কেন?
ভূগোল পড়তে পড়তে লোডশেডিঙের আলোয় সন্ধ্যে ঢুলে আসতো আর প্রশ্নপত্রে অক্ষাংশ, দ্রাঘিমার অঙ্ক দেখলেই পাতা আপনাআপনি
উলটে যেত বলে কি প্রবন্ধের শুরুটা ভূগোল দিয়ে হতে নেই? ‘বর্ষ’ মানে যদি কোন একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা বোঝায়, তাহলে ভারতবর্ষ হল ভরত–বংশোদ্ভূতদের এলাকা। ভারতের উত্তরে হিমালয় পর্বতের উত্তর থেকে হেমকূট পর্বতের দক্ষিণ পর্যন্ত কিম্পুরুষ
বর্ষ, হেমকূট পর্বতের উত্তর থেকে নিষধ পর্বত
পর্যন্ত হরিবর্ষ এবং নিষধ পর্বতের উত্তরেই ইলাবৃত বর্ষ বা আমাদের পবিত্র স্বর্গভূমি
- মধ্য এশিয়ার পামির বা পূর্ব তুর্কীস্থান। তার থেকেও একটু খানি মই বাড়ালে আমরা পেয়ে যাব উত্তর কুরু তথা ব্রহ্মলোক ওরফে বিষ্ণু
লোক (ক্যাস্পিয়ান সাগরের উত্তর দিক) - সাইবেরিয়া বা রাশিয়ার কোন স্থান – যেখানে শৃঙ্গী হরিণ প্রচুর পরিমাণে
পাওয়া যায়।
বাপরে! একটানা ভুগোল লিখেই হাত টনটন করছে। দেবতাদেরও নিশ্চয় পা টনটন করেছিল মধ্য এশিয়ার নদ- নদী শুকিয়ে একসা হয়ে যাওয়ায়
স্বর্গীয় সভ্যতার বাস তুলে দিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পায়ে নামতে নামতে কাশ্মীর অর্থাৎ
অন্তরীক্ষ পেরিয়ে ভারত বর্ষে সেঁধোতে। উত্তর ভারতে পা রেখেই তাদের রাজা ইন্দ্রের
পরিবর্তে হয়ে গেলেন মনু। দেবতারা হয়ে গেলেন মানব। আবার তার মধ্যেও কথা আছে। এই মহা যাত্রা অবরোহণে
পথিমধ্যে যাত্রীরা দুভাগে ভাগ হয়ে নীচে নেমেছেন। এক দলের নাম দেব; আরেক দল অসুর।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে
‘লোক’ কারা? আর্যরা নিজেরাই তো যাযাবর যুদ্ধবাজ বাইরের লোক।
না তাদের মধ্যে স্রেফ অসুররাই লোক -একটু বেশি রিপুকাতর আর একটু কম কৌশলী বলে? নাকি
তাদের আসার অনেক আগে ভারতবর্ষের মৃত্তিকাসন্তান অনার্যরাই খড়্গনাসা আর্যদের চোখে
‘লোক’? কিন্তু, আর্যরা যদি ভারতবর্ষের বাইরে থেকে আদৌ না আসে? সম্প্রতি হার্ভার্ড মেডিক্যাল
স্কুল, হার্ভার্ড স্কুল অফ পাব্লিক হেলথ, ব্রড ইন্সটিটিউট হার্ভার্ড, এম,আই, টি
এবং সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে উত্তর
দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম – এক ভারতীয়র সাথে আরেক ভারতীয়’র জিনগত সাদৃশ্য বর্তমান।
তাছাড়া মেগাস্থিনিস তাঁর ইন্ডিকাতে বলে গিয়েছেন- ‘...that India, being of enormous
size when taken as a whole, is peopled by races both numerous and diverse, of
which not even one was originally of foreign descent, but all were evidently
indigenous; and moreover that India neither received a colony from abroad, nor
sent out a colony to any other nation.’
সুতরাং আর্য-দ্রাবিড় ভেদাভেদ তত্ত্বই যদি মিথ্যে
হয়ে যায়, তাহলে তো সবাই ‘লোক’। ডাল মে কালা খোঁজা যায়; কিন্তু যেখানে সংশয়, প্রমাণাভাব, নানা মুনির নানা
থিওরি ও বিস্মৃত অতীতের অন্ধকার ডালকেই কালা করে দেয়, সেখানে ‘লোক’ বাছতে ভারতবর্ষ
উজাড় হবে, এ আর আশ্চর্য কি?
ভূগোল হল, ইতিহাস হল, এমতাবস্থায় দর্শনের তৃতীয়
নয়নটি বন্ধ করে প্রবন্ধকে পদ্মলোচন করে লাভ নেই। বরং সেই দক্ষিণেশ্বরের নিরক্ষর
বামুন ঠাকুর যা বলে গেছেন, সেটাই সত্যি বলে ধরা যাক - ‘যত মত তত পথ’। আর্যরা বাইরে থেকে আসুক আর
ঘরের লোকই হোক, আর্য ও অনার্যদের মূল পার্থক্য তাদের দর্শনে অর্থাৎ অধ্যাত্মবাদী
দর্শন তথা জড়বাদী দর্শনের। জড়বাদ নানা ভূতের তৈরি করা দেহ পেয়েই খুশি। সেই দেহের
একটা চৈতন্য আছে বটে কিন্তু সেটাও ওই সর্বভূতের একটি সম্মেলন ছাড়া আর কিছুই নয়। মদ
যেমন বিভিন্ন উপাদানে তৈরি; কোন একটি বিশেষ উপাদানে মাদকতা শক্তি থাকে না ঠিক
তেমনই চৈতন্যও চতুর্ভূতের একটি চাট ছাড়া আর কিছু নয়। ‘আত্মা’ বা ‘প্রেত’ নামের বোগাস
ব্যাপারটাকে জড়বাদীরা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে, অধ্যাত্মবাদীরা মনে করেন,
আত্মা নিত্য। দেহের লয় ক্ষয় আছে, কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর। এই দার্শনিক মতভেদই আর্যদের চোখে
অনার্যদের ‘লোক’ বা দুষ্টু লোকে পরিণত করেছে।
যা আছে ভারতে, তা
আছে ভারতে। ভারতীয় ‘লোক’দের উৎসমূল ধরে টান দিতে গেলে মহাভারতীয় বলবত্তার অস্তিত্বকে
উপেক্ষা করার উপায় নেই। কারণ, মহাভারত শুধু মহাকাব্য নয়, ভারতেতিহাসও বটে। মহাভারত বলছে - ‘বহবো
ম্লেচ্ছরাজানঃ পৃথিব্যাং মনুজাধিপ।’ কলিযুগে বহু জায়গাতেই ম্লেচ্ছদের রাজা হতে
দেখা যাবে - এইসব জাতিনামের মধ্যে আমরা পাচ্ছি - আন্ধ্র, শক, পুলিন্দ, যবন,
কাম্বোজ, বাহ্লিক, শূর এবং আভীর। কানাকে কানা বলিয়ো না, খঞ্জকে খঞ্জ বলিয়ো না,
নাচতে না জানিলে উঠান বাঁকা বলিয়ো - যেহেতু আমাদের ঐতিহ্য, তাই ম্লেচ্ছরা কলিযুগে রাজা হবে – পৌরাণিক
ঠাকুরদাদাদের এই ভবিষ্যতবাণী বরং আমাদের ঐতিহাসিক আশ্বস্ততা দেয় এই মর্মে, যে কলিযুগের আগেও এই জনজাতিগুলো
আর্যাবর্ত থেকে সুদূর পশ্চিমে বা দক্ষিণে বা দক্ষিণ-পশ্চিমে বহালতবিয়তেই ছিল এবং তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির
ক্রমবর্ধমানতা থেকেই ঠাকুরদাদাদের এই কলিযুগীয় অনিষ্টের আশঙ্কা।
উল্লিখিত ‘আন্ধ্র’
জনগোষ্ঠীর সগোত্রীয় দক্ষিণদেশীয় অন্যান্য জনজাতিরা হল - পুলিন্দ, শবর, গুহ, চুচুক,
মদ্রক। তথাকথিত আর্যভূমির বাইরে বিন্ধ্য পর্বতের আশেপাশে ছিল পুলিন্দদের ডেরা।
ভীমসেন পুলিন্দদের পরাজিত করেছেন বটে, কিন্তু পুলিন্দনগরের খবর পাচ্ছি আমরা।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পুলিন্দ আর আন্ধ্র দুর্যোধনের পক্ষে যোগ দিয়েছিল।
যবন, শক, বাহ্লীক,
কাম্বোজ গোষ্ঠীয়দের অবস্থিতি ছিল বর্তমান ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে। এখনকার
আফগানিস্তান, ইরান-পাকিস্তানের সীমান্তদেশ, উত্তর-পশ্চিমের পাঞ্জাব অঞ্চল, মধ্য এশিয়া,
গ্রিস এর কাছাকাছি অঞ্চল - সবই এদের আবাসভূমির অন্তর্গত। মজার কথা হচ্ছে,
উত্তরাপথের অনার্যগোষ্ঠীর কথায় মহাভারত বলেছে, ‘যৌন-কম্বোজ-গান্ধারাঃ কিরাতা
বর্বরৈঃ সহ।’ গান্ধারপ্রদেশও এই শ্লোকে একটি ম্লেচ্ছরাজ্য বলে স্বীকৃত (ধিক্কৃত)
হয়েছে। তার মানেটা গিয়ে দাঁড়াল, যে গান্ধারনরেশ সুবলপুত্র মামাশ্রী গুপিযন্তর
(মতান্তরে পেন্টাল) শকুনি স্বয়ং ‘লোক’ ছাড়া অলোকসামান্য কিছুই নন। হ্যাঁ, ওপর দিকে
হিমালয় পর্বতে কুবের রাজার অধীনে আরও কিছু পাহাড়ী লোক ছিলেন বটে। নাম তাদের যক্ষ,
রাক্ষস। কান, মুখ পেরেকের মতো, গায়ের রং হলদেটে লালচে। কিন্তু ধনেশ্বরের পার্ষদ
হওয়া সত্ত্বেও তারা অনিকেত, চীরবাসা, বৃক্ষবাসী।
তা, দক্ষিণ আর
পশ্চিম আর উত্তরের নটে গাছ মুড়িয়ে এবার আসা যাক পূর্বের কথায়। তা, তারপর হল কি?
দেবগুরু বৃহষ্পতির ভাইপো অন্ধ ও বিকৃতকাম
মুনি দীর্ঘতমা তাঁর ভাইবৌয়ের সঙ্গে সঙ্গম করতে চাওয়ায় রেগেমেগে তাকে ভাইবৌ গঙ্গায়
ফেলে দিলেন। বৈশালী থেকে ভাসতে ভাসতে মুনি ঠেকলেন আনব রাজ্যে, তখন মহারাজ বলি তাকে
টেনে তুললেন আর অন্তরের আর্জিটা জানালেন। রাজার কোন পুত্র নেই। তাই নিয়োগপ্রথায়
রাণী সুদেষ্ণার কোল আলো করতে হবে দীর্ঘতমাকে। মুনি কথা রাখলেন। অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গ
সুহ্ম পুন্ড্র - পাঁচ পাঁচটি পুত্র উপহার দিলেন রাজাকে। রাজা এই পাঁচটি ছেলেকে
পাঁচটি রাজ্যে অভিষেক করলেন। এই হল পূর্বের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যাধিকারীর জন্মবেত্তান্ত। মগধ রাজ্য অধুনা বিহারের দক্ষিনাঞ্চল এবং গয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিল। মগধের সঙ্গে অঙ্গ রাজ্যের বিভেদরেখা ছিল চম্পা নদী। কৃষ্ণের বিরুদ্ধে জরাসন্ধের বাহিনীতে
নাম পাওয়া যায় অবিভক্ত বাংলার উত্তরার্ধের রাজা পৌন্ড্রক বাসুদেবের। তিনি নাকি অঙ্গ-বঙ্গ- কলিঙ্গ – তিন দেশেরই রাজা ছিলেন। বস্তুত, অঙ্গরাজ্যের কিছুটা ছিল দুর্যোধনের (যার দেখভালের ভার পড়েছিল কর্ণের উপর), কিছুটা পৌন্ড্রক বাসুদবের আর কিছুটা
জরাসন্ধের। এইসব রাজ্যের মানুষজন মূল আর্যবসতির পৌরব কিংবা যাদবদের
সুনজরে ছিলেন না। মগধ কিংবা পূর্বাঞ্চল আর্য প্রভুদের কাছে ভদ্রলোকের জায়গা
ছিল না; তাদের ভাষাও এনাদের পছন্দ ছিল না। এমনকি এসব জায়গায় গেলে তাদের প্রায়শ্চিত্ত করতে হোত। মূল আর্যগোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে জরাসন্ধ
যেহেতু মগধে বসতি গেড়েছিলেন, সেজন্যই তিনি আর্যগোষ্ঠীর বিরাগভাজন হয়েছিলেন। সুতরাং পূর্বের ‘লোক’রাও পরমহংসদের কথায় আর্যাবর্তের
কাছে লোক না পোকের বেশি কিছু ছিলেন না।
আর যেসব লোকেরা
গোব্রাহ্মণহিতায় আর্যদের ল্যাজেগোবরে করে ছেড়েছিলেন, তারপর দীর্ঘকাল পাশাপাশি থাকতে থাকতে যুদ্ধ করে ক্লান্ত হতে হতে এক দেহে
লীন হয়ে গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হল নাগজাতি। আর্যরা যখন সুপরিকল্পিতভাবে
ভারতের উত্তরখন্ডে ছড়িয়ে পড়তে থাকেন, তখন এই নাগদের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। নাগেরা
অবশ্যই আরণ্যকগোষ্ঠী। গঙ্গা (কৌরব্য নাগের কন্যা উলুপী অর্জুনকে গঙ্গা স্নানরত
অবস্থাতেই পাতালে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন) যমুনা (কালীয় নাগের মাথায় চড়ে নন্দলালের
নাচটা ছোটবেলায় প্রধাণ আকর্ষণ), নর্মদা নদীর ধারে বনাঞ্চলে বসবাস করতেন। এদের
মধ্যে আর্যদের চিরশত্রু তক্ষক (পরীক্ষিতের হন্তা ও জন্মেজয়ের সর্পযজ্ঞের প্রধান
কারণ) যেমন আছেন তেমনই বাসুকি (সমুদ্রমন্থনে
মন্থনরজ্জু হয়েছিলেন যিনি) বা শেষনাগ (যিনি ব্রহ্মার বরে ধরণীকে ফণাগ্রে ধরে রাখার
চাকরি পেয়েছেন) তেমন বন্ধুরাও আছেন। বস্তুতঃ হস্তিনাপুর, ইন্দ্রপ্রস্থ
(খাণ্ডবদাহনের ফলে তক্ষককে বাস্তুহারা হতে হয়েছিল, মনে পড়ে?), তক্ষশিলা
(সর্পযজ্ঞের আগেই তক্ষশিলা জয় করেছিলেন জন্মেজয়) এসব আর্যদের ভদ্রাসন হবার আগে
নাগজাতিরই বাসস্থান ছিল। নাগ মানে সর্প। নাগেরা সম্ভবত সর্পের টোটেম বা প্রতীক
ব্যবহার করতেন বলে তাদের পুরোদস্তুর সাপেদের মতো হিলহিলে, বিষধর হিসেবে দেগে দিতে
বাঁধেনি আর্যবাবুদের।
আর ছিল নিষাদেরা। ভারতবর্ষের
সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল তাদের বসতি। বিন্ধ্য পর্বতের এদিক –ওদিক। গঙ্গার ধারে
ইলাহাবাদ থেকে কিছুটা দূরেও তাদের বসতির হদিশ মেলে। এদের নিজস্ব ভাষা এবং কৃষ্টি
ছিল - যা অবশ্যই অসভ্য কিন্তু তাদের যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শীতা যে বিশেষ সভ্য ছিল,
তা ধর্মযুদ্ধের দুই পক্ষেই নিষাদ যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তি প্রমাণ করে। নিষাদ-রাজ
হিরণ্যধনুর ছেলে একলব্যের অস্ত্র নৈপুণ্য ও ভাগ্যবিড়ম্বনার কথা সবার মনে আছে। বরং
মনে করিয়ে দেওয়া যাক, জতুগৃহ থেকে যে মা ও পাঁচ ছেলের পুড়ে যাওয়া লাশ পাওয়া
গিয়েছিল, তারা ছিলেন এক নিষাদী মা ও তার পাঁচ নিষাদ-ছেলে। আর্যদের বিদগ্ধ কূটনীতির
দগ্ধ পরিণাম।
ছোটখাটো এলাকার
মস্তান গোছের হিড়িম্ব দাদারাও যে ছিলেন না তা নয়। বারণাবত দিল্লির খুব দূরে নয়,
সেখান থেকে ঘটনাচক্রে পাণ্ডবরা এক বিশাল অরণ্যভূমি পেরিয়ে পঞ্চালে অর্থাৎ অধুনা
বেরিলি বদায়ুনের কাছাকাছি এসে হাজির হয়েছিলেন। এই অরণ্যভূমিই ছিল হিড়িম্ব এবং
প্রথম পান্ডবলক্ষ্মী হিড়িম্বার বসতি।
সামান্য জেলেদের
জাল থেকে আমরা পেয়েছি মহাভারতের অন্যতম নায়িকা কুরুকুলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী
সত্যবতীকে। মহাভারতে এদের বলা হয়েছে দাস। তামিল অভিধানে কলিঙ্গ বলতে বোঝায়
নদীকুলবর্তী এলাকায় বসবাসকারী ভয়ঙ্কর স্বভাবের ব্যক্তিকে। তামিল কলিঙ্গই বাংলায়
খাঁড়ি হয়ে গেছে। খাঁড়িকে স্থানীয় ভাষায় বলে খালি। তাইতো আমরা পেয়েছি বকখালি,
নোয়াখালি, পটুয়াখালি। এই রে, প্রাবন্ধিকের রক্ত-মাংসের মানুষ হবার এই দোষ- সময়
অসময়ে দ্যাশের লোকের কথা মনে পড়ে যায়।
এছাড়া চতুর্বর্ণের
মধ্যে ‘সংকরজন্মা’ দেরও ভদ্রলোকের বলে গণ্য করা হোত না। সংকর প্রজাতির সংখ্যাও
কিছু কম ছিল না। এদের মধ্যে দু একজন আমাদের খুব চেনা-জানা। বিদুর ছিলেন ‘ক্ষত্তা’
বা ‘পারশব’ (ব্রাহ্মণের ঔরসে শুদ্রার গর্ভে জাত ব্যক্তি); তাই ক্ষমতা থাকা
সত্ত্বেও রাজা বা ট্রাস্টি রাজা কোনটাই হতে পারেন নি। ব্রাহ্মণ-কন্যার গর্ভে ক্ষত্রিয় ঔরসে জন্মানো সুতপুত্রদেরও যে
সমাজে কি মান ছিল, তা আমরা অধিরথসুতপুত্র রাধাগর্ভজাত কর্ণের অস্ত্রপরীক্ষার আর
দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভার দিন টের পেয়েছি। যেদিন পৃথু রাজা (যার নামে পৃথিবী)
জন্মালেন সেদিনই ব্রহ্মা সুতদের সৃষ্টি করে বললেন মহান রাজার স্তব করতে। সুতরাং
প্রথম থেকেই সংকরজন্মা সুতেরা রাজার যশোগায়ক পৌরাণিক হয়ে গেলেন। কিন্তু যে
ব্যাপারটা চুপিচুপি কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিতেছে, তাহা হইল এই যে - ব্রাহ্মণকন্যা
দেবযানী ও ক্ষত্রিয় যযাতি’র জ্যেষ্ঠ পুত্র যদু যদি সুতপুত্র হন, তাহলে যদুবংশের
লোকেরা, বিশেষতঃ যদুকুলশিরোমণি কি হন? তার মানে মহাভারতের নরোত্তম অধ্যাত্মপুরুষ
আসলে একজন সুতপুত্র।
সুতরাং, তালপত্র
মুড়োবার কালে এটুকুই বলা যায়, মহাভারত হল ভারতবর্ষে আর্যদের ক্রমবর্ধমানতা ও
ক্রমবিবদমানতার ইতিহাস, যা রচনা করেছেন এক জেলের নাতি বেদব্যাস, যা জগতকে
শোনাচ্ছেন সুতের ছেলে উগ্রশ্রবা সৌতি, যে ভরতবংশের কীর্তি ব্যাখ্যাত হয়েছে, সেই
বংশের প্রতিষ্ঠাতা ভরত - মেনকা নাম্নী এক বেশ্যার নাতি, যে বংশের পরাক্রম বৃদ্ধি
করেছেন দানবী শর্মিষ্টার ছেলে পুরু, যে বংশকে ঘিরে ধর্মযুদ্ধ বাঁধিয়ে ধর্মরাজ্য
প্রতিষ্ঠার স্বপ্নপূরণ করেছেন গয়লার ঘরে বড় হওয়া এক সুতপুত্র। সাধে কি আর
দক্ষিনেশ্বরের বামুন বলেছিলেন – লোক না পোক।
ঋণস্বীকারঃ
কলিযুগ- নৃসিংহপ্রসাদ
ভাদুড়ী
মহাভারতের
প্রতিনায়ক- নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
মহাভারতের
ভারতযুদ্ধ এবং কৃষ্ণ- নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
কথা অমৃতসমান-
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
মহাভারতের
অষ্টাদশী- নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
মহাভারতে
গুপ্তহত্যা- শামিম আহমেদ
Aryan Migration Theory: Fraud and Confusion Created to
Justify British Rule in India: Arun Upadhyay
Aryan Dravidian Theory: A False Story Created to Break
India: Ravikumar Pillay
যেসব পোক বংশগত আভিজাত্য মাথার মুকুট করে রাখে, তারা তোর লেখা পড়ে অন্তত লোক হয়ে উঠতে পারে। Excellent.
উত্তরমুছুনঅনেক কিছুই জানলাম
উত্তরমুছুন