______________________________________________________________________
“পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে,
স্যাটেলাইট আর কেবলের হাতে,
ড্রয়িংরুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী...
ঘরে বসে সারা দুনিয়ার সাথে,
যোগাযোগ আজ হাতের মুঠোতে,
ঘুচে গেছে বেশ কাল সীমানার গন্ডি...”
আমাদের পৃথিবী হয়ে গেল চৌকো, হয়ে উঠল টেলিভিশননির্ভর । আমাদের বিনোদন, বিজ্ঞাপন, সংবাদ ওই চৌকো বাক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ল । হ্যাঁ, আমাদের কবিতাও প্রভাব এড়াতে পারল না তার।
সে ছিল একটা সময়। দেশে একটা মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল, দূরদর্শন; ডি ডি ন্যাশানাল আর ডি ডি মেট্রো। ছাদে অ্যান্টেনা আর ঝিলঝিলে ছবি। বুধবারের চিত্রহার আর রবিবারের ছায়াছবি, রামায়ন মহাভারতের চিত্রায়ন, হামলোগ-বুনিয়াদ-ওয়াগলে কে দুনিয়া, ভারত পাকিস্থান ক্রিকেট ম্যাচ, শ্যারন প্রভাকরের বর্ষবরণ।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে সরকারের উদার অর্থনীতির আবহে বদলে গেল পুরো দৃশ্যপট। ভারতীয় বেসরকরি টিভি চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল Zee TV, E TV, Sun TV আর STAR TV, CNN –এর মতো বিদেশী চ্যানেলগুলির সম্প্রচার শুরু হল এদেশে। টিভির দাম হল সাধারণের ক্রম ক্ষমতার নাগালে। বিক্রি বাড়ল, উপভোক্তা বাড়ল, বাড়ল বাজারও, সব অর্থে, সর্বাত্মক।
এল স্যাটেলাইট আর কেবল টিভি। হাতের মুঠোয় ধরা রিমোর্টে একের পর এক চ্যানেল বদলে, এই পছন্দ থেকে অন্য পছন্দে মুহুর্তে চলে যাওয়ার সুযোগ এল আমাদের সামনে। শহরের চালচিত্রে ছাদ থেকে আস্তে আস্তে অ্যান্টেনা সরে গেল। কেবলের জাল ছড়িয়ে পড়ল । এল ডিস টভি।
ছোট হয়ে এল পৃথিবীটা, মুঠোর মধ্যে। একটা গ্রামের মতো। গ্লোবালাইজেশনের হাওয়া বইল সারা দেশ জুড়ে, সারা পৃথিবী জুড়ে।
আমাদের বেঁচে থকায় আরেক বাস্তবতা যোগ হল, টিভির বাস্তবতা।
ভারতীয় সমাজজীবনে টেলিভিশনের প্রভাব, বাজার অর্থনীতির সাথে তার যোগ নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ঘটনা। এর সাথে মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির এই বাজারে প্রবেশ, বিদেশী পুঁজির প্রয়োগ, ভোগ্যপণ্যের সহজলভ্যতা, ক্রয়ক্ষমতার আপাত বৃদ্ধি আমাদের কনজিউমার সোসাইটির বাসিন্দা করে ফেলে।
টিভি আমাদের যৌথযাপনের অংশ হয়ে উঠল, টিভিই হয়ে উঠল একাকীত্বের রূপক। একসঙ্গে দূরের মানুষজনের সাথে একই টভি শো দেখার আত্মীয়তার পাশাপাশি পাশের মানুষটির থেকে দূরে টিভির বাস্তবতায় ঢুকে পড়লাম আমরা । আবার সেই তো একাকীত্বের নিরাময় ।
১৯৮৬
মারাদোনার খেলা দেখার জন্য আমাদের বাড়িতে প্রথম কোনার্কের ব্ল্যাক অ্যান্ড
হোয়াইট, বড়, একটি টেলিভিশন কেনা হয় । প্রথম যেদিন টিভি আসে, পাড়ার
পনেরো-কুড়িজনকে নেমতন্ন করা হয়, পায়েস হয়, লুচি হয় – সব্বাই গোল
হয়ে বসে ‘পল্লীকথা’ দেখে – শাশ্বতী-চৈতালীকে চেনে । প্রামানিক কাকিমা
বলেন,’ বুঝলেন ওরা হল দুই বোন’ । বেশ কিছুদিন পাড়ার সবাই বিশ্বাস করত
ওরা দুই বোন
১৯৯৫
বাবা-মা, আমরা দুই ভাই তখন পুরুলিয়ায় । বন্ধুদের প্রত্যেকের কালার টিভি।
তাই আমাদেরও কালার টিভি ( তবে পোর্টেবেল )কেনা হয় । ঘর ভর্তি হয়ে যায়
রঙে । আমাদের সিনেমা যাওয়া কমে যায় । শাশ্বতী-চৈতালীকে ভুলে আমরা
চিনে যাই অন্নুকপুর আর রেণুকা সাহানেকে । প্রথম বে-ওয়াচ দেখে আমার চোখ
অন্ধ হয়ে যায় । তবে ওই টিভির কোম্পানির নাম মনে নেই কেননা অল্প
কিছুদিনের মধ্যে ওটা বিক্রি করা হয় ।
১৯৯৬
বিপিএল । বড় । কালার । কেনা হলে, প্রথম আমার মনে হয় আমরাও
বড়লোকদের মতো হয়ে উঠছি ক্রমশ । সৌরভের সেঞ্চুরি দেখি, অ্যানাইডার
অ্যালবাম দেখি, স্টার মুভিজের ফিল্ম । মা নানারকমের সিরিয়ালের পোকা হয়ে
ওঠে । বাবা শুধু ক্রিকেট আর জি সিনেমায় পুরনো – ষাট-সত্তরের – হিন্দি
সিনেমা, যাতে হেভি মারদাঙ্গা ।
২০০০
বাবা মারা যায়
২০০৩
সেই ১৯৯৬-এর বিপএল-ই আজও । উনপঞ্চাশটা চ্যানেল । ভাই বলে, এই
মডেল আর চলে না,জানিস কত কত চ্যানেল আমরা দেখতে পাই না ?’ আজ
সাতদিন ভাই নেই, তিন্নি নেই, সোমা নেই –বাড়িতে মা, আমি, কাজের মেয়ে
আশা । দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি – সেলাই করছে মা আর টিভি চলছে নিজের
মতো । ‘না দেখলে বন্ধ রাখতে পারো ন ?’ ‘আসলে কী জানিস, ফাঁকা ঘর,
তোরাও থাকিস না –ওই তো আমার একমাত্র বন্ধু – চললে মনে হয় একটা
কেউ আছে, কথা বলছে –অন্তত আমি একা না’
( টেলিভিশন / অংশুমান কর )
একা আমি-র, একা আমিত্বের পাশে টিভি ভেঙে বেরিয়ে আসা বাস্তবতা জাঁকিয়ে বসল। তার সাথে থাকতে থাকতে আমরা নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করলাম। হ্যাঁ, সেই হয়ে উঠল প্রভু।
কে যে কোন মাল্টিন্যাশানাল চেরাগের দৈত্য ধোঁয়া জিন
টিভি স্ক্রিন ভেঙে চুরে ঢুকে গেছে আমাদের ঘরে,
সারাদিন নেচে কুঁদে নগ্ন জানু স্তনের আভাস
এসব দেখিয়ে বুঝি গৃহস্থকে বস করতে চায়
বিকট চেঁচিয়ে গায় নিজেকে সাজিয়ে ধরো বিপণনী কাচের দোকানে
চ্যানেল বদলাই তবু দৈত্যকুল পিছন ছাড়ে না
কী করে ঝকঝকে দাঁত তরতাজা নিশ্বাসে মূর্খ দুনিয়া মূঠোয়
কীভাবে বুড়োটে চামড়া সংশোধনে আরও বেশি নররম তুলতুলে –
এসব পড়ায় দৈত্য, মারি ও মড়ক ঢাকে দু’হাতে আগলায়
সন্ধেবেলা খিদে পেলে সেও এক মহাসিরিয়াল
ঢুকে পড়ে বেকুব মগজে
( মহাসিরিয়াল / সাম্যব্রত জোয়ারদার )
অডিও ভিস্যুয়াল মাধ্যম। শব্দ আর দৃশ্য । শুনি ও দেখি । একই সঙ্গে আমাদের কান আর চোখকে সক্রিয় করে। এই দুই ইন্দ্রিয় থেকে ইম্পালস একই সাথে আমাদের ব্রেনকে, আমাদের চেতনাকে অ্যাক্টিভেট করে। এবং এই দৃশ্য চলমান । একটার পর একটা ফ্রেম আমাদের চোখের সামনে বদলাতে থাকে। একটার পর একটা স্থিরচিত্র । এভাবেই আমাদের ভাবনাও স্থির না থেকে একের পর এক ফ্রেম অফ কনসাসনেস পেরিয়ে এক চল-ভাবনা তৈরি করল । রেফারেন্স পয়েন্টটিই আর স্থবির রইল না।
একতা কাপুরের সান্ধ্য সিরিয়াল, আমাকে নিবীর্য করো । স্যাটেলাইট থেকে নেমে
এসো চেকনাই সোফার উপর । এছাড়া আর সুরক্ষা নেই মেট্রো মনস্টার এই
বিষণ্ণতার । এর পরে কী কী ঘটতে পারে যথাবিহিত ? বন্ধুতার টিলা থেকে
পাথুরে ঝাঁপ ? আড়ধোলাই থেকে রতিকাজ পর্যন্ত ঘ্যানঘ্যানে ছেঁচড়ে যাওয়া
বিয়োগান্ত ব্লুজ ? নাকি শল্যচিকিৎসকের ছুরির জন্য শরীরময় অপেক্ষা ?
কুয়াশার পকেটে সেঁদিয়ে গিয়েছে সিগন্যাল । আর তারই অস্থিরঙা ইতিহাস ঘিরে
বাঁশবাঁধা মৃতদের চারণ গান শুরু হবে । বাদামি চিনির রুদ্ধভাপে তামাদি হবে
শুভ বোধ । এহেন সানন্দ সন্ধ্যায়, আমি একা কেন, তুমি সব্বাইকে ভোগে
পাঠাও হে অনন্ত রসাতল
( সান্ধ্য সিরিয়াল / অগ্নি রায় )
চিত্রকল্প – এই কাব্যডিকশন পেরিয়ে এল চলমান চিত্রকল্প, চলচিত্রকল্পের ধারণা । মিউজিক ভিডিও, গানের সাথে দৃশ্য জুড়ল । আর সেখানে আমরা দেখলাম একের পর এক ছবি পর্দায় ভেসে উঠছে আবার মুহূর্তে বদলে গিয়ে আসছে নতুন ছবি । আর এই ছবিগুলো আপাত সম্পর্কহীন । অথচ তাদের পারস্পরিক ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ায় একটা এফেক্ট তৈরি হচ্ছে, মন্তাজের এফেক্ট ।
কবিতাতেও আমরা পেলাম পরপর চিত্রকল্প, আর এই ক্রম-প্রক্ষেপনে তৈরি হল গতিময়তা । এবং বাক্যের গঠনে ক্রিয়াপদে বিভিন্ন কনটিনিউয়াস টেন্সের ব্যারহার একটা ডায়নামিক আবহ বানিয়ে তুলল ।
তারপর একটি নিঃসঙ্গ পালক যাত্রা শুরু করল
টিপছাপ । হস্তচিহ্ন । ছবি আঁকছে গদি আঁটা
চেয়ার
বিধস্ত ঘড়ির ডায়াল আমাদের বিপন্নতাকে তুলে
ধরেছে আজ
মাথায় পাখির ঝাঁকা নিয়ে হেঁটে বেড়ানো
ফেরিওয়ালা,
পথপার্শে টানা টানা চোখ । বড়ো বড়ো বাড়ি ।
তারপর শেষলগ্নে লোকায়ত ডানা, উড়ন্ত ঘোড়া
আবার দু-পাশে কালো দেয়াল বসিয়ে মধ্যখানে
তৈরি হয়
থমথমে যাত্রাপথ । সুড়ঙ্গপ্রদেশ । আর
গোপন নির্দেশ এলে গোড়ালি উঁচু করে আমরা
সব ঢুকে পড়ি তড়িঘড়ি ভেজা ভেজা
আঙুরখেতে ।
( আত্মজীবনীর ছেঁড়া অংশ / প্রথম অংশ / সুবীর সরকার )
‘যাত্রা শুরু করল’, ‘ধরেছে’, ‘হেঁটে বেড়ানো’ এই উচ্চারণগুলির মধ্যেই চলচিত্রকল্পের আভাস আমরা পাবো ।
আমরা যখন দেখি, দাঁড়িয়ে বা বসে, এই পৃথিবীর হরাইজেন্টাল প্লেনের সাপেক্ষে আমরা থাকি ভার্টিক্যাল। যদি কোনো দেওয়ালে বা পর্দায় কোনোকিছু দেখি তো দৃশ্যও হয় ভার্টিক্যাল ।
আমরা যেভাবে খেলা দেখতাম আগে, ক্রিকেট দেখতাম, মাঠ হরাইজেন্টাল আর খেলোয়াড়রা ভার্টেক্যাল, আমি ও অন্য দর্শকরাও ভার্টেক্যাল । আমার চোখ ফলো করত বলকে , বোলারের হাতে বল, ছোটা শুরু করলেন, ডেলিভারিটি করলেন, ব্যাটসম্যান খেললেন কভারড্রাইভ, বল ফিল্ডারের পাশ দিয়ে সীমানার বাইরে । দৃশ্যগুলো পরপর সময়ের সাথে রৈখিক। চোখ যে খেলার মাঝে এদিক ওদিক যেত না তা অবশ্য নয়।
কিন্তু এখন মাঠে যতজন খেলা দেখেন তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি মানুষ দেখেন টিভিতে। আর টিভিতে দেখার ব্যাপারটা একেবারে আলাদা। এখানে খেলাটাই তো হতে দেখি ভার্টিক্যালি । দেখার ফ্রেমগুলোও ভিন্ন । বোলারের হাতে বল, ব্যাটসম্যান স্টান্স নিচ্ছে্ন, বোলার ছুটতে শুরু করলেন,মিড অন ফিল্ডারের মুখ, গ্যালারিতে কোনো সুন্দরীর ইয়াররিং, বোলার ছুটছে্ন, ব্যাটসম্যানের ক্লোজ আপ, বলের ডেলিভারি, ব্যাটসম্যান খেললেন, ব্যাট ও বলের কন্ট্যাক্ট, বলের পেছনে ফিল্ডার, উল্লসিত দর্শক, বল সীমানার বাইরে।
পুরো দেখাটা ভার্টিক্যাল, ক্ষণস্থায়ী ফ্রেম, মাঝে মাঝে ক্লোজ আপ এবং নন-নিলিয়ার ন্যারেশন।
বারীন ঘোষাল লিখলেন ধীমান চক্রবর্তীর কবিতা প্রসঙ্গে,“ তার কবিতায় চিত্রধর্মীতা আগে থেকেই ছিল । পরবর্তী পর্যায়ে এলায়িত চিত্রদের বা দৃশ্যদের সটান দাঁড় করিয়ে একটা ভার্টিকেলনেস তৈরি করে, ঘন করে ফ্যালে, কেটে কেটে দেয়, ছেঁটে দেয় মেদ । কংকাল হয়ে যায়। একটা দৃশ্যকাঠামো। দৃশ্যের দ্রুতচলন ব্যবহার করে সে ব্যবহার করে সে ।”
( নতুন কবিতা ক্যাম্পাস / কবিতার অধিকার )
ধীমান চক্রবর্তীর কবিতা গঠনগতভাবে ‘ভার্টিক্যাল, ক্ষণস্থায়ী ফ্রেম, মাঝে মাঝে ক্লোজ আপ এবং নন-নিলিয়ার ন্যারেশন’ নিয়ে এল পাঠকের সামনে ।
সিসমোগ্রাফ ছায়া আঙুল ছুঁয়েছে
রিখটার স্কেল, হাসাহাসি ধর্মস্থান ।
গালিচায় বেড়ে ওঠা
পুনর্জীবন কারখানা । ...
দ্রুতগতি চালায় মেয়েটির
খোলা কাঠচোখ ও দৌড়ে যাওয়া
আধপোড়া সিগারেট ।
ভুজ শহরে জন্মানো গ্র্যান্ডফাদার ঘড়ি, ...
পায়ে জুতো; নদী র্যাফটিঙ সেরে
তাস নিয়ে বসেছে
প্রতিফলন মুছে যাওয়া আয়নায় ।
ধ্বংসস্তূপ কমনরুমে
ধূসর কুড়িয়ে তোলে মানুষের
কান্নালাগা পুরাণপ্রথা,
কুয়াশা কলোনিতে ক্লোরোফিল ।
রোগাপাতলা নোঙর নামানো জিভ
ভাষা পাল্টে প্রক্সি দেয়
গরহাজির ধ্বংসক বান্ধবীতে ।
টাইপকরা মেঘলাদিন ।
( গুজরাট , ২৬শে জানুয়ারি / ধীমান চক্রবর্তী)
দৃশ্যের সাথে ধারাবিবরণী, ছবির সাথে বর্ণনা যুক্ত হয়ে এক অন্য ভাষ্য পেলাম আমরা । কবির সামনের ঘটনাপ্রবাহ আর তাঁর মনোজগতের ভাবনাপ্রবাহ একসঙ্গে মিলেমিশে পাঠকের সামনে আসে ।
নদীর সিঁড়িতে বসে থাকা রোদ জুতোয় রং করে দিল
ঘুম রাস্তায় সরু ফিতে মথ আর দোদের কুচি
আকাশ লেবুবনের ডাকনাম
ঋজু চিমনী তার হাত পা মেলে শিখর
যে রকম কোন বুক কোন তাল কোন মার্চপাস্ট
চিবুকে হ্রস হাতের তালু ভর্তি চিল্কা
নালা রোড কথা বলছে ট্র্যাফিক গেটের সাথে
জুতোর পালিশ শেষ
আমি রিং রোডের কাছে জামিন রাখলাম
রোদ রং-এর পার্স আর নাভি
ঠিক দুটো ভোরবেলা কেঁপে উঠলো
একটা আপেল আর একটা কমলা
আস্তে আস্তে স্কার্ট গোছাচ্ছিল ভোর টিফিন বক্স চুলের স্টেপ
গা ধোয়া অভিনন্দনে সূর্য চিবোনর শব্দ
বাস এলো
এই সমাজ ব্যবস্থার সতরঞ্চি ছেড়ে ঊঠে দাঁড়ালাম
এবার অনুরোধের হর্ণ আর মহা প্রোটিনের ধুন্কি
পা ফেললাম তুই চমকে উঠলি
কিন্তু মানুষ তো এভাবেই কথা বলবে বিজ্ঞানের সাথে
( তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে / ধূপ-শহর / স্বপন রায় )
স্বপন রায়ের এই ‘ধূপ-শহর’ সিরিজের কবিতা লিখে চিত্রনাট্য লিখেছেন দেবাঞ্জন দাস। আর দেবাঞ্জন নিজেও উৎসাহী কবিতায় ভাষাদৃশ্যের সাথে সাউন্ডস্কেপ যোগ করে অডিও ভিস্যুয়াল এফেক্ট নিয়ে আসতে।
ফোঁটায় ফোঁটায়
রাতের জলরং
পাখোয়াজ রাখছে গ্রীবা ...
ওর ভঙ্গীটা নাজুক
সূচীকাজে হরিণ তুলছে মুখ ...
আমি তো বুঝিনি রাতবিরেত
যতবার হয়েছি নিচু
কোথাও কেউ রাস্তা পেরিয়েছে ।
( টুপুস / দেবাঞ্জন দাস )
এই সিনেমাটিক এফেক্টগুলোর পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন, সংবাদ পরিবেশনের ন্যারেটিভ, অ্যানিমেশনের অসীমকল্পনা, রিলেলিটি শো-র নব্যবাস্তবতা, খেলা ও সিনেমার ট্রুথ এক হয়ে যাওয়া – এসবের চিহ্ন এই সময়ের কবিতায় ছড়িয়ে রয়েছে।
কবিতা দার্শনিকতার প্রান্ত থেকে অডিও ভিস্যুয়ালের দিকে সরে আসছে। অথবা সরছে না। বাংলা কবিতার চিরন্তনে একীভূত হয়ে যাচ্ছে টেলিভিশনের প্রভাব ।
সুচিন্তিত মতামত দিন