অরুণ চট্টোপাধ্যায় - মায়াজম

Breaking

২০ সেপ, ২০১৫

অরুণ চট্টোপাধ্যায়

                                            পাবলিকের খাদ্য









       ভোটের বাজার চলে গেছে তবু আলোচনা যায় নি। হবে নাই বা কেন? ভজার কথায়, জানিস গজা, আমাদের দেশটা হল নাকি বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ। এখানে সব কিছু হয় গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিতে। সে পাড়ার ক্লাব-কমিটির সেক্রেটারি হোক বা ফেসবুকের গ্রুপ-এডমিন। এক্কেবারে ব্যালট পেপারে ভোট। কিংবা অনলাইনে।
গজা বলল, ঠিক বলেছিস। আজকাল পাবলিকই হল সব। রাখে কি মারে সব পাবলিক। এই যেমন ধর,পাবলিকে যদি একটা মেয়েকে বলে সে ডাইনী তো সে ডাইনী। তাকে পুড়িয়েই মার বা মাথার চুল কেটে বিবস্ত্র করে ঘোরাও সারা গাঁ ময় – পাবলিকের বিচার যদি এমনটাই হয় তো রোখাটা কি ঠিক? সে ভাল হোক কি মন্দ হোক তাতে কি আসে যায়? তারপর ধর পাবলিক যদি কোনও ছ্যাঁচড় বা ছিনতাইকারীদের পিটিয়ে মারে তো সে হল বেচারাদের মহাপ্রস্থান। পাবলিকের সবাই আই-পি-সি পড়ে নি বলে কি আর জাজ হতে পারে না?
তাদের কথায় পাবলিকের দিকটা সবাই খুব খেয়ালে রাখে। পাবলিক কিসে ভাল থাকে কিসে মন্দ থাকে - কি খায়, কি পরে এসব জানা দরকার। কাগজের বা পত্রিকার সম্পাদকেরা জানে পাবলিক কি খায়। এদের থাকে নানা রকম কুক। বাধাহীন বুফেতে বাঁধা মেনুর ছড়াছড়ি – হাসতে হাসতে গড়াগড়ি করে শুধু খাওয়া বা খাওয়ার পরে গড়াগড়ি যাওয়া।
কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টররা জানে পাবলিক কি মানে কোন প্রোডাক্ট খায়। কোনটা বেশী খায়, কোনটা কম খায়। কোনটা একটু খেয়ে ফেলে রাখে আর কোনটা একেবারেই ছোঁয়না । বিজ্ঞাপন দাতা বা প্রস্ততকারক সংস্থা সবাই জানে পাবলিক কি খায় (কিংবা তাদের কেমন ভাবে খাওয়াতে হয় )।
ভজা গজাকে একটা গল্প বলেছিল। তাদের ভাষায় বললে দেরী হয়ে যাবে । হয়ত ওরা একটু রসিয়ে রসিয়ে বলবে। তাই আমি বলি একটু সংক্ষেপে। রবীনবাবু মুম্বাই গিয়ে ডিরেক্টরগিরি শিখেছেন। কয়েকটা জায়গায় কাজ করার পর তিনি ভাল করে শিখে নিয়েছেন পাবলিক কি খায়। পরিচিত একজন ধরে বসেছে যে তাকে একটা চান্স দিতে হবে। কিন্তু চান্স চাই বললেই তো আর দেওয়া যায় না। আগে দেখতে হবে পাবলিক তাকে খায় কিনা।
বললেন, দেখ ভাই দেখতে তোমায় মন্দ না। পুরুষ মানুষ হলেও রঙে কিছু এসে যায় না। আজকাল মেকআপ ম্যানদের দেখে ভগবান পর্যন্ত হিংসে করে।ওরা কাককে কোকিলের চেহারা দিতে পারে অনায়াসে। নায়ক হিসেবে দাঁড় করালে পাবলিক তোমাকে ভালই খাবে। কিন্তু –
এতদূর এসেও আবার একটা “কিন্তু”-র হোঁচট। চান্স লেনে ওলার তো প্যালপিটেশন এসে গেল।
বলল, হবে না?
- আরে না না। ভাবতে ভাবতে ডিরেক্টর সাহেব বললেন, আমার স্ক্রিপ্টে তোমার নায়ক হওয়া আটকাবে না যদি না –
ভাবী নায়ক তো অভাবী মুখ করে চলে যাবার জন্যে প্রস্তুত।
এমন সময় ডিরেক্টর সাহেব হাসলেন, আরে অত ঘাবড়িয়ো না। আটকাবে অন্য কিছুতে না। আটকাবে তোমার নামে। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য – এমন বস্তাপচা নাম কখনও পাবলিকে খায় বল? কেন যে এমন সব নাম রাখে?
- নাম? কিন্তু দাদা সে তো আমার বাবা রেখেছিল। তিনি তো মারা গেছেন। কেন রেখেছিলেন সেটা তো আর জানা যাবে না।
ডিরেক্টর বললেন, না না তার দরকার হবে না। আজকাল বাবার দেওয়া নামের ওপর দুজন হাত দিতে পারে। একজন আদালত – এফিডেভিট করানোর সময়। আর একজন ডিরেক্টর মানে আমি। ও তুমি ভেবো না আমি পালটে দেব । শুধু একটা জুতসই নাম খুঁজে বার করতে হবে। অন্য কি নাম তোমার পছন্দ? হু কিন্তু শুধু তোমার পছন্দ হলেই তো হবে না ঠিকুজি কুষ্ঠির ব্যাপার আছে –
কিন্তু ঠিকুজির ব্যাপারটা তো আজকাল বিয়েতেও লাগে না, মনোরঞ্জন বলল, লাগে কেবল একটা ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট।
ডিরেক্টর সাহেব অনেকক্ষণ চুপ করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমাদের এ লাইনের ব্যাপার স্যাপার কিছুই বোঝ না দেখছি। এই তো দেখ না কিছুদিন আগেই একটি মেয়েকে নায়িকা নেওয়া হল। কি নাম যেন ছিল কি নাম যেন ছিল – মনে পড়েছে। লাইলি ঘোষ দস্তিদার। তা তার ক্ষেত্রে তেমন কাঠখড় পোড়াতে হয় নি। ওকে বানিয়ে দিয়েছি মিস লায়লা। রাশিচক্রে বেমালুম ফিট করে গেছে। টাইটেলটা গাপ করে দিয়েছি। কেউ জানতে চাইবে না। তা তোমাকে – ভট্টাচার্যকে নাহয় ভট বানানো গেল। পাবলিককে বোঝানো যাবে একজন অবাঙ্গালী এসে বাংলা বই করছে। পাবলিক এসব বেশ খায়। অবাঙ্গালীর উচ্চারণে বাংলার ডায়ালগ। পাবলিকে শুধু খায় না একেবারে চেটেপুটে খায়। কিন্তু তোমার নামটা –
ডিরেক্টর সাহেবের একজন সহকারী এদিকেই আসছিল। ব্যাপারটা শুনে মন্তব্য করার লোভ সামলাতে পারল না।
- স্যার মনোরঞ্জনকে তো মজনু বানানো যায়।
- দি আইডিয়া! ডিরেক্টর মহা খুশি, ঠিক ঠিক। লায়লা আছে আবার মজনুও হল। এই যে আধুনিকতায় প্রাচীনতার ছাপ এটা পাবলিক বেশ খায়। বেশ টক-ঝাল মার্কা ব্যাপারটা।
নতুন স্ক্রিপ্ট লেখা হল। ডিরেক্টর সাহেবকে তার এক বন্ধু নিজের লেখা একটা বই প্রেজেন্ট করেছিলেন। স্থান-কাল-পাত্র মোটামুটি সব ঠিক আছে। পাল্টেছে শুধু নামগুলো। স্থান আর পাত্র-পাত্রীর নাম। আর অবশ্যই লেখকের নামও। সমীর দাসের বদলে রবীন ঘোষ। কাহিনীকার রবীন ঘোষ। কাহিনী আর ডায়ালগ কিছু বদলেছে। মানে পাবলিক যেমন যেমন খায় তেমন তেমন দেওয়া আর কি। একজন নামকরা জ্যোতিষ বলে দিয়েছেন এ বই পাবলিকে খাবেই।
হ্যাঁ, বদলেছে বইটার নামও। রঙিন স্বপ্ন! ছ্যা ছ্যা এ বস্তাপচা নাম কখনও পাবলিকে খায়? নতুন রোমান্টিক জুটির জন্যে পোস্টার পড়ল: পুরাতন প্রেমকাহিনী আবার নতুন করে। নবাগত প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি লায়লা-মজনুর প্রথম আকর্ষণীয় অবদান – “চুমুর চমক”। সাহারায় নয়, শিরায় শিরায় জাগাবে শিহরণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র