পারমিতা ভট্টাচাৰ্য

মায়াজম
0

   নোটবুক




ঠাৎ কালো হয়ে এল আকাশ। উড়নচণ্ডী বাতাস ধুলো উড়িয়ে দস্যিপনা করছে। সেই দাপটে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। আলো-আঁধারি পৃথিবী রহস্যময়, নন্দলাল বসুর ভুসো-কালিতে আঁকা চালচিত্র, তার মধ্যে বসে আছি, একা। একাই তো! একা মানুষের বুক এত ভারী হয়ে আসে কেন? কী জানি!
অনেকদিন বইয়ের সঙ্গে সারাদিন কাটানো হয় না। আগে অফিস থেকে ছুটি নিতাম, সারাদিন শুধু বইয়ের সঙ্গে কাটাব বলে। এখন দিনে দিনে অফিসে লোক কমে আসছে, কাজের চাপও বাড়ছে। তাই আজকাল সেভাবে দিন কাটানোর কথা চিন্তা করতে পারি না। আজ অবশ্য রবিবার। সকালে মালতী রুটি-তরকারি-চা করে, একেবারে দুপুরের রান্নাও সেরে দিয়ে গিয়েছে। বিকেলে এসে রাতের রান্না করবে। একা মানুষের খাওয়া, ঝামেলা কিসের!
দমকা হাওয়ার চোটপাট বেশ খানিকটা থিতু হয়েছে। শুরু হয়েছে বৃষ্টি। জানালার পাশের কাঁঠালগাছে বেশ কয়েকটা অর্ধস্নাত পাখি আশ্রয় নিয়েছে, এর মধ্যে দলছুট একটি বুলবুলি আমার জানালায় বসে ডানা ঝাপটাচ্ছে। আমাদের হৃদয়েরও ডানা আছে, হৃদয় যখন ভিজে ভারি হয়ে যায় তখন এভাবেই ডানা ঝাপটে বাড়তি আবেগ ঝেড়ে ফেলতে হয়।
(দুই)
তাকে সারি সারি বই সাজানো। বইগুলোর গায়ে অনেকদিন হাত দেওয়া হয়নি। ঝুল জমেছে। সেগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে একটা কাপড়ের বাঁধাই বই ... মনে আছে, মা ছিটকাপড় দিয়ে বইটা হারুকাকার দোকান থেকে বাঁধাই করে এনেছিলেন। ভেতরে লেখা, ‘আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানাধিকারী প্রত্যয় মিত্র-কে শুভেচ্ছা ...’। সেই চল্লিশ বছর আগের একটি দিনের স্মৃতি হুড়মুড় করে চেপে ধরল আমাকে। স্মৃতি যেন পাথরের বাটি, যত ঘষবে ততই চকচক করবে। গঙ্গার পাড়ে মিলন সংঘ ক্লাবে রবীন্দ্রনজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হয়েছিল। আমি তখন মনে হয় ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমার বিভাগে ‘বীরপুরুষ’ কবিতাটি ছিল। মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম সেই প্রতিযোগিতায়। আমার থেকে মা অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত। আমি জীবনে প্রথম স্টেজে দাঁড়িয়ে কবিতা বলব, মায়ের সেই আনন্দ দেখে কে! আমি ভয় ও নার্ভাস ফিল করছিলাম। যদি মধ্যিখানে ভুলে যাই। মা সাহস দিয়ে বললেন, ভুলবি কেন? আর ভুলে গেলে যাবি। ভুলতে ভুলতে একদিন যে সব মনে গেঁথে যায়--- একথা আর মাকে বলা হল না। এখন ভুলতে চাইলেও কোনও কিছুই ভুলতে পারি না। ইটের গাঁথনির মতো সব খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
(তিন)
কাচে ঢাকা আলমারির কাছে দাঁড়ালে নিজেকে কোনওসময় একা মনে হয় না। বাবা-মা তো আছেই, সঙ্গে আছে আরও কত বন্ধু। আমার কাছে জীবন অনেকটা গঙ্গায় ভেসে চলা কচুরিপানার মতো। ভেসে চলা কচুরিপানা দেখতে আমার ভালো লাগে। কিছু কচুরিপানা দলবদ্ধভাবে ভেসে যায়। কিছু কিছু একা ... সকলের সঙ্গে দূরত্ব মেপে সমান্তরালে ভেসে চলে। আবার কিছু সকলের থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন, স্বতন্ত্রভাবে আগে আগে ভেসে যায় ... পথপ্রদর্শক। এই দৃশ্য আসলে আমাদের সকলের জীবনের প্রতিবিম্ব।
আর এটা ঠিক, সবাই ছেড়ে গেলও স্মৃতি মানুষকে ছেড়ে যায় না। কিছু স্মৃতি চাক-ভাঙা মধুর মতো, তার মিষ্টি স্বাদ আমাদের জীবনে ছড়িয়ে থাকে আমৃত্যু।
ছোট্ট থেকে বাবা শিখিয়েছিলেন কীভাবে বই পড়তে হয়। বাবার হাত ধরে প্রথম গিয়েছিলাম শিমুলবাড়ি গ্রামীণ লাইব্রেরিতে, পরিচয় হয় শৈলকাকার সঙ্গে। শৈলকাকাকে দেখেছি লাইব্রেরি বন্ধ হওয়ার পর চারটে বই বগলদাবা করে আমাদের বাড়িতে আসতেন। ওই চারটে বইয়ের মধ্যে মায়ের জন্য থাকত একটা কী দুটো বই, বাকিগুলো বাবার ফরমায়েশি। ক্লাস সেভেন-এইট, আমি স্কুল থেকে চলে যেতাম লাইব্রেরিতে। ইচ্ছেমত বই নাড়াচাড়া করতাম। নতুন বই খুলে গন্ধ শুঁকতাম। হরিদেবদা বাবার থেকেও বড় ছিলেন, আমি তাঁকে ‘হরিদেবদা’-ই বলতাম, কারণ বাবা তাঁকে ‘হরিদেবদা’ বলতেন। মাঝে মাঝে আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন কী বই দেখছি সেটা লক্ষ্য করার জন্য। একবার হয়েছে কী, তখন এইটে পড়ি, সবে তারাশঙ্করে হাত দিয়েছি, তক্ষুনি পেছন থেকে বলে উঠলেন, এখনও বয়স হয়নি ওঁর বই পড়ার। আমিও কম না। সঙ্গে সঙ্গে বললাম, আমি পড়ব না, বাবা নিয়ে যেতে বলেছেন। ব্যস, শুরু হয়ে গেল একের পর এক বই পড়া।
(চার)
বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। কিন্তু আকাশ এখনও কালো। মেঘে মেঘে বেলা তো কম হয়নি, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠার মতো। আজ স্নান পরে করব, আগে খেয়ে নিই। মালতী চাইলে রান্নাটা মন্দ করে না, কিন্তু মন থেকে চাওয়াটাই বড়। খুব তাড়াহুড়ো করে সারতে পারলেই হল। ডালে নুন দিতে একদম ভুলে গিয়েছে মনে হয়। যাইহোক, করে তো দিচ্ছে। দশবছর হয়ে গেল ও আমাদের বাড়িতে আছে, মায়ের আমল থেকে। মা থাকতে রান্না করত না। মা চলে যাওয়ার পর বাবা তরকারিগুলো রান্না করলেও ভাত আর রুটি বানিয়ে দিত মালতী। শেষদিকে বাবা রান্নাঘর মুখো হতে পারত না, তখন থেকে মালতী রান্নাঘরের দায়িত্বে। মালতী আমার থেকে অনেক বড়। ওই যে, মা ওকে ‘মালতী’ ডাকতো, সেই শুনে আমিও। ও আমাকে ডাকে ‘দাদাবাবু’ , বাবাকে ‘বড়বাবু’ আর মাকে ‘গিন্নিমা’। ওর ডাকের মধ্যে কেমন যেন মায়া আছে। একটা মানুষ অনেকদিন একটি পরিবারের সঙ্গে জুড়ে থাকতে থাকতে সেই পরিবারের ‘আত্মীয়’ হয়ে ওঠে। শুধু পারল না শ্রীতমা! এতদিন জুড়ে থেকেও জুড়ে থাকতে পারল না। হঠাৎ মূলপ্রবাহ থেকে নদী যেভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে অন্যখাতে বইতে থাকে, ও সেভাবেই আমার থেকে দূরে চলে গেল। আচ্ছা ও কি আদৌ দূরে সরে গিয়েছে? আমি তো ওকে এখনও মনে ধরে রেখেছি। বাহ্যিকভাবে দূরে মনে হলেও আদতে কোনও দূরত্ব নেই ওর আর আমার মধ্যে। মন থেকে সরিয়ে না দিলে সে কখনও দূরে যায় না। তবে এটা ঠিক, ও কি আদৌ জুড়ে ছিল আমার সঙ্গে! আমি শত চেষ্টা করে শেষদিকে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। চিঠির উত্তর পেতাম না ঠিকমত। তখন তো যোগাযোগ এত দ্রুত ছিল না। চিঠিতে লিখে দিতাম দেখা করার দিন-ক্ষণ-স্থান। কলকাতা থেকে রকেট বাসে সারারাত জার্নি করে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেছি, ও আসেনি। অগত্যা রাতের বাসে আবার ফিরে এসেছি, বুক ভর্তি অভিমান নিয়ে। বেশ কিছু বছর পর মিতুলের কাছ থেকে জেনেছি ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন নিউ জার্সিতে থাকে। ওকে আমি কিছুতেই বিশ্বাসহন্তা বলতে পারি না। তখন আমি পড়াশোনা করছি, দূরে থাকি, কথাবার্তা নেই---- এমন লুজ কানেকশনে আর যাই হোক প্রেম-ভালবাসা হয় না। বিয়ের পর ওকে একবার দেখেছিলাম নিলয়ের দিদির বিয়েতে। তাকানো দেখে বুঝেছি, এখনও আমার প্রতি ওর চাপা অভিমান আছে। কলেজে পড়তে যাওয়ার আগে, ও আমাকে একটা বই দিয়েছিল। বইয়ের পাতাগুলো কেমন যেন হলুদ হয়ে গিয়েছে। আচ্ছা, পড়ন্তবেলার সঙ্গে এই হলুদ রঙের ম্যাচিং কি খুব ভাল হয়? পড়ন্তবেলাতে পৌঁছাতেই সব কিছু কেমন যেন হলুদ হয়ে যায়! বইটির ভিতরে লেখা- জানি, কোনও একদিন/ধুয়ে যাবে সব চিহ্ন/তবুও তো হাঁটছি ...। ও কী আগে থেকেই টের পেয়েছিল? তা না হলে এমন লাইনগুলো লিখল কীভাবে?
(পাঁচ)
বাবার বইয়ের আলমারি ছিল পাঁচটা। তার মধ্যে তিন আলমারি বই দিয়েছি বাবার স্কুলে। আমার মনে হয়েছে বাবার স্কুলের ছেলেরাও এই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। তাই বাবা চলে যাওয়ার পর, শিমুলবাড়ি হাইস্কুলের বর্তমান হেডমাস্টার ইন্দ্রনীলবাবু আর ক্লার্ক কনকবাবুকে ডেকে বই-সহ তিনটে আলমারি দিয়ে দিয়েছি।
আলমারির বইগুলোতে কতদিন পর হাত দিলাম। মনে হচ্ছে, বাবাকেই ছুঁয়ে আছি। লাল কাপড় দিয়ে বাঁধাই করা বইটার ভিতরে লেখা, ‘১৩ জুলাইকে মনে রেখে ...’। সম্ভবত বাবা-মায়ের বিয়ের তারিখ। কোনওদিন বলতে শুনিনি, আমারও জিজ্ঞেস করা হয়নি। বাবার নোটবুক! কোনোদিন খুলে দেখা হয়নি। ১৯৮০ সালের। বাবাকে দেখতাম, রোজ রাতে বসে কী যেন লিখতেন। কী লিখতেন কোনওদিন জানা হয়নি। সত্যিই, আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি না। নোটবুকের প্রথম পাতায় লেখা- ‘কেশবকাকা (কেশবচন্দ্র নাগ) আজ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন। ১৯৪৭ সালে উথালপাথাল পরিস্থিতিতে উনি পুত্রসম স্নেহে আমাকে ঠাঁই না-দিলে আজ আমি কোথায় থাকতাম! নিজের পরিচয়ে আমাকে স্কুল-কলেজে পড়িয়েছেন। ওঁনার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা অনিঃশেষ।’ নিচে লেখা, ১০/০২/১৯৮২।
শুনেছি বাবা দেশ ভাগের সময় একাই এদেশে চলে আসেন। তখন বাবা লালমাটি গ্রামে পুকানকাকাদের বাড়িতে থাকতেন। মা বেঁচে থাকাকালীন পুকানকাকা একবার এসেছিলেন। পুকানকাকা মানে কেশবচন্দ্র নাগের বড় ছেলে।দুটো পাতা ছেড়ে আবার লেখা- 'আজ স্কুলে বিশ্বনাথ চৌধুরী জয়েন করলেন, অংকের মাস্টারমশাই। আগুনের ফুলকি চিনতে সময় লাগে না। বিশ্বনাথবাবু সেইরকম তুষের আগুনের একটি ফুলকি। ওঁনাকে নিয়ে এবার আমি স্কুলের সার্বিক উন্নতিমূলক বেশ কিছু কাজ করতে পারবো। আজ আমার মনটা উৎফুল্ল।’ ১৫/০৩/১৯৮২।
বিশ্বনাথ স্যারের কাছে আমি অংক করতাম । অমায়িক মানুষ। বাইরে রাগী মনে হলেও ভেতরে ছিলেন মাটির মানুষ। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। বারবার একটা কথাই বলতেন, যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ ভালো করে শিখলে সব সহজ, জলের মতো। কিন্তু আমার মতো হতভাগার অংক দেখলেই ম্যালেরিয়ার জ্বর চেপে আসত।
বেশ কয়েকটা পাতা বাদ দিয়ে আগে লেখা তারিখ, ৬/০৬/১৯৮২, তারপর লেখা, ‘বাসুর মতো স্কলার ছেলের এমন পরিণতি ভাবা যায় না। যাদবপুরের ইকোনমিক্স-এ গোল্ড পাওয়া ছেলে। হঠাৎ করে কীভাবে নকশালে জড়িয়ে গিয়েছিল আমরা কেউ কিছু জানতেই পারিনি। পরিবারের সবাই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। বাবা দিনমজুর খেটে ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে ছিলেন ছেলে একদিন বৈতরণীর হাল ধরবে এই আশায়। ধরেও ছিল হাল। আসামের একটি কলেজে চাকরি নিয়েছিল। ছোটো দুই বোনের বিয়ে দিল। আমি এক বোনের বিয়েতে গিয়েছিলাম। ওর সঙ্গে আমার সেবারই শেষ দেখা। তারপর আজ শুনি ....! কে বা কারা ওকে মেরে ফেলল ঈশ্বরই জানেন! ওর মতো তরতাজা প্রাণ, ভাবতে গেলেই শরীরে শিহরণ হচ্ছে!’
বাসুকাকা আমার ছোটকাকার বন্ধু। একবারই দেখেছিলাম তাঁকে। এক রাতের জন্য আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। আমি তখন বেশ ছোট। বিশেষ কিছু মনে নেই। শুধু মনে আছে, আমাকে কাঠি লজেন্স দিয়েছিলেন।
তারপর বেশ কয়েকপাতা আর কিছু লেখা নেই। তারপর লেখা, ‘ঝর্ণা, মনে রেখো পাহাড়ের বুক থেকে সবসময় সশব্দে ঝর্ণা ঝরে পড়ে না, নীরবেও পড়ে এবং তা নিরবধি বইতে থাকে। তুমি অভিমান করেছ আমার ওপর, তা করতেই পারো, সেটা তোমার অধিকার। ভুলে যেয়ো না, বৃক্ষ আর ছায়া একে অপরকে জড়িয়ে থাকে, তাই নিয়ে কোনও হইচই থাকে না। সম্পর্কও সেরকমই।’
ঝর্ণামাসি, মায়ের কলিগ। আমাদের বাড়িতে আসতেন কিন্তু কোনওদিন বাবা-মা-মাসি কারোর ব্যবহারে অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি। আমাকে প্রতিবছর জন্মদিনে মাসি একটা করে বই উপহার দিতেন। আর একটা কথাই লিখতেন, ‘বৃক্ষহীনের ছাতা হয়ে থেকো’। আমার মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বাবা আমাদেরকে নিয়ে সিমলা বেড়াতে গিয়েছিলেন। তখন ঝর্ণা মাসিও ছিলেন আমাদের সঙ্গে। মাসি আমাকে মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। ‘পিকু’ বলতে অন্ধ ছিলেন। আমাকে মাসি এই নামে ডাকতেন।
(ছয়)
সন্ধে নেমেছে। শাঁখ বাজছে। বৃষ্টি শেষের সন্ধেতে আকাশের দিকে তাকালে মনকেমন করে। অদ্ভুত স্নিগ্ধতা ছড়ানো চারদিকে। সন্ধের নিজস্ব একটা ভাষা আছে, আর্তি আছে। এই মনকেমনের সুরে মাঝে মাঝে গলা মেলাতে ইচ্ছে করে। বলতে ইচ্ছে করে, ‘পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন/তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল; ...’ মালতী বিকেলে কাজ সেরে গিয়েছে। আমাকে এককাপ চা-ও দিয়েছে। আমি বই নিয়ে বসেছি দেখে ডাকাহাকা করেনি।
বাবার নোটেবুকের পাতা ওল্টাচ্ছি, এক জায়গায় লিখেছে- ‘আজ আমার বড় আনন্দের দিন, বুবাই নিজ কর্মক্ষেত্রে পা দিল। ও আরও বড় হোক। ঈশ্বরের কাছে কামনা করি ও যেন মাটিতে পা রেখে আকাশ ছুঁতে পারে।’ বুবাই আমার ডাকনাম। মা বাবা চলে যাওয়ার পর আমার ডাকনামটাও কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আসলে এটা তো ঠিক, মা-বাবার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সন্তানের শৈশব, তারা চলে গেলে সন্তান বড় হয়। আমার অবস্থাও তাই!
পুব থেকে হালকা আলো পড়েছে মেঝেতে, আর সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে এসে পড়ছে আমার চোখে। তাকিয়ে দেখি ভোর হয়ে গিয়েছে। চারদিকে বই ছাড়ানো। এগুলো কী আদৌ বই! নাকি স্মৃতির সরণি বেয়ে হেঁটে চলা এক একটি গল্প! বাবা ঠিকই বলতেন, ‘বুবাই প্রতিটি ভোর আমাদের জীবনের নতুন নতুন গল্প।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)