একটি শিল্পসম্মত নিষ্ক্রমণ
হাঁটতে হাঁটতে জলাভূমির সামনে এসে দাঁড়ালাম
। এখানে নিঃশ্বাসে মিথেন নিচ্ছি ঠিক বুঝতে পারি , কারণ প্রতি প্রশ্বাস নীলবর্ণ...
দুমাস একুশ-দিন হলো আমি নিরুদ্দেশ , প্রথম প্রয়োজন ছিলো আত্মহনন ...দ্বিতীয়
প্রয়োজনও ছিলো আত্মহনন ...তৃতীয় প্রয়োজন ...
বাসি খাবারের মতো একটা নিস্তেজ টোকো গন্ধ
চারিধারে বিরাজমান । জলের মাঝে জেগে থাকা হোগলার জঙ্গল থেকে স্রোতস্মান কালো জলের
প্রবাহ মৃদু গতি আনছে জলার নিথরতায় ,
কোথাও কোনও পাখি ডাকছে না ...ক্ষীণ সোঁতা মাঠ কেটে হিল-হিলিয়ে বয়ে গেছে চাষ
যোগ্য জমির দিকে । কুচো মাছের তাগিদে কাঠি-জাল লাগানো নালার মুখ বরাবর , জল কিছুটা থমকে গিয়ে ঘূর্ণি খাচ্ছে ...
কাঠি-জালে আটকে বর্জ্য প্লাসেন্টারা । আমি
মুখ ঘুরিয়ে নিই অন্য প্রান্তে ...কাছেই শহর...
বড় উর্বর এই মৃত্যুকারখানার মাটি । মানুষের
হাড়-মাস-রক্তে ভীষণ উর্বর মাটি । ৮ + ৮ = ১৬ টি
মজবুত বাড়ি ...২০ হাজার একরের উর্বর ক্যাম্পের জমি – ইহুদি হাড়-মাস , রাশিয়ান হাড়-মাস , পোলিশ হাড়- মাস ।
আবেল এবং আবেলরা সারি দিয়ে এগিয়ে চলেছে নির্দ্দিষ্ট ঘরের
দিকে “ লাল বাড়ি” র দিকে ... একসঙ্গে কয়েকশোজনকে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো
...স্নান করানো হবে তাদের । কিছু মুহূর্ত পর নিঃশব্দে মৃত্যু স্নান নেমে এলো
...জাইক্লোন বি ... হাইড্রোজেন সায়ানাইড ! ...আঃ মৃত্যু কি মধুর ! ...মৃত্যু কি
নীরব ! ... কম্যান্ডার হোশ এক বিরল প্রতিভার মৃত্যু-কারিগর । মাত্র ৫৬ দিনে ৪৩০০০০
হাজার ইহুদি নিকেশ ! একি সামান্য কথা ?...
কাঁধে তারা লাগল আবার কম্যান্ডার হোশের ...
বড় উর্ব্বর ...বড়
নির্জন এই পোলিশ দেহাতি প্রান্তর ...মৃত্যু কারখানা অসউইচের বাতাসে ভাসে হিমলারের
হিম কন্ঠস্বর ... “তঁতে সিয়ে...তঁতে
সিয়ে আলে ...
বাতিল সরণী
৪ নং তারিণী দত্ত লেন ...বেঢপ ,ঝুলে পড়া
জানালা ভেঙেপড়া খিলান ,রংচঙে কাঁচের আর্শি। লেন –বাই লেনে শহর জটিল হয়েছে শুধু । হারিয়ে গেছে বৈঠকখানা
...কার্নিশে দিব্যি বেড়ে উঠেছে বট ...সদরের লোহার গেটে সেই কবে থেকেই তালা, তালাতেও জং ধরে গেছে । আজকাল আর কেউ আসে
টাসে না ... ভাঙবে বলে কবে থেকে দাঁড়িয়ে আছি ! ভেঙ্গে নতুন বাড়ি উঠবে ... সেও
হওয়ার জো নেই ...সাত শরিকি ঝামেলায় । পাংশু বর্ণের ওপর রোজ অল্প করে শ্যাওলা জমে
চলেছে ... কেউ জানেনা একদম নির্জন নই ,এখনও সন্ধ্যে রাতে ম ম করে দামী তামাকের
গন্ধ , গড়গড়ার
বিলম্বিত শব্দ ...আখতারি সুরেলা আতর ।
অদৃশ্য চিক ঘেরা বারান্দার রেলিঙে মৃদু শব্দ ওঠে কিঙ্কিণীর ...কেউ আসে না
তখন কেউ আসে না ...
নিস্তব্ধতার গম্বুজ
আমার শেষতম গন্তব্য এই গম্বুজ । সবাই শোকে
মুহ্যমান , স্বজন হারিয়ে
উদভ্রান্ত । আমি শুধু নিশ্চিন্ত , পরিপূর্ণ । আঃ কি অপার শান্তি ...কি অটুট
নিস্তব্ধতা ! ... আমার এই জগত থেকে নিষ্ক্রমণের এই শেষতম দ্বার ।
গোলাকার চত্বরে আমায় পরম যত্নে শোয়ানো হলো , কিছু ফুল কিছু মোমবাতি ... উন্মুক্ত রৌদ্রে আমি শুয়ে রয়েছি ... আমি ...আমার দেহ । এবার পাখিরা আসবে আমায় গ্রহণ করবে , আমার এ নশ্বর দেহ তারা খুঁটে খুঁটে খেয়ে আমার মুক্তি ঘটাবে ...হে খেচরকুল ...এসো আমায় গ্রহণ করো ...আমার এই নশ্বর , দুষিত দেহ যেন কিছুতেই অপদেবতাদের দখলে চলে না যায় ...এসো এসো...
রোদে ঝলসে যাচ্ছে আমার দেহ ...বিকৃত হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে ...পাখিরা আসেনা ...শকুনেরা হারিয়ে গেছে ... আমার দেহ পড়ে থাকে আরও অনেক শুকিয়ে যাওয়া দেহের মাঝ বরাবর ... শকুনের অপেক্ষায় ......কাছেই শহর ।
যেমনটা সেই শুরুতে বলেছি ... আমি নিরুদ্দেশ দুমাস একুশ দিন ধরে ... জলার ধারে আমার নিরুদ্দেশের তৃতীয় কারণ খুঁজতে খুঁজতে চলে এলাম । জলার আঁশটে এবং টোকো গন্ধে আমার কেমন নেশা ধরে যাচ্ছে । কাঠি-জালে আটকে থাকা প্লাসেন্টারা কখন নির্মোহ উড়ে গেছে প্রজাপতি হয়ে । এবার আমি উঠে দাঁড়ালাম ... ধীরে নগ্ন করলাম নিজেকে । নিজের যাবতীয় প্রত্যঙ্গ খুঁটিয়ে দেখতে থাকলাম ... এবার আমি একে একে নিজেকে খুলে ফেলব নিপুণভাবে ...
হাত খুললাম ...পা খুললাম ... পাঁজরের অংশটা শুইয়ে রাখলাম ঘাসে ... মাথা খুলে আটকে রাখলাম পাশের বাবলা গাছের কাঁটায় ... সব শেষে শিশ্ন খুললাম ...পাতায় মুড়ে ভাসিয়ে দিলাম জলার জলে সবার প্রথমে , পাতা ভাসতে ভাসতে এগিয়ে গেল ক্ষীণ হিলহিলিয়ে বয়ে যাওয়া সোঁতা হয়ে চাষযোগ্য জমির দিকে ...
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনবিষয় বৈচিত্র টানল। অন্য স্বাদের লেখা। সব মিলিয়ে বেশ ভালো লেগেছে।...Sikta Das
উত্তরমুছুন