লেখক পরিচিতি-
ইস্তোরিজা অফ্ আ হরি'ফিক্ রাইটার- 'অজিত রায়' :
------------------------------------------
------------------------------------------
“ A great book grows directly out of life : in reading it. we are brought into large, close and fresh relations with life : and in that fact lies the final explanation of its power. Literature is a vital record of what men have seen in life, what they have experienced of it. What they have thought and felt about those aspects of it which have the most immediate and enduring interest for all of us ; It is thus fundamentally an expression of life through the medium of language.”
------- W. H. Hudson
------- W. H. Hudson
সাহিত্য ও জীবনের পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক এরকমই । অর্থাৎ জীবন প্রবাহের বিচিত্র ও জটিল অভিজ্ঞতা সমূহকে আত্মস্থ করে কোন বিশেষ সৃজনরূপে যার উদ্ভব । অজিতের সমগ্র জীবনটাই যেন একটা সাহিত্য, উপন্যাসের প্লট । অষ্টাদশ শতকে ইংরেজি উপন্যাসের সূচনাপর্বের অন্যতম খ্যাতিমান লেখক হেনরি ফিল্ডিং তাঁর ‘Tom Jones’ উপন্যাসে যে স্বাধীনতা দাবি করেছিলেন-“As I am in reality, the founder of a new province of writing, so I am at liberty to make what laws I please therein.” অজিতের কন্ঠেও যেন সেই ধ্বনি বারবার ফিরে ফিরে আসে ।
অজিত কেবল বর্তমান তথা সমকালের কারবারি নয়, সে অতীতেও যায়, তবে বর্তমানকে অগ্রাহ্য করে নয় । নিছক অতীত ইতিহাসের তথ্য ও চরিত্র বিবৃত করা তাঁর উদ্দেশ্য নয়, অতীতের যে সত্য দেশকালে লগ্ন, অথচ যার সঙ্গে বর্তমানের অবিচ্ছেদ্য যোগ রয়েছে তাকেই পরিস্ফূট করা । কল্পিত বাস্তবের শিল্পভূমিতে সেই অতীতের পুনরুজ্জীবন । অজিতের উপন্যাসে একদিকে যেমন রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার ইতিহাস বৃত্তান্ত, জীবনী, সাংবাদিক কড়চা-প্রতিবেদন ইত্যাদির অবাধ আনাগোনা, তার অপরদিকের সীমানায় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে রোমান্স, রূপকথা, স্বপ্নের এক কল্পরাজ্য । বাস্তবের সীমা থেকে রোমান্সের দিকে কখনো কখনো ঝুঁকে পড়ে তাঁর সৃজনবৃত্তি । একপাশে প্রাত্যহিক সমাজ-জীবনের-বাস্তবের আক্ষরিক সত্য ও তথ্যের অনুক্রম, আর অন্যদিকে স্বপ্নময়তার অলীক হাতছানিকে একত্রে রেখে উপন্যাস নির্মাণ করে ব্যক্তি ও সমষ্টির, বাস্তব ও কল্পনার এক শিল্পসিদ্ধ, আলঙ্কারিক আশ্রয় ; তুলে ধরে নির্দিষ্ট স্থান, কাল ও পাত্রের এমন এক গভীর মর্মসত্য যা দেশকালের সীমাকে অতিক্রম করে বাস্তবতার সংকীর্ণতাকে ঘুচিয়ে দেয় । তাঁর উপন্যাস ন্যাচারালিজম্, ম্যাজিকরিয়ালিজম্, সুররিয়ালিজম্, চৈতন্যপ্রবাহরীতি- পেরিয়ে সমকালীন আঙ্গিক ও প্রকরণে অন্বেষার নতুন নতুন দিশাকে উন্মোচিত করে চলেছে ।
অজিত কেবল বর্তমান তথা সমকালের কারবারি নয়, সে অতীতেও যায়, তবে বর্তমানকে অগ্রাহ্য করে নয় । নিছক অতীত ইতিহাসের তথ্য ও চরিত্র বিবৃত করা তাঁর উদ্দেশ্য নয়, অতীতের যে সত্য দেশকালে লগ্ন, অথচ যার সঙ্গে বর্তমানের অবিচ্ছেদ্য যোগ রয়েছে তাকেই পরিস্ফূট করা । কল্পিত বাস্তবের শিল্পভূমিতে সেই অতীতের পুনরুজ্জীবন । অজিতের উপন্যাসে একদিকে যেমন রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার ইতিহাস বৃত্তান্ত, জীবনী, সাংবাদিক কড়চা-প্রতিবেদন ইত্যাদির অবাধ আনাগোনা, তার অপরদিকের সীমানায় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে রোমান্স, রূপকথা, স্বপ্নের এক কল্পরাজ্য । বাস্তবের সীমা থেকে রোমান্সের দিকে কখনো কখনো ঝুঁকে পড়ে তাঁর সৃজনবৃত্তি । একপাশে প্রাত্যহিক সমাজ-জীবনের-বাস্তবের আক্ষরিক সত্য ও তথ্যের অনুক্রম, আর অন্যদিকে স্বপ্নময়তার অলীক হাতছানিকে একত্রে রেখে উপন্যাস নির্মাণ করে ব্যক্তি ও সমষ্টির, বাস্তব ও কল্পনার এক শিল্পসিদ্ধ, আলঙ্কারিক আশ্রয় ; তুলে ধরে নির্দিষ্ট স্থান, কাল ও পাত্রের এমন এক গভীর মর্মসত্য যা দেশকালের সীমাকে অতিক্রম করে বাস্তবতার সংকীর্ণতাকে ঘুচিয়ে দেয় । তাঁর উপন্যাস ন্যাচারালিজম্, ম্যাজিকরিয়ালিজম্, সুররিয়ালিজম্, চৈতন্যপ্রবাহরীতি- পেরিয়ে সমকালীন আঙ্গিক ও প্রকরণে অন্বেষার নতুন নতুন দিশাকে উন্মোচিত করে চলেছে ।
অজিতের উপন্যাসে শুধু আখ্যান (plot) এবং অভিনেতারা (actors) থাকে তা নয়, সাজসজ্জা, দৃশ্য, রঙ্ অপরাপর উপাদানগুলিও বিদ্যমান । মঞ্চের ওপর নাটক যেভাবে সজীব ও প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে, সেই দৃশ্যমানতার সুযোগ না থাকলেও চরিত্রের অন্তর-বাহির, চেতন-অবচেতন কিংবা ঘটনাসমূহের পটভূমি বর্ণনায় অজিতের লেখার ফ্লেক্সিবিলিটি, সরসতার জন্য তাঁর কাহিনীগুলি আমাদের কাছে থিয়েটার বা সিনেমার মতোই জীবন্ত হয়ে ওঠে । এই কারণেই হয়তো Marion Crawford উপন্যাসকে ‘pocket theatre’ বলে অভিহিত করেছেন । ইংরেজ ঔপন্যাসিক থ্যাকারে’র মতোই অজিত রায় বলে ওঠেন, ‘আমার চরিত্রগুলিকে আমি নিয়ন্ত্রিত করি না, আমি যেন তাদেরই হাতের পুতুল, তারা আমাকে যেখানে নিয়ে যায়, সেইখানেই আমি যায় ।’
বাংলা গদ্যবিশ্বের ব্ল্যাকহোল- অজিত সাহিত্য । শুধুমাত্র লেখার বিনিময়ে এক অন্ধকার রাতে দুঃসহ অভিজ্ঞতাকে খিঁচে নেওয়া । লেখার প্রয়োজনে, সির্ফ্ লেখার প্রয়োজনে, এক ভয়ঙ্কর-অচেনা পৃ্থিবীর নাগরিক বনে যেতেও যিনি পিছপা হন না । হ্যাঁ, ধানবাদ ইতিবৃত্ত লেখার দায়ে, ১৯৯৬-এর ৩১ শে জুলাই, গভীর রাতে একদল খতরনাক্ দুষ্কৃতি তাঁকে তুলে নিয়ে যায় বাড়ি থেকে । সাথে স্ত্রী-কন্যাও । চাকু, রিভলবার ঘেঁষে রয়েছে তাঁর কানে । ঘন অরণ্যের মাঝে কেউ নেই তাঁকে রক্ষা করবার । তবু মুহূর্তকিছুতেই তিনি ভেবে নিতে পারলেন যে, তিনি মরছেন না ।
এক অগ্রজ লেখক তাঁর জীবনের গল্প শোনার পর মন্তব্য করেছিলেন, ----- "সৃষ্টি-মরীয়া পাগল স্রষ্টা !" সরলরৈখিক জীবন বিতানোর সমস্ত উপাদান-উপকরণ মজুত থাকা সত্ত্বেও, কেন তাঁর জীবন গড়ে উঠলো এভাবে ? মানি প্ল্যানিং, ফ্যামিলি প্ল্যানিং, হাউস প্ল্যানিং, আরও যা যা প্ল্যানিং-ট্লানিং, পি-এফ, গ্রাচ্যুইটি-ইত্যাদির খপ্পর থেকে বেরিয়ে তিনি-সাহিত্যের হোলটাইমার । যদি তাঁকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়, “সাহিত্যের হোলটাইমার কেন ?” , জবাব হবে তাঁর, কেন নয় ? যে সমাজে হোলটাইম্ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল-অধ্যাপক-কামার-মুচি-নাপিত রয়েছে, সেখানে হোলটাইম্ সাহিত্যিক নয় কেন ? সত্যই তো ! ভাবিয়ে তোলে আমাদের ! প্রথমে ভয় হয়, পরে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় ।
আসলে মানুষের জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন হাওয়ার মধ্যে ভাবের বাষ্প প্রচুর পরিমাণে বিচরণ করতে থাকে । আমরা আমাদের মননের চারপাশে জমাট বাঁধা অস্বচ্ছ পর্দাকে সরিয়ে, কাটিয়ে উঠে- সেই ভাবের জগতে ঢুঁ মারতে ব্যর্থ হই । কিন্তু তিনি তো অজিত রায় । পলিটিক্যাল সাইন্স-এ ফার্স্ট ক্লাস এম-এ, এল এল বি হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র সাহিত্য করবেন বলেই, হেলায় লুফে নেন দারিদ্র্যকে । তিনি মৃত না জীবিত ? ঈশ্বর না ভগবান ? স্বপ্নের সওদাগর না প্রবঞ্চক ?
তিনি কখনো ডিকেন্সের ‘David Copperfield’-এর ডেভিড, কখনো এমিলি ব্রন্টির ‘Wuthering Heights’-এর হিথক্লিফ, আবার কখনো বা এডগার অ্যালান পো’র ‘Murderers in the Rue Morgue’-এর ডুপিন হয়ে ওঠেন । জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কোন তৃ্তীয় ব্যক্তি এসে তাঁকে সমঝে দিয়ে যায়, যে, এ জীবন বড় রুক্ষ-রূঢ়-কঠিন-বন্ধুর । কিন্তু তিনি তো অজিত রায় । জম্ কর্ জিনে বালা সাহিত্যিক-ঔপন্যাসিক অজিত রায় । বন্ধুর-কঠিন জীবনকে জাপটে ধরনে বালা ব্যক্তি অজিত রায় । যাঁর কোন পূর্বসূরি নেই, নেই কোন উত্তরসূরীও । যাঁকে পথ চেনাবার কেউ নেই, নেই কোন গডফাদার । তিনি হাঁটা দ্যান নিজের পথে । হেঁটে চলে যান নিজের মর্জিতে ।
লেখা : তনুময় গোস্বামী
অনবদ্য এবং তথ্য সমৃদ্ধ l
উত্তরমুছুন