যুগান্তর মিত্র

মায়াজম
0
মণিমানিক্য
__________



মানিককে আজ ভালো করে স্নান করাতে হবে। দিদি বলে গেছে। কুলুঙ্গি থেকে গন্ধওয়ালা সাবান আর শ্যাম্পুর পাতা নামিয়ে নেয় মণি। দিদি বলেছে আজ নার্সিংহোম থেকে ফিরে মানিক্যকে পাড়ার ঠাকুর প্যান্ডেলে নিয়ে যাবে। ওকে হুইল চেয়ারে বসানো অনেক হাঙ্গামার। ঠাকুরজামাই তো সকালেই বেরিয়ে যায়। আজ নাকি ফিরতে রাত হবে। দিদির সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে ঠিক তুলে দিতে পারবে চেয়ারে, ভাবে মণি। দূরে প্যান্ডেল থেকে মাইকের শব্দ ভেসে আসছে। আজ ষষ্ঠী। আজই নিয়ে যেতে হবে। কাল থেকে খুব ভিড় হবে
মানিক শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই জন্মেছে। পনেরো পেরিয়ে ষোলোয় পড়ল। তবু তার শরীরের গঠন দেখে বোঝার উপায় নেই। দেখে মনে হয় নয়-দশ বছরের ছেলে। ঠিকমতো শব্দও উচ্চারণ করতে পারে না সে। আকারে ইঙ্গিতে সব বোঝায় সে। অনেক ডাক্তারবদ্যি দেখানো হয়েছে। কিছুতেই সুরাহা হয়নি। বড় ডাক্তার দেখানোর সাধ্য কই তাদের ! তবু তার বাবা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কলকাতার বড় ডাক্তারও দেখিয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। একটু একটু আশার আলো দেখা দিচ্ছিল যখন, ঠিক তখনই চাকরিটা গেল মানিকের বাবার। এই ছেলেকে নিয়ে মাধবীরও সমস্যার শেষ নেই।
মানিকের বাবা কাজকর্ম খুব-একটা মন্দ করত না। জুটমিলের বদলির চাকরি হলেও আয় যা করত, মোটামুটি চলে যেত তাদের। মাধবী যখন যেটা বাজার থেকে আনতে বলত, ঠিক এনে হাজির করত সনা। মানিকের বাবার ভালো নাম সনৎ, ডাকনাম সনা। কারখানায় ইউনিয়ন করত বলে বদলির চাকরি হলেও কোনওদিন কাজে বসিয়ে দিত না সনাকে। কিন্তু ইউনিয়ন বদলে যাওয়ায় প্রথম থেকেই কাজ কম পাওয়া শুরু হল। তারপর নানা ঝামেলায় কারখানা থেকে অনেক লোক ছাঁটাই হয়ে গেল। আবার নেওয়াও হল কিছু লোক। প্রথমদিকে যাদের বসিয়ে দিল, তাদের মধ্যে সনাও ছিল। তারপর থেকেই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেল সে। এর মধ্যে মানিকের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে গেল। মাঝে মাঝেই শরীরে খিঁচ ধরে। তখন মুখ দিয়ে লালা ঝরে, আর কেমন যেন গোঁ গোঁ শব্দ বের করে। একে কাজ নেই। কীভাবে সংসার চলবে তা নিয়েই পাগল পাগল অবস্থা সনার। তার ওপর ছেলের নতুন উপসর্গ নিয়ে সে আরও আতান্তরে পড়ল। এমনিতে সনা চুপচাপই থাকে, তবে মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে গেলে হাতের কাছে যা পায় তাই ছুঁড়ে মারে আর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ঘণ্টা দু-তিন পরে ফেরে। মাধবী তাই সমঝে চলে সনাকে। ছেলের দিকে তাকিয়ে তার মনখারাপ হয়, করুণা হয় ছেলের প্রতি। আবার বেজায় রাগও হয়।
কাউন্সিলার বটু মুখুজ্জেকে ধরে মাধবী জীবনধারা নার্সিংহোমে আয়ার কাজ জুটিয়ে নেওয়ার পরে সংসার চলে যাচ্ছে একরকম করে। আগে আরও ভালো চলত। মণি আসার পরে মাঝেমধ্যে একটু টানাটানির মধ্যে পড়ে। এদিকে মাধবী নার্সিংহোমে কাজে ঢোকার পর থেকে সনা যেন আরও দূরে দূরে চলে গেল। সবদিন বাড়িতে খায়ও না। কোথায় যায়, কী করে তার নির্ভরযোগ্য খোঁজ পাওয়া যায় না। তবে কিছু-একটা কাজ করে সে খবর পেয়েছে মাধবী। কিন্তু সেই কাজ এমনই যে সংসারে দেবার মতো সবসময় টাকা থাকে না হাতে। যেটুকু পারে, দেয় সে। তাতেই খুশি থাকতে হয় মাধবীকে। সকাল একটু গড়ালে স্নান সেরে কোথাও চলে যায় সনা। ফেরে রাতের দিকে। মাঝে মাঝেই বলে খেয়ে এসেছি। তোমরা খেয়ে নিও। তারপর শুয়ে পড়ে নিজের আলাদা ছোট্ট চৌকিতে। মাধবী দু-চারদিন জিজ্ঞাসা করেছিল সনাকে, সারাদিন কোথায় থাকো, কী করো কে জানে ! ছেলেটার দিকেও তাকাও না।
~ আমি কোনও খারাপ কাজে যাই না মাধু। খারাপ নেশাও নেই। বোঝোই তো।
~ তা বুঝি। কিন্তু বাড়িতে থাকলে ছেলের দিকেও তো একটু খেয়াল রাখতে পারো।
~ ওর দিকে খেয়াল রাখার কী আছে ? মানিক তো নিজের মতোই থাকে। ওর কোনও তালজ্ঞান আছে ?
~ তা নেই। তবু…
দীর্ঘনিঃশ্বাস গোপন করে সরে যায় সনা। মাধবী আজকাল আর কিছুই বলে না। জানে, বলে কোনও লাভ নেই। নয় নয় করে প্রায় বিশবছর হল সংসার করছে লোকটার সাথে। এখন সনা সারাদিন বাড়িতে থাকে না বলে বরং স্বস্তিতেই থাকে মাধবী। কেননা এখন মণি থাকে ঘরে। কী থেকে কী হয় বলা তো যায় না ! পুরুষ মানুষের মন বলে কথা !
মাধুর বিপদের ওপরে বিপদ। তার নিজের একমাত্র ভাই হঠাৎ পালিয়ে বিয়ে করল পাড়ারই এক মেয়েকে। অথচ তার বৌ মণি দেখতে-শুনতে ভালো। কাজেকর্মেও পটু। কোনও দিকেই কোনও ত্রুটি নেই। শুধু গায়ের রঙটা একটু চাপা। তা বলে বিয়ে করা বউকে ছেড়ে পালিয়ে যাবি অন্য মেয়ের হাত ধরে ? তাও মাত্র দু-বছরের মাথায় ? একটু বেশি বয়সে বিয়ে করলে পুরুষেরা বউমুখি হয়। তার মা বলত। অথচ ভাইটা বউমুখি তো দূরের কথা, তাকে ছেড়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে ভেগে গেল ? তার বাপ-মা বেঁচে থাকলে খুবই কষ্ট পেত, জানে মাধু। মণির বাপের বাড়িতেও তাকে নিতে চাইল না। তারও বাপ-মা নেই। ভাইয়েরা অসহায় বোনের দায় নিতে রাজি নয়। মাধবীকে মণি খুব দিদি দিদি করত বরাবর। একদিন এবাড়ি এসে কেঁদে পড়ল সে।
~ আমারে এট্টু জায়গা দাও গো দিদি। তোমার ভাই আমারে ছাড়ল। আমার দাদারাও ঘরে তুলবে না। আমি কি পুকুরে ডুবে মরব দিদি ? তুমি ঠাঁই না-দিলে আমারে যে মরতে হবে গো।
নার্সিংহোমে কাজটা পাওয়ার পর থেকে মাধবী ভয়ে ভয়ে থাকত ছেলেকে নিয়ে। সারাদিন একা থাকে। ভালোমন্দ কিছু হয়ে যায় যদি ! সংসারের নানা কাজের চাপে ছেলেকে স্নান করিয়ে যেতে পারত না সবদিন। বি-শিফট থাকলে তবু সুবিধা হয়। কিন্তু মর্নিং শিফট থাকলে সকাল-সকাল স্নান করিয়ে খাইয়ে দিতে হয় মানিককে। তারপর বাড়ি ফিরে আবার খাওয়ায়। মাঝে খাবার তো কোন ছাড়, জলটুকুও গড়িয়ে নিতে পারে না সে। হাতের কাছে জলের জগ রাখা থাকে। বুঝিয়ে দিয়ে যায় গ্লাশে জল নিয়ে খাওয়ার কথা। সেটুকুও পারে না। অসহায় ছেলেটার খুব অবহেলা হয়। তবু ভাগ্য ভালো তাকে কোনওদিন নাইট ডিউটি দেয় না। বটু মুখুজ্জে সেইরকমই বলে রেখেছে নার্সিংহোমে। মণিকে যদি তার কাছে রাখা যায়, তাহলে অন্তত ছেলেটার কষ্ট কমবে। তার ভাইয়ের কৃতকর্মের দায়ও তো নেওয়া হয় তাহলে ! তাছাড়া সনা যেহেতু সারাদিন বাড়িতে থাকে না, তাই অন্য ভয়টাও আর থাকছে না। এইসব সাতপাঁচ ভেবে মণিকে রেখেই দিল সে। কোনওমতে ঠিক চালিয়ে নেবে মাধবী।
সেই থেকে মণি আগলে আগলে রাখে মানিককে। মণি তাকে প্রথম থেকেই মানিক্য বলে ডাকে। ঠিক সময়ে স্নান করানো, খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, জামাকাপড় কেচে দেওয়া সব একার হাতে করে মণি। আর রান্নার হাতটাও বেশ ভালো। এই কারণে মাধবীর এখন বাড়িতে কাজের চাপ কমেছে। ভাই বউয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই তার।
(২)
দেখতে দেখতে মাস ছয়েক হয়ে গেল মণি এখানে আছে। আজকাল মানিক তার উপর ভরসা করে খুব। বুঝতে পারে মণি। রাতের দিকে মাধুই খাইয়ে দিত ছেলেকে। শুধু তো খাওয়ানো নয় ; খাইয়ে, আচিয়ে তারপর বিছানায় শুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়। দিনেরবেলা মণিই সব করে। রাতেরটা ওর মা করত। দিন কয়েক হল রাতেও মণিকেই করতে হচ্ছে আবার। মানিক কিছুতেই তার মায়ের হাতে খাবে না। মামিকেই খাইয়ে দিতে হবে ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে সে। খুব রাগ হয়েছিল মণির। সারাদিন তো কম করি না। রাতে না-হয় তোর মা করুক। আমারে এট্টু রেহাই দিতে মন চায় না তোর ? মনে মনে গজগজ করে মণি। কিন্তু মুখে কিছু বলে না। যাদের আশ্রয়ে আছে তাদের ছেলের জন্য কাজ তো করতেই হবে। মাধবী ছেলেকে অনেক বুঝিয়েও পারেনি। হাল ছেড়ে দিয়েছে।
~ তুমিই সামলাও মণি। ছেলে আগে ছিল মা-ন্যাওটা। এখন মামি-ন্যাওটা হয়েছে।
মণি প্রথমে রাগ করলেও পরে বুঝেছে এটাই ভালো হল। মানিক তার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সে বরং আরও বেশি নিশ্চিন্ত বোধ করে। ছেলের জন্যই কোনওদিন তাকে তাড়াতে পারবে না এরা। এই ভেবে মনে মনে খুশি হয় মণি।
আজ দুপুরে স্নান করিয়ে গা মোছানোর সময় আচমকা মণিকে আঁকড়ে ধরল মানিক। নাছোড়বান্দা সেই ধরে থাকা। কিছুতেই ছাড়াতে পারে না। মণির বুকে মুখ গুঁজে ঘষতে থাকে মানিক।
ঠিক সেইসময় মোবাইল বেজে ওঠে। তাড়াতাড়ি মানিককে ঠেলে সরিয়ে উঠতে চায় মণি। তখনই মানিক মণির ব্লাউজটা টেনে ধরে। সেই টান আর মণির উঠে যাওয়ার চেষ্টার মধ্যে ব্লাউজ ছিঁড়ে যায় খানিকটা। কোনওরকমে নিজেকে সামলে মণি দৌড়ে গিয়ে ফোনটা ধরে।
মোবাইল সেটটা মণিকে কিনে দিয়েছে মাধবী। ছেলের খোঁজখবর রাখতে পারবে। তাছাড়া বিপদ-আপদ হলে মণিও ফোনে জানাতে পারবে। আজ হয়তো সেইরকম কোনও কারণে ফোন করেছে দিদি। একমাত্র মানিকের মায়ের ফোনই তো আসে। আর কেউ নেই তাকে ফোন করার।
~ শোনো মণি। আজ আমার ফিরতে দেরি হবে। আমার পরের জন আসবে না আজকে। তাই আমাকে থেকে যেতে হচ্ছে। ফিরব রাতে। কাল না হয় মানিককে ঠাকুর দেখিয়ে আনব। তুমি ওকে সাবধানে রেখো।
এইরকম মাঝে মাঝে না-হলেও কালেভদ্রে হয়। মাধবীকে থেকে যেতে হয় নার্সিংহোমে। তাই মাধবীর এই ফোন মণির মধ্যে কোনও দুঃশ্চিন্তা বয়ে আনে না। বরং দুঃশ্চিন্তা যা হওয়ার তা হয় মানিক্যের জন্য। ছেলেটা ওভাবে বুকে মুখ ঘষল কেন ? এইরকম তো করেনি কোনওদিন ! একটা ভয় গুটিসুটি মেরে ঢুকে পড়ে মণির মনের গহনে। পরক্ষণেই তার মনে হয় ওর কি কোনও হুঁশজ্ঞান আছে ? নাকি সত্যিসত্যিই হঠাৎ করে বড় হয়ে গেল মানিক্য ! মায়ের কথা মনে পড়ল কি ?
এবার নিজেই সে এমন ভাবে গামছা দিয়ে গা মোছায়, যাতে তার বুক মানিকের একেবারে নাগালে থাকে। ব্যাপারটা একটু বুঝে নিতে চায় মণি। মানিক আবারও মুখ গুঁজে দেয় মণির বুকে। মণির এখন আর খারাপ লাগে না। বরং একটু ভালোই লাগে। পরম তৃপ্তিতে মণি বুকটা এগিয়ে দেয় মানিকের আরও কাছে।
~ খাবি ? খা খা। প্রাণ ভরে খা।
মণি তার ডাকনাম। ভালো নাম মণিমালা। মণিমালা নামটা কবেই হারিয়ে গেছে। মণি নামটা কোনওমতে টিকে আছে। ঠাকুরজামাই সনা কথাই বলে না সেভাবে। তবু দু-একটা কথা বললে নাম না-ধরে বলে। তবে তার বর ডাকত মণি। কী সোহাগ করে ডাকত রাতের বেলা ! বলত, মাই বাইর কর মণি, খামু। খুব খাইতে মন চায়। তারপর চোঁ চোঁ করে টানত।
আজ কতদিন পরে সারা বুক মুখ হাত পায়ে রিনরিন বাঁশি বাজছে। মণির সারা শরীরে শিহরণ জাগে। তার বুকটা জোর করে মানিকের মুখে ঠেসে ধরতে ইচ্ছে করে তার। ঠেসে ধরে খুব সুখ পায় সে। মহাসুখ। কতদিন পরে !
প্রতিদিনই মানিককে স্নান করানোর সময় সমস্ত পোশাক খুলে ফেলতে হয়। ভালো করে স্নান করিয়ে, গা মুছিয়ে, জামাকাপড় পরিয়ে দেয় মণি। বাইরে থেকে যতই ছোট মনে হোক, মানিকের শরীরে পুরুষচিহ্ন তো আছেই। সেসব দেখেও কোনওদিন মণির কিছু মনে হয়নি। মানিকও তেমন করে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি কখনও। আজ কী হল তার ? প্রথম থেকেই মানিক এভাবে বুকের দিকে তাকিয়েছিল কেন ? তখন অবশ্য মণি এই ব্যাপারটা নিয়ে কিছুই ভাবেনি। কিন্তু যখন বুকে মুখ ঘষতে থাকল, তারপর মানিকের হাত এলোমেলোভাবে তার বুকে ঘুরে বেড়াতে লাগল, তখন থেকেই শরীর শিরশির করে উঠছিল মণির।
কিছুক্ষণ বুকে মুখ রেখে সরিয়ে নেয় মানিক। তারপর হাত বাড়িয়ে শাড়ি টেনে ধরে মণির। পায়ের পাতায় চোখ রাখে। মণি বুঝতে পারে মানিকের চোখ পায়ের পাতা থেকে একটু ওপরের দিকে উঠে এসেছে, যেখানে মণির কাপড়টা সামান্য উঠে আছে। মণি এবার নিজেই খানিকটা তুলে দেয় কাপড়।
মানিক ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে নেয়। নাকি আবেশে চোখ বুজে আসছে তার ? মণি ভাবে, মানিক্যকে যে ও ভ্যাবলা ভাবত, তা কিন্তু নয়। সব বোঝে, এ ছেলে সব বোঝে !
তিরতির করে ঘাম নেমে যায় মণির শিরদাঁড়া বেয়ে। কুলকুল নদী বয়ে যায় শরীরজুড়ে। কেমন একটা ঘোর তাকে অবশ করে দেয়। আনন্দ নাকি দুঃখবেদনার ঘোর, মণি বুঝে উঠতে পারে না। বাথরুমের মেঝেতেই মানিকের শরীর ঘেঁষে শুয়ে পড়ে মণি। শরীর ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষা করে সে। মানিক মাটিতে শরীর ঘষটে ঘষটে মণির শরীরে উঠে আসে। আবার বুকে মুখ ডুবিয়ে দেয়। থরথর করে কাঁপতে থাকে মণির শরীর। মানিক বুক থেকে মুখ তুলে মণির চোখে চোখ রাখে। সে চোখে হাসির রেখা দেখা যায়। তারপর অস্ফুটে বলে ওঠে, মা। মাম্মা।
মা ! আমাকে মা ডাকল মানিক্য ? কতদিন মনে মনে ভেবেছি মা বলে ডাকবে কেউ। তুই কি আমার আর জনমের ছেলে ছিলি মানিক্য ? না না। আর জনম নয়, তুই আমার এই জনমেরই ছেলে।
হু হু করে কেঁদে ওঠে মণি আর সারা শরীরমন দিয়ে আঁকড়ে ধরে মানিককে। এই প্রথম মানিক মা শব্দটা উচ্চারণ করতে পারল। একটু আগেই যে অনুভূতি তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল, এখন সেই অনুভূতি উধাও। অপত্য স্নেহের বান ডেকে উঠল মণির বুকে। নিজের শরীরের সঙ্গে মানিককে মিশিয়ে নেয় সে, তার সন্তানকে। মণিও অস্ফুটে বলে ওঠে, মানিক্য, আমার মানিক্য। আমি আজ দুগগা। ও আমার গণেশ। আমার ছেলে…

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)