মনালি

মায়াজম
3
               মনালি'র কবিতাগুচ্ছ




মর্ত্য -সহচর, তোমাকে
আমার অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কি অসহ্য ? এত নির্ঘুম কালখণ্ড! কতগুলো সমুদ্র পেরোলে সীগালেরা বালিতে মুখ গুঁজে ঘুমোনোর অবসর পায়, জানা নেই। শুধু জানি, আমার খুব দেরি হয়ে গেছে আর বহুদিন ডানা ভাঙা। জোড়ার দাগ আর দগদগে ক্ষতরা স্পষ্ট! তাই হয়ত, এত আলোড়ন। চোরাবালির মতন ভয়, এই বুঝি সব ডুবে যায়! তিনকাল থেকে তিন ভগবান বলে বিমূর্ততায় ফেরো। কিন্তু, কেন ফিরব, কার জন্যে, আর কোন অনন্ত অপেক্ষার তপস্যায়!এদিকে যে পরমযত্নে ক্ষতস্থান লেহন করে পট্টি দিচ্ছে হরিদ্রা-চন্দনের, যে ভরে দিচ্ছে প্রাণবায়ু অহরহ, দিনরাত্রি! যার জন্যে, আবার খোঁপার রক্তকরবী, মকরমুখো হাতবালা, কোমরবাঁধনী, অঙ্গুরীয়, রসসিক্ত অধর। তাকে ফেরাবো কেন? সেতো পঞ্চেন্দ্রিয়ের অগম্য নয়, বরং ভূমিজোড়া স্বাদে গন্ধে স্পর্শে তার অধিকার। জাগতিকভাবে, সে আমার। দেবতারা থাকুক, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে অথবা যুযুধান হয়ে। একা বধ্য আর নয় এ মর্ত্য হৃদয়!



নির্ঘুম সময়খন্ড অন্তে
ইচ্ছে করছে পরের একশ বছর শুধু ঘুমোই।
যে কালো মুখোশের অন্ধকার ঘুমোতে দেয়না, শুধু রাত্রিকে ঘন করে, দ্বারপাল, তাকে ভেতরে ঢুকতে দিয়োনা। দ্বিখণ্ডিত করো তার সূক্ষ্মদেহ,কেটে ফেল রক্তবীজের মত শত-সহস্র মাথা।
ভাবছি, প্রতি-মূহুর্ত মৃত্যু হয়ে ঝরে পড়ছে যত লাল, সব তোমায় দেব যাদুগর.... তুমি তোমার শেখা সববিদ্যা একত্র করে, ওদের মধ্যে প্রাণ এনে দেব, অবেলার সহচরী, হাতে হাত রেখে নদি পার হতে পারি যদি, একসাথে।
কিন্তু মুখোশের পর মুখোশ এঁটেও রোধ করা যাচ্ছেনা শ্বাসরোধকারী কুয়াশাচ্ছন্ন প্রাতঃকাল। সূর্য মহা অভিমানে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আত্মগোপন তৎপর, মাৎসন্যায়ের সুযোগে পাঁচটা বিকেল পাঁচটা নিষ্ফলা ঢালে ঢলে পড়ে। কালকেউটেগুলো কালে কালে জিতে যায়, অনায়াসে






অনির্বাপিত বোধ, তোমাকে

অতীত-ভবিষ্যৎ পর‍্যালোচনায়, বহুবিধ বিচার বিবেচনায়, যুক্তি-অযুক্তির কাটাকুটির শেষে, একটি স্থির সিদ্ধান্তে এসে রাস্তা শেষ হয়েছে বনচারিণীর।
দশদিক, নয়গ্রহ, সপ্তসাগর, পরিচিত দৃশ্য, অতিশ্রুত ধ্বনি, বহু-গমনে অক্লান্ত শরীরজলের সুবাস সায় দেয় তাতে।
বোধিবৃক্ষ সব অপরাধ তোমার।
এই যে ক্রমাগত কুম্ভীপাকে ঘুরে যাচ্ছে শোক, মোহ, ভ্রান্তবুদ্ধি...চিরস্থির পর্বতপ্রমাণ দ্বন্দ্বসমূহ... তোমার মৃদু-শীতল ছায়াশরীর বহুপূর্বে মুক্তিস্নান এনে দিতে পারত।
এই অনির্দিষ্ট পঞ্চইন্দ্রিয়ের অবারিত দ্বার, যার এপারে ওপারে আরো আরো বদ্ধ দ্বাররুদ্ধ প্রকোষ্ঠ, বর্মধারী দ্বাররক্ষকের ভয়াল অক্ষিসঞ্চালন কত যুগ কত বৎসরকাল, কে নেবে তার দায়ভার!
যদি পলাশে শিমূলে এলে, এত বিলম্বে কেন!
হয়ত কতবার পেরিয়েছ অন্তঃসলিলা বিষাদ, চেনা রাস্তায়, প্রস্তরীভূত আত্মার অবসাদে, অবহেলায় বিপরীতমুখে, "ও কে? ওইমুখ আমি তো চিনি না! "
এইভেবে।
আজ যে আকাশ-পাতাল, স্বর্গ-নরক, আসক্তি-বিরাগ, স্থিতি-প্রলয়, প্রকৃতি-পুরুষের সরলরৈখিক সহাবস্থান, চিরকালীন সত্য হতে পারত তো! ত্রৈকালীক অপেক্ষার প্রয়োজন তো ছিলনা !
বোধিসত্ত্ব , ক্রোধে পুড়ে যাই অহর্নিশ।
এলে যদি, এমন অবেলায় কেন!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

  1. উত্তরগুলি
    1. আমার লেখায় আপনি ভাবনার রসদ পেয়েছেন, এটা আমার সবথেকে বড় পাওয়া! :)

      মুছুন
    2. আমার লেখায় আপনি ভাবনার রসদ পেয়েছেন, এটা আমার সবথেকে বড় পাওয়া! :)

      মুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন