শর্মিষ্ঠা ঘোষ - মায়াজম

Breaking

১৫ এপ্রি, ২০১৫

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

ডি ডে 




হেব্বি সেজেছি আজ – মায়ের লাল পাড় সাদা জারদউসি সিল্ক , দাদার ঘাড় ভেঙ্গে ভাইফোঁটায় বাগানো ‘শিক’ এর কস্টিউম জুয়েলারি , মাধ্যমিকে ভালো করার জন্যবাবার দেওয়া ‘ফাস্টট্রাকে’র বিগ ডায়াল রিষ্ট ওয়াচ , খুব অকেশনাল ইউসের জন্য ‘ক্যাট ওয়াকে’র চটি , এমনিতে পায়ে কড়া পড়ে বলে বছর ভর ডক্টর সোলসের ‘বাটা’ , কাকুমনির আই ফোনটা একবেলার জন্য বাগিয়েছি , চোখে , গালে , ঠোঁটে ‘রেভ্লন’, আজ আমি আমার মাপের সর্বোচ্চ , আজও যদি ‘ডি ডে’ না হয় , এ জন্মেআর হবে না ঠাকুর , আজও যদি শিকে না ছেঁড়ে আমি তবে চির পিপাসিত হ্যাংলামেনি রয়ে যাবো একেবারে , আজও যদি বাপ্পাদা এক মুহূর্ত না থমকায় আমায় দেখে, জাস্ট শহীদ হব আমি , আর কোনোদিন ঐ রকের পাশ দিয়ে হাঁটবো না !

ঐ রকে প্রতিদিন ক্রিকেট , ফুটবলের বিজ্ঞান সম্মত আলোচনা , কাশ্মীর থেকে‘কাশ্মীর কি কলি’ র পর্যায় সারণী , কাস্ত্রো থেকে ওবামার চোদ্দ পুরুষউদ্ধার হতে হতে ফিগার জিরো ডায়েট কোক হয়ে কোকশাস্ত্র অব্ধি সাঁটলককের মতলোফালুফি হতে থাকে ... পাশ দিয়ে চিকনি চামেলি , কি কাঁটা লাগার মিসশেফালি হাঁটলে ধক ধক করতে শুরু করে দাবাং হৃদয় ... এ জীবন নিয়ে আমি কিকরবো , এই মেয়ে জন্ম আমার বৃথাই যাবে একেবারে , একবার , শুধু একবার অন্ততআমার জন্য এক্সক্লুসিভ্লি যদি কোন শিশ নবিশ না বাজায় টাকরায় আর ঠোঁটেরকারসাজিতে ‘কে তুমি নন্দিনী ‘, না হোক , ‘রূপ তেরা মস্তানা’ ...

সেই কব্বে , দি’ ভাই এর হাত ধরে দশ বছরের ছোট আমি হাঁটতাম দাশ বাড়ির রক পেরিয়ে কাকুর মুদির দোকান , মারকাটারি সুন্দরী দি’ ভাই এর জন্য সেখানথেকে উড়ে আসতো অড্রে হেপবারনের মত পশ্চাৎ দেশ , গ্রেটা গাড়বোর মত বক্ষদেশ, মেরিলিন মনরোর মত চুলের স্ট্যাটিস্টিকস আলোচক এলিজিবেল রকবাজি , আরসমস্বরে একটি ইশসসসসসসসসসসস নামক রেলগাড়ি ছুটতো দীর্ঘশ্বাসের রেলে , দি‘ভাই এর ফর্সা নাকের পাটা লাল হয়ে ফুলে উঠত ব্রীড়ায় , রাগে , অনুরাগে ,আর আমি মনে মনে বলতাম , ‘হে ভগবান , তাড়াতাড়ি বড় করে দাও আমায় , এমনি রকের প্রাণভোমরা অধীশ্বরী করে দাও আমায়,’ কাকির ফুটফরমাশে ছুটতে ছুটতে দি’ ভাই এর বুকের ওড়না সরে গেলেই মরে যাবার মত মরকত আহ্বান , আর লাটখেতে খেতে বাপ্পাদার চোখ এই এত পাওয়ারের চশমার কাঁচে ঢাকা পড়ে গ্যালক্রমশ আর দি’ভাই এন আর আই বর পেয়ে সোনালী ডানা মেলে অহংকারী চিল হয়ে গ্যাল কানাডার হরাইজনে , সেই থেকে জলুস হারা হল বাপ্পাদার রকবাজি ...

বাব্লু বাচ্চুরা গুড বয় হয়ে গেরস্ত হয়ে গ্যাল আর বাপ্পাদা পি এস সি , এসএস সি ইত্যাদি সাত সতেরো ইন্টারভিউ লবিবাজদের কাছে হেরে পাড়ার গুব্লুগাব্লুদের কাকা জ্যাঠা হয়ে গ্যাল , হাজার পঞ্চাশ বিড়ির অন্ত্যেষ্টি করা ছাড়া যার সি ভি তে কোন এক্সট্রা মারকিং নেই ... কতদিন ভেবেছি , বাপ্পাদা ,তুমি রয়ে গ্যাছ স্রেফ আমার জন্যই , না হলে অ্যাদ্দিনে তোমার হিল্লে হয়েযেত ঠিক , দি’ভাই ফিরবে না আর , দি’ভাই কোনোদিনও প্রেমেই পড়েনি তোমার ,আমি তো সেদিনও জানতাম এসব , আর মনে মনে তোমার হয়ে গেছিলাম ... কত বয়েস হবে তখন আর ? বারো মত , হঠাৎ বিনা আঘাতে প্যান্টি লাল হয়ে গ্যাল আর আমিবুঝলাম , এবার আমি তোমার উপযুক্ত হয়ে গেছি ! তুমি ই তো আমার প্রথম পুরুষ , বাপ্পাদা ... তাকাও , বাপ্পাদা , আজ অন্তত তাকাও একবার , পূর্ণ চোখে আমায় দেখ , আমি মোটেই আমার দি’ভাই এর মত নই ,আমি অনেক ছোট খাটো , পুতুল পুতুল , বাবা বলে, ‘মোম’, এই দ্যাখ তোমার চশমা ছাড়াই কত্ত আলো আমার চোখে , তোমার বৃষ্টিতেভিজবে বলে এই শরীরে কত খরাপ্রবন আটঘাঁট , তাকাও , বাপ্পাদা , তাকাও , আজ এস্পার নয় ওস্পার , আজও তুমি না বললে আমিই সটান সামনে গিয়ে দাঁড়াবো তোমার , আর জিজ্ঞেস করবো , ‘তুমি কি সত্যিই অন্ধ , বাপ্পাদা ?’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র