অমিত রোজ বেলা
দশটায় বাস ধরে অফিস যাওয়ার জন্য। ওর অফিস টা সেক্টর ফাইভে ... প্রতিদিন বাসে
উঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা ওর অভ্যাসে দাড়িয়ে গেছে। মাঝে মাঝে একটা
দুটো সিট ফাঁকা হয়ে গেলে ওর বসতে যে ইচ্ছে করে না এমন নয় কিন্তু ও বয়স্ক
লোকদের সেই সিট গুলো ছেড়ে দেয় এক প্রকার ... অর্থাৎ পুরো রাস্তাটা
এইভাবেই অতিক্রম করে নিয়মিত আর প্রতিদিন কত যে দাদু-দিদিমার ঝোড়া ঝোড়া আশীর্বাদ পায় তার আর হিসেব থাকে না ...
অমিত ছেলেটা খুব ভাল । রগচটা, একগুঁয়েমির মত কিছু খারাপ দোষ থাকলেও অনেক ভালো গুন ওর মধ্যে রয়েছে তার মধ্যে বয়স্কদের সঙ্গে সদ আচরণ করা ... তবে রাগটা যদি কোনো বৃদ্ধের ওপর গিয়ে পড়ে তাকেও কিন্তু ও ছেড়ে কথা বলে না... যাইহোক ছোটবেলা থেকে ওই একগুঁয়ে ছেলেটা যথেষ্ট মেধার পরিচয় দিয়েছে। চার বছরের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পর ও এখন চাকুরীরত। যা মাহিনা পায় তা দিয়ে বেশ চলে যায় মাসটা। তবে ওকে ইদানীং একটা চাপের মুখে থাকতে হচ্ছে ... না না অফিসের বাপারে নয় , বাড়িতে সকলে ওকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছে সেই মত মা-বাবা দেখাশোনা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু ও তো যাকে তাকে বিয়ে করতে রাজি নয় সেটা ওর বাবা-মা কে বুঝিয়ে পারছে না... যাইহোক মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজের পছন্দ মত মেয়ে না পেলে সে বিয়ে করবেই না।
একদিন অফিস যাওয়ার জন্য বাসে উঠলো সময়মত। প্রত্যেকদিনের মত প্রচণ্ড ভিড়, পা রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই, মাথাটা কোনও রকমে ভিড়ের মধ্যে গলিয়ে সে যা দেখল তাতে তার হৃদপিণ্ডটাকে সাময়িক দুলিয়ে উঠলো। দমটা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি যথাস্থানে সে এসে দাঁড়াল ... এক অবিবাহিতা সুন্দরী রমণী বাসে জানলার ধারে বসে ভ্রমণ করছেন । তাকে দেখে অমিতের যেন মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন অপ্সরা! মেয়েটির সঙ্গে তার খুব আলাপ করতে ইচ্ছে করলো ... কিন্তু এই ভিড় বাসে টা কিভাবে সম্ভব টা সে ভেবে উঠতে পারলো না। মেয়েটির পাশের সিটে একজন লোক বসে ছিলেন, তিনি সামনের স্টপেজে নামার জন্য তল্পিতল্পা গোটানো শুরু করেছেন মাত্র, ঠিক সেই পেছন থেকে আর এক বৃদ্ধ আমিতকে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা দিয়ে ওই সিটে বসার জন্য এগিয়ে এলো। সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন ওই সিট দখল করার লক্ষ্যে এগিয়ে এলো, ঠিক সেই সময় অমিতের সঙ্গে এগিয়ে আসা বৃদ্ধটির প্রচণ্ড ঝগড়া শুরু হল ...
আমিত, “এই যে মশাই আমি উঠে থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি , আপনি পেছন থেকে আমাকে ঠেলছেন কেন ? সিটে বসতে চান নাকি ? সিটটার কাছে যেহেতু আমি আছি সেহেতু আমিই এখানে বসবো।”
বৃদ্ধ, “ওহে ছোকরা, তুমি উঠলে তো এই মাত্র, আমি অনেকক্ষণ থেকে দাড়িয়ে আছি, সিট ফাঁকা হলে তো আমারই বসার কথা। সরে যাও ওখান থেকে ...”
এইভাবে দুদণ্ড মুখখারাপ চলার পর বাসের অন্যান্য যাত্রীদের কথায় বৃদ্ধটি ওই সিটটিতে বসলেন ... অমিত এতক্ষণ মেয়েটির দিকে একবারও তাকায়নি , আবার সে তাকিয়ে দেখল মেয়েটি প্রচণ্ড বিরক্ত চোখে কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে কানে হেডফোনে গান শুনছে ও জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ... অমিত যেমন দাড়িয়ে ছিল সেরকমই দাড়িয়ে রইল। আসতে আসতে বাস ভিড় কমে গেল, অবস্থাটা এমনই প্রত্যেকটি সিট ভর্তি লোক, অমিত একা দাড়িয়ে ... ঠিক সেই সময় সেই বৃদ্ধটি বাস থেকে নেমে গেলো আর ঠিক মেয়েটির পাশের সিটটিই ফাঁকা হয়ে গেলো। অমিত কিন্তু বসতে পারলো না ওই সিটে, একরাশ হতাশা টাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল, সে সিটটার জন্য ঝামেলা করে নিজের গুনটাকে বিসর্জন দিয়ে বৃদ্ধটাকে কদর্য আক্রমণ করলো শুধুমাত্র মেয়েটির কাছে বসে তার সঙ্গে কোন না কোনো উপায়ে পরিচয় করার জন্য , কিন্তু সেটা করাটা তার আর হয়ে উঠলো না... মেয়েটির প্রবল বিরক্তিপ্রকাশ টা তার বারবার মনে পড়ছিল, বাস ভরতি বসা লোকের মাঝে তার দাড়িয়ে থাকাটা ব্যঙ্গচিত্রের স্বরূপ মনে হল ও মনটা তার হতাশায় ফেটে পড়ল, সে অফিস আসার অনেক আগেই বাস থেকে নেমে পড়ল যেন ব্যর্থতার দায় নিজের মাথায় নিয়েই ।।
-
অমিত ছেলেটা খুব ভাল । রগচটা, একগুঁয়েমির মত কিছু খারাপ দোষ থাকলেও অনেক ভালো গুন ওর মধ্যে রয়েছে তার মধ্যে বয়স্কদের সঙ্গে সদ আচরণ করা ... তবে রাগটা যদি কোনো বৃদ্ধের ওপর গিয়ে পড়ে তাকেও কিন্তু ও ছেড়ে কথা বলে না... যাইহোক ছোটবেলা থেকে ওই একগুঁয়ে ছেলেটা যথেষ্ট মেধার পরিচয় দিয়েছে। চার বছরের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পর ও এখন চাকুরীরত। যা মাহিনা পায় তা দিয়ে বেশ চলে যায় মাসটা। তবে ওকে ইদানীং একটা চাপের মুখে থাকতে হচ্ছে ... না না অফিসের বাপারে নয় , বাড়িতে সকলে ওকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছে সেই মত মা-বাবা দেখাশোনা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু ও তো যাকে তাকে বিয়ে করতে রাজি নয় সেটা ওর বাবা-মা কে বুঝিয়ে পারছে না... যাইহোক মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজের পছন্দ মত মেয়ে না পেলে সে বিয়ে করবেই না।
একদিন অফিস যাওয়ার জন্য বাসে উঠলো সময়মত। প্রত্যেকদিনের মত প্রচণ্ড ভিড়, পা রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই, মাথাটা কোনও রকমে ভিড়ের মধ্যে গলিয়ে সে যা দেখল তাতে তার হৃদপিণ্ডটাকে সাময়িক দুলিয়ে উঠলো। দমটা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি যথাস্থানে সে এসে দাঁড়াল ... এক অবিবাহিতা সুন্দরী রমণী বাসে জানলার ধারে বসে ভ্রমণ করছেন । তাকে দেখে অমিতের যেন মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন অপ্সরা! মেয়েটির সঙ্গে তার খুব আলাপ করতে ইচ্ছে করলো ... কিন্তু এই ভিড় বাসে টা কিভাবে সম্ভব টা সে ভেবে উঠতে পারলো না। মেয়েটির পাশের সিটে একজন লোক বসে ছিলেন, তিনি সামনের স্টপেজে নামার জন্য তল্পিতল্পা গোটানো শুরু করেছেন মাত্র, ঠিক সেই পেছন থেকে আর এক বৃদ্ধ আমিতকে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা দিয়ে ওই সিটে বসার জন্য এগিয়ে এলো। সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন ওই সিট দখল করার লক্ষ্যে এগিয়ে এলো, ঠিক সেই সময় অমিতের সঙ্গে এগিয়ে আসা বৃদ্ধটির প্রচণ্ড ঝগড়া শুরু হল ...
আমিত, “এই যে মশাই আমি উঠে থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি , আপনি পেছন থেকে আমাকে ঠেলছেন কেন ? সিটে বসতে চান নাকি ? সিটটার কাছে যেহেতু আমি আছি সেহেতু আমিই এখানে বসবো।”
বৃদ্ধ, “ওহে ছোকরা, তুমি উঠলে তো এই মাত্র, আমি অনেকক্ষণ থেকে দাড়িয়ে আছি, সিট ফাঁকা হলে তো আমারই বসার কথা। সরে যাও ওখান থেকে ...”
এইভাবে দুদণ্ড মুখখারাপ চলার পর বাসের অন্যান্য যাত্রীদের কথায় বৃদ্ধটি ওই সিটটিতে বসলেন ... অমিত এতক্ষণ মেয়েটির দিকে একবারও তাকায়নি , আবার সে তাকিয়ে দেখল মেয়েটি প্রচণ্ড বিরক্ত চোখে কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে কানে হেডফোনে গান শুনছে ও জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ... অমিত যেমন দাড়িয়ে ছিল সেরকমই দাড়িয়ে রইল। আসতে আসতে বাস ভিড় কমে গেল, অবস্থাটা এমনই প্রত্যেকটি সিট ভর্তি লোক, অমিত একা দাড়িয়ে ... ঠিক সেই সময় সেই বৃদ্ধটি বাস থেকে নেমে গেলো আর ঠিক মেয়েটির পাশের সিটটিই ফাঁকা হয়ে গেলো। অমিত কিন্তু বসতে পারলো না ওই সিটে, একরাশ হতাশা টাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল, সে সিটটার জন্য ঝামেলা করে নিজের গুনটাকে বিসর্জন দিয়ে বৃদ্ধটাকে কদর্য আক্রমণ করলো শুধুমাত্র মেয়েটির কাছে বসে তার সঙ্গে কোন না কোনো উপায়ে পরিচয় করার জন্য , কিন্তু সেটা করাটা তার আর হয়ে উঠলো না... মেয়েটির প্রবল বিরক্তিপ্রকাশ টা তার বারবার মনে পড়ছিল, বাস ভরতি বসা লোকের মাঝে তার দাড়িয়ে থাকাটা ব্যঙ্গচিত্রের স্বরূপ মনে হল ও মনটা তার হতাশায় ফেটে পড়ল, সে অফিস আসার অনেক আগেই বাস থেকে নেমে পড়ল যেন ব্যর্থতার দায় নিজের মাথায় নিয়েই ।।
-
সুচিন্তিত মতামত দিন