পদ্য পত্রিকার সম্পাদক রিমি দে - মায়াজম

Breaking

৩১ মার্চ, ২০১৭

পদ্য পত্রিকার সম্পাদক রিমি দে


মায়াজমঃ সভ্যতার আদিলগ্নে সমাজ অনেক বেশি সাম্য ছিল।পুরুষ ও নারী সমপর্যায়ে উঠে সাম্য স্বাধীনতা ভোগ করতেন। ধাতুর ব্যবহারের আগে পর্যন্ত এরকম দেখা যায়।ধাতুর ব্যবহার যেই শুরু হল  তৈরি হল হাতিয়ার।সাম্য চলে গেল পিছনের সারিতে।সেই থেকে দৈহিক শক্তি মানসিক শক্তির উপর প্রাধান্য বিস্তার করল।যা আজ পর্যন্ত চলছে । সভ্যতার বিবর্তনে নারীর অবস্থান আপনার চোখে কেমন ?




রিমি দেঃ সভ্যতার আদিলগ্নে যা ছিল তা আজ ইতিহাস। মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল সভ্যতার ক্রমবিকাশেরএকটি অধ্যায়।পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং পরিবারতন্ত্র আসে আরো পরে। সমাজবিদেরা   পরিবার উদ্ভবের  সময়কালকে   আরণ্য, বর্বর এবং সভ্যতা  এই তিন পর্বে  বিভক্ত করেন। আমার মনে হয় আদিযুগের মানুষ অসভ্য অবস্থা থেকে বর্বর অবস্থায় এসে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা মধ্যে পড়ে। তবে  হোমোসেপিয়েন্স যখন যাযাবর ছিল, যখন  পরিবার টরিবার ছিলনা, যখন মানুষের অবাধ যৌনতা ছিল,তখনও কিন্তু নারী পুরুষের কাজের বিভাজন ছিল। নারী ঋতুস্রাব , গর্ভধারণডঃ গর্ভবতী হওয়া এবং সন্তান প্রসবের কারণে   যাযাবর পর্বে  স্থানান্তরের  সময়ে ভার বাহকের কাজ  করত। আর পুরুষ জন্তু জানোয়ার থেকে নিজেদের বাঁচাত । এসব ঘটনা সকলেরই কম বেশি জানা ধাতুর ব্যবহারের জন্য নারীজাতি কিভাবে  পেছনে পড়ল,তা ঠিক জানা নেই, তবে আর্যজাতি আসবার পর পরিবার গঠনের প্রয়োজন পড়ল। ধর্মেরও প্রচুর উস্কানি ছিল। তবে মূলত জৈবিক কারণেই  নারী নির্ভরশীল হল। পুরুষ হল রক্ষাকর্তা।  মাতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীকে দাসীর চোখে দেখা হতনা। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করতে গেলে নারীর সম্মান ছিল। তাই বলে  মাথার পেছনদিকে চোখ নিয়ে আমি ব্যকোয়ারড হাঁটব ,তা চাইবনা কখনই ।আজ আমরা আদিম অবস্থার মধ্যে নেই। সভ্যতা আমাদের জীবনে আলো দিয়েছে। শিক্ষা, চেতনা, মননে,চিন্তায় ও বিজ্ঞানে আমরা সমৃদ্ধ। আমি মনে করি নারী পুরুষ বায়লোজিক্যাল দিক দিয়ে দুটো আলাদা প্রজাতি হতে পারে,কিন্তু কাজের জায়গায় তারা দুজনই  সহমর্মী ও সহকর্মী। যার কোন লিঙ্গবিভাজন হয়না। আমরা যারা শিক্ষিত তারা যেভাবে মানসিক গঠনটাকে রূপ দেব সেটাই বিশ্বাস করব। উলটো ভাবেও বলতে পারি ,বিশ্বাসের সাথে মিলিয়ে নেব আমার এবং আমাদের বেঁচে থাকার       রস , রহস্য ও রসদ। আমি প্রাণের ভালোবাসা দিয়ে একটি কাগজ সম্পাদনা করি,আমি বিশ্বাস করি আমি কল্পনায় আগে তাকে  দেখে নিতে পারি, । কাজ ই আমার শ্রদ্ধা- ভালবাসা। সম্পাদক একজন মানবমন। এই কাজে কোন না কোন ভাবে যারা যুক্ত তারাও এখানে অঙ্গীকারবদ্ধ।  এখানে কোন  নারী পুরুষবাদ  নেই। মানবতাবাদই  শেষ কথা। তবে আমার মত করে সবাই ভাববেন সেটাও আশা করা যায়না! এই বিষয়গুলোর ভাবনা আপেক্ষিক এবং বড্ড সংবেদনশীল।পাশাপাশি এও বলি যে আমাদের সমাজে নারীর মত পুরুষ এবং পুরুষের মত নারীও আছেন। তাদেরও নারীমন এবং পুরুষমন রয়েছে। শরীর হয়তো তাদের মনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনা। তাদের ঐ সত্যিকারের মনটাকেও আমি গুরুত্ব দেবার কথা  ভাবি।










মায়াজমঃঅধিকার ভোগের মধ্যেই কি স্বাধীনতা লুকিয়ে আছে ? স্বাধীনতা কি চোখে দেখা যায় ?স্বাধীনতা বলতে আপনার কী মনে হয় ? নারীস্বাধীনতার কথাই বলছি।


রিমি দেঃ আদিম যুগের প্রসঙ্গ এখানে অপ্রাসঙ্গিক, তাই তা আনবনা। এই সময়ের কথাই বলব। স্বাধীনতা অনেক রকমেরই হতে পারে। তবে হ্যাঁ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারীকে পরাধীনতা থেকে অবশ্যই কিছুটা রিলিফ দেয়। আর পাশাপাশি এটাও সত্যি যে যথাযথ শিক্ষা না থাকলে নারী অর্থ উপার্জনের উপযুক্ত হবেই বা কিভাবে!! আজকাল মানুষ অনেক সচেতন , কাজেই নারীশিক্ষার প্রচার ও প্রসার বহুব্যাপ্ত।  স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচার নয়, ইতিবাচক চিন্তা ভাবনাই নারী স্বাধীনতাকে নিয়ে যায় উন্নয়নের পথে। আমি কর্মে বিশ্বাসী।  পরিশ্রম আর সৃজনের মধ্য দিয়েই নিজের মত প্রকাশে সাবলীল। 
যে কাজ  আমার ও সমাজের  নেতির বিন্দুমাত্র বাহক, তা আমি পরিত্যাগ করতে পছন্দ করি।
আমার মনে হয় স্বাধীনতা পরিতৃপ্তির একটি  বিশেষ অনুভূতি। এমন একটি ভাবের লালন ও তার  মধ্য দিয়ে যাপন , আমাকে মুক্তির আনন্দ দেয় । 











মায়াজমঃশারীরিক এবং মানবিক সক্ষমতায় একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবুও নারীরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ল বলে কি মনে হয় আপনার ?


রিমি দেঃ নারীদের পরাজয়ের তত্ত্ব অনেক সমাজবিজ্ঞানী রচনা করেছেন।সেগুলোর মধ্যে এঙ্গেলসেডঃ রচনা বেশি গ্রহণযোগ্য। উনি পিতৃতন্ত্রের ইতিহাস ও অর্থনীতির এক সংহত দিক  বিশ্লেষণ করেন।
আমরা জানি মাতৃতন্ত্রে কোন ব্যক্তিমালিকানা ছিলনা। সভ্যতার ক্রমবিকাশের কোন
এক স্তরে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্ভব হয়। পূর্বের সামাজিক সাম্যাবস্থার বিলুপ্তি ঘটতে থাকে।
সম্পত্তির ব্যক্তিঅধিকার,নারী-অধীনতা, দাসপ্রথা দেখা দিতে থাকে। নারী হয় গৃহবন্দি। এক
পুরুষের সম্পত্তি। অর্থাৎ নারীকে যৌনভাবে একগামী করে দেয় পুরুষ। অথচ নিজেদের
বহুগামীতা বজায় ছিল। ধীরে ধীরে নারীকে মানসিকভাবেও একেবারে দুর্বল করে দেওয়া হল।
নারী হল অসহায় এবং শুধু পুরুষের ভোগ্য ও সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র।
আমার মনে হয় বছরের পর বছর নিষ্পেষিত হতে হতে সেই  না পাওয়াটাই মর্মে গেঁথে গেছে।
আজ নারী শিক্ষিত,স্বাবলম্বী। তবু মজ্জাগতভাবে দমে থাকবার প্রবণতা এখনও প্রচুর নারীর মধ্যে দেখা যায়। নারীর ভাল-মন্দ বিচার হয় ! পুরুষ খোলামাঠে দাঁড়িয়ে নারীকে অসম্মান ও অবজ্ঞা করে , নারীকে তা সইতে হয়!! শুধু পুরুষ নয় ,কিছু নারীও সেই সুরে স্বর মেলায়। নারী যতদিন না মানসিকভাবে উন্নত হবেন, ততদিন নারী দুর্বল থেকে যাবেন! শুধু সংগ্রামে আর আইনি প্রচারে কিছু হয় না।হম জোর দিয়েই বলছি কিছু নারী নিজেদের পুরুষের সমকক্ষ ভাবতেই পারেননা! এখনো শাড়ি গয়নাতেই খুশি থাকেন! করুণা হয় তাদের জন্য !










মায়াজমঃভ্রূণের নির্মাণ নারীকে শস্যরূপ মাতৃত্ব দিয়েছে। নারীরা শক্তিবীজ ধারণের আধার।আজকে উদোম স্বেচ্ছাচার জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে , নারীরাও কিন্তু এর বাইরে নয় । এই বেহিসেবি জীবনের মধ্যেই কি তাহলে এখনকার নারী খুঁজে পাচ্ছেন  জীবন, আপনি কি মনে করেন ??


রিমি দেঃসভ্যতা মানুষকে নিয়মে বেঁধে রেখেছে। আদ্যিকালেতো কোন নিয়ম টিয়ম, রীতি-নীতি ছিল না।জীবন যাপনেও বিন্দুমাত্র নিষেধাজ্ঞা ছিল না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ছিল স্বেচ্ছাচারপ্রবন। পরবর্তীকালে যখন পরিবারের অন্তর্মুখ বহির্মুখ তৈরি হল, সংসারে নারীর স্থান হল অন্দরমহলে। অত:পর বিবর্তনে সভ্যসমাজ সভ্যতর হল।রেনেসা এল। নারী সমস্ত রকম আলো দিয়ে নিজের ভাগ্য
জয় করে পুরুষের কাঁধে হাত দিয়ে চলা শুরু করল তখন পুরুষের মত নারীও মনে করতে শুরু করল যে, আমোদ প্রোমদের জোয়ারে  তারাও গা ভাসাতে পারে! আসলে এই নিয়ম ভাঙতে গিয়ে মেয়েরাই বিশেষভাবে  স্বেচ্ছাচার  বিশেষণ লাভ করল। অথচ পুরুষের ক্ষেত্রে বেহিসেবী জীবনযাপন সমাজ তথা  পরিবারের চোখে স্বাভাবিকই থাকল। আর জন্মলগ্ন থেকেইতো নারী সন্তান ধারক। তাতে কী ! এর সাথে সাম্যাবস্থার বিরোধ কোথায় !! অগ্রগতি সবসময় সিস্টেমের হাত ধরে চলে। স্বেচ্ছাচার সিস্টেমকে ব্যহত করে। যা  সমাজকে  কলুষিত করে।নারী-পুরুষ যিনিই স্বেচ্ছাচারী তিনিই সমাজের অমঙ্গল   ডেকে আনেন!!এতে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না। 










মায়াজমঃ নারীর বিকাশ নারী শরীরের প্রতিবন্ধী ।এটা আপনি বিশ্বাস করেন ?করলে কেন আর না করলেইবা কেন বিশ্বাস করেন না ?

রিমি দেঃ কখনোই না। শরীর  নারীর সার্বিক  বিকাশের পরিপন্থী হতে পারে না। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাই একটু একটু করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে  ধীরে ধীরে মানসিক বিষ প্রবেশ করিয়েছে সমাজের অন্দরে। বিশ্বাস করিয়েছে নারী ও সমাজকে যে নারী দুর্বল ! নারীও খুইয়েছে আত্ম নির্ভরতা ! গোটা সমাজের মন এখন একথাই বিশ্বাস করে যে নারী শারীরিকভাবে পুরুষের থেকে পিছিয়ে।এমনকি আজকের আধুনিক সমাজে অতিরিক্ত শিক্ষা নিয়ে নিজেকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অর্জন করার পরও নারী ব্যাধিমুক্ত হতে পারেনি! সমাজও পারেনি । সমস্যাটা সেখানেই।  এখানেও সেই সিস্টেমকেই দোষ দেব। অথচ সিস্টেম ছাড়া কোন পথও নেই এগিয়ে যাবার ।আমার মনে হয় নিয়মের বেড়াজালে থেকেও চিন্তা ভাবনার উদারতা হয়ত কোনদিন ভাবতে শেখাবে যে  নারী পুরুষ এক বোঁটারই দুটো ফুল , এমন  স্বপ্ন আমি দেখতে চাইব ।

1 টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র