অপরাহ্ণ সুসমিতো - মায়াজম

Breaking

২০ সেপ, ২০১৫

অপরাহ্ণ সুসমিতো

                                       বৃষ্টি,লাবণ্যপ্রভা








সকাল হইতে বৃষ্টি হইতেছিল । বৃষ্টি নামিলে আমার বড্ড ঘুম পায় । মনে হয় বৃষ্টি আমাকে আইসিটি ৫৭ ধারার মতো গলা টিপিয়া ধরে । হাঁসফাঁস করি । অদ্য ঘুম আসিতেছিল না । বিছানায় উপুড় হইয়া ল্যাপটপ বুকের কাছে টানিয়া লইলাম । ভাবিলাম ফেসবুকিং করি । এ জগতে বিচরণ করিলে বৃষ্টির বন্দী দশা ঘুচিবে ।
মা একবার ঘরে উঁকি মারিয়া দেখিলেন । আমি তখন কোলবালিশ জড়াইয়া অতুলপ্রসাদীয় মুডে । মা গলা খাঁকারি দিলেন । আলগোছে কোলবালিশ সরাইয়া রাখিলাম । ভাবখানা বালিশটির সহিত আমার জনম জনম শত্রুতা আছে । আমার এক ফেসবুক বান্ধবী অসাবধানে আঁচল সরানো ছবি পোস্ট করিয়াছিল,ইহাতে সহস্রাধিক লাইক পড়িয়াছে । মায়ের আচানক প্রবেশ মনোযোগে বিঘ্ন ঘটিল । ল্যাপটপের ডালা আলোগোছে নামাইয়া রাখিলাম,যেন আমি সাধু সন্ন্যাসী ।
মা গম্ভীর গলায় ডাক দিলেন ।
: খোকা
: জী মা
: বিকালে তোমার ছোট কাকা আসবে । রেডি হয়ে থেকো । তোমাকে পাত্রী দেখাতে নিয়ে যাবেন । বিলম্ব করা ঠিক নয় । তোমার বিবাহের বয়স হয়েছে ।
এটুকু এক নি:শ্বাসে বলিয়া মা দ্রুত প্রস্থান করিলেন । অতুলপ্রসাদ থামিয়া গেল । বৃষ্টির ঘ্যানঘ্যান শব্দ মধুরেণু মনে হইতে লাগিল । প্রবল বিক্রমে কোলবালিশ বুকে টানিয়া ল্যাপটপের ডালা খুলিয়া ফেসবুকে পোস্ট করিলাম:
: আজ আমার গলায় দলায় দলায় কথা,কোমল ভ্রুকুটি । আমি পাখি হয়ে ডাকি,ফেরিওয়ালা তুমি কালা না কি ?
বিকালে ছোট কাকা আসিবার অনেক আগেই আমি সাজুগুজু করিয়া প্রস্তুত । ঘরময় পায়চারি করিতে লাগিলাম,ঘনঘন পানি পান করছি । অনাবশ্যক ঘড়ি দেখিতে দেখিতে মাকে অস্থির করিয়া তুলিলাম ।
ছোটকাকু তোমার পৌঁছিতে আর কতো দেরী ? তোমার পৌঁছিতে আর কত সহস্র বছর লাগিবে ? তর সহিতেছে না ।
অত:পর ছোটকাকু,মা ও আমি সিএনজি করিয়া,বৃষ্টির ৫৭ ধরা উপেক্ষা করিয়া পাত্রী কুটিরে সমাগম হইলাম । ততক্ষণে আমার পাজামা,জুতা জলে কাদায় একাকার ।
পাত্রীদের বসবার ঘরটি লাবণ্যময় । পরিপাটি করিয়া সাজানো গোছানো । পাত্রীর বাবা নাই,বড় ভাই আমাদের অভ্যর্থনা করিলেন । পরিবেশনকৃত চা পান করিতে গিয়া জিভ পুড়াইলাম । কেহ ঠাহর করিতে পারে নাই যদিচ । অবশেষ পাত্রী আসিল সুলতানা রিজিয়ার মতো ।
পাত্রীকে তেরসা করিয়া দেখিলাম,পাছে বেলাজ আখ্যায়িত হই । দেখিলাম এ কি লাবণ্যে পূর্ণপ্রাণ ..!
কি মনে করিয়া মুরুব্বীগণ জগদ্দল পাথরের মতো বসবার ঘর হইতে অন্য ঘরে উঠিয়া গেলেন । কামরাটিতে লাবণ্যপ্রভা পাত্রী ও জলে কাদায় লাজুক লতা আমি । আমাদের ভীরু ভীরু কথোপকথন শুরু হইলো;
: ফেসবুক আছে ?
: হুম
: গান জানেন ?
: হুম
: কবিতা ?
: হুম
: ছেলে বন্ধু আছে ?
: হুম
: বুঝিনি
: হুম
আমি কী বলিব বুঝিতে পারিতেছিলাম না । ভ্যাবাচ্যাকা হইয়া আমতা আমতা করিয়া বলিলাম ।
: একটা কবিতা শোনাবেন দয়া করে ?
: হুম
: শুনি
লাবণ্যপ্রভা মেয়েটি মাথার আঁচল সরাইয়া স্পষ্ট স্বরে কবিতা পড়িতে লাগিল;
ছেলে নষ্ট হাটে
মেয়ে নষ্ট ঘাটে
বুড়া নষ্ট কোলবালিশে
বুড়ি নষ্ট ফেসবুকে ।
মেয়েটি শেষ করিয়াই খিলখিল করিয়া হাসিতে লাগিল ।
বাহিরে আরো বৃষ্টির ঘনঘটা । মনে হইল সাভার সেনানিবাস হইতে ২৪ পদাতিক ডিভিশন মার্চপাস্ট করিয়া কুমিল্লা সেনানিবাস যাইতেছে । পোড়া জিভটায় আরো জ্বলুনি মনে হইতেছিল । ভিতরের কামরা হইতে গান ভাসিয়া আসিল বৃষ্টির লীলা ছাপাইয়া :
ও কি ওহে ! কলঙ্কিনী রাধা ! কদমগাছে উঠিয়া আছে কানু হারামজাদা ! মায় তুই জলে না যাইও..
যাইও না রে যাইও না রে কদমতলা দিয়া
কানাইয়া পাতিল ভান্ড রাধিকার লাগিয়া..
বড় অসময়ের বৃষ্টি । এ বৃষ্টি লাবণ্যপ্রভা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র