পৃথা রায় চৌধুরী - মায়াজম

Breaking

১১ আগ, ২০১৭

পৃথা রায় চৌধুরী

                     আন্ডার ট্রায়াল 


সেদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে... তুমি হাপিত্যেশ অপেক্ষায়, কখন সামনে দিয়ে আমার সন্তান অবধি পৌঁছবার তেষ্টায় তোমার শকুনচোখে গ্রেপ্তার হবো। দূরে তুমি অপেক্ষায় রেখেছো, বিবেকানন্দ নামের সারমেয়কে। আশেপাশে ছড়িয়ে সীমিত স্ত্রীলিঙ্গ তার লালসার দল সমেত। সুচন্দনও বুঝিবা সুবাস ছড়াতে ব্যস্ত। তোমাদের সামনে দিয়েই খুব ধীর হেঁটে পেরিয়ে গেছি নজরবন্দীর ঘেরাটোপ। তখনও আমি আবরণহীন মাংসের দলা...মা'র কোলের সদ্যোজাত। দেখলে না , তারার কোলে আঁচলচাপা তোমাদের শিকার! তারার কোলে তারার বাড়ি, যেখানে গচ্ছিত রেখেছি আমার গর্ভ।
তারার কোল ছেড়ে মা হলাম আবার, পিতৃগৃহে আগত বিবাহিতা কন্যা হলাম আবার। তুমি জানলে না, তোমরা অপেক্ষায় থেকে থেকে ফিরে গেলে রিক্তহস্ত। এদিকে আমি আবার মা'র কোলেরটি হয়ে নিরাপদে পৌঁছেছিলাম আমার আরেক সন্তানের রক্ষায়। স্বাতী নক্ষত্রের আলো পড়েছিলো আমার সন্তানের ওপর, সে তোমার অনুবীক্ষণ দৃষ্টিতে তুমি দেখেছিলে, এই ছিলো তোমার গাঁথা কল্প। কল্পসময়ে স্বয়ং ত্রিনেত্রা তার সন্তান কোলে বসেছিলো, তোমার মিথ্যের মুখোশ দেখে অট্টহাস্যে ফেটে পড়েছিলো তার অন্তর। তুমি বোঝোনি। তুমি যা ভেবেছিলে, তা এতো শ্রুতিমধুর ভাবে বলি কি করে জিৎ? "মাগী তোর তো মাগীবুদ্ধিই হবে।" আজ যখন তোমার সেই আঁধার সঙ্গীর দল তোমায় দুষছে, তুমি তখনো বলে চলেছো, সেদিন মাগী না এলে কি করবো, এলে তো মাংসাশী দিনরাত! বায়না ছিল ঠিকঠাক! তবে, তা অবশ্য ফিরতি পথে। তার আগে, তাকে অনুসরণ করে জেনে নেওয়া যেতো তোমার বিনাশ লিখেছি যে রাজটীকায়, তার হদিশ। 
তারার মেয়ে, তারার চিহ্ন গায়
জ্বলছে প্রাসাদ নিভছে সাগর,
... হাসনুহানা ভাসছে সাঁঝের নায়।

এখন তোমার পুঁজ গড়ানো রক্তবীজেরা বন্দী, সবুজ জলচাদরের নীচে। এসো জিৎ, উল্লাসে তোমায় চর্ব্য চোষ্য লেহ্য করি, তুমি ভেবে নাও তোমার ধ্বজার ভঙ্গুর অবস্থার দায়ভার কার। তোমার চাই আমার গর্ভের ক্ণা, আমার চাই তোমার ঘনঘোর রাজ্যপাটের পচে যাওয়া কপাটটুকুও। অনন্ত প্রতাপশালী বিক্রম আমার নগ্নতা দেখাতে গেল আমার তপোবনে, তোমার ইশারায়... তপোবনে আমি বিষবৃক্ষের বীজ রোপণ করিনি, তার প্রমাণস্বরূপ অবাক চেয়ে দেখি, বীজেদের থেকে অমৃতচারার অঙ্কুর চেয়ে আছে আমার ক্লিষ্টতায়, খড়্গহস্ত তারা বিক্রমের কল্মষে। সন্ত্রস্ত হও বিক্রম, পাঞ্চজন্যের নাদ শোনো।
ভারি কঠিন নেত্রার সুপুষ্ট স্তন, তোমার বিকার সহ্য করেও, হৃদয় চিহ্নহীন। সেখানে বসতবাড়ী, আঁধারজোছনা। আগুন খাই, কোপ মেরে ছিন্নমস্তা হই। যে কালসর্পকে পাঠাতে দংশাতে, সেই কালসর্প আমার আঙিনায় বিশ্রামরত। তুমি যতোবার তাকে নির্দেশ দিয়েছো ছোবল মারার, ভারি বিরক্ত হয়ে, সে তোমাদেরই ভেতর ঢেলে দিয়েছে গরল। পাশে দাঁড়িয়ে তার রাগ শান্ত করেছি আমি, ডাকিনীমানুষী। যেভাবে এগোবে, ঠিক সেভাবে ফিরিয়ে দেবো পাশার দান। তুমি নগ্ন দেখাতে উৎসুক আমাকে পৃথিবীর চোখে, সেই কোন পুরাকাল থেকে আমি আবরণহীন দাঁড়িয়ে। নগ্নতা দিয়ে ভেনাস অপাপ শিল্পে সুন্দর করে দেবে যে কোনো কলুষকণা। বেনুবল্লভ, অহল্যাপ্রভার ক্ষমতার কাছে তুমি বিনষ্ট হয়েছিলে সেদিন, ফিরে ফিরে আসি শুধু তোমাকে বিনষ্ট করতে।
তুমি পৃথিবীকে বললে, জিৎ সাধু; তুমি পৃথিবীকে বললে, নেত্রা কামাতুরা স্বৈরিনী। নীরবে তারার আলো, তোমার বীর্যফলের গায়ে দেগে দিলো ঠিক সেই সব বিশেষণ। দেগে গেলে তুমি, দেগে গেলে তোমার পাপসাধিকা। তোমরা জনসমক্ষে দাগী হলে, আমি নগ্নরূপে স্তব্ধ বসে থাকি সেই পবিত্র বটের নীচে, যার থেকে নেমে আসে শয়েশয়ে ঝুরি, শুধু আমার সম্মান রক্ষার্থে। আশ্বাসী ওমে পরিপূর্ণ হই। ওম চেনো বেনুবল্লভ? ওম জানো? আরামে বুঁজে আসে কাঙালিনী চোখ। নিজের বিকৃতি দেখো, আমার প্রতিকৃতির সর্বাঙ্গে নিজের শিথিল প্রজননাঙ্গ স্পর্শ করিয়ে ভাবছো সেভাবে আমাকে পরিতৃপ্তির শিখরে নিয়ে যেতে পারছো, যেখানে বসে তোমাকে সমস্ত বিয়োগধর্মীর হাত থেকে রক্ষা করবে আমার সৌভাগ্য। তোমার কদর্যতা আমাকে বিকর্ষণের চরমে পৌঁছে দেয় আসলে।
ঘরের দরজা জানালা খোলা রাখি। আলো হাওয়া পাখপাখালির সঙ্গীতে সাধু সমাগম হয়। তুমি বলো, এরা ভণ্ড, এরা আসে স্বাদু আমিশের টানে। তুমি নরশ্রেষ্ঠ, তোমার বিকারহীন মননে আমাকে বেশ্যা বানাও। আমি ফুল তুলে সাজিয়ে ফেলি ঝুরির বাড়িঘর, গলায় পরি অগ্ন্যুৎপাতী ঝিল, সিঁথি রাঙাই জ্বালামুখীর লালে। এরপর সংহারমূর্তিতে বেরিয়ে পড়ি " শিবদূতী উগ্রচণ্ডা প্রত্যঙ্গে পরমেশ্বরী"
একা পথে নরক বিছিয়েছো আদ্যন্ত, সেই নরকের মুখ বারংবার তোমার দিকে ফিরিয়েছি। কিছু বোঝোনি তুমি, আর আমাকে ভাবো নির্বোধ? একা একেশ্বরী, সন্তানসম দেখে তোমার গ্রাস থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবো তাদের, যারা অসহায় ভরসায় শুধু ভালোবাসায় বাঁধবে আমায়। তুমি সামান্য লাল শালু দেখে ভয় পাও, তুমি ভয় পাও আমার বাঁ হাতের লৌহ সংস্কারের বেড়ি।
চলো, আরো একবার যাই সেই পবিত্র কবরের কাছে, যেখানে আমি রেখে এসেছিলাম কয়েক গুছি চুল, তোমার পিশাচেদের পথ দেখাতে, লোভ দেখিয়েছিলাম সেদিন... এসো, মৃত হতে। তুমি মোম জ্বালিয়ে তাদের পথ দেখালে, এসো আস্বাদ নিয়ে যাও এই শরীরের। তারা এসেছিলো, আমার প্রতিটা শরীরী বাঁকের জন্তরমন্তরে তাদের আটকে রেখে সংহারে মাতলাম। এই, চলো বেনুবল্লভ, অহল্যার সাথে সেই প্রাচীনে বসে দেখবে চাণক্যনামা। যাঃ, এই নামের আবার কিছু আছে নাকি? ভয় পাচ্ছো? পেও না। এসো, সেই শয়তানি দুপুরগুলোর মতো তোমাকে সুখ দিই, আদরে ভরিয়ে দিই তোমার ইঞ্চি ইঞ্চি, জিভে জিভ জড়িয়ে দিই চোখ খুলে রেখেই। তোমার বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে ভোগের শীৎকার আনি, তুমি ডুবে যাও আমার বেশ্যাবৃত্তিতে, আমার তৃতীয় চোখে তোমাকে ঝলসে দেবার পালা সাঙ্গ হোক।
বিন্নি খই, রূপোর মল
করাত মোছে কান্নাজল।



২টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র