প্রিটি উওম্যান বা সেক্স বোমার তকমা ভালো না পিওরলি হোমো স্যাপিয়েন্স হবার চেষ্টাটা বেশি জরুরী , ভাবতে ভাবতে হাতে উঠে আসছে ভার্জিনিয়া উলফের চিলেকোঠার নিজস্ব ঘর । মেরিলিন মনরোর লাস্য নাকি মার্গারেট থ্যাচারের লৌহ ইস্পাত মার্কা ইমেজটি ফলো করবো ভাবতে ভাবতে দীপা মেহতার ‘ওয়াটার’ , শাবানা , স্মিতা পাতিল , অপর্ণা কিম্বা নবনীতা দেবসেনের মত একা একা থাম্বা হয়ে উঠবো এই ইচ্ছেতেও জল ঢালতে থাকি । গাছ হয়ে বেরোয় এক মন্তব্য , ‘এখন পাড়ার নেত্রী , ভবিষ্যতে অরুন্ধতী রয় হবার দৌড়ে সামিল হয়েছেন’। লোকটিকে কি আরও বলতে দেওয়া উচিৎ , ভাবতে ভাবতেই ব্লক করে বসি । তসলিমা স্বভাবজাত বিতর্কিত , স্বামীজি বলছেন , মেয়েরা নাটক নভেল পড়বে না , মনু বলছেন মেয়েরা নরকের দ্বার , সেই দ্বারে প্রবেশের জন্য উন্মুখ যারা , তারা নরকের কীট নয় কেন প্রশ্ন করতেই পেপার জুড়ে ধর্ষণ , কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি , সিমোনের ‘সেকেণ্ড সেক্স’ , ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স , কণ্যাভ্রূণ হত্যা , ডাউরি ডেথ , সেক্স ট্রাফিকিং এসে নজর ঘুরিয়ে দিল আরও গূঢ় রহস্যাবৃত প্রশ্নের দিকে । ফোকাসটা ঠিক রাখাই দায় হয়ে উঠলো । ভোট দানের অধিকার , সম মজুরির দাবী , সংসদীয় গণতন্ত্রে সমান প্রতিনিধিত্বের দাবী ওঠা প্রত্যেক ‘নারী দিবসের’ আগে পিছে, তারপর ঘরে বাইরে সংসারে যেন মেয়ে মানে মানুষ নয় , কন্যা , জায়া , জননী যার আত্মপরিচয় নেই নাম নেই কর্ম নেই স্বীকৃতি নেই বাক্য নেই যন্ত্রণা নেই নিজস্বতা নেই ইত্যাদি আরও অনেক এটা সেটা নেই বলে আইন আছে প্রহসন আছে অমান্য করার মজা আছে কলার তোলা ছিপে তোলা আছে ল্যাজে খেলানো আছে দায় আছে কর্তব্য আছে রিচুয়ালস আছে বাহারি মায়াবিনী কস্তুরি গন্ধ আছে প্রলুব্ধ করবার মত যোনি আছে স্তন আছে ললিপপ আছে ।
প্রথম চমকে গেলাম প্রিয় বান্ধবীর কথাটা শুনে । বলে কী মেয়েটা ? বয়স তখন মেরেকেটে তেরো । নয়ে প্রথম যৌন হয়রানির শিকার যৌনতাকে না বুঝেই । তখনো জন্ম প্রক্রিয়া জানি না । এক্স ওয়াই ক্রোমোজম চিনতাম না । খুব চাইতাম , ‘হে ভগবান , পরের জন্মে ছেলে কোরো’ ।কি সুন্দর যা খুশি করা যাবে , যেখানে খুশি যখন তখন যাওয়া যাবে , খেলার মাঠে মেয়ে বলে বাদ দেবে না আমার প্রিয় ক্রিকেট আর ডাংগুলি থেকে , একটা চাকরি করবো , অনেক টাকা পেলে নিজের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়বো লং ড্রাইভে , শক্তি সুনীলের মত লেখক হবার ছুতোয় পালিয়ে যাবো বাড়ি থেকে , হিপি হয়ে মারিজুয়ানা গাঁজা ফুঁকে নাচবো গাইবো ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’, ডোভার লেন এ মিউজিক কনফারেন্সে রাত কাটাবো , ট্রেকিং যাবো সান্দাকফু ক্যাম্প করবো অযোধ্যা পাহাড় পূর্ণিমা রাতে সমুদ্র স্নান করবো , মা বাবা পেছন পেছন যাবে না পাহারা দিতে । গুলাম আলি বা বিটোফেন শুনতে শুনতে নীল নীল অন্ধকারে হাতে তুলে নেব অমৃত ভান্ড । সেইসময় কিনা ও ঘোষণা করলো , ‘মেয়ে হয়ে জন্মানোর জন্য আমি গর্বিত’।তাই বুঝি ? তোকে কেউ বলে না এটা করিস না , সেটা ধরিস না ,ধিঙ্গিপনা বন্ধ করে লক্ষীমেয়ে না হলে বর জুটবে না , এটা বলা তোকে মানায় না , একলা একলা ওখানে যাস না ? জোরে হাসিস না ? যার তার সাথে কথা বলিস না ? যাকে তাকে ছুঁতে দিস না নিজেকে ? তারপর নিজের মত একটা ব্যাখ্যা তৈরি করে নিয়েছিলাম ওর মন্তব্যের । ও অসম্ভব সুন্দরী , দুরন্ত গান গায় , ছেলে জোয়ান বুড়ো , পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে ওর সাহচর্য পেলে বর্তে যায় । সবখানেই বাড়তি মনোযোগ পেয়ে থাকে । ও কি করে জানবে কালো মেয়ের বাবা টাকা জমায় , অনেকগুলো ভাইবোন থাকলে টানাটানির সংসারে গুরুত্ব খানিক কমে যায় মেয়েটির ? আজ ভাবি ও কতটা পরিণত মানুষের মত বলেছিল কথাটা কতটা আশাবাদী স্বপ্নদ্রষ্টার মত ভেবেছিল কথাটা আর আমিই বা তার কতটা হাস্যকর অপরিণত পাঠোদ্ধার করেছিলাম ! তারপর বিপ্লবী চেতনা জলাঞ্জলি দিয়ে যথাসময়ে আমিও আমার প্রেমিকের বউ হয়ে গেলাম । জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হলে বুঝতে পারলাম সব প্রেমিকই একসময় স্বামী হয়ে ওঠে প্রভুত্ব বিস্তারে অনাগ্রহী থাকে না সুযোগ পেলেই । হোম ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা থেকে ডিগ্রী লাভ করতে করতে সাজিয়ে ফেললাম ‘ডলস হাউস’। তাও বাঁচিয়ে দিলো চাকরিটা । অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পূর্ণ সদব্যবহার করে বাবা মায়ের মেয়ে নয় , সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে করতে , পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বাইরের লোকের বাঁকা কথা শুনতে শুনতে ঘরের ইগোর লড়াই সামলাতে সামলাতে আবার গান গাওয়া কবিতা লেখা ভ্রমণ শুরু করতে করতে দীর্ঘ হাইবারনেশান কাটিয়ে মেয়েছেলে থেকে মানুষ হয়ে ওঠার জন্য সামনের দিকে তাকিয়ে রাস্তা পেরচ্ছি আমার শর্তে অল্পটুকু বেঁচে থাকবো বলে । গল্পটার কপিরাইট আমার নয় । এটা সকলের ঘরোয়া কথার মাখন রুটির একটি স্লাইস মাত্র ।
সুচিন্তিত মতামত দিন