অরিণ দেব - মায়াজম

Breaking

১১ আগ, ২০১৭

অরিণ দেব

                                   যন্ত্র



পৃথিবী একটা টেনিসবল-এর মতো ।হয়তো মাথার মতো গোল । যতটা চাপ ততটা লাফ । মগজে মগজে পরিপূর্ণ , পৃথিবীর মধ্যে । আজ মঙ্গলবার , পৃথিবীকে টেনিসবলের চেয়ে বেশি বোঝা যাচ্ছে না । রবিবার সেলুনে চুল কেটে এসেছি , বেশ ক'টা বাদামী হ'য়ে গিয়েছে , ক'টা সাদা , ক'টা হলুদ আর সবুজগুলো আমি লুকিয়ে রেখেছি মগজের মধ্যে ।কাটা চুলগুলো পৃথিবীর মধ্যে জমছে আবার আমার মাথায় জমিয়ে বসার জন্য । বাইরে চাঁদ উঠেছে , পূর্ণিমার। জোকারকে দেখালাম , ও আসলে ফিনিক্স পাখি , সাতসমুদ্র উড়ে এসে জুড়ে বসলো খাটে । এরকম পাখি সেন সাহেবের কোটের পকেটে দেখেছি , যখন যেখানে দরকার পড়তো উড়িয়ে দিতেন , তর্ক না ক'রে উড়ে গিয়ে বসতো । সেন সাহেব হাসতে হাসতে বলেছিলেন , 'দাম দিয়ে কিনতে হয় ।' সোনালি মোড়ক , ভেতরে সোনালি রঙের প্লাস্টিকের তাস কিনেছি , এখন হাতে । ঠোঁট লালরঙ-এ রাঙানো , র‍্যাম্প-নায়িকার মতো পা বেঁকিয়ে জোকার এখন হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আমার সামনে ।সাততলায় ফ্লাট , পশ্চিমমুখী ঘরটা বাবারই পছন্দ ক'রে দেওয়া । বাহান্ন-তাস উড়ছে ঘরে , নির্মাণপাখি । খোলা জানলা পেয়ে ঝুরো মাটির মতো ঝ'রে ঝ'রে পড়ছে বাহান্ন-পাতা তাস । উড়তে উড়তে গিয়ে পড়ছে ম্যামের মুখে । কলেজের শেষ দিকে চিঠি অভ্যাস এলে পঁচিশ পয়সার পোস্টকার্ডে রহিমা ম্যামকে চিঠি লিখেছিলাম । দু'টো কবিতার প্রথম দু'টো ক'রে লাইন প্রথম পৃষ্ঠায় , দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় জোকারের ছবি । ম্যামের ঠিকানায় ডাকঘর আঁকা ছিল ঠিকঠাক । তারপরে ট্রেনে উঠে মনে পড়েছিল , ভূগোল বইয়ের মধ্যে চিঠিটা । খুব ভয় করছিল ট্রেনটা কী আর থামবে ? পৃথিবী শেষের আগে আমি কি নামতে পারব ! ব্যাগ থেকে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে ভূগোলবই তন্ন তন্ন করেও চিঠিটা পাইনি । অথচ আমি নামতে চাইছিলাম । একটা ষ্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছিল ট্রেন , আমি নামব ! আশ্চর্য । বুকপকেটে হলুদ পোস্টকার্ড , প্লাটফর্ম-এর টিনশেডের ফাঁক গ'লে মিঠাসূর্য প'ড়ে জ্বলজ্বল করছে চিঠির অক্ষরগুলি ।এতদিনে মাত্র একটাই চিঠি লিখেছি । ট্রেন ছাড়ার আগে চিঠি খুঁজে পেলাম , কেন ? ও দাদা , পোস্ট করে দেবেন । ছুঁড়ে ফেলার আগে বলেছিলাম । আজকে মঙ্গলবার । খাটের ওপর সেই চিঠি এতকাল পরে ফিরে এসেছে । রঙ চ'টে গিয়েছে রহিমা ম্যামের মতো । ঠিকানায় দেখি রহিমা ম্যামের সাতাশ বছরের যুবতীমুখ , একটু লাজুক , হাসছে । পোস্টকার্ড এতদিন রেলওয়ে গুদামে ছিল । ওপরে সবুজ ছত্রাক , জোলো হাওয়ার গন্ধ । গন্ধটা বেশ পাগল-পাগল , একটা চুমু খেলে কেমন হয় ! ম্যামের যুবতী গন্ধটা এখনও আছে , একই রকম । জোকার এসব দেখে হাসছে । জোকারকে হাসি থামাতে বলেছি কারণ কালকে অফিস । সেন সাহেব হিসাবী । ব্যাল্যান্স-শিটে কোনও মার্জনা চলে না । সাহেবের এই বয়সে দ্বিতীয়পক্ষ , নবীন খোকা । আমার খুব ঘুমের দরকার । অথচ চোখের ওপর চশমাটা জাঁকিয়ে বসেছে । ছোটবেলায় দেখেছি উচ্ছের ওপর বাবার চোখ এরকমই জাঁকিয়ে বসতো ।উচ্ছের রস রোজ সকালে প্রায় পঞ্চাশ মিলিলিটার গিলতেই হ'ত । অবশ্য বোনটি কীভাবে যে গিলে নিতো ! অরুমিসার বয়স কী আমার মতো হ'ল ? একবার মেকআপ লাগানো অভিনেতার বয়স জিজ্ঞাস ক'রে তাজ্জব ব'নে গেছিলাম । সেকি হাসি ! বোনটি আমারই বয়সী । ভাগ্যিস ট্রেনে একটু আগে উঠে পড়েছিলাম , বোন দু-ট্রেন পেছনে । বাবা ছিল সবার আগের ট্রেনে । আমরা সবাই একই গন্তব্যে যাচ্ছিলাম , সময়ের ফাঁড়ায় প'ড়ে একটু যা আগুপিছু । এইমাত্র পেট থেকে আরও দু'টো হাত গজিয়ে উঠলো , নতুন হাত দিয়ে আমি জোকারকে ছুঁতে পারছি না । সিগারেট ফুঁকতে পারছি না । গলি-ক্রিকেটের বল কাঁচের জানলা ভেঙে ঢুকে যাচ্ছে চৌধুরীদের বাড়ি , আমি ধরতে পারছি না । রহিমা ম্যামকে এত বছর পরে খাটে বসিয়েছি , সেদিন বৃষ্টিসন্ধ্যা । আমরা দু'জন বৃষ্টিতে ভিজছিলাম ।মুসলমানরা কপালে সিঁদুর হাতে শাঁখা পরে ? আমি অবশ্য বুঝতে পারছিলান না ম্যাম পরেছে কী পরেনি । বুঝতে পারছিলাম না রহিমা ম্যাম বিবাহিতা কিনা । সেবার জ্বরের মধ্যে আমাদের বিয়ের কথা অনেকদূর গড়িয়েছিল ।একটা নার্স তিনবেলা ওষুধ খাইয়ে দিত , বিকালে ঝুল-জানলায় আমি আর রহিমা বসতাম । রহিমাকে তখন লালটুকটুকে পাখি মনে হ'ত , যার ঠোঁট দু'টো আরও লাল । কথাগুলো জোকারকে বললাম , লটারির প্রথম পুরস্কারের আশেপাশের নম্বরের মতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রইল । আমি একটা স্পেড- এর টেক্কা কুচিকুচি ক'রে কেটে লাল পেন দিয়ে জোকারের গায়ে স্পেড- এর টেক্কা লিখে বললাম - হ'ল এবার সান্ত্বনা পুরষ্কার ! কলকাতার ভিড়ভাট্টা মেট্রোয় এইজন্য আমি শোভাবাজার থেকে উঠি না । গায়ের ওপরে এতসব চাপ আমি নিতে পারি না । 'ছোটদা , তুই কোথায় ? এবার নামতে হবে ?' লেডিসসীট থেকে ডাকলেই কী ভাই হয়ে যেতে হবে ? জোকারকে বরফকুঁচি মেশানো মদের গ্লাসে ঢুকিয়ে রেখেছি । ইদানীং বড্ড তর্ক ক'রে । মা পর্যন্ত যেখানে স্বীকার করে নিয়েছে রহিমা ম্যাম এসেছিল , যেদিন কাশ্মীরী শালওয়ালা দুপুরকে দু'ভাগ ক'রে টাকার পেয়াদা করছিল পাশের বাড়ি । মায়ের পছন্দ কিনা জিজ্ঞাস করাতে হেসেছিল , নারীদের হাসির ব্যাপারে সেই থেকে আমার সন্দেহ শুরু । রহিমার শরীর খারাপ করছিল এবং ওর মা মারা গিয়েছেন খবর শুনে তাড়াতাড়ি দই-শরবৎ কী চপলা-ঝি নিয়ে এসেছিল ? এক চুমুক দিয়েই বুঝেছিলাম এ মায়ের হাতের স্বাদ । কিন্তু পায়ের নিচে এভাবে আঠা লাগিয়ে দিলে নড়াচড়া করা যায় ? ধুত্তেরি ! মেজবাবু ফাইল ছাড়া আর কিছুই চেনে ? দশটা-দশ মানে দশটা-দশ । রহিমা ম্যাম ঠিক দশটা-দশ এর মিনিবাস ধরে । এগারোটা পনেরোয় প্রথম ক্লাস , সেই সাতানব্বইয়ে ! মেট্রো থেকে নেমে দৌড়ে গেলে হয়তো ম্যামকে রাস্তায় ধ'রে ফেলব , ফুটপাতের জল খেও না , রাস্তার মাঝখানে বলা'টা ঠিক হবে ? রোজ রোজ ঘরে ডেকে গল্প করা ভালো নয় , সুদীপ ধরা প'ড়ে যাচ্ছেতাই একটা মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে শুনলাম । 'অ্যায় ছোটদা শুনছিস ? কী হল ? আয় আয় , দরজার কাছে আয় ।' চিরকাল চার-পা বাড়িয়ে রয়েছি স্বর্গের দিকে । ঠিক চোখ বরাবর রহিমা । অর্ধেক পিটকাটা ব্লাউজ চোখের ভেতরে , আমার । অন্তর্বাসের কাপড়টা অচেনা , ছোটছোট মাছধরা নেট । ফরাসী সেন্ট কী মাখে ? বাপ স্কুলমাস্টার , পার্টটাইম কলেজ লেকচারার কত পায় ? কুড়ি হাজার ? গন্ধটা অরুমিসা পাচ্ছে ? - অ্যায় বৌদির গন্ধটা পাচ্ছিস ? বোন অবশ্য চিরকাল গন্ধের ব্যাপারে অজ্ঞ ! ডাব সাবান দিয়ে আচ্ছা ক'রে শরীর ঘষে স্নান ক'রে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম কেমন গন্ধ রে ? সে কি হাসি ! 'তুই পাগল হলি ছোটদা ? যা যা বাথরুমে যা , কাঁধে-বগলে সাবানের ফ্যানা লেগে রয়েছে । ' বোনটা গন্ধের ব্যাপারে এতবোকা হবে ভাবিনি । ওরা ভালো ক'রে পড়াশোনা করে কারণ মার্কসিটের মধ্যে ডাক্তারগন্ধ , ইঞ্জিনিয়রগন্ধ ওদের প্রেমিক । সারারাত বুকের ওপরে প্রেমিককে রেখে কতভাবে যে গন্ধ নেয় ! হায়ার সেকেন্ডারি'র রেজাল্ট দেখাতে এলে আমি জোকারকে দেখিয়েছিলাম , জোকারের হাসি থামেই না । বেচারার খুব ঘুম । ঘুমকাতুরে মানুষ একদম না পছন্দ । -তুই কি গন্ধটা পাচ্ছিস ? আবার কেন বলছি ? রহিমার কোমরে গোঁজা শাড়ির গিটটা একটু আগলা হয়ে গিয়েছে । অসভ্য মেট্রো । আঙুলগুলো নেকড়ে নেকড়ে , লালা-লালা । নরম মাংসের স্বাদ , সেই অভাব । এইজন্য একটা কুকুর পুষতে ইচ্ছা করে । প্রভুভক্ত কুকুর । সঙ্গে থাকবে । মেট্রোর বেআদব হাত দেখলেই খ্যাঁক করে কামড়ে দেবে । আজকে মঙ্গলবার । গোলগোল পৃথিবী মাথার মধ্যে ভ'রে রেখেছি । বরং জানলাটা খুলে দেওয়া ভালো । আষাঢ় । চিঠির ওপরে ফোটাফোটা জল এল কী করে ? তবে মা-ই খুলে রেখেছিল জানলা ? কতবার বলেছি আমি না থাকলে ঘরে আসবে না । এবার আমি চিঠির কবিতাটা শোনাব কী করে রহিমাকে । কী ভাববে? ঈশ-রে । জোকারকে এইজন্য না পছন্দ ! কিছুই লক্ষ্য নেই , শূন্যস্থানে মাঝে মধ্যে বসানোর জন্য রেখেছি , নইলে ...। বাবা কি রহিমার ব্যাপারে একবগগা্‌ ? নিজে তো নমঃশূদ্রের মেয়ে ভাগিয়ে এনেছিল । আমি রহিমাকে বিয়ে করতে চাই ?
'কোন রহিমার কথা বলছিস ?' বাবা দৈনিক 'দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া' পড়তে পড়তে উত্তর দেয় । এই হচ্ছে বাবা । কিচ্ছু মনে থাকে না । 'আমি জানি তুমি জানো ।'
'যদি জানি তবে জানি না । '
'ধর্ষণের খবর ওভাবে রসিয়ে পড়ার কিছু নেই ।' রেগেই বলি । 'তোমাকে বাবা নামে ডেকেছিল ভুলে গেলে ?' রাগ কেন আমার কমবে ! আশ্চর্য মানুষ এই বাপ ।
' জীবন , অরুমিসা আর তুই ছাড়া জীবনে বাপ ডাক শুনেছি ব'লে তো মনে পড়ে না।' সামনের দু'টো ফাঁকা দাঁতের ফাঁক দিয়ে বাক্যগুলো বাতাসে ছাড়ে বাপ । মনে ভাবি বাপের সবকটা দাঁত ভেঙে দিই । তাপ্পর কথা বলা বন্ধ হোক । যাচ্ছেতাই । ' রহিমা , তোমার বউমা । মরার আগে একটিবার মুখ দেখবে না ? ' বাপ তাকিয়ে হাসে কী কারণে ?
' তুই বিয়ে করবি ? না করেছিস ? ' খেলার পেজ-এ রজার ফেডেরার-এর এস এর মধ্যে থাকলে তুমি চিনবে কী করে । মনে মনে বলি , নরকে যাও । ' অ্যায় - অ্যায়ই ছোটদা , প্লাটফর্মে ট্রেন ঢুকছে , তোকে রেখেই কি নেমে যাব । ' নেমে যাবে তো যাক । গার্ডেনরিচ মুসলমান পট্টিতে আমারে রেখে একবার নেমে গিয়েছিল রহিমা । ক'টা বাঁদর দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে এসেছিল । ক'টা কলা চাইলে কিনে দিতাম , কিন্তু রহিমাকে কলা মনে ক'রে এগিয়ে আসার কী দরকার ছিল ? হাসপাতালের পথ ধ'রে বাড়ি খুঁজে পেয়েছিলাম , ফিরবার । তারপর থেকে কেউ ডাকলে আমি নামি না , সাড়া দিই না । বোনটা আমাকে খানিক বোঝে । ও ঘরে এলে রহিমার লুকিয়ে থাকে খাটের নিচে । 'কী করে রেখেছিস রে ঘরটা তুই ? উফ আর পারিনে । বউদি আসুক'খন ।' মদের গ্লাস থেকে ফুঁক করে হেসে ওঠে জোকার । ইশারায় জোকারকে চুপ করাই । বালিশে কাত হয়ে শুয়ে থেকে দেখি অরুর মুখে একটা প্রজাপতি উড়াউড়ি করছে । সাবধান হই । রহিমা ঠিক অরু'র বয়স নিয়ে গতকাল সারারাত ছিল । বাদশাহি আমল নিয়ে আমরা রাত জেগেছিলাম । বাহান্ন-তাস থেকে টেক্কা আর বিবিকে কেটে দু'টো জোকার নিয়ে সারারাত আমরা খেলেছিলাম । তারপরে আজ এই মঙ্গলবারের সকালে অরু প্রথম এলো ঘরে । এত সকালে স্নান করে এসেছে ? বাব্বা , এত শীতে ? শীত লাগেনি ? বাবাকে এবার বিয়ের কথা বলতে হবে , ধিরিঙ্গি মেয়ে হবে ? 'ছোটদা , তুই কি শুনতে পাচ্ছিস না ? আমি কিন্তু দরজার সামনে , তোকে রেখে কিন্তু নেমে যাব ।' রহিমা সামনে থাকলে কে আর নামতে চাইবে ট্রেন থেকে ? কানের পাশে দু'একটা চুল কি সাদা ? নির্ঘাত কলপ লাগাতে ভুলে গিয়েছে । কেলো । মন্দ লাগছে না বটে ! তবে এই বয়সে চুল পেকে গেল ? মঙ্গলবারে বিছানার সঙ্গে লেগে থাকতে ইচ্ছা করছে কেন ? ছোটবড় পত্রপত্রিকাগুলো অরু সাজিয়ে রাখছে । ভাগ্যিস মদের গ্লাসটা টেবিলের নিচে , সহজে চোখ যাবে না ! ' তোর এমন জীবন আমার একদম ভাল্লাগে না ছোটদা । এবার একটু সিরিয়াস হবি না ? ' রবিবার সেলুনে চুল কেটে এসেছি। কাচিতে নিহত চুলগুলো ছোট ছোট পাখির মতো উড়ছে , আবার মাথার দিকে উড়ে বসতে চাইছে নাকি ? অরু ঝাড়ু দিয়ে যে দু একটা সাদাচুল ঝেটিয়ে দিচ্ছে না তাও তো নয় ! অরু কি কলেজে পড়ায় ? ঠিক ঠিক , অরুর ক্লাস করিনি সাতানব্বইয়ে ? ওই অরু তোর বয়স কত রে ? জানলা দিয়ে কি বাহান্নতাস উড়ে পড়ছে নিচে ? একটু দেখে বলবি ? পেছন থেকে এমন ধাক্কা দিলে দাঁড়িয়ে থাকা যায় ? কী দিনকাল পড়েছে । এইজন্য ভিড়ভাট্টার মেট্রো না পছন্দ । রহিমাকে বলতে হবে , বাপের প্রভিডেন্ট ফান্ড ভাঙিয়ে অন্তত সস্তা দামের হলেও একটা চারচাকা চাইই চাই , ব্যাস । দাবী বলতে এইটুকুই । ও কি , ও কি অরু , হাত দিসনে ওখানে । চিঠিটা এমনিতে ভিজে গিয়েছে , অক্ষরগুলো তুই মুছে দিলে আমি আর রহিমার ঠিকানা খুঁজে পাব না । থাম বোন , প্লিজ । নাহ্‌ এ মেয়ে শুনছে না কেন ? ঘাড় নিচু করে চিঠি থেকে জল মুছছে ? অক্ষর মুছে যাবে যে ! রহিমা হারিয়ে গেলে এই ঘর অনাথ হয়ে যাবে , জোকার বেকার হয়ে যাবে , অন্তত এইটুকু বোঝা উচিত তোর । কে পা টেনে তুলছে ? উফফ আমি শুয়ে থাকতে চাই । এভাবে জোর করে তুলতে আছে ? আমি কি অভিকর্ষজ শক্তিকে পরাজিত করে উঠে দাঁড়াতে পারি ? অরু থাম । থাম । ঠিক ঠিক রহিমা এভাবে রোজ ঘরের নোংরা পরিষ্কার ক'রে দেয় , একই ভঙ্গীতে । আহা , পিটফাটা সালোয়ার কামিজের গোলাপবাগান থেকে কী গন্ধটা আসছে ? আঃ! অপূর্ব স্বাদ । এই সেই নেশা যা রাজাউজির রোজ হারেম থেকে সংগ্রহ ক'রে থাকেন । সেই গন্ধস্বাদ , এতদিনে , এখানে ।হাত দু'টি কোনকালেই কি আমার বাধ্য ছিল রহিমা ! সেই পাহাড়ে , সেই পাহাড়ের খাদ আঁকড়ে ঝুলে থাকা । মদের গ্লাস গিলে নিচ্ছে জোকারকে । বাহান্ন-তাস উড়ছে ঘরময় । একটা বিবি ধরতেই হবে খেলা শেষের আগে । 'ছোটদা কী করছিস ? পাগল হলি ? ছাড় প্লিজ ছাড় ।' পেছনের চাপ অসহ্য লাগছে । সবাই কি আমাকে নিয়েই পাতালে যাবে । 'অ্যায় ছোটদা , আমি নেমে গেছি নাম নাম ।' হুড়মুড় করে পিঠের ওপর পাহাড় ভেঙে পড়ল কেন ? ।' শালা , নিজে নামবি না অন্যকেও নামতে দিবি না ?' আপ প্লাটফর্মে ট্রেন ঢুকছে । লোকের দৌড়ঝাঁপ । 'ছাড় ছাড় , প্লিজ ছাড় ছোটদা , এরকম করিস না , প্লিজ । পেছন থেকে এভাবে জড়িয়ে থাকলে হবে ? সোনাদাদা আমার ছাড় । আমিই তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব । এতদিন মা বলেছিল আজকে বুঝতে পারছি তোর অবস্থা ।' রহিমা , চিৎকার কোর না , গন্ধটুকু দাও । অস্থিগত এই আমার সঞ্চয় । হাতের দশটা আঙ্গুল চেপে বসেছে রহিমার ফলন্ত বুকে । 'ছোটদা , উফ: এবার কাঁদব , চিৎকার করব ? ' বৃষ্টি থামবে না রহিমা অথচ আমরা পুড়তে থাকব । বৃষ্টি হবে অথচ আমরা জ্বলতে থাকব । দাঁড়াও আরও একটু ভালো ক'রে ধরতে দাও । আপ লাইনে ট্রেন আসার আগের মুহূর্তে একটা ঝুপশব্দ , শব্দের দিকে গণচোখ দৌড়চ্ছে , দৌড়চ্ছে । ভিড়ে কী কিছু খুঁজছে অরুমিসা ?

৫টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র