জিনাত ইসলাম - মায়াজম

Breaking

৩ আগ, ২০১৫

জিনাত ইসলাম

                                               সমপৃষ্ঠের সন্ধানে 








নারীরা হচ্ছেন
জনশক্তির একটা মহান উৎস। 
-মাও 
কি তথ্য, কি তত্ত্ব, যেভাবেই এই স্লোগানে প্রতিষ্ঠা চলুক না কেন এইটি ২০১৫ সালে সমাজতন্ত্র ,নারীবাদ সবকিছুর মৌলিক শর্ত মেনেও একটি অসামান্য পোষটার মাত্র।দেওয়ালের গায়ে শেওলা পড়ে ঢেকে যাওয়া বিপ্লব শব্দের মতই নাম- ঠিকানাহীন।কি রোম,কি গ্রীস,কি জার্মানি কি ফ্রান্স অতীতে সব ঐতিহাসিক পীঠস্থানের ডেরায় ডেরায় অপ্রতিবাদী,শক্তিহীন নারীর দীর্ঘ ছায়া।সবাই কমবেশী বীরগাথার সেই ভোরের প্রহরী।নিঃশব্দ পদচারনাকেই আলিঙ্গন করেছে অমৃতপানের মত।অসভ্য শিকারী,ভদ্র পশুপালক ,যোদ্ধা এদের বিরুদ্ধে নারীদের প্রতিবাদের উপায় ছিল না সেদিন ।বাড়ীর পশ্চাদ্ভাগ বা আলাদা মহলে মোলাসিয়ান শিকারী কুকুরের কড়া পাহারায় ছিল এদের অস্তিত্বের আভিজাত্য।সেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ট্র্যাডিশন আজও সমানে চলছে।রক্ষী বদলেছে। পাহারা অব্যাহত। অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত ও সভ্য নিয়ন্ত্রকের সামনে অভিযোগ জানানোর সিংহদুয়ার খুলে গেছে ঠিকই কিন্তু দীর্ঘ অনভ্যাসের পাখী উড়তে অপারক।শৃঙ্খল সে বহনেই পারদর্শী।শক্তি সঞ্চয়ের চেয়ে বিকিরণেই সে খুঁজে পায় নিজের তাৎপর্য। 
সমাজতন্ত্র নারীদের বৈপ্লবিক সূত্র অনুসন্ধানের ক্ষেত্র নির্দেশ করেছে।নারীবাদ শেকল নেড়ে অধিকার আদায়ে ব্রতী হবার ঘোষণা দিয়েছে।ভাগ্য নিয়ন্তা বা পুরুষ বা শাসক নারীর যৌন স্বাধীনতাকে কুক্ষিগত করেছে।অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সাজিয়েছে,রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে বিতর্ক,ব্যাগরা পাকিয়েছে।তবু একে একে সংযোজিত হয়েছে নুন্যতম অধিকার যুগের তাড়নায়,সময়ের হাত ধরে।তারপর একদা অয়কুরেমা নামে চিহ্নিত নারী ধীরে ধীরে ক্লীবলিঙ্গে খুঁজে পেয়েছে অভিব্যক্তি।
আসলে কি সেই অমূল্য ধন যার খোঁজে নারী পথ হেটে চলেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।জবরদখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ? নাকি প্রাতিষ্ঠানিক দায়ভারের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম ? নাকি নিজের শরীর মনের উপর একক নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা?নাকি পারিবারিক যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি?নাকি গোলামি থেকে পরিত্রাণ?নাকি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন যা তাকে এক স্বর্ণ মৃগয়া পরিভ্রমণের ছাড়পত্র এনে দেবে চিরকাল।এই মরীচিকার সন্ধানে ব্রতী হয়েও এসেছে কি সেই কাঙ্ক্ষিত বিপ্লব? এই প্রশ্ন অমীমাংসিত হলেও স্থবিরতার চেয়ে গতিময়তা সকলেরই প্রিয়।তাই সেই অনুসন্ধান নিরবচ্ছিন্ন,নিরন্তর।
নারীদের কর্মজীবন তাকে পারিবারিক শ্রমদান থেকে মুক্তি এনে দিতে পারে না। এক তিন সন্তানের জননী শ্রমিক নারী তার কর্মজীবন বর্ণনায় উল্লেখ করে যে সে ভোর পাঁচটায় কাজে যোগ দেয় রাত আটটায় বাড়ী ফেরে কিন্তু রাত তিনটে পর্যন্ত তাকে তার তিন সন্তানের জন্য জেগে থাকতে হয়। সারা দিনের অসহনীয় ক্লান্তি সহ্য করার পর শরীর তার কাছে ভারবাহী হয়ে ওঠে।সে অসহায়ভাবে বলে ওঠে ” স্তন দুটো আমাকে ভয়াবহভাবেই কষ্ট দেয়”। উৎপাদনে অংশগ্রহণ ও উপার্জন নারীকে তার পারিবারিক দায়িত্বপালন থেকে বিরত করে উত্তরাধুনিক যুগে এই ধারণায় খানিকটা ভাটা পড়েছে।যদিও প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন পারিবারিক গোলামির মাপকাঠিতেই তার মর্যাদা ও অধিকারের সীমানা বাধা। 
সপ্রেম বিবাহ ও বিবাহে অপ্রেম যতই তাত্ত্বিক ঝড় তুলক আসলে এই প্রতিষ্ঠান পতিতাবৃত্তি থেকে নারীদের খানিকটা মুক্তি এনে দিয়েছে ।ইতিহাসের পাতা তো তাই বলে। পতিতাবৃত্তি ক্ষতিকর ও লজ্জাজনক এবং তা টিকিয়ে রেখেছে প্রতিরোধকারী দুটি নিশ্চিত ও নিরাপদ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আশ্রয়- ধর্ম ও পুলিশ । কিন্তু নারীদের অসহায়তা নিয়ে সমবেদনা প্রদর্শনে সারা পৃথিবীতে এক রকমের চিত্র।একদা জার্মান সম্রাজী অবৈধ শিশুর মাতাদের আঙ্গুলে সোনার আংটি পরিয়ে দিয়ে তাদের সামাজিক লজ্জাজনক করুন অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি দেবার চেষ্টা করেন কিন্তু আজও এই বৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে একজন সুসভ্য আধুনিক নারীর সন্ধান মেলেনি এবং অবৈধ শব্দটি বাতিল করার জন্য কোনো ঐতিহাসিক আন্দোলনও সংগঠিত হয়নি। অসংগঠিত কিছু ক্ষেত্রে পারিশ্রমিকের প্রশ্নটিও এমনি করে অবহেলিত রয়ে গেছে প্রগতিশীল নারীদের আন্দোলনের কর্মসূচীতে।
পণপ্রথা থেকে বধূ নির্যাতন, কর্মজীবনে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা থেকে পিতৃ পরিচয়হীন সন্তানের মায়ের পরিচয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ সব আইন সভ্যতাকে এক সুমার্জিত অসীমতায় উত্তীর্ণ করেছে। আত্মসান্ত্বনা মূলক ভরপুর উপকরণ দিতে পারেনি নারীদের সামাজিক অবস্থানের বৈষম্য ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান থেকে নির্লিপ্ত সমানাধিকারের উত্তরণের পথ।।অপ্রচলিত নিয়ম-কানুনের ভারে কন্যা সন্তান জন্মলগ্ন থেকেই জেরবার।তার মানসিক বৃত্তিগুলির পূর্ণ উন্মেষেসে পুরোপুরি সক্ষম নয়।বর্ণ ও আকৃতির ভিত্তিতে আজও সে বিভাজিত।এক্ষেত্রে বৈষম্য কমাতে পুরুষদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ শিক্ষা ও সহনশীলতার প্রয়োজন।আধুনিক বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি এনে দিতে পারেনি নতুন কোনো বার্তা।চক্রাকারে পরিবর্তিত হতে থাকে নারীর ললাটলিখনের ভবিষ্যৎ।ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা ক্রমশ আপেক্ষিক ও ক্ষণকালীন থেকে যাচ্ছে।যান্ত্রিকতা গভীরভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। 
মেয়েরা যেন অদৃশ্য ছোট ছোট পোকার মত 
পচে যাচ্ছে ও ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে – লেলিন
একদা উচ্চারিত এই শব্দগুলি হারিয়ে যাওয়ার বদলে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।পরিবারে ,সমাজে অসাফল্য ও অবহেলার মর্ম বেদনায় মরছে তার ইচ্ছাশক্তি, হারাচ্ছে তার কৃতিত্বের অদম্য প্রয়াস।অকালে ঝরছে প্রস্ফুটিত হবার গভীর স্বপ্ন।কারণ নির্ধারিত কিন্তু উত্তরণ শর্তসাপেক্ষ। 
শুধু ব্যাখ্যা করা নয়,আসল কাজ হচ্ছে 
পৃথিবীটাকে বদলাতে হবে -মার্ক্স
এই বদলে সক্ষম দুর্জয় নারীব্যাক্তিত্বের অনুসন্ধান যুগ যুগ ধরে অব্যাহত।নারীদের শানিত সাহস ও যোগ্যতার উপরেই দাঁড়িয়ে আছে লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন।চাই নিশ্চিত রাতের ঘুম,চাই এই শরীর ও মনের একান্ত ব্যক্তিগত রক্ষাকবচ,চাই এই পৃথিবীতে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী মর্যাদা,কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক,চাই সার্বিক শোষণের বিরুদ্ধে যথার্থ প্রতিকার।চাই সম্ভোগের নির্লজ্জ দৃষ্টি থেকে মুক্তি।চাই “নারীসমস্যা” এই শব্দ বন্ধনীর কৌতুক থেকে দীর্ঘকালীন অবকাশ,প্রভুত্বকারীর সঙ্গে অলিখিত চুক্তির নিষ্পত্তি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র