ইন্দিরা দাশ - মায়াজম

Breaking

১১ আগ, ২০১৭

ইন্দিরা দাশ

                            শঠে শাঠ্যং

মাঝরাত সবে পেরিয়েছে। কি-বোর্ডে আঙুল ছোঁয়ানোর আগে ওদিকে আর একজন অন-লাইন আছে কিনা দেখা হয়ে গেছে।“ হাই, তোমার নতুন প্রোফাইল পিকচার দেখলাম, বড্ড মিস্টি লাগছে, সদ্য তোলা কি?”
“হ্যাঁ, এই তো সেদিন কলেজের বন্ধুদের সাথে দীঘা বেড়াতে গিয়েছিলাম। সানগ্লাস পড়া ছবিগুলো ভালো হয়েছে না?”

“অ্যাবসলিউটলি, তবে এত বেশী জামাকাপড় পড়ে কেন যে আমাদের দেশের মেয়েরা সমুদ্রের তীরে ঘুরে বেড়ায়! আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়াতে ছিলাম সান্তাক্রুজের বীচে অল্পবয়েসী কেন মাঝবয়েসীরাও শরীরে এত কাপড়জামা রাখত না”। 
“আরে না না, সুইমিং কস্টিউম তো আমিও পড়ি, সে আমাদের সোসায়েটি ক্লাবের সুইমিং পুলে যাই যখন তখন। আমার বন্ধুরা বলে আমার ফিগারে দারুণ মানায়। তুমি সাঁতার জানো? টু-পিস পড়তে ভালো বাসো, না ওয়ান-পিস? ” 
“জানি বৈ কি, খুব গভীরে সাঁতার কাটতে পারি, ডুব সাঁতার আমার বিশেষ পছন্দ, জানো! যে কোন কস্টিউম পড়ে নিই, তবে আমার মাঝেমধ্যে কিচ্ছুটি না পড়েই জলে নামার একটা পাগলা ইচ্ছে হয়” বিয়ারের গ্লাস’টার গায়ে বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটাগুলো সুন্দর লাগছে।
“তোমার তো দারুণ সাহস দেখছি! কিন্তু মাসের বিচ্ছিরি দিনগুলো মুশকিলে ফেলে”।
“তা ঠিক, বিচ্ছিরি দিনই বটে। এনিওয়ে এর পরের বার বীচে গেলে সারঙ জড়িয়ে থেকো না, তুমি এত ইয়ং, শর্টস এও দারুণ স্মার্ট লাগবে। আর অত দূর থেকে ছবিগুলো তোলা, পরের বার বন্ধুদের বোলো ক্লোস শট নিতে, আমি আমার বোন তানিয়াকে তোমার ছবি দেখাব। ও অবশ্য বলে আমায় শাড়িতেই মানায় বেশী। তুমি শাড়ি পরো?”
“ঐ সরস্বতী পুজো-টুজোতেই শুধু। এটুকু বয়েসে শাড়ি পড়ব তো বাকি জীবন কি করব। আমি একদম ব্যাকডেটেড হতে চাইনা, অবশ্য আমার বয়ফ্রেন্ড আমার চেয়ে খানিকটা বড়, জ্ঞ্যান দেয়...এজ ইস জাস্ট এ নাম্বার”।
“তোমার বয়ফ্রেন্ড কে আমার কথা বলেছ?”
“আরে না না, সুন্দরী মেয়ে দেখলে যদি লাইন লাগায়! তোমার প্রোফাইল ছবিটাও কম আকর্ষণীয় না, চুলগুলো মুখের ওপর পড়ে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছে ছবিটাকে।”
“হা হা হা, তা বটে, তবে আমি সেক্সি ছেলেদের থেকে বান্ধবীদের বেশী ভালোবাসি।”
“ঘুমোতে যাই, সকালে জগিং আছে, শুভরাত্রি।”
“যাও, আমারও মডেলিংএর একটা নতুন আসাইনমেন্ট আছে। গুড নাইট, মিষ্টি স্বপ্ন।”
বিয়ারটা শেষ করার আগে একটা সিগারেট ধরানো যাক। নিজের ক্লীন শেভড গালে হাত বুলিয়ে ওদিকের তন্বী ফেসবুক বান্ধবীর কথা ভাবতে ভালো লাগে।

এদিকে মেঘ করেছে বেশ। জয়ন্ত চলে যাওয়ার পর, বিদ্যুৎ চমকালে কাউকে আর জড়িয়ে ধরার উপায় তো নেই। তাই জানলাগুলো আর্থ্রাইটিসের ব্যথাটা অগ্রাহ্য করেও বন্ধ করা দরকার। এসব কাজে একটু হাঁপ ধরে। তবে মেনোপজের বছর সাতেক পরে ওজন বাড়তে থাকলেও এখন আর এক্সারসাইস করার হ্যাপা নেওয়ার মানে হয়না। গুগল ঘেঁটে সী-বীচের ছবিগুলো ভালই বের করা হয়েছিল। একটু ফরম্যাট করে ঝাপসা করে দেওয়াতে সুর্যাস্ত, সুর্যোদয় দুই সময়ের ছবিই ভালো লাগছে, আর ভালো লাগছে ছিমছাম অল্পবয়েসী মেয়ের চেহারাটা। ফেসবুক থাকতে সময় কাটানোর সঙ্গীর অভাববোধ হয়না

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র