যামেরা না দেখা মানুষ কে জিজ্ঞাসা করে অদ্ভুত সব প্রশ্ন। সুনীল গাঙ্গুলির মৃত্যুর পর স্বাতি দেবীর শোক লাইভ না দেখালে চলে? সবকিছু দেখাতে হবে। পাবলিক দেখতে চায়। সত্যি দেখতে চায়? কি জানি ?
আমিও তো পিশাচ হয়ে যাচ্ছি । আসলে ছিলাম। আরও পরিণত শক্তিশালী হয়ে উঠছি । এই তো সেদিন
উল্টোডাঙ্গারমিও আমরেথেকে দিব্বি কেক কিনে বাড়ী ফিরলাম।দোকানের কাঁচে দুটো ক্ষুধার্ত চোখ দিয়ে সব কেক গুলো স্বাদ নিচ্ছিল বাচ্চা টা। আমার দেশের পথে পথে থাকে তারা। আমি ভাগ দিইনি তাকে আমার উৎসবের। বীভৎস আমি। এটাই আসল সত্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র