অরিণ দেব - মায়াজম

Breaking

৩ আগ, ২০১৫

অরিণ দেব


                                         যৌনতা -সরলতা -গোপনীয়তা ও শিল্প









                    কিছু একটা মনে ধারণ করেছিলাম , তাকে বিশ্বাসযোগ্য করবার জন্য যতক্ষণ না সেই ধারণা অন্যকোন মাধ্যমে চোখের সামনে প্রকাশিত হচ্ছে ততক্ষণ রক্তক্ষরণের বেগটা কম থাকে । যদি সব সত্যি বলতে পারতাম তাহলে সম্পর্কের ভেতর কোন ভগবান থাকত না দ্বিধাহীন বলা যায় ! যৌনতা প্রধানত  অন্ধকারের সম্পদ হয়ে রইল বলে , যৌনতা পশু না ঈশ্বর দেখবার অবকাশ রইল না । যেমন তোমাকে মনে মনে খুন করতে চাইলাম , আর দেখলাম তুমি দিব্যি বেঁচে রয়েছে , অথচ তুমি খুন হয়েছে আমার মনের ভিতর , তোমার দেহের ওপর পা রেখে আমার উল্লাস দেখছো  না বলেই হরিকীর্তন করছি আর তুমিও মোহন্ত ভেবে নিয়ে নমস্কার করে গেলে । ব্যাপারটা সেরকম আর কি ! 
যৌনতা অন্ধকারের কাজ হয়ে রয়েছে আদিঅন্ত কাল থেকেই , অন্ধকার ও দু'ভাবে সৃষ্টি হয় , এক - পরিবেশগত অন্ধকার , দু'ই মনের অন্ধজগত ।  পরিবেশের অন্ধকার যদিওবা আলোকিত করা সম্ভব , কিন্তু মনের জগতে রয়ে যায় নিরবিচ্ছন্ন অন্ধকার ।  মনের অন্ধকার জগতে মানুষ প্রধানত রিপু তাড়িত ভয়ংকর হিংস্র । সেইজন্যই তীব্র যৌন  অঙ্গগুলো নারী \ পুরুষ ঢেকে রাখেন , লুকিয়ে রাখেন , কেনোনা সেগুলি সর্বদা অবিশ্বাসে ভোগে ।
মানুষের ঘ্রাণ শক্তি পশুর মত ধারালো নয় , সেহেতু চোখ বেঁধে দিয়ে যৌনতার সম্মুখে ছেড়ে দিলে তাদের , দেখা যাবে সম্পর্কের কাঠামো ভেঙে পড়ে আছে মা , বোন , পিতা , সন্তানের দেহ । মানুষ শুধুই অপর মানুষের সামনে সৎ থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে ।  সামনের মানুষের সামনে যতখানি সৎ থাকে সে ততোখানি অসৎ থাকেন নিজের কাছে । আর ঐ অসৎ জায়গার মধ্যে থাকে তার সমস্ত যৌন সম্ভাবনা ।
যৌন সম্ভাবনা আবার নির্ভর করে স্থান সময় পাত্রের ওপর , তিনটে বস্তু যদি কখনো এক বিন্দুতে উপস্থিত হয় , সেক্ষেত্রে কোন সম্পর্ককেই যৌনতার ঊর্ধ্বে রাখতে পারা মুস্কিল । 
আমরা প্রকাশ্যে অন্ধকার নিয়ে খেলতে চাইনা বলেই - অন্ধসত্য চিরকাল অন্ধকারে থাকে , যদিও বা কোথাও প্রকাশ্যে আসে কোথাও আমরা তাকে গর্হিত কাজ হিসাবে গণ্য করতে থাকি । 
যৌনতার উপরে সমাজের বাধানিষেধ সত্যর বিপরীতে হেঁটে অভিনয়ের মধ্যেই জীবনটাকে কাটিয়ে দেওয়ার একটা প্রয়াস , এবং এটাই সর্বজনীন ভাবে গৃহীত হয় । অন্যর কাছে নিজেকে সৎ প্রমাণিত করার কোন রাস্তা নেই বলে ।
শিবের গীত গেয়ে ফেললাম শুরুতেই । যৌনসম্ভাবনা মানুষের দেহ-মনের সঙ্গে এমনভাবে জুড়ে রয়েছে চেতন- অবচেতন স্তরে যে সেখানে হাত দেয় কার সাধ্য ! মানুষের বাইরের রূপ দেখি আমরা , আর সৃষ্টিশীল মানুষের শিল্পকর্ম দেখি , কিন্তু ওই শিল্পীর শিল্পীনামের খোলসের  অন্তরালেই থাকে তার কামজগত মেঘে ঢাকা তারার মত । 
আমরা যৌনতা নিয়ে আলোচনা করতে কুষ্ঠরুগীর মত আড়ষ্ট থাকি । কেমন যেন কাম ও কামজগত কোন গর্হিত ব্যাপার । সনাতন আমরা কামকে বা যৌনতাকে রেখেছি দূরের পরিযায়ী করে , নিদিষ্ট একটা সময়ে সে আসে , চলে যায় ...
আমি এই নিবন্ধে চেষ্টা করব , মানুষের , শিল্পীর কামমুখোশ খুলে আমার আপনার মত কামদাস শিল্পীর ছবি আঁকতে , আপনারা নিশ্চয় সেই সময়টুকু দেবেন । 

0২--

শিব- সতীর বিয়ে শুরু হয়েছে স্বর্গীয় পরিবেশে  । মহাধুমধাম ।  স্বর্গের দেব-দেবী সকলেই উপস্থিত বিবাহবাসরে  । বিয়ের পৌরোহিত্য করছেন স্বয়ং ব্রহ্মদেব । বেশ একটা ঐতিহাসিক বিবাহবাসর । সতী সেজেছেন অপূর্ব সাজে । সারা গায়ে মায়াবী  পোশাকের রঙ পঞ্চমীর অন্ধকারে জোনাকির মত ঝিকমিক করছে । দেবতারা চোখ ফেরাতে পারছেন না সতীর দিক থেকে । পৃথিবীর সমস্ত রূপ যেন কোন শিল্পী এঁকেছেন তার শরীরে । দেবতাদের কেউ কেউ   মনে - মনে ভাবছেন , - পাগলটা অবশ্য পেয়েছে খাটি বউ  । 
ওইদিকে সতীর সামান্য শরীরী অঙ্গ  অবগুণ্ঠনহীন , হরিণী  মেদের মত সুস্বাদু ।   কোমরের দুধ-ফর্সা নিটোল খাঁজ এর দিকে তাকিয়ে দেবতাদের মুখে বাংলার বড় একটা  'থ' । ব্রহ্মদেব  একবার আড়চোখে দেখে নিলেন , দেখে নিলেন নয় , চোখ দিয়ে গিলে নিলেন অন্তরে ।  হায় রে বুকের ভেতর টা খা খা রোদ্দুরের মত তাপছে । কেমন যেন নিঃস্ব হয়ে উঠছেন ব্রহ্মদেব  । কতকাল উপোষী শরীর থেকে । কতকাল এমন শরীরের সামনে দাড়ায় নিই তিনি । ভাবছেন ,  হতভাগা শিব কিনা এমন সেক্সির  সঙ্গে রতি-বিহার করবেন ? ভাবলেই ব্রহ্মার গা পিত্তি জ্বলতে শুরু করে । না হ , সতীকে যে পেতে হয় , মন যে আর কথা শুনছে না । এদিকে যে নীচের অঙ্গ কলাগাছের মত সেকেন্ডে -সেকেন্ডে   বর্ধিত হচ্ছে  । নাহ , মান সম্মান ইজ্জত  কি তবে  বিসর্জন দিতে হবে আজকে ! কিন্তু ভাল করে যে সতীর মুখ দর্শন ই হল না , উপায়  ? সতীকে যে ছুঁয়ে দেখতে হয় ! এমন শরীরের থেকে কি দূরে সরে থাকা যায় ?  করলেন বটে করলেন তিনি । বিবাহ যজ্ঞে ব্যবহিত  তাজা কাঠ পাতা ইত্যাদি দিয়ে আচ্ছা করে ধোঁয়া উৎপাদন করলেন , আর ধোঁয়ার অবকাশে  সতীকে আচ্ছা করে দেখে নিলেন ছুঁয়ে-টুয়ে । কিন্তু অঙ্গ যে কথা শুনচেক  লাই । কেমন গুমরে উঠছে শরীর । অস্থিরতা । যা ! শেষমেশ  বীর্য স্খলন যে হয়েই গেল । ভারি লজ্জার ব্যাপার বটেক । করলেন কি বেদীতে স্খরিত বীর্যের ওপর বালি চাপা দিলেন । পরবর্তীতে নাকি  সেই বীর্য থেকে জন্ম নীল নাকি ৮৮ হাজার সন্তান , যারা বালখিল্য মুনি নামেই প্রসিদ্ধ । ( স্কন্ধ পুরাণ নাগর খণ্ড ) 

বন্ধুরা , ভাবছেন দেবতার জন্ম বা  পুরাণ নিয়ে এসেছে আপনাদের সামনে  বক্তৃতা করব ?  পুরাণের নিয়ে আলোচনা করব  ? এমনটি নয় । দেবতা ছিলেন আছেন কিংবা নেই এই নিয়ে আমার কোন বক্তব্য এখানে পেশ করতে চাইছি না । এই নিয়ে সমাজবিজ্ঞানে এত কথা বলা হয়েছে যে যা বলব তাই বাহুল্য মনে হবে । আমার আলোচনা যারা এসব কথা লিখেছেন তাদের মনস্তত্ত্ব , শিল্প সাহিত্য কোন ঈশ্বরলব্ধ ফসল নয় যে সমাজে টুপটাপ ঝরে পড়বে বৃষ্টির মত । 
আমি ধরতে  চাইছি মনের একটা বিশেষ দিক । মনের একটা অন্ধকার দিক । যেদিন অন্ধকার দিক আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু আমরাও হয়ত সঠিক তার অবস্থান বুঝি না ।  আমরা সত্যি কথা বলতে বড্ড ভয় পায় , মনের সব সত্যি যদি বেরিয়ে আসে তাহলে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন এই সত্য বুঝে আমরা চেপে যায় সত্য । কারণ আমরা জানি সত্যর কোন মুখোশ থাকে না ।
''যৌনতা , সরলতা ও গোপনীয়তা ও শিল্প '' ওপরের শিরোনাম দেখেই হয়ত বুঝতে পারছেন আমাদের চলা যৌন গ্রহের পাখি নিয়েই । আমরা গল্প করব , কথা বোলব , কোন গুরুগম্ভীর ভাষণ দেওয়া আমার দেওয়া সম্ভব নয় দোস্ত । আসুন এবার এই সময়ের একটা সিনেমার গল্প করি । 
ব্যাটা সিনেমার নায়ক ব্যাংক কেরানি , কিন্তু সখ লেখক হবেন , ( আহা কি সখ ) ।  বেচারা লেখক  অফিস খাতায় পুরো আস্ত উপন্যাস লিখে ফেললেন  ।  যথারীতি বসের হুমকি , এসব চলিবে না , নায়ক বাবু চাকরি নট করে দিয়ে পাকাপাকি লেখক হতে চললেন ।  বললেই তো আর হয় না , লেখক হওয়া কি এতই সহজ !  কোন প্রকাশনী তার উপন্যাস ছাপতে নারাজ , মাথায় হাত ! কি হয় কি হয় ! 
এক প্রকাশনী থেকে সৎ পরামর্শ পেলেন , সোজা বাংলায় বললে বলা যায় বললেন 'চটি' গল্প ( পর্ণ )লেখা শুরু কর  ।  লেখকের মাথায় হাত ! কী লিখবেন তিনি ? এ-বিষয়ে চরম অজ্ঞ । নায়ক কোন উপান্ত না দেখে  লেখা শুরু করলেন । 'মস্তরাম' ছদ্মনামের আড়ালে তার মহান কীর্তি লিখতে লাগলেন ।  অচিরেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠলেন ।  বেরুলেই বাজারে হট কেক , বিকিয়ে যায় নিমেষে । নায়ক মহাশয় মনের অন্ধকারে যা যা আছে মনের সুখে লিখছেন , বাদ যাচ্ছে না নিজের বউ এর সাথে পড়শি দেওরের ঘনিষ্ঠতা মনে এঁকে লেখা ,  বা পাশের বউদির সাথে নিজের যে ইচ্ছা গুলো এতদিন ঘুমিয়ে ছিল কল্পনায়   তাকে গল্পের আকারে ফুটিয়ে চলছে । 
এর মধ্যে স্বনামে ও তার সামাজিক উপন্যাস ছাপা হয়েছে , অবশ্য সেটার কোন বিক্রিবাটা  নেই , চটিতেই তিনি  বিখ্যাত  । যে প্রিয়  বন্ধু তার উপন্যাস পড়ে নিজের কামের উত্তেজনা উপভোগ করেন   বন্ধুর কাছেই একদিন ধরা পড়ে যায় , সমাজ তার থেকে দূরে সরে যেতে থাকে ।  ফ্লিম মস্তরাম ,  ২০১২  ।
এই সিনেমায় কী আছে  ভাবতে চেষ্টা করেছি , অল্প বুদ্ধি দিয়ে ধরবার চেষ্টা করেছি শিল্পের নাম দিয়ে আমাদের থেকে যাকিছু লিখিয়ে নেন , আঁকিয়ে নেন তার মধ্যে কি শিল্পী থাকেন ? 
দুটো ঘটনা , দুটো পেক্ষাপট  । এর অনেক গুলি সাইড এফেক্ট আমরা চাইলে আবিষ্কার করতে পারি । 
১নং - শিল্প সাহিত্যে(  ললিত কলা) কার জন্য লেখা হয় 
২ নং- যা লেখা হয় তার মধ্যে লেখক নিজে কতটা থাকেন 
৩ নং- নারীকে পুরুষ আদিম কাল হতেই ভোগ্য কল্পনা করে এসেছেন , তার প্রতিফলন নানা ভাবেই শিল্পে ও প্রতিফলিত হয়ে উঠেছে । 
৪ নং - প্রাচীন কাল হতেই শিল্পে অবাদ যৌনতার ঝুমচাষ ।
প্রাচীন ধর্মীয় সাহিত্যে তাকালে আকছার অবাদ যৌনতার ছবি ভেসে ওঠে । কাম ব্যাপারটা মানুষের যেমন সহজাত অধিকারের জিনিস এবং কাম এর পরিচালক পুরুষ ,  নারী সেখানে অনুঘটক । শরীর শরীর শরীর ছাড়া নারীর মন থাকতে নেই বলে বোধয় দেখা যাক নারী যেখানে স্নান করে সেই দৃশ্যে পাখি ও  চোখ ঘুরিয়ে নেয় , কিন্তু   শিল্পী স্তন ধরে গ্রীবা শিরদাঁড়া হয়ে নিতম্বে বা যোনীতে এসে শেষ করে করেন । 
আসুন  প্রাচীনতম  সাহিত্যে আরও একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ...
প্রথমেই ঢু মারব বহুল প্রচলিত রামায়ণ এ , যেখানে অশোক বনে সীতাকে দেখে কামমত্ত রাবণ বলছেন - 
দণ্ডকারণ্যে সীতাকে প্রথম দেখার পর রাবণ বলছেন--
‘সমা:শিখরিণা:স্নিগ্ধা: পান্ডুরা দশনাস্তব।
বিশালে বিমলে নেত্রে রক্তান্তে কৃষ্ণতারকে।।
বিশালং জঘনং পীনমুরু করিকরোপমৌ।
এতাবুপচিতৌ বৃত্তৌ সংহতৌ সম্প্রাগল্ভিতৌ।।
পীনোন্নতমুখৌ কান্তৌ স্নিগ্ধতালফলপমৌ।
মণিপ্রবেকাভরণৌ রুচিরৌ তৌ পয়োধরৌ।।’
( অরণ্য কান্ড- ৪৬ঃ ১৮-২০)
অর্থাৎ ‘তোমার দশনরাজি সমান সুগঠিত চিক্কণ ও শুভ্র, নেত্র নির্মল ও আয়ত, অপাঙ্গ রক্তাভ, তারকা কৃষ্ণবর্ণ। নিতম্ব বিশাল ও স্থুল, উরুদ্বয় হস্তিশুণ্ডের ন্যায়। তোমার ওই উচ্চ বর্তুলদৃঢ় ও লোভজনক স্তনযুগল উত্তম মণিময় আভরণে ভূষিত। তাদের মুখ পীনোন্নত, গঠন স্নিগ্ধ তাল ফলের তুল্য সুন্দর।’(অনুঃ রাজশেখর বসু)

 সীতার যৌন  আবেদনময়ি   দেহরূপের বর্ণনা করা হয়েছে রাবণের চোখ দিয়ে এর জন্য শাবাশ  দিতে হয় লেখককে । স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন পুরুষের যৌন চেতনার মধ্যে নারীর দৈহিক সৌন্দর্য ( সৌন্দর্য বলা কি চলে?  ) অনেকটা অংশ নিয়ন্ত্রণ করে তার শিল্পকলায় । 
 তুমি নারী শ্যামা হও বা  সীতা হও তোমার প্রধান গুণাবলি তোমার শরীর , তোমার শেষতম গুণাবলি তোমার শরীর । শরীরী ছাড়া তুমি একটা কলাগাছ । 
তাই সীতে হোক সতী হোক তারা মানুষ নন , তারা নারী নন , তাদের প্রধান পরিচয় তারা পুরুষের লিঙ্গ ধারণে সক্ষম , তাদের প্রধান পরিচয় উন্নত স্তন , পাহাড়ি নিতম্ব , আর অপরাজেয় সুদীর্ঘ একটা যোনিগহ্বর যখন সৃষ্টি কর্তা দিয়েছেন তখন নারী তুমি পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হও , নারী তুমি বীর্য গ্রহণে সক্ষম হও ।
পুরুষের লিঙ্গ যতটা যোনি অন্ধকারে প্রবেশ করবে , স্তন যতটা সুমেরু পর্বতের ন্যায় খাড়া অবস্থান করবে , নাভি যতটা চুমু-গহ্বর সৃষ্টি করতে পারবে , গ্রীবা যতটা আকর্ষণীয় মরালীর মত সামনে এগিয়ে থাকবে তত দক্ষ তুমি , তত তুমি উত্তেজক , তত তুমি শিল্পে সাহিত্যে দামী ।
শিল্প সাহিত্যে চিত্রকলা ভাস্কর্য ইত্যাদি ইত্যাদি কাদের জন্য তৈরি হয়েছে ? শিল্পীর জন্য সমাজের পাঠকের জন্য না কিছু করার নেই নেই শিল্পীর জন্য । শিল্পী যা সৃষ্টি করছেন তার মধ্যে নিজের অবস্থান ই বা কি এসব নিয়ে ধীরে ধীরে আলোচনায় যাব তার আগে আর একটা কাব্যগ্রন্থ মেঘদুতম এর দিকে তাকাই । --

তন্বী শ্যামা শিখরিদশনা পক্কবিম্বাধরোষ্ঠী
মধ্যে ক্ষামা চকিতহরিণীপ্রেক্ষণা নিম্ননাভি:।
শ্রোণীভারাদলসগমনা স্তোকনম্রা স্তনাভ্যাং
যা তত্র স্যাদ্ যুবতিবিষয়ে সৃষ্টিবাদ্যেব ধাতু:।।
বুদ্ধদেব বসু শ্লোকটির অনুবাদ করেছেন এভাবেঃ-
তন্বী, শ্যামা, আর সুক্ষদন্তিনী নিম্ননাভি, ক্ষীণমধ্যা,
জঘন গুরু বলে মন্দ লয়ে চলে,চকিত হরিণীর দৃষ্টি
অধরে রক্তিমা পক্ক বিম্বের, যুগল স্তনভারে ঈষৎ-নতা,
সেথায় আছে সে-ই, বিশ্বস্রষ্টার প্রথম যুবতীর প্রতিমা।
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় অনুবাদ করেছেন
হীরকদশনা তন্বী পক্কবিম্বাধরা।
শ্যামা মধ্যক্ষামা নিুনাভি মনোহারা।।
চকিত হরিণী প্রায় চঞ্চল নয়না।
নিবিড় নিতম্ব ভরে মন্থর গমনা।।
স্তনভারে আছে দেহ স্তোক নম্র হয়ে।
বিধি আদ্য সৃষ্টি তিনি যুবতী বিষয়ে।।

যুগল স্তন ,  নিতম্ব ,  ইত্যাদি ছাড়া কোন প্রেমিকার  চিত্রাঙ্কন যেন অসম্ভব অসম্ভব পর্যায়ের , যেন নারীর যত সৌন্দর্য সব লুকিয়ে রয়েছে নারীর শরীরী ক্ষেতে । 
প্রাচীন কাল থেকেই দেখা যায়  শিল্পের নামে নারীর দৈহিক গঠনের বর্ণনা দিয়ে  শিল্পের নামে চালাতে চাওয়া   নিছক সুপ্ত বা ঘুমন্ত  যৌনচর্চা ছাড়া আর কিছুই নয় । যৌনচর্চা বললে অনেকেই ক্ষেপে উঠবেন জানি । 


০৩ -- 

 শিল্প সাহিত্যে কাদের  জন্য লেখা হয়: -
শিল্প - সাহিত্য কাদের জন্য লেখা হয় এব্যাপারে আমার কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা আছে । 
 যতক্ষণ কোনকিছু লিখলাম , বা  কিছু সৃষ্টি করলাম সেটাকে বাইরে না আনা পর্যন্ত শিল্প হয়ে ওঠে না । তাই তো হাজার হাজার ঘুমন্ত পাণ্ডুলিপি শিল্প হতে পারে নি । 
কোন শিল্পী যা সৃষ্টি করছেন সেটা কার বা কাদের জন্য ? এই প্রশ্নের বহুবিধ মানে থাকে । আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে শিল্পী সর্বপ্রথম নিজের জন্যই সৃষ্টি করেন , নিজেকে খুশি রাখবার জন্যই সমস্ত শিল্পের উদ্ভব হয়েছে , ধিরে ধীরে তা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করেছে পরে । 
অনেক সময় হয়েছে কি , আমি নিজের মনে কিছু সৃষ্টি করলুম , তার গ্রহণযোগ্যতা বা পাঠক বা সমজদারের চোখের দিকে না তাকিয়েই করে গেলাম  , সেটা বাইরে এলো , হয়ত হিট হল বা ফ্লপ হল , হয়ত পাঠকের গ্রহণ  গ্রহণ করল বা তাকে  বাতিল করল , সেটা বড় কথা  নয় ,  যখন শিল্পী সেটা লিখে আনন্দ পাচ্ছেন  তখন বুঝতে হবে সেই শিল্পের মধ্যে নিমজ্জিত থেকেই রচিত হয়েছে শিল্প শিল্পীর দ্বারা । 
শিল্পে যৌন চেতনা আদিঅন্ত কাল থেকে চলে আসছে , কারণ শিল্পীরা লিখছেন আর পাঠক মজা লুটছেন , দুজন দুজনকে চেটেপুটে খাচ্ছেন , এই খাওয়াটা হিট হয় তাহলেই দেখা যাবে শিল্প সাধনা উন্নতস্তরে উঠে গেছে । 


পরবর্তী সংখ্যায় --- 

1 টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র