রানা বসু - মায়াজম

Breaking

২ নভে, ২০১৫

রানা বসু

                               
                                              বিষ -অর্জন



ধরা যাক, একের পিঠে অনেকগুলো শূন্য বসাচ্ছি। একে কি 'বিসর্জন' বলা যায়! আসলে আমি ভাবছিলাম বিভিন্নভাবেই তো আমরা আমাদের কল্পনার বিষয়গুলোকে ছড়িয়ে দিই, তাত্ লাগাই। তাহলে আমি, হ্যাঁ শুধু আমি যদি বিসর্জনের এরকম একটা সংজ্ঞা দিই, মেনে নেবে কি তোমরা? অথবা যদি চুমুকে বারবার একই কথা বলি তাকে কি তোমরা বিসর্জন বলতে পারো!!
সকালে ঘুম থেকে ওঠার একটা ফান্ডা আছে আমার। রাতে না ঘুমনো বা ঘুমোবার আগে সকালে ভাইট্যাল একটা কাজ আছে ভেবে টেনশনে ঘুমোতে যাওয়া। দেখা গেছে এই ক্ষেত্রগুলোতে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায় আমার। আর তারপরই হয় ফেসবুক নয়ত হোয়্যাটস্ আপের ভিতর ঢুকে পড়ি আমি। বেশ কিছুক্ষণ। হঠাৎ মনে হল বছর থেকে শুরু করা যাক। অমুক বছরের তমুক মাসের এত তারিখে ওই বার সকালের এই সময় আমি মোবাইলের সেই অ্যাপস্ টার ভিতর। কতগুলো মোড়ক ভাঙলে তবেই আমায় পাওয়া যায়। 'বিসর্জন' কথাটা নিয়ে এবার ভাবতেই হবে। আগামী পরশুর মধ্যেই লেখাটা দেবার কথা।
আসলে (নাকি নকলে) সেই ধর্ষিত মেয়েটার কথা বা তার সাথে মা দুগ্গার কথা জড়িয়ে দশমীর পর পরই কৈলাসে ফিরে যাওয়ার কোনো গল্পে বিসর্জন আসে, কিন্তু আমি ওই বিসর্জন শোনাতে চাই না। চুমু আমায় বলেছে, 'আমি যদি তোমাকে ভালো নাও বাসি, তুমি তাও আমাকে ভালোবাসবে?' এখানেও 'বিসর্জন' পুশ করা যায়। কিন্তু সবাই তো এই ফাঁকগুলোই ব্যবহার করে। আমি তা চাইছি না, ঠিক যেমন সাইকেল থাকলেও আমি বেশিরভাগ দিনই হেঁটে বাড়ি ফিরি। সেখানে আমি ছাড়া আর বলার অধিকার নেই কারও। একমাত্র আমিই সে, যে বিসর্জন নিয়ে কথা বলতে পারে। তোমরা সেখানে শ্রোতা। শুনতে হবে। অথবা না শুনে অন্য কোনও বিষয় নিয়ে ভাবতে পারো। পাশে বসিয়ে রাখা প্রেমিকাকে 'চুমু' খেতে পারো। হয়ত সেও এটাকে 'বিসর্জন' ভাববে কখনও।
তেতলার ছাদ থেকে আমি লক্ষ্য করেছিলাম তুমি আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে। এখানে 'তেতলার ছাদ' টা মিথ্যে। কারণ আমাদের একতলা বাড়ি। প্লাস্টার নেই। শুধু এই কথাগুলো বলার জন্যই ওই মিথ্যে। তাহলে এতবড় মিথ্যেটা আমি কেন বললাম, জিজ্ঞেস করো। কিহল, জিজ্ঞেস করো।
— বলেছিলাম তোমায়। আমি শুধু আমার, সরি, প্লিজ সোনা রাগ কোরো না, আমাদের কথাই বলব। কিন্তু তুমি তো সিগারেট খাও না, বাড়িতেও খাওয়া যায় না। তাই ওদের বাড়ির দোতলার ছাদ থেকে সিগারেট খেতে খেতে আমি সদর দরজায় নজর রেখেছিলাম। দোতলার ছাদ মানে তো তেতলাই বলো, আরে ফ্লোর সেন্সে গ্রাউন্ড দিয়ে শুরু হয়। আমি তাহলে কি করব বলো, গুলিয়ে ফেলি। তাবলে রাগ করবে! 'রাজস্হানের মরুদ্যান' দেখার পরদিন ছবি পাঠাবে? এতটা, এটা কি করে পারো গো তুমি! আমি তাহলে 'বিসর্জিত' !!!
ভালো বা খারাপের কথা আমি বলিনি কখনও, আসলে বলতে পারিনা। আমি মধ্যবর্তী। কেটে যায়, কাটিয়ে দিই, কাটলে লাগে, লাগলে ভালো, না লাগলে আরো ভালো। এভাবে, ওভাবে আর সেভাবেই আমি সপ্তমীর দিন বেরোলাম। একপাশে তুমি, অন্যপাশে ঢেউ, ভাইজাগ, কালাপাহাড়। বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু, বিচ্ছু ও পঞ্চু। ছেঁড়া জিন্স, সালোয়ার আর রড্ কোশ। তুমুল হই-হট্টগোল। তোমার কথা শুনলেও তোমায় আমি 'hate' করব না, এই আমি বামনগাছির নামে আত্মহত্যা করলাম। আরে ধুর, ওটার মানে —'তোমার নামে শপথ করলাম'। জোড়া মন্দিরের পাশে বসে শেষ সুখটান দিয়ে ফিল্টার টা 'বিসর্জন' দিলাম। চলো, মেছেদা যাব। বাগনান, ঘোড়াঘাটা, দেউলটি, কোলাঘাট, মেছেদা। হাত ধরব তোমার। তুমি চেয়ে থেকো। 'বিষ' অর্জন করে আজই বিষাক্ত হব, চলো।
একমাস ছুটি হলে কি অটো চলাচল বন্ধ হবে!! রিষার মুখটা কতদিন দেখা হয়নি। কতদিন কথা বলিনি ওর বিপরীতে বসে। সেই ঠান্ডা ঘর, বিছে তাড়ানোর গল্প, উলবোনা, সরু আঙুল, টিলা, চাদর পাতা মেঝে, অন্ধকার ঘর আর ব্লোজব। কাটা ঘুড়ির অবাধ পতনের শব্দ! আলো আর অন্ধকারের মাঝখানে চোখের চেয়ে থাকা না থাকার দুরন্ত ভূমিকার মত, ঠোঁটের গন্ধ, গন্ধের ঠোঁট। ঘড়ি দেখতে কোনকোশ লাগছে আমার। লাইট-অ্যাকশন------'বিসর্জন'।
বাবা বলেছে, আমায় নিয়ে এক বন্ধুর কাছে যাবে। সে নাকি আই.এ.এস. , যদি একটা হিল্লে হয়। নিদেনপক্ষে দোতলার ছাদ, সদর দরোজা, তুলসীতলা, একটা বাইক আর এ.সি. ।
- দাঁড়াও, এসে কথা বলছি। বাবা ডাকছে। কি বলছ, বাবাই।
- আয় ,ওখানে বেলপাতা রাখা আছে। 'শ্রী শ্রী দূর্গামাতা সহায় লিখে, চল, মাঠে যাই। বিসর্জন টা দেখে আসি। চল্ চল্ ..

1 টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র