এজেন্ট
দক্ষিণের জানলাটা দিয়ে হুড়মুড় করে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে পড়ছে ঘরের ভিতর । সেই বাতাসে এলোমেলো হয়ে খেয়াল খুশি মতো উড়ছে বিদিশার চুল, শাড়ির আঁচল । দূর থেকে বিসর্জনের ঢাকের শব্দ ভেসে আসছে । মায়ের বিসর্জনের করুন সুর তার মনটাকে আরো অশান্ত করে তুললো. রাত তখন প্রায় দশটা বাজে । বারান্দার টেবিলে রাঁধা খাবার পড়ে আছে.প্রশান্ত এখনো বাড়ী ফেরে নি,সেই কোন সকালে বেড়িয়ে গেছে । অন্য বছর হলেও হতো , আজকের দিনে সে বিসর্জনে যায়,বন্ধুদের সাথে ফুর্তি করে । কিন্তু এ বছর টা একটু আলাদা.এ বছর তার আর কোনো বন্ধু নেই,সবাই বুঝি শত্রু ! এই তো সকাল বেলাতেই হন্তদন্ত হয়ে বাইরে থেকে এসে বিদিশা কে বলেছিল " কি দরকার ছিলো এতো সেজে গুজে সিঁদুর খেলতে যাবার ? "
বিদিশা অবাক হয়ে বলেছিল " কেন,কি হলো ? "
-" কি হলো মানে,জানোনা?,লোকে আমার পেছনে টাকা টাকা করে ছুটছে,আর তুমি ! " বলতে গিয়েও চুপ করে যায় প্রশান্ত
" টাকা তো আর তুমি নাওনি,কোম্পানি জালিয়াত হলে তুমি কি করবে " নির্লিপ্ত হয়ে জবাব দিয়েছিল বিদিশা
-" লোকে কোম্পানি চেনে না,আমায় চেনে "
-" তো বোঝাও তাদের "
বিদিশার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে গেছিলো প্রশান্ত,হঠাৎ দু বছরের বাচ্চা টা কেঁদে উঠলো . ছুটে গিয়ে বাবু র মাথায় হাত রাখলো সে." একি ! জর টা কমেনি তো "
-" সকালেই তো বলেছিলাম ওষুধ টা নিয়ে এসো,আনলে কই "
সেই তখনই ওষুধ আনতে বেড়িয়ে গেছে প্রশান্ত,এখনো ফেরেনি.
একরাশ উদ্বেগ নিয়ে ঘুমন্ত ছেলের পাশে এসে বসলো বিদিশা .
বাইরে বারান্দার লাইট টা কদিন হলো খারাপ হয়ে গেছে,আর সারানো হয়নি । হঠাৎ সেই অন্ধকারে একজনকে টলতে টলতে আসতে দেখলো বিদিশা । ছুটে গেলো দরজার কাছে । দরজা খুলতেই সে মানুষটা জড়িয়ে ধরলো তাকে । সে মানুষটার সারা শরীরে রক্তের দাগ,জামা কাপড় ছিঁড়ে গেছে । বিদিশা কাঁপতে কাঁপতে বললো," একি,কি অবস্থা হয়েছে তোমার,কার সাথে মারপিট করে এলে ? "
প্রশান্ত অস্ফুটে শুধু বললো," আমি আর পারছি না বিদিশা,আর পারছি না "
বিদিশা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে,মনে মনে আসন্ন বিপদের কথা ভেবে শিউরে উঠলো ।
সুচিন্তিত মতামত দিন