একজন আধবয়সী সুন্দর দেখতে ব্যাটাছেলে চোখ মেরে সাইকেল নিয়ে উঠে গেল পুলসেরাতে। এটা কি হলো? আমি পয়তাল্লিশের বন্ধুর জামা টেনে ধরলাম, চোখমারা পাপ নাকি অপাপ? অই যে চোখ মেরে চলে যাচ্ছে আধ বুড়ো শয়তানটা । পঁয়তাল্লিশ আমার গাল টিপে দিয়ে জানালো, এমন টপস পরেছ ! ফাসকেলাস! তাকাবেই তো সুপার ভিজিবল যে ! সব ফকফকা ! শোনো মনু, চলতি পথে এখন কোনো পাপপূণ্যির বিচার টিচার নাইক্যা । যে যেভাবে পারছে পেরিয়ে যাচ্ছে। অই অং ভং এখন রাখো চান্দু, এখন যাহা পাপ তাহাই পূণ্য।
কয় কি হারামজাদা ! এই না দুমাস আগে দাড়ি রেখে আল্লা রসূলের নাম নিয়ে শুদ্ধ হয়ে এলো! হাদিসের বই ওর বগলের ব্যাগে। যখন তখন হাদিস ছাড়ছে। শালা চান্স মোহাম্মাদ । কষে মারলাম একটা পিএল । ছিটকে পড়ল নীচে । খেঁকিয়ে উঠল ঝালমুড়িওয়ালা, এ কি কইরলেন ভাইসাব? গরীব বলে কি আমরা মানুষ না ? চোক্ষে ঠাহর পান না নাহি ? আমি দ্রুত সটকে আসি অন্য রাস্তায় ।
ও মোর আল্লা এখানে দেখি দুই নাম্বার টিকিট দিয়ে বেহেস্ত যাছে একদল মানুষ । একজন তরুণ ফেরেশতা তিনটে টিকিট দিলো পঞ্চাশ টাকা বেশি নিয়ে। আমি কনফার্ম করলাম, ভাইয়া, লঞ্চ পারাপার নয় ত ভাইয়া ? তরুণ বিমল হাসি দিয়ে জানালো, এটা অমুক মন্ত্রীর বাস । যে কথা সেই কাম। সোজ্জা ফেরিতে উঠি যাবেন । ঝালমুড়ি আর ডাবের জল খাতি খাতি এক নিমিষে ওপারে আপনাগো বেহেস্তি শহরে চলি যাবেননে । নো চিন্তা , ডু ফুর্তি। আমি ফুর্তিতে নাচতে নাচতে দিম্মা আর দিভাইয়ের হাতে টিকিট দিয়ে একটু ঘ্যাম দেখালাম, দেখেছো কেমন টিকিট এনে দিলাম! তাও লঞ্চ পারাপার ছাড়া ! দিদিদের জলে আতংক। যদি ডুবে যাই এই ভয়ে বার বার বলে দিয়েছে, ছোটন, টিকিট কিন্তু ফেরি পারাপারের হওয়া চাই। নইলে কিন্তু তোর কান মলে দেবো!
খাইছে! মাঝরাস্তায় লঞ্চ! তাও ছোট খাটো ! পুলসেরাতের নীচে ঠগবগ করছে পদ্মার ঘোলা জল। ঘূর্ণি তুলে নদীর বুকে জলের সার্কেল বানাচ্ছে কোনো স্থপতি জলপুরুষ। দিদিরা বার বার চোখ পাকালেও তাকাই না। বেশ জাম্বুবান জাম্বুবান লোক দেখে তাদের আড়ালে আবডালে দাঁড়িয়ে দেখি , আমার দুই দিদি দাঁত কচমচ করতে করতে হেসে ফেলেছে। যাক বাবা এবারের মত কান দুটো বেঁচে গেলো। মনে মনে বলি, দিদিগো দিদি উপায় নাইক্যা। এই ভিড় ঠেলে তোমাদের দুজনকে নিয়ে এসেছি তাই কত! জীবনেও তো আধখানা থ্যাংকু বল্লা না।
আমি মন্ত্রীর কর্মচারী তরুণ ফেরেশতাকে খুঁজি । শালার ইয়ে আমি তোর চোখ ভর্তা করে দেব। দিদিরা বয়স্ক। ভাই নেই বলে কাজে বেকাজে আমিই ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করি। আমার সাথে তুই এই করলি? মন্ত্রীর বাড়ির লতানো পাতানো গাছগাছালিরাও দেখি দুই নম্বর হয়ে গেছে!
ভয়ংকরভাবে দুলে দুলে পুলসেরাত পার হলাম । দিম্মা কবি মানুষ । বেঁচেবর্তে পার হওয়ার আনন্দে বলে উঠল, “এই যে ভেঙ্গে যাবার শব্দ তাতে কি আমি জীবনের কাছে কোনো ক্ষতিপূরণ চাইতে পারি!” দিভাই রাগ দেখিয়ে বলল, চুপ কর তো তুই ! খিদেয় পেট জ্বলছে। লাঞ্চ করব। ভাল হোটেল খুঁজে না আনলে এবার কিন্তু মার খাবি । আমি ডিং ডিং করতে করতে পরিষ্কার ভালো হোটেল খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম ।
এই শহরকে হাতের রেখার মত এক সময় চিনতাম। প্রেমে কাঁপতে কাঁপতে লক্ষকোটি বার বলতাম, এ আমার বেহেস্ত! একজন ঘোরতর প্রেমিক ছিল এই শহরে । প্রতি চিঠিতে যে লিখত, আমার অপূর্ণতার সংকীর্ণ খাদে দেবি তুমি! ছুটিতে সে বাড়ি গেলে আমি কেঁদে কেঁদে নদী হয়ে যেতাম। শুনেছি সে এখন নরকের টিকিট কেটেছে আমার মুখ দেখবে না বলে। সো হোয়াট মামু! রোডম্যাপ ত আছেই !
সোর ইয়োগার্টে শসা লেবু মাখামাখি। দিদিরা বহুত খুশ! দুপুরের রোদ রেস্টুরেন্টের জানালায় স্মৃতি আয়না মেলে দিলো। সেই কৃষ্ণচূড়া ঝরা রক্তিম রাস্তা, সেই কালো সাইকেল, সাইকেলের সিটে বসা ঋজুদেহের সেই নমিত মুখ, স্ফুরণ উন্মুখ প্রথম চুমু, আশ্লেষ জড়িয়ে ধরা সব মন তাপিয়ে ভেসে উঠছে মনে। বাম বুকে খুচ করে উঠে রূপালি ফর্ক, সব প্রেমেই কিছু না কিছু বেদনা থাকে রে কাজল!
দুর্দান্ত দিদি। সব ভালোবাসাতেই কিছু না কিছু বেদনা থাকে। যে দুলকি চালে, রম্য ভাষা ও ভঙ্গিতে গল্প এগোচ্ছিল, শেষে এসে একটা মোচড় দিয়ে উঠল।
উত্তরমুছুন