শবরী রায় - মায়াজম

Breaking

২০ জানু, ২০১৮

শবরী রায়

                             পাশের ছাদ



লমে কালি আছে, রং তুলি মজুদ,পৃষ্ঠা ক্যানভাস গা উদলা করে বসে আছে, মস্তিষ্কও সম্পূর্ণ ভাবে সুস্হ। এইসময় কাউকে যদি দুহাত বেঁধে রেখে দেওয়া হয় তার কেমন লাগতে পারে ভাবুন তো? এইসময় সে কী কী করতে পারে ভাবনা ছাড়া। ভাবনা আর চিন্তার মধ্যে তফাৎ কী বলতে পারেন? আমি প্রশ্ন করবো,আপনি মনে মনে উত্তরটা ভেবে যান। আমাকে বলতে হবে না। আমি যা বলবো এখন শুধু শুনে যান। শোনা প্র‍্যাক্টিস করাও খুব জরুরি। ভাবার মত ব্যাপার। প্রতীক চোখের দিকে তাকায় না। এটা কি নতুন অসুখ? আমি প্রশ্ন করলাম তুমি কাল চণ্ডীগড় যাচ্ছো? না। তবে কী হায়দ্রাবাদ? উত্তর এল,' না'... চোখ লাইটারের দিকে, লাইটার জ্বালাচ্ছে নেভাচ্ছে। তাহলে কোথায় আমেদাবাদ? না, চেন্নাই? আমি ভাবলাম আমি উত্তরগুলো যুগিয়ে দেবার চেষ্টা করছি কি? তুমি কী করছো? আগুন দেখছি। আমি আর কোনো প্রশ্ন না করে উঠে এলাম। আগুন দেখা কতটা জরুরি আমি কিচেনের ওভেন এর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম। ভাবতে ভাবতে দুধ উথলে পড়ে আগুন নিভে গেল। আগুন নিভে কাজ বাড়লো। কাজ বাড়লে কি ভাবনাচিন্তা কমে যায়? প্রতীক বেরিয়ে যাচ্ছে। গাঢ় নীল একটা নতুন দামী সোয়েটার। এটা কবে কিনলে? জানিনা, মনে নেই। চোখ জুতো পড়ায়,চোখ ব্যাগের দিকে, চোখ দরজায়, চোখ ফোনে, গলায় ধমক ড্রাইভারের প্রতি। দরজা ধাম করে বন্ধ করে দিতে ইচ্ছে হল। কিন্তু নিঃশব্দে বন্ধ করে এসে আমি পাশের বাড়ির ছাদের দিকে তাকালাম। ওই যে বলেছি, আমার দুহাত বাঁধা।ওই যে বলেছি আমার ভাবা ছাড়া কোনো কাজ নেই। আলতো ভাবনা থেকে গভীর চিন্তায় ডোবার আগে আমি ওই ছাদের দিকে তাকালাম। ওই ছাদেই আমি আমার মনটাকে রেখে দিই। কী আছে ওই ছাদে? কে আছে? যারা যাওয়াআসা করে তাদের কাউকে আমি চিনি না। মুখ মনে রাখার চেষ্টা করি না, পুরুষ না নারী তাও দেখিনা। তারের মত অনেক বাঁশ টাঙানো ওই ছাদে। সকাল দুপুর বিকেল প্রচুর রঙবেরঙ কাপড় মেলা হয়। ওটা একটা ছোটখাটো রঙ করার কারখানা। কাপড় রঙ হয়। এই মুহূর্তে সমস্ত ছাদ রুদালি। ওই যে বলেছি ওই ছাদে আমি আমার মনকে রেখেছি। সব কালো কালো থান মেলা দেখেও মন বাধা পেলো না। জানি কালো সবসময়ের রঙ নয়। সকাল গড়ানো আলোয়, কালো চাইলেও বেশিক্ষণ টিঁকবে না। নীল আকাশ, সবুজ গাছ, হলুদ রোদ্দুর দেখে চোখ বুজলাম। আমার বন্ধ চোখের ভেতর কোনো অন্ধকার নেই। কালো নেই, রুদালি নেই। এক উষ্ণ কমলা আর পারাবত সাদা পাখা ঝাপটাচ্ছে। উড়তে চায়, উড়বে। উড়বেই একদিন। হোক না হাত বাঁধা। হোক না ডানা ছাঁটা। অমিত, শ্রুতি, ফিরোজ, এদের কারুর সাহায্য ছাড়াই সে উড়বে। একটা লুকনো ঘরে ধীরে ধীরে জমা করছে দানাপানি, কম্বল,কলসি, মোমবাতি। আর কীই বা চাই। ভাবনাকে চিন্তারাজ্যের দিকে যেতে না দিয়ে চোখ খুলতেই দেখি ছাদে ফরফর করে উড়ছে সাদা আর কমলা কাপড়,থানকে থান। এই তো আমার মনের জয়। বাইরে ভেতরে সর্বত্র ওই সাদা আর কমলা।
কিন্তু সবসময় এমন হবে এর কোনো মানে নেই। বাইরে গাঢ়তম নীল পতপত করে উড়ছে, ভেতরে নরম গোলাপি। কালই এমন হয়েছিল। এতেও বিচলিত হলে চলেনা। এইসব সময় এলোমেলো হবার সম্ভাবনা। তখন ফোন বন্ধ করে রাখাই সমীচীন। সবাইকে সব জানতে দিতে নেই। খাবলা খাবলা ভালোবাসার গল্প, সম্পর্কের মৃত্যুর গল্প, ইঁদুর মারার বিষের মৃদু ঝাঁজালো গন্ধের গল্প.. না এসব জানতে দিতে নেই। যারা চোখের দিকে তাকায়না তাদের থেকে গোপন রাখা সোজা, যারা চোখের থেকে চোখ সরাতে চায়না তাদের থেকেও এসব পাশের বাড়ির রক্ত মাংস মেদ মজ্জাহীন ছাদের রঙীন ওড়াউড়ি নিজের মধ্যেই রাখা ভালো। আপনিও ভাবুন কে কে আপনার চোখের দিকে আর তাকায়না, ভাবুন আপনি কার চোখের দিকে তাকাতে পারেননা। তারপর ভাবতে ভাবতে কাজে যান। দেখবেন ভাবতে ভাবতে হোঁচট খাবেন না যেন। হাতের কাছে অল্প কাঁটাছেঁড়ার মলম রাখুন। নিজের মলম নিজেই লাগান গোপনে। আপনার পোড়াজ্বালার জন্য কেউ দায়ী নয়। সবার নিজের নিজের জীবন। আর আপনার জীবন সবচাইতে মূল্যবান। গভীর কোনো চিন্তায় ঢোকার আগে একটা শক্তপোক্ত জায়গায় নিজেকে বসান। পাশের একটা খোলাছাদে মন জমা রাখুন।এরপর আর কোনো ভাবনা নেই। নিশ্চিন্তে শুরু করুন আপনার প্রথম গভীর চিন্তা।





                                                                                                               
                                                      

লেখক পরিচিতি-

 কবিতার বই-

১) বৃষ্টির তাঁবুর ভেতর
২) শরীরের বাতিঘর
৩) এসরাজে বেজেছে নীল সুর
৪) শঙ্খ লেগেছে চাঁদে
৫) হিজল গাছের বনসাই
৬) জলরং





প্রকাশিত গল্পের বই-
নূপুর খুলে রাখি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র