উল্কা - মায়াজম

Breaking

১৫ এপ্রি, ২০১৫

উল্কা

রকবদলের রকবাজ



ফিকশন নন ফিকশনের আমদানি রপ্তানি সামলে উঠল মহিলা মহলের চওড়া উঠোন। পাঁচমেশালি ফোড়নে মাখোমাখো হয়ে তেড়চা চোখে তাকালো অফিস ফিরতি ক্লান্তি ওগরানো ইজি চেয়ারে। ফাঁকা! সব ক্লান্তি গেল কই? একলা ইজি চেয়ার ঠ্যাঙ ছড়িয়ে খাবি খাচ্ছে জানলার পাশে। তার পাশেই স্টাডি টেবিলে বসে মনোযোগ সহকারে বানান করে করে ইংরাজি পড়ছে ছেলেটা। আর ও সি কে ‘রক্‌’ মানে ‘পাহাড়’। তারপর স্কুল কলেজের পরীক্ষায় পাশ করতে করতে যেই বয়স বাড়ল একদম নাটুকে কায়দায় একটা আস্ত রক ঢুকে পড়ল জীবনে। রোজকার রক ক্লাইম্বিং-এর সফল অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে একই অভিযান আকর্ষণীয় হয়ে উঠল ক্রমশ। সমতল রাস্তার মোড়, একপাশে সিমেন্ট বাঁধানো বেদী। সকালে ওখানে বাজার বসে আর বিকেলে হাট! বিকেলের হাটে যারা বিনিময় প্রথাকে সমহিমায় বাঁচিয়ে রাখে, সন্ধ্যে বেলা কাজে ছুটতে ছুটতে কেউ কেউ নাক শিটকে তাদের দিকে তাকায়। পিছনে বা মনে মনে বলে, যত রাজ্যের রকবাজ! তাতে কার কি যায় আসে। জেনারেশন থেকে জেনারেশনে হাত বদল করে বেঁচে থাকে পাড়ার রক আর রকবাজ। পরিচর্যার অভাব তবুও জীবনকে লালন করে রক। গড়ে তোলা থেকে ভেস্তে দেওয়া এক বৃষ্টি ছাতা সম্বল করে নবীনতম সদস্যকে সামলে নেয় এক ভাঁড় চা। রকের পাশে রকবাজদের দয়ায় চায়ের দোকানটাও বেশ জীবন কাটিয়ে ফেলছে। দেখছে কতো তরঙ্গ এলো গেল, লটারি থেকে লাদেন নন্দিগ্রাম থেকে ফজলি আম! অফিসের নতুন পরকীয়াটাও ফস করে জেনে ফেলে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। গোল্লা আর তোল্লার শোভাযাত্রা। দেওয়ালের সিম্বলে পিঠ ঠেকে যেতেই এক থেকে পাঁচ আঙুল নড়াচড়া করে উঠল নানান আবেগ ব্যক্ত করে। হইহই শুনে জানলার পর্দা সরিয়ে উঁকি দিল সন্ধ্যের মেগা সিরিয়াল। মশাদের আবহকে হাত ঝাপটা দিতে দিতে হাতুড়ি ঠুকলেন কোন বয়োজ্যেষ্ঠ রকবাজ। ডায়বেটিস মেলিটাস। হোল্ডে রেখে দৌড় লাগালেন বাড়ি। জলের স্রোতের মতো রক বহমান। বাঁধাবাঁধির বালাই উড়িয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে গেল রেডিওর লাইভ ব্রডকাস্টের মতো। সেই বয়স আর ফিরে এলো কি এলো না সেই চর্চায় ধর্মনিরপেক্ষতার সূচীছিদ্রে বাসা করল একটা কাকপাখি। পাথর চাপা কপালটা খুলতে ডিগ্রি লিভারের চাপ যখন ব্যর্থ তখন বিষে বিষে বিষক্ষয়! ফুসফাস ব্যাকিং দিয়ে জীবন শুধরে রোজগারের চেয়ার খুঁজে দিল রকেরই কোন এক রকবাজ। তার জামার কলার টা হাজার ইস্ত্রি করেও যখন নামলো না তখন ধরে মুচড়ে দেওয়া হল তার কান। তারপরের ক্রমানুসারে একটা বিয়েবাড়ি একটা অন্নপ্রাশন একটা উপনয়ন একটা বিবাহ বিচ্ছেদ একটা শ্রাদ্ধ সবেরই গল্প আমন্ত্রণ নিমন্ত্রণ স্মৃতি করে তুলে রাখে এই রক।

ফ্ল্যাট বাড়িটার কোনো রক নেই। যারা ফ্ল্যাটে থাকে তাদের উঠোনও নেই। তাই গল্পটা ক্রমশ ভার্চুয়াল হতে থাকে। চেনা মুখগুলো অচেনা হতে হতে মিলিয়ে যায় দরজার ওপারে। জানলার পাশে এখনও ছেলেটা বানান পড়ে। পাশে থাকে ইজি চেয়ার। ব্যাজার মুখটা দৈনিক সংবাদপত্রে ঢেকে অনেক ক্লান্তি গোপনীয়তা পচতে থাকে তাতে। বই থেকে মুখ ফিরিয়ে বাচ্চা ছেলেটা বলে ওঠে, ‘বাবা বড় হয়ে আমি রক ক্লাইম্বিং-এ যাবো!’ কিমবা ‘একটা গিটার চাই। রক মিউজিকের চিড়চিড়ে পাওয়ার কাট! রকবাজ হবো বাবা...’ ড্রয়িং রুমের মেগা সিরিয়াল হঠাৎ ভেংচি কেটে ওঠে।



1 টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র