জ্যোতির্ময় মুখার্জি

মায়াজম
2
                               বাউল


(সামগ্রিক ধর্মবোধের নিরিখে
বাউল তত্ত্ব)

কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও তথ‍্যসূত্র : এই অংশটি গদ‍্য বা প্রবন্ধের শেষেই থাকে, আমি দিলাম প্রথমে, সবসময় যে নিয়ম মেনে চলতেই হবে এমনতো কোনো কথা নেই, তাছাড়া একটি বিশেষ কারণ’ও আছে, আমি এটা প্রথমেই স্বীকার করে নিতে চাই যে, কয়েকজন সাধিকা বা সাধনসঙ্গীনির সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া, বাউলদের তথা বাউল তত্ত্বের গভীরে পৌঁছতে পারতাম না। লেখাটি তাঁদেরকে উৎসর্গ করেই শুরু করতে চাই। কী লিখবো, এখন’ও নিজেই জানিনা, মূল ভরসা ব‍্যক্তিগতভাবে কিছু জানা, যা তাঁদের সাহায্য ছাড়া সম্ভব হতো না। তাঁদের নাম জানাতে আমি অক্ষম, আসলে তাঁদের কোনো নাম নেই, তাঁরা শুধুই নারী। ধর্মসাধনার পথেও যাঁরা শুধুই পুরুষের সহায়ক, অবলম্বন বা উপকরণ মাত্র। ‘ঈশ্বর’ প্রাপ্তির অধিকার তো পুরুষের একচেটিয়া। আমি তো আজ পর্যন্ত কোনো ধর্মে এমন কিছুই পাইনি, যার কেন্দ্রে আছে নারী। সব ধর্ম’ই আসলে মানুষের বেশে পুরুষের মুক্তির কথা বলে। নারী আজ’ও শুধুই নারী, মানুষ নয়। সমস্ত ধর্মেই, নারীর ধর্মপালন ঘরোয়া কিছু আচার আচরণেই সীমাবদ্ধ। মহামুক্তির পথ নারীর জন্য নয়, নারীর পৃথিবী ও মুক্তি দুটোই চার দেওয়ালের মধ‍্যে সীমাবদ্ধ।
বাউল নিয়ে অযথা তথ্যের পথে হাঁটবোনা, যাবোনা ‘বাউল’ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে অযথা কচকচানিতে। বাউল নিয়ে এত্তো লেখালেখি হয়েছে যে, তথ্য ভুরিভুরি। আমি শুধু সেইটুকুই বলবো, যেটুকু আমি জেনেছি, বুঝেছি ও উপলব্ধি করেছি বাউলের সংস্পর্শে, আমি শুধু বলবো আমার ব‍্যক্তিগত অনুভব বা জানাটুকুই। কিছু তথ‍্যের প্রয়োজনে অবশ্যই আমি আমার ডায়েরী (বিভিন্ন বই পড়ার সময় যেসমস্ত তথ্য টুকে রেখেছিলাম) ও গুগলের সাহায্য নিয়েছি।
‘ঠিক তার কয়েক বসন্ত আগে
'ব'-এর মাঝে শরীর গলিয়ে
হাত দিতাম ছুড়ে, 
কী ক্ষিপ্রতায় বাউল হতাম......’

বাউল হওয়ার ইচ্ছাটা মনে হয় আমাদের চিরকালীন, পাখি হওয়ার ইচ্ছাটার মতোই…..মনখারাপের একলা দুপুরে জানলায় চোখ রেখে বা গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে, কখনোবা ধুলো ঢাকা উদাসী পথে হেঁটে যাই আমরা, কখনো বাউল হ’ই মাঝরাতে।
বাউলের প্রতি আমি প্রথম আকৃষ্ট হই আমার কলেজ লাইফে, বর্ধমান থেকে গুসকরা ফিরছি, গ্রীষ্মের দুপুর, ঝাঁ ঝাঁ মাঠ ভেঙে আগুনের হলকা ঢুকছে ট্রেনের কামরায়, নোওয়াদার ঢালে ট্রেনটা হঠাৎ থমকে, অনেকক্ষণ, বিরক্তিকর, হঠাৎ কয়েকফোঁটা বৃষ্টির মতো কেউ যেন ভিজিয়ে দিল আমায় (পরবর্তী কালে ইনিই আমাদের বিখ্যাত বাউল শিল্পী কার্ত্তিকদা, কার্ত্তিক দাস বাউল)
“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়…..”
একটা অদ্ভুত ভালোলাগা আর কষ্টে ককিয়ে উঠলাম। একটা অদ্ভুত আনন্দ।
অতঃপর, “যাবি যেদিন শ্মশান ঘাটে……”,
কেঁপে উঠলাম, চোখের জল ঢাকতে সোজা বাথরুম, ফিরে এসেই,
“সাইকেলের দু’দিক চাকা মধ্যে ফাঁকা
চাপতে হইরে ঠ‍্যাঙ তুলে……”
অদ্ভুত, এই গানটাও বাউল গান!?
এই গানটা তো বেশ পরিচিত, বন্ধুদের মাঝে এই গানটা নিয়ে কতো ঠাট্টা ইয়ার্কি হয়েছে। অর্থটা’ও বেশ স্পষ্ট এবং তৃপ্তিদায়ক। কতরাত আমরা ‘বাউল’ হয়েছি, হ‍্যাঁ, অবশ্যই কল্পনায়, কখনো মাধুরী দীক্ষিত, কখনো ঐশ্বর্য রাই…….

এই গানটি না থাকলে মনেহয় শুধু বাউল গানেরই ভক্ত হতাম, বাউল তত্ত্বের খোঁজে ছুটতাম না, ‘খালবিলে’....
কিছু সৎ পথে ও কিছু অসৎ পথে (ঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য নয়, তখন তো জানতাম না, আমি কখনো লেখালেখি করবো) বাউলকে জানলাম খুব কাছ থেকে।
অতঃপর বাউল নিয়ে মিথ্যা মিথটা গেলো ভেঙে এবং একটা মিথ তৈরি’ও হলো, যা সত‍্যের কাছাকাছি। আরো বেশি করে প্রেমে পড়ে গেলাম বাউলের। নিরপেক্ষ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করলাম বাউল তত্ত্বকে এবং পেলাম এক সারসত‍্য, যৌনতা পৌঁছে দিতে পারে ‘ঈশ্বরের’ কাছাকাছি।

আসুন আমরা এবার দেখি, চাখি ও বিশ্লেষণ করি, খুঁজি সত‍্যর মধ্যে লুকানো সত‍্যটাকে। অবশ্য তার আগে একটু চোখ রাখতেই হয় বাউলের উদ্ভব ও ব‍্যপ্তির সেই সময়টায়, বাংলার সেই অন্ধকারময় মধ‍্যযুগের দিকে চোখ রাখলেই বুঝতে পারবো, বাউলের উদ্ভবের কারণ ও প্রয়োজনীয়তা।
শুধু বাউল নয়, একাধিক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের (কর্তাভজা, কিশোরীভজন, জগোমোহিনী, ন্যাড়া, বলাহাড়ি, মতুয়া, সাহেবধনী, বৈষ্ণব, সুফী ইত্যাদি। যদিও এগুলোকে আমি ঠিক ‘ধর্ম’ বলবো না, বরঞ্চ চিরচরিত ধর্মের বিপরীতে, চিরচরিত ধর্মের প্রতিক্রিয়ায় গড়ে ওঠা লোকধর্ম বলতে পারি। যার কেন্দ্রে মানুষ, ‘ঈশ্বর’ নয়।) উৎপত্তি এই সময়ে, প্রত‍্যেকের টেনাসিটি বা অভিমুখ মানুষ থেকে ‘ঈশ্বরের’ পথে এবং অদ্ভুত ভাবে একটার সাথে আর একটা মত ও পথ মিশে গেছে, সম্পৃক্ত ও সমৃদ্ধ করেছে একে অপরকে।

মধ‍্যযুগীয় বাংলা এক অন্ধকারময় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে গেছে। বর্গী আক্রমণ, মহামারী ইত্যাদি থেকে উদ্ধারের উপায় খুঁজেছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিক ভাবে পঙ্গু বাঙালি, হাতে বেঁধেছে তাবিজ, মাদুলি। জল-পোড়া, তেল-পোড়া, বাণ-মারায় খুঁজেছে ব‍্যাধিমুক্তি ও শত্রুনিধনের উপায়। অশিক্ষিত বাহ্মণ‍ তথা সমাজপতিদের কথা’কে ধর্মীয় নিধান মেনে নীরবে পালন করে গেছে ধর্মীয় অনাচার। আর এই পথেই এসেছে ধর্মীয় মোড়কে একেরপর এক অমানবিক কলুষতা। যদিও সঠিক অর্থে হিন্দু ধর্মের নয়, বাহ্মণ‍্য ধর্মের কলুষতা‌। (হিন্দু’কে ব‍্যক্তিগত ভাবে ধর্ম হিসাবে মনে করিনা, এটা একটা সংস্কৃতি, এবং যেখানে মানুষের বিভাগ হয় কর্মের ভিত্তিতে, জন্মের ভিত্তিতে নয়। হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে অনায়াস সহাবস্থান সমস্ত ধর্মের। জন্মগত জাতিভেদ প্রথা, হিন্দু সংস্কৃতির পরিচায়ক নয়, হিন্দু সংস্কৃতি নিয়ে পরবর্তী কালে বিস্তারিত ভাবে লেখার ইচ্ছা আছে) কয়েকটি উদাহরণ দিলেই ব‍্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে, সতীদাহের বীভৎসতা’তো আমরা সবাই জানি, কিন্তু একটি ব্রাহ্মণের মৃত্যুতে বিধবা হলো যে ৫০ থেকে ১০০ জন নারী, যাদের বেশিরভাগই হয়তো সারাজীবনে স্বামীর মুখটাই ভালো করে দেখেনি, তাদের কী হতো? নামমাত্র, হাতে কড়ি গুঁজে তুলে দেওয়া হতো কাশির নৌকায়, সেখানে পৌঁছালো কীনা কেউ খবর রাখতনা, পৌঁছালেও তাদের স্থান হতো যৌন পল্লীতে বা বাবুদের বাগান বাড়িতে। কাশীগামী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটতো সেইসময় আকছার, উদ্দেশ্য’টা নিশ্চিত শুধু অর্থের জন্য নয়। যে মেয়েগুলো তাও থেকে গেল বাড়িতে, শরীরের ও মনের স্বাভাবিক ধর্ম মেনে যদি কখনো জড়িয়ে যেতো কোনো সম্পর্কে বা হতো নিকট-আত্মীয়ের যৌন লালসার শিকার, তাহলে অবশ‍্যই সব দোষ নারীটির! অতঃপর চৌরাস্তার মোড়। আর সেই বালিকাগুলি, বয়স যাদের তিন থেকে ছয় কী নয়, হয়ে যেতো তারাও কারো বিধবা, তারাও বলি হতো অসহায় ভাবে। গৌরীদান প্রথার দোহাই দিয়ে, বাবা বা কোনো নিকট আত্মীয় ছুটতো শ্মশানে ছয় বছরের নিচের মেয়েটির হাত ধরে, কোনো মৃত্যুপথযাত্রীকে জামাই বানাতে, পৌঁছানোর আগেই যদি হবু জামাইয়ের মৃত্যু ঘটতো, তাহলে যে সেই বালিকাটি বাড়ির সদর দরজা পার করতে পারবে এমন নিশ্চয়তা ছিলনা। ছয় বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে দিতে না পারলে, পুরো পরিবার পতিত হতো, জাতিচ‍্যুত হতো। বামুনের ছায়া মাড়ানোটাও তখন অপরাধ, যার জন্য বামুনকে করতে হতো গঙ্গা স্নান, আরো কীসব শুদ্ধীকরণ, আর ছায়া মাড়ানোর অপরাধে অব্রাহ্মণটির একঘরে করা বাঁধা (অবশ্য ঠিকঠাক অর্থমূল‍্যে সব পাপেরই লয় ক্ষয় ছিলো সেদিন’ও)। আর একটি অদ্ভুত প্রথা ছিল, অব্রাহ্মণ পরিবারের নতুন বউ’কে, প্রথম রাতে স্বামী নিজে পৌঁছে দিয়ে আসতো কূল পুরোহিত বা কোনো ব্রাহ্মণের বাড়িতে, ‘উচ্ছুগ্গ’ হতে। (অদ্ভুত, যেখানে অব্রাহ্মণের ছায়া মাড়ানো ছিল অপরাধ, সেখানে অব্রাহ্মণের শয‍্যাসঙ্গী হওয়াটা ছিল ধর্ম পালন)
এই যখন ধর্মীয় তথা সামাজিক অবস্থা, তখন তো সমান্তরাল উপধর্মের সৃষ্টি হবেই। কারণ মানুষ চিরদিনই, ধর্মের মাঝে শান্তি খুঁজেছে, খুঁজেছে আশ্রয়। হিন্দু তথা বাহ্মণ‍্য ধর্ম সেই শান্তির আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠেনি, বরঞ্চ প্রতি মুহূর্তে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, ভয় দেখিয়েছে, পান থেকে চুন খসলে না মাথা কাটা যায়। এই করতে নেই, আর এইভাবে করতে নেই, এইভাবে করা উচিত নয় আর ওইভাবে করা ঠিক নয় থেকে মুক্তি পেতে মানুষ খুঁজছিল এমন কিছু, যেখানে অন্তত শান্তিতে মড়াও যায়। (সেইসময় হুঁকো থেকে চিতা ছিলো জাতিভেদে পৃথক) এই আবহেই সৃষ্টি বাউলের। একদিকে নিয়মসর্বস্ব বাহ্মণ‍্য ধর্মের অমানবিক নির্যাতন থেকে মুক্তির আন্তরিক আবেদন অপরদিকে অফুরন্ত বিধবা কিশোরী, যুবতী, নারী যারা যৌনপল্লীর নিয়মিত ধর্ষণের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আশ্রয় নিয়েছিল বাউলের আখড়ায়। (এই পর্যাপ্ত বিধবা বা সমাজচ‍্যুত নারী ও নর’রাই ছিলো বাউলের মূল কাঁচামাল) যৌনতা এখানেও তাদের নিত‍্যসঙ্গী, কিন্তু এখানে সে সাধিকা বা সাধন সঙ্গীনী, বেশ‍্যার থেকে এই অভিধায় তাদের শিরদাঁড়া’টা অনেকটাই সোজা থাকতো। যে মেয়েটি এই কয়েকদিন আগেও ছিল কোনো অবস্থাপন্ন ঘরের আদরের দুলালী বা তার পক্ষে বেশ‍্যা অভিধার গ্লানির থেকে সাধিকা অভিধা ছিল অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত। তাছাড়া, একটা নারী শরীর সহজেই বুঝে নিতে পারে, যৌনসংসর্গ আর ধর্ষণের পার্থক্যটা। সমাজ পতিত নর ও নারীদের সম্মানীয় আশ্রয়স্থল হয়ে উঠলো বাউলের আখড়া। ধর্মের মোড়কেই হোক, তবু সহজ সুরের হৃদয়ছোঁয়া গান, অনাড়ম্বর সহজ-সরল মুক্ত জীবনযাপন, আর পছন্দসই যৌনমিলন তাদের দিন ও রাতকে করে তুলল আনন্দময়, শান্তি দিল তাদের। সামাজিক শাস্তির বিপরীতে এই শান্তিই বাউলের বিকাশের মূল কারণ।

প্রশ্নটা উঠতেই পারে, তাহলে বাউল কী শুধুই গান আর যৌনতা? কোনো তত্ত্ব নেই ? নেই কোনো গভীর বাণী? আছে, অবশ্যই আছে, কিন্তু সেটা বুঝতে গেলে,
প্রথমত: বুঝতে হবে, ধর্ম আসলে ঠিক কী? ধর্মের মধ্যে দিয়ে আসলে মানুষ ঠিক কী পেতে চায়। এবং দ্বিতীয়ত: এটা বুঝে নিতে হবে যে, বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট এই সমস্ত ধর্ম তথা তত্ত্ব বৈদিক প্রভাবকে অস্বীকার করতে পারেনি। সামগ্রিক ভাবে দেখলে দেখা যাবে, প্রতিটি ধর্ম বা তত্ত্ব আসলে বৈদিক সাহিত্যের প্রলম্বিত বিভিন্ন রূপ। ব্রাহ্মণ‍্য ধর্মের গোঁড়ামির প্রতিক্রিয়ায়, মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের জন্য সৃষ্ট। বাউল তত্ত্বে চোখ রাখার আগে আসুন দেখে নিই, ধর্ম আসলে ঠিক কী?
খায় না মাথায় দেয়….

প্রশ্ন’টা আপনাদের দিকেই ছুড়ে দিলাম, আচ্ছা, ধর্ম বলতে আপনি ঠিক কী বোঝেন?
অনেকরকম উত্তর আসছে, তাইতো ? আমার’ও।
যদি বলি, ধর্ম আদতে, গ্রে ম‍্যাটারের সাইড এফেক্ট (গ্রে ম‍্যাটারে তরঙ্গ বিক্ষোভ)
মেনে নেবেন?
হাসবেন না, আমি কোনো হাসির কথা বলিনি কিন্তু, আমি সত্যিই মনে করি, ধর্ম আদতে গ্রে ম‍্যাটারের সাইড এফেক্ট।
কেন? উত্তর’টা খুব সোজা। প্রশ্ন করুন নিজেকে,
মানুষ, ‘মানুষ’ কেন? এর উত্তরেই আমার উত্তর লুকিয়ে আছে। উত্তর’টা হলো, গ্রে ম‍্যাটারের বিকাশের জন‍্যেই মানুষ আজ অন্য প্রাণী থেকে আলাদা। এই গ্রে ম‍্যাটারের জন‍্যেই মানুষ চিন্তাশীল জীব। এই গ্রে ম‍্যাটারের জন‍্যেই আমি কবিতা লিখি বা গদ‍্য, আর আপনারা এই লেখাটা পড়ছেন ও ভাবছেন, কীসব উটপটাং লিখেছে রে বাবা!
মানুষ ‘মানুষ’ বলেই পেট ভরলেও মন ভরেনা, তার চিন্তার খোরাক চায়, তার চাই মনের খাদ্য। যার শুরু, প্রকৃতিকে প্রশ্ন করে, প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘটনা ও দুর্যোগের কারণ অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়েই মানুষের জ্ঞানচর্চার সূত্রপাত। আর এই জ্ঞানচর্চার পথেই আগমন ধর্মের। খুব বেশি পিছনে যাবো না, মানুষের ইতিহাস তথা বিবর্তন আমরা সবাই জানি, আমরা শুরু করবো, বৈদিক যুগ থেকে, যেখান থেকে কালক্রমে বিভিন্ন ধর্ম তথা তত্ত্বের সৃষ্টি (ভারতীয়)।
বৈদিক যুগের দিকে চোখ ফেরান, সেখানে কিন্তু সঠিক অর্থে কোনো ধর্ম নেই, যা আছে তা আসলে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ। সমকালীন জ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতিকে দেখা, প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন এবং প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করার বিভিন্ন কার্যক্রম। বৈদিক যুগে কোনো ঈশ্বর নয়, কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রকৃতি, প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান (অগ্নি, বায়ু, বজ্র, বৃক্ষ, সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী ইত্যাদি)। আর এই পথেই আসছে, ব্রহ্মজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞানের প্রতি যাত্রা। ব্রহ্মজ্ঞান লাভ’ই বৈদিক ধর্মের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। (ব্রহ্মজ্ঞান নিয়ে আমরা পরবর্তী অধ‍্যায়ে আলোচনা করবো।) বৈদিক ধর্মে তথা হিন্দু সংস্কৃতিতে কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম গুরু নেই। বৈদিক ধর্ম আদতে একাধিক ঋষি তথা শিক্ষিত মানুষের জ্ঞানচর্চা’র সামগ্রিক রূপ (শুধু পুরুষ নয়, বৈদিক যুগে নারীরা’ও জ্ঞানচর্চার অধিকারী, তাই তারা উপবীত ধারণের’ও অধিকারী)। অপরদিকে, আর যে সমস্ত প্রতিষ্ঠিত ধর্ম রয়েছে, তার বেশিরভাগ ধর্মেই একজন (কখনো একাধিক) প্রতিষ্ঠাতা বা প্রচারক ধর্মগুরু আছেন‌। এই ধর্মগুরুরা আদতে কী? একজন ভালো মানুষ। তাদের মানবিক গুনের আকর্ষণেই জড়ো হয়েছিল একধিক মানুষ, শুনেছিল, মেনেছিল, গ্রহণ করেছিল তাঁদের কথা। আর তাঁদের প্রত‍্যেকের কথা বা বাণীর মূলে ছিল একটিই বার্তা, তুমি ভালো থেকো, তোমার চারপাশের মানুষকে ভালো রেখো। শুধু নিজের জন্য নয়, বাঁচো সবার জন্য, সবার মধ্যে নিজেকে দেখো, মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থেকো। ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে, বা তাঁদের দোহাই দিয়ে, মানুষের রক্ত হাতে মাখতে বলেননি তাঁরা, বরঞ্চ বলেছিলেন ঠিক উল্টোটা, মানুষের চোখের জল মুছে দিও।
অর্থাৎ আমরা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি, ধর্মের মূল রূপ আসলে দুটো,
এক: জ্ঞানচর্চা, যার শুরু প্রকৃতির রহস্য অনুসন্ধানে এবং শেষ আত্মানুসন্ধানে (ব্রহ্মজ্ঞান)।
ধর্মের এই পথ মূলত গোপন, একাচারী, আত্মসন্তুষ্টির পথ, কিছুটা তাত্ত্বিক, কিছুটা আত্মোপলব্ধির। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাধন সঙ্গীনি বা বাহ‍্যিক উপকরণের প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু সেটা একান্তই বাহ‍্যিক। এই পথ সমাজবিযুক্ত হয়ে, ব‍্যক্তিসাধনার পথ। এই পথে, ধর্ম বিশেষে কিছু কার্যক্রম, কিছু কার্যপ্রকরণ যুক্ত হয়েছে পরবর্তীতে। এখানে ধর্মীয় বিধান বা অনুশাসন নয়, এখানে মূখ‍্য কিছু প্রণালী বা ক্রিয়াকলাপের অনুশীলনের মাধ্যমে একটার পর একটা ধাপে উন্নীতকরণ এবং অবশেষে পরমার্থ বা মোক্ষ বা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ। এই পথের শেষ একমাত্র দেহাবসান বা মৃত্যুতে। এই পথকে আমরা অনায়াসে ল‍্যাবরেটারির সাথে তুলনা করতে পারি। যার নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, আছে কিছু নিয়মাবলী, আছে নিবিড় অনুশীলন।
এবং দুই : ভালো মানুষ হওয়া, মানুষের জন্য মানুষের মাঝে, মানুষের সার্বিক ভালোর জন্য ধর্মপালন। এই পথের শুরু বা শেষ বলে কিছু নেই, নিরবচ্ছিন্ন কোনো প্রণালীও নেই। এখানে মানুষ একাচারী নয়, সমাজবদ্ধ জীব। আছে কিছু নির্দেশ, কিছু অনুশাসন। যা মেনে চললে মানুষ প্রতিমুহূর্তে বাঁচবে একে অপরের জন্য। এই পথের কোনো শেষ বা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য নেই। এই পথে মোক্ষ বা পরমার্থ লাভ আসলে প্রতিমুহূর্তেই। প্রতিমুহূর্তে সুন্দর ভাবে বাঁচা এবং চারপাশের মানুষকে একটি সুন্দর জীবন পেতে সাহায্য করা।

মূলপ্রশ্নটা এখানেই, ধর্মের মূল রূপ যদি এটা হয়, তাহলে প্রচলিত ধর্মগুলোর গোঁড়ামি এলো কোথা থেকে এবং এলো কীভাবে। এটা না জানলে আমরা বুঝতে পারবনা, এর বিপরীতে আমাদের আলোচ‍্য বাউলের মতো বিভিন্ন লোকধর্মের উৎপত্তি কীভাবে হলো। খুব সংক্ষেপে আমরা দেখে নিই মূল ধর্মগুলোর ক্রম-অবনতির কারণটা।
একটা নদী যখন পাহাড় ছেড়ে সমতলে এসে পড়ে, তখন সে স্রোত হারায়, জল হয় ঘোলা, জমে শ‍্যাওলা। ধর্মের পরিণতি’ও অনেকটা তাই। প্রকৃত জ্ঞানী মানুষের কাছ থেকে ধর্ম যখন প্রবেশ করলো সাধারণ মানুষের কাছে, তখন সেই স্রোত বা জ্ঞানের অভাব হেতু যুক্ত হতে থাকলো বিভিন্ন প্রক্ষিপ্ত অংশ, ধর্ম ক্রমশ তার মূল জায়গা থেকে সরতে শুরু করলো। সাধারণ মানুষের বোঝার সুবিধার জন্য প্রয়োজন পড়লো প্রতীকের, সহজবোধ্য ভাবে ধর্মীয় বার্তা প্রচারে সাহিত্যে (ধর্মীয় কাহিনী, আখ‍্যান, শ্লোক, সূত্র, মন্ত্র আদতে সাহিত্যই) সৃষ্টি হলো বিভিন্ন চরিত্র। সাহিত্য সৃষ্ট এই কাল্পনিক চরিত্ররাই কালক্রমে দেবতায় পরিণত হলো। কালক্রমে ধর্ম হয়ে উঠলো দেবতাদের বার্তা, ধর্ম হয়ে উঠলো দেবতা বা ঈশ্বরকে পাওয়ার উপায়। যা ছিল আদতে মানুষের জন্য মানুষের সৃষ্ট একটা পথ তা কালক্রমে হাত বদল হয়ে চলে গেল দেবতাদের হাতে। ক্রমে ধর্ম হয়ে উঠলো কিছু মানুষের জীবিকা। ধর্ম বিক্রি হলো, ধর্মের সাথে জড়িয়ে গেলো রুটি রুজির প্রশ্ন। কখনো কখনো রাজনৈতিক ভাবেও ব‍্যবহৃত হতে থাকলো ধর্ম। সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্র তথা ঈশ্বরের জন্য নির্মিত হলো বাসস্থান, সেই বাসস্থান ঘিরে চললো পুরুষানুক্রমিক নিশ্চিত উপর্জনের বন্দোবস্ত। কাল্পনিক চরিত্রের সম্মান রক্ষার্থে মানুষ হাত ভিজিয়ে নিলো মানুষের রক্তে। আদতে ঠিক ঈশ্বরের সম্মান রক্ষার্থে নয়, নিজেদের নিশ্চিত উপার্জনের পথে আগত বাধা দূর করতে। কালক্রমে, যা ছিল মূলতঃ জ্ঞানের পথে যাত্রা, যা ছিল আত্মিক ও জাগতিক কল‍্যাণের মাধ্যম, তা হয়ে পড়লো কিছু আচারসর্বস্ব পালনীয় কর্ত্তব‍্য, যার কেন্দ্রে এলো ঈশ্বর আর মানুষ হয়ে পড়লো প্রান্তিক।
আমাদের আলোচ‍্য বাউল তথা লোকধর্মগুলি আদতে ধর্মের বিকৃতিকে অস্বীকার করে, মূল ধর্মীয় লক্ষ্যের পথে যাত্রা। ধর্মের মূল কেন্দ্রীয় চরিত্রে পূণরায় মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করা।

এবার আমরা ঢুকে পড়ি সরাসরি বাউল তত্ত্বে। বাউল তত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে মানুষ, তথা সাধক নিজেই। অর্থাৎ ‘আমি’। বাউল আদতে নিজের সাধনা। কোনো ঈশ্বর নয়, বাউল সাধনা তথা তত্ত্বের লক্ষ্য নিজেকে চেনা, নিজেকে জানা। আত্মানুসন্ধানের পথেই বাউলের উদাসী হেঁটে যাওয়া। বৈদিক সাহিত্য অনুসারে যা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ, বাউলের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য সেটাই।
এই প্রসঙ্গে আমরা, ব্রহ্মজ্ঞান আদতে কী, সেটা জেনে নিই। প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ তথা প্রশ্ন করে যে জ্ঞানচর্চার শুরু তার চূড়ান্ত বিকাশ তথা উত্তরলাভ ব্রহ্মজ্ঞানে। প্রাথমিকভাবে মানুষ যখন প্রকৃতির মাঝে নিজের দিকে তাকালো, সে নিজেকে পেল অসহায় ভাবে, এই প্রকৃতির ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে। অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করলো কিছুদিনের জন্য সে আসে এই প্রকৃতির মাঝে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই ক্ষুদ্র সময়ের শেষে, সে আর নেই। মৃত্যুর চেয়ে এই ‘আমি আর নেই’ বোধ’টা মানুষকে যন্ত্রণা দিলো বেশি, এক অদ্ভুত অসহায় বিহ্বলতা। সে নিজেকে প্রশ্ন করলো, তাহলে আমি কে? কী ভূমিকা আমার এই প্রকৃতি তথা পৃথিবীতে? মৃত‍্যুতেই আমি শেষ? আমি আর কোথাও নেই? কেন নেই আমি? কেন থাকব না আমি?
প্রতিটি প্রশ্নের একটাই জবাব এলো, তুমি মরণশীল, চারপাশে চেয়ে দেখো, যে অসংখ্য জীব-জন্তু তুমি দেখছো, তাদের প্রত‍্যেকের মৃত্যু আছে এবং তোমারো।
অর্থাৎ মৃত্যু চরম সত্য, মৃত্যু’কে ঠেকানোর কোনো পথ নেই। একইভাবে অমরত্বের লোভ বা আকাঙ্ক্ষা থেকে নিজেকে মুক্ত করাও অসম্ভব। ‘আমি আর কোথাও নেই’ এই অসহায় বিহ্বলতা থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা শুরু হলো। এই পরিস্থিতিতেই মানুষ কল্পনা করলো, মরণশীল আমি’র মধ্যে’ও নিশ্চিত আছে আর একটা আমি, যার মৃত্যু নেই, যার লয় নেই ক্ষয় নেই। এই কাল্পনিক আমি’টা তাকে শান্তি দিলো, তাকে আশ্বস্ত করলো। নশ্বর দেহের অন্তরস্থ অবিনশ্বর আমি’র নাম’ই আত্মা। আত্মার আবিষ্কার তথা আত্মার কল্পনায় মানুষ মৃত্যু’কে ঠেকাতে না পারলেও অমরত্বের একটা দিশা খুঁজে পেল, একটা আশ্বাস। আত্মানুসন্ধানের পথে যে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ, তা আসলে এই নশ্বর দেহের অন্তর্গত অবিনশ্বর আমি’র খোঁজে যাত্রা।
অতঃপর মানুষ জানলো, বুঝলো ও বিশ্বাস করলো যে, আত্মা বলে কিছু একটা আছে নিজের মধ্যে, সে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হলো, যাক আমি আর মরবনা, আমি অমর। কিন্তু প্রাথমিক এই আনন্দ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ যখন চিন্তা করলো, আত্মা তো আছে বুঝলাম, কিন্তু যতক্ষণ না আমি নিশ্চিত জানছি যে আত্মা আছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার বোধকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছি আত্মার মধ্যে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার এই নশ্বর দেহ থেকে নিজের মন বা বোধকে বিযুক্ত করে আত্মাতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছি, ততক্ষণ তো আমি অমর নই। বাইরের আমি’টা আমি নই, আমার খোলস মাত্র, জন্মান্তরে যা পরিবর্তীত হবে। (আত্মার ধারণা থেকেই জন্মান্তরবাদের সৃষ্টি, আত্মার অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনে কীহবে, যদি না আবার এই প্রকৃতি তথা পৃথিবীতে ফিরে আসতে না পারি? মানুষ চিরদিনই সব কাজের মূলে প্রথমেই লাভের হিসাবটা কষে নিয়েছে)
ভিতরের আমি’টাই প্রকৃত আমি, এই বোধের প্রতি যাত্রায় মানুষ প্রথমেই দেখলো, আমাদের ষড়রিপু (কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মাৎসর্য) এই যাত্রাপথের প্রধান অন্তরায়। এই ষড়রিপু প্রতি মূহুর্তে মনে করিয়ে দেয়, বাইরের খোলসটাই আমি। তাই ব্রহ্মজ্ঞান লাভের পথে প্রথমেই এই ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণ তথা ত‍্যাগ জরুরি হয়ে পড়ল। দ্বিতীয় পর্যায়ে আসছে, নশ্বর শরীরের স্বাভাবিক চাহিদাগুলিকে অস্বীকার, যথা খাদ্য ও পাণীয় গ্রহণ এবং অন্তিম তথা তৃতীয় পর্যায়ে আসছে, শ্বাসবায়ুর ব‍্যবহারকে অস্বীকার করা, অর্থাৎ শ্বাসত‍্যাগ বা মৃত্যু। এই মৃত্যুর অব‍্যবহিত পূর্বের অবস্থায় যোগী নিজের নশ্বর দেহ থেকে নিজেকে পুরোপুরি বিমুক্ত করে অন্তরস্থ আমি’তে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং নিজেকে অর্থাৎ নিজের আত্মাকে প্রকৃতির অংশ হিসেবে নয়, প্রকৃতি ও নিজেকে এক করে দেখেন, নিজেকে বিলীন করে দেন প্রকৃতির মাঝে। নিজেকে প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে অমরত্বের বা পূর্ণাঙ্গ বিস্তৃতির এই চরম বোধের আনন্দই পরম আনন্দ বা সচ্চিদানন্দ, যার অব‍্যবহিত পরেই প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মোক্ষ বা নির্বাণলাভ। ‘আমি’ ও প্রকৃতির এই একাকার বোধটাই, এই জ্ঞানটাই ব্রহ্মজ্ঞান, অর্থাৎ সর্বভূতে আমি বিরাজমান, আমি হতেই সবকিছুর সৃষ্টি, আমাতেই সবকিছুর শেষ, আমিই সেই, আমিই প্রকৃতি, আমিই ব্রহ্ম। অর্থাৎ আমরা খুব পরিস্কার ভাবে বলতে পারি, ব্রহ্মজ্ঞান হলো, প্রকৃতি থেকে নিজের বাহ‍্যিক আমি’কে বিযুক্ত করে, প্রকৃতির মধ্যে আত্মিক আমি’কে বিলীন করে দেওয়ার মুহূর্তের বোধ’ই ব্রহ্মজ্ঞান। মুহূর্তের, এই কারণেই যে, ব্রহ্মজ্ঞানীর পক্ষে বেঁচে থাকা বা নশ্বর দেহের মধ্যে ফিরে আসা আর সম্ভব নয়, এটা মৃত্যুকালীন বোধ।(আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী বিশ্লেষণ করে দেখতে পাচ্ছি, এই বোধটা মৃত্যুর পরেও আসতে পারে, কারণ মৃত্যু অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ পর’ও, মোটামুটি দশ মিনিট, মানুষের মস্তিষ্ক জীবিত থাকে। তাছাড়া আর একটা তথ্য পাচ্ছি, দীর্ঘদিন উপবাসে অতিরিক্ত HCL ক্ষরণে পাকস্থলী তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে, মানুষের ক্ষিধে বোধ লুপ্ত হয়। এই প্রসঙ্গে শীর্ণকায়া এক মডেলের কথা কিছুদিন আগেই পড়লাম সংবাদ পত্রে। ক্রমশ কম পরিমাণ খাদ্যের জোগানের ফলে, দেহকোষগুলিও প্রাথমিক ভাবে নিজেদের অভিযোজিত করে কম শক্তি ক্ষয় করে তারপর আস্তে আস্তে তাদের কার্যকারিতা বন্ধ করতে থাকে, অর্থাৎ ধীরে ধীরে কোষের মৃত্যু ঘটে। আস্তে আস্তে শরীর প‍্যারালাইজড্ হতে থাকে। এইভাবেই ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘনিয়ে আসে। এই পথকে আমি সরাসরি আত্মহত্যার পথ বলতে দ্বিধা করবনা।) বাউল তত্ত্বে এই জানাটাই ‘মনের মানুষ’ প্রাপ্তি। ‘মনের মানুষে’র সন্ধান আর কিছুই নয়, নিজের মাঝেই নিজের সন্ধান, নিজের চোখে নিজেকে দেখা, নশ্বর আমি’র মাঝে অন্তরস্থ অবিনশ্বর আমি’র সন্ধান।

প্রশ্নটা উঠতেই পারে, মৃত্যু যদি পরিণতি হয়, তাহলে এর প্রয়োজন কী? প্রয়োজন কী আমি’ও জানিনা, বা হয়তো আমরা সবাই জানি। এই লেখাটা কেন পড়ছেন আপনি? কী প্রয়োজন আপনার? এতে কী আপনার পেট ভরবে? এই লেখাটা না পড়লে কী আপনার দিন চলবেনা? আমার স্ত্রী বলে, তুমি কবিতা লেখো, তাতে আমার কী লাভ? আমি কবি স্বামী চাইনা, আমি সংসারী স্বামী চাই। আসলে এই সমস্তই গ্রে ম‍্যাটারের সাইড এফেক্ট। আমি কবিতা না লিখে বা কবিতা না পড়ে থাকতে পারবো না, মনে হয় আমি মরে যাবো। অনেকের কাছে আবার,
কবিতা কী? খায় না মাথায় দেয়?
তাই বাইরে থেকে আমরা কোনকিছুর বিচার বা মূল‍্যায়ন করতে পারিনা, উচিত’ও নয়, শুধুমাত্র জানতে পারি। তাছাড়া ভাবুন সেই মানুষগুলির কথা, যারা ক্ষনিকের এই বোধটুকুর জন্য নিজের জীবনকে বাজী রাখতে পারে, মুক্ত করতে পারে নিজেকে জাগতিক চাহিদা থেকে, এই মনের জোর, অভীষ্টের পথে এই প‍্যাশনকে আমরা শ্রদ্ধা না জানিয়ে থাকি কীকরে? তাছাড়া এটাও তো আমরা জানিনা, সেই চরমতম আনন্দের মুহূর্ত স্বাদ ঠিক কেমন, আমরা শুধু কল্পনা করতে পারি, যখন আমরা নিজেকে প্রশ্ন করি, আমার মৃত‍্যুতেই আমি শেষ? আমি কোথাও নেই? কোথাও নেই আমি? এই চরম অসহায় বিহ্বলতার বিপরীতে প্রাপ্ত উত্তরটাই তো সেই পরম আনন্দ, সচ্চিদানন্দ।
এই প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে ব্রহ্মজ্ঞানী এক নারীর কথা। কোলকাতার কঙ্কাল কান্ডে অভিহিত মহীয়সী দেবযানীর কথা। একান্তে যিনি এই সাধন পথের পথিক ছিলেন। পৌঁছেছিলেন চরমতম লক্ষ্যে। তাঁর অসাধারণ মেধা (তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর স্মৃতিচারণে তাঁর ভাই ও তাঁর ছাত্রীদের কথায় জানতে পারি তাঁর অসাধারণ মেধার কথা, অবশ্য সবটাই সংবাদপত্রের সৌজন্যে।) তাঁকে খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল ধর্মের জঞ্জাল ভেদ করে, ধর্মের প্রকৃত স্বরূপটাকে, তিনি পেরেছিলেন ধর্মের প্রকৃত রূপকে স্পর্শ করতে এবং তিনি প্রমাণ করে গেছেন ধর্ম শুধুমাত্র পূরুষের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়।
( তিনি প্রমাণ করে গেছেন, ব্রহ্মজ্ঞান লাভে কোনো গুরুর প্রয়োজন নেই, নেই কোনো মত, পথ, তত্ত্বের। একজন মানুষ সম্পূর্ণ একাকী হেঁটে ছুঁতে পারে সেই সীমা।)

এই চরমতম লক্ষ্যের পথে হেঁটে যাওয়ার কিছু প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি রয়েছে। তন্ত্র তথা বাউল এবং বিভিন্ন সাধন পদ্ধতিতে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও (তা শুধু উপকরণে, যা বাহ‍্যিক) মূল প্রক্রিয়াতে সবাই এক। আমরা এবার সেই সাধনার process বা প্রক্রিয়াতে চোখ রাখবো। এই সাধনার মূলে আছে বীর্যের উপর নিয়ন্ত্রণ, বীর্যকে নির্দিষ্ট পথে চালিত করা। আর বীর্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে, শ্বাসবায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।(কপালভাতি, প্রাণায়ামের মাধ্যমে শ্বাসবায়ুর নিয়ন্ত্রণ) বীর্যকে উল্টো অভিমুখে, সুষুম্নার মধ্যে অবস্থিত ষড়চক্র, নীচে থেকে উপরে যথাক্রমে মূলাধার, সাবিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, আজ্ঞা এবং সর্বোচ্চ ব্রহ্মতালুতে অবস্থিত সহস্রারে পোঁছাতে পারলেই চরম আনন্দ, বা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ সম্ভব। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়া আদতে বীর্যের উর্দ্ধমুখী যাত্রা। সমস্ত যোগসাধনায় ব্রহ্মজ্ঞান লাভের এটা একটি স্বীকৃত পথ বা প্রক্রিয়া। ব্রহ্মজ্ঞান লাভে ইচ্ছুক প্রতিটি সাধক মূলত এই প্রক্রিয়া বা পথকে সামনে রেখেই সাধনা করেন, এটাই সর্বজনমান‍্য পথ। কিন্তু আমি এই পথটিকে মানিনা বা প্রথমেই নাকচ করছি এই কারণে যে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পাচ্ছি (আপনারা, প্রশ্ন করতেই পারেন, বিজ্ঞান কি সব প্রশ্নের উত্তর জানে? যেখানে বিজ্ঞানের সীমারেখা সেখান থেকেই তো শুরু ধর্মের। এর উত্তরে আমি বলবো, সব প্রশ্নের উত্তর না জানলেও কিছু প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিতভাবে জানে। আর বিজ্ঞানের কোন সীমারেখা নেই, ধর্মের আছে। ধর্মের’ও থাকতোনা, যদি ধর্মে তার প্রকৃত অবস্থানেই থাকত। সত্যি কথা বলতে কী, বিজ্ঞানচর্চা আর প্রকৃত ধর্ম দুটোই জ্ঞানের চর্চা। সেই জ্ঞানচর্চা’কে আপনারা দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছেন, আবদ্ধ করেছেন। আমার কাছে ধর্ম ও বিজ্ঞান আসলে এক, দুটোই জ্ঞানের চর্চা।) শুক্রাশয়ের বাইরে থেকে শুক্র বা বীর্য বাইরে আসতে পারে একমাত্র লিঙ্গ পথে। বীর্যের মাথায় পৌঁছনো তো দূরের কথা, উর্দ্ধমুখী গতিই অসম্ভব। এই প্রক্রিয়া বেদ পরবর্তীতে প্রবেশ করে। আমরা একটু আগেই যে আলোচনা করলাম, তাতে আমরা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি, ব্রহ্মজ্ঞান লাভের জন্য বীর্যের কোনো ভূমিকা নেই, এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করেও আমরা দেখেছি, ব্রহ্মজ্ঞান লাভ অসম্ভব কিছু নয়। ব্রহ্মজ্ঞান কোনো মিথ্যা মিথ নয়, এটা বাস্তব সত‍্য। ব্রহ্মজ্ঞান লাভের পথে বীর্যের ভূমিকা তখনই এসেছে, যখন ধর্ম তার মূল জায়গা থেকে সরতে শুরু করেছে। জ্ঞানচর্চা তথা আত্মোপলব্ধির পথ থেকে আচার সর্বস্ব ধর্মে পরিণত হতে শুরু করেছে।
বাউলের এই পথে যাত্রা তথা ‘মনের মানুষে’র খোঁজ শুরু হচ্ছে প্রাথমিক ভাবে নিজেকে ভালোবেসে। নিজের শরীরকে ভালোবেসে। শরীর নির্গত বর্জ্য পদার্থেও তাঁদের ঘৃণা নেই। তাই তাঁরা অনায়াসে নিজেদের মল, মুত্র, ঋতুরক্ত, রতিজনিত স্ত্রী-পুরুষের ক্ষরিত রস ও বীর্য পান করে। এই পাঁচটিকে তাঁরা ‘পঞ্চরস’ বলেন। এই পাঁচটি মিশিয়ে একটা মন্ড তৈরি করেন, যাকে তাঁরা প্রেমভাজা বলেন। এই একই জিনিস আমরা দেখতে পাচ্ছি, ব্রাহ্মণ‍্য ধর্মে, সেখানে রয়েছে পঞ্চগব‍্য।
বাউলরা মূলতঃ ভিক্ষাজীবী, অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী কোনদিনই ছিলেন না। এই অবস্থায় নিজেকে ভালোবেসে, নিজের সন্তুষ্টির জন্য সেই পথগুলিই বেছে নিয়েছিলেন যেগুলো তাঁদের পক্ষে বাস্তবসম্মত ছিল। তাঁদের পক্ষে নিশ্চয় ‘রাজার হালে’ থাকা সম্ভব ছিল না। কিন্তু সম্ভব ছিলো, নূন্যতম চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষার মধ্যে দিয়ে, সহজ সরল অনারম্বর জীবন যাপনে নিজেই নিজের রাজা হতে। তাঁদের জীবন যাপন তিনটি মন্ত্রে বাঁধা, নূন্যতম চাহিদা যুক্ত অনারম্বর জীবনযাপন, উদাত্ত সঙ্গীত, আর আন্তরিক যৌনতা। এই তিন পথেই বাউলের বাউল হয়ে ওঠা। সঙ্গীত নিয়ে আলোচনায় আমি যাবোনা, কারণ আমি নিজে গান জানিনা এবং বুঝিনা, আমি শুধু মুগ্ধ শ্রোতা মাত্র।

আমরা চলে যাবো বাউলদের আন্তরিক যৌনতা প্রসঙ্গে। এই অংশটিতেই বাউলরা সবচেয়ে বেশি দুর্নাম কুড়িয়েছে এবং এই অংশেই বাউলের প্রতি সর্বাধিক আকর্ষণের কারণ। আর এই অংশের জন‍্যেই আমি বাউল তত্ত্বের সন্ধানে ছুটে গেছিলাম খাল বিলে। বাউল সাধনাকে সাধারণত দুইভাবে ভাগ করা হয়, এক: জ্ঞানমার্গীয় যোগ সাধনা এবং দুই: নারী-পুরুষের যুগল দেহভিত্তিক গুপ্ত সাধনা। তবে আমি মনে করি, বাউলের সাধন পথ মূলত একটিই এবং তা হলো, ‘মনের মানুষে’র খোঁজ, জ্ঞানমার্গীয় যোগসাধনা। দেহভিত্তিক সাধনা আসলে প্রক্ষিপ্ত বা অবাধ যৌনতার একটা ধর্মীয় মোড়ক প্রদানের চেষ্টা মাত্র। বাউলকে বেশিরভাগ লেখক মূলতঃ দেহভিত্তিক গুপ্ত সাধনার পথ হিসেবেই দেখিয়েছেন, আমি পুরোপুরি অস্বীকার করছি। তবে একটা কথা স্বীকার করতে কুন্ঠাবোধ করিনা যে, পরিপূর্ণ যৌনমিলনের চরমতম অনুভূতি ছুঁতে পারে ‘ঈশ্বর’, এই চরম বা পরম আনন্দ সচ্চিদানন্দের কাছাকাছি। যা একজন মানুষ সাধারণ ভাবে সারাজীবনেও পাননা, বা পেতে পারেন না, কারণ সাধারণ ভাবে যৌনমিলনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ যৌন আস্বাদন পাওয়া প্রায় অসম্ভব। যৌনতা’ও একটা প্রসেস বা প্রক্রিয়া



                                                                                                     
                                                                 
লেখক পরিচিতি- জ্যোতির্ময় মুখার্জি
কবি ও গদ‍্যকার সম্পাদক : 'এখন তরঙ্গ' মাহাতা - পূর্ব বর্ধমান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

  1. অসাধারণ বিশ্লেষণে এগিয়েছে কলম আর জানার উৎসাহ ততই উত্তরোত্তর বাড়ছিল ,বেশ আধুনিক চিন্তার স্বাক্ষর সর্বপ্রথম মন কাড়লো দ্বিতীয়ত এতটা
    লেখার মধ্যে পাঠককে বোরিং হওয়ার কোন সুযোগ দেননি লেখক , শুভকামনা রইলো...

    উত্তরমুছুন
  2. যৌনতা’ও একটা প্রসেস বা প্রক্রিয়া, তার জন‍্যেও নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অনুশীলনের প্রয়োজন। এই ব‍্যাপারে তাঁরা অনেকাংশেই কামসূত্রকে গ্রহণ করেছেন। দেহভিত্তিক সাধনা বা বাউলের দেহসাধনা নিয়ে আর নতুন কিছু বলতে চাইছি না, কারণ এব‍্যাপারে এতকিছু লেখা হয়েছে যে নতুন করে বলার কিছু নেই। কামসূত্র থেকেও আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যেতে পারি।
    তাই সামগ্রিক ভাবে বাউল তত্ত্ব যখন জেনেছি, সামগ্রিক ধর্মবোধের নিরিখে যখন আমি বাউল তত্ত্বকে দেখেছি, তখন আর যৌনতা তথা দেহতত্ত্ব আমার কাছে বিশেষ কোনো আবেদন রাখেনি। এটা আমার কাছে, একসাথে বসবাস করা একাধিক নরনারীর (যারা জন্মকালীন সম্পর্কে আবদ্ধ নয়) স্বাভাবিক পরিণতি। এই মুক্ত যৌন জীবনযাপন’কে আমি খারাপ বলে তো কখনো ভাবিনি বরঞ্চ এটা মনে হয়েছে, এই অবাধ যৌনাচার যদি না থাকত তাহলেই ওনাদের আর মানুষ ভাবতাম না, ভাবতাম রোবট। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইরা, পিঙ্গলায় গেলাম না। সুষুম্না ছাড়া ওই দুই নাড়ির অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি মানব দেহে। অমাবস‍্যায় চন্দ্রের উদয় নিয়েও বলার কিছুই নেই, সমস্ত বিবাহিত নর-নারীই এক্ষেত্রে বাউল হতে পারেন। আর রসঘন করার প্রসেস বাউলের একচেটিয়া নয়, যেকোন মানুষই করতে পারেন, তাছাড়া গাঁজা সেবনে যেমন বীর্য গাঢ় হয় তেমনি রতিক্রিয়া’ও দীর্ঘায়িত হয়। এজন্য কোনো প্রসেস বা শ্বাসবায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়ে না। বাউলের যৌনতা তথা দেহতত্ত্ব নিয়ে যা কিছু লেখা হয়েছে বা আমরা জেনেছি, তার পুরোটাই আমার অকারণ মনে হয়েছে। এর সাথে মূল বাউলতত্ত্বের কোনো যোগ আমি পাইনি।
    সবশেষে এটাই বলবো যে, আমার কাছে বাউল প্রথমত, একটি অসাধারণ গানের ধারা, দ্বিতীয়ত, একদল মানুষ, যারা নিজেদের ও তাঁদের চারপাশের মানুষদের মানুষ মনে করেন। বাউলের এই মানবিক মূল্যবোধটাই আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। একটি ধর্ম, যা মানুষকে মানুষের মর্যাদা দেয়। একটি ধর্ম, যেখানে মানুষ মানুষের জন্য বাঁচে, বাঁচে নিজের জন্য।
    আমরা তাই অনায়াসে বাউল হতে পারি প্রতি রাতে, প্রতি ক্ষণে, প্রতি মূহুর্তে।
    আমরা বাউল হতে পারি নিজেকে ভালোবেসে।

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন