পূজা মৈত্র - মায়াজম

Breaking

২০ সেপ, ২০১৫

পূজা মৈত্র

                                           ঠিকানাবদল




        আকাশের সবচেয়ে উজ্বল তারার আলোয় পথ হাঁটছিল নিশা।রাস্তাটা বেশ অন্ধকার।রাস্তা না বলে সরু গলি-ই বলা ভাল।গলির ভিতরে উন্নয়নের আলো পৌঁছায়নি এখনো।তার উপর লোডশেডিং চলছে।চৈত্রমাসের অসহ্য গরম।আঁচল দিয়ে মুখ মুছল একবার।হাতে একদম টাকা নেই।তার উপর আজ শাড়ি বিক্রিও হল না তেমন।সবাই সেলের বাজারে ছুটেছে।দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে রাত হয়ে গেল।সামনা পয়লা বৈশাখ।বাচ্চাদের নতুন জামা কিনে দেবার রেওয়াজ অগ্নি যাবার বছর থেকেই ঘুচে গেছে।এখন সেসব ভাবাও নিশার কাছে বিলাসিতা মাত্র।কি অদ্ভুত-বাচ্চারাও বাবা চলে যাবার পর থেকে কেমন যেন বড় হয়ে গেছে।কোন কিছুর-ই বায়না করে না আর।অগ্নি শুধু যায়নি নিয়ে গেছে সমস্ত সহায় সম্বলটুকুও।গত তিন বছরে জীবনটাকে অনেক গুছিয়ে নিয়েছে নিশা।কিছুটা পেরেছে।অনেকটাই পারেনি।কিন্তু চেষ্টা করে।শরীরে বেশ কয়েকটা অসুখ বাসা বেঁধেছে।অর্থাভাবে ওষুধ কেনা বা খাওয়া হয়না নিয়মিত।তবুও চেষ্টা করে খেতে।বাঁচতে ওকে হবেই।নিজের জন্য নাহলেও অগ্নির শেষ চিহ্নদুটির জন্য।দিনকাল খারাপ।শরীর থেকে যৌবন চলে যায়নি এখনো।রাস্তায় ঘাটে জোড়া জোড়া চোখ গিলতে আসে যেন।শাড়ির আঁচল ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নেয় নিশা।মাথা নিচু করে চলে যায়।মা বলে আর একবার সুখ খুঁজতে।নির্বান ভাল ছেলে।অগ্নির বন্ধু।বাচ্চাদেরও খুব ভালবাসে।না করে দিয়েছে নিশা।যা একবারে হয়নি তা বারবারেও হবে না।নিজের সুখের কথা ভেবে সন্তানদের অন্যের হাতে সঁপবে কি করে?ভাবতে ভাবতেই পিছনে পায়ের শব্দ পায় নিশা।কে যেন পিছু নিয়েছে।দ্রুত পা চালায়।রাত হয়েছে।শুনশান গলি তায় অন্ধকার।বাড়ি এখনো মিনিট পাঁচেকের পথ।গলির শেষ মাথায় বাড়ি।সে যত দ্রুত হাঁটে পিছনের লোকটির সাথে দুরত্ব বাড়ার বদলে কমতে থাকে।ভয় পায় নিশা।আকাশের সবচেয়ে উজ্বল তারার দিকে তাকায়।আলোর প্রার্থনা করে।কিন্তু আলো আসে না।নিশার হাঁটা প্রায় ছোটায় পরিণত হয়।দুই হাতে ভারি ব্যাগ নিয়ে কোনক্রমে ছোটে সে।ক্লান্ত শরীরে ছোটে।হাঁফ লাগে তার।তাও দিগ্বিদিক ভুলে ছোটে।ছুটতে ছুটতে ধাক্কা খায় একটা পুরুষালি বুকে।পিছনের পায়ের শব্দ নিমেষে পশ্চাৎগামী হয়।বুকটা বড় চেনা লাগে নিশার।বড় ভরসার মনে হয়।আকাশের সবচেয়ে উজ্বল তারার আলোয় ঠাহর করতে চায় সে,"অগ্নি!"অস্ফুটে বলে ওঠে একবার।পুরুষটি নিরুত্তর থাকে।নিশার মাথায় আলগোছে হাত রাখে মাত্র।
"নির্বানকাকু বলেছিলাম না,মা আসছে।দিদা বলল,না।আমি জানতাম!"ছোটজনের হাতে ধরা টর্চের আলোয় সোজা হয়ে দাঁড়ায় নিশা।নিজের ভ্রমে নিজেই অবাক হয়।অন্য কাউকে অগ্নি ভাবল ও!নির্বান-ও সব শুনেছে।মনে মনে কুঁকড়ে যায় নিশা।নির্বান যদি কিছু প্রত্যাশা করে বসে?নিশা কিছু বলতে যাচ্ছিল নির্বান থামিয়ে দেয়।"ব্যাগদুটো দাও।বাড়ি চল।তোমার মা চিন্তা করছে।"প্রত্যাশাহীন শান্ত স্বাভাবিক গলা।নিশা বিনাবাক্যব্যয়ে ব্যাগদুটো দিয়ে দেয়।হাঁটতে হাঁটতে শোনে আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারার গলায় কে যেন বলছে,"তোর মাকে বলবি যখন ফিরবে গলির মুখটায় এসে যেন একটা কল করে দেয়।এত রাতে একা ফেরে কেউ?"নিশা আর পিছন ফিরে তাকায় না।

৩টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র