জিনাত ইসলাম

মায়াজম
1
                                              গর্ভধারিণী



যেদিন সূর্যের ঝকঝকে রোদ এসে ছুঁয়ে দিয়ে গিয়েছিল ঝিলের রুপোলী মাছের পিঠ।ঝরে পড়ছিল রোদের সোনা রঙ ধানের ক্ষেতে,আকাশ গিয়ে ঝাঁপিয়ে মেপেছিল পৃথিবীর বুক জুড়ে তার পরিসর সেদিন মৃত্যু হয়েছিল এক মা, এক নারী,এককন্যার।চিৎকারে উড়েছিল গাছের সব পাখী , তিরতির করে কেঁপে ছিল আধুনিক ঘরের কৃত্রিম আসবাবের পাশে লতিয়ে চলা উর্ধমুখী মানিপ্ল্যান্ট।সশব্দে স গালে পড়ছিল পুরুষের হাতের দাগ।ছিড়ে ছিল কয়েকগোছা কালো সাট সাটসুগন্ধীচুল।হিংস্র জন্তুর মত ফুঁসছিল এক দ্বীপদমানব।আগুনেরহল্কার মত শ্বাসে এক অপরিসীম জিজ্ঞাসা।কার সন্তান গর্ভে ধারণ করেছে ব্যভিচারিণী! কে সেই সুপুরুষ যার পেছনে সংসারের মায়াত্যাগে ছুটেছে চরিত্রহীনা!!!
এই নিয়ে আমি তৃতীয়বার আবোরসনের জন্য ক্লিনিকের লাইনে।ভালবাসার মানুষের হাত ধরেই জন্ম নেয় ভ্রূণ কিন্তু কেন তার হত্যার সিদ্ধান্ত?সমাজ, ভয়,প্রতিপালনের সমস্যা তবে কি?জানিনা এর নির্ভুল উত্তর।জাস্ট যায় না জন্ম দেওয়া।আমি আর্থিকভাবে স্বাধীন মুক্ত চিন্তনের আদর্শে মোড়া কিন্তু বড় অসময়ে ভুল মানুষের ভালবাসায় ফুলেফেপে উঠেছিল শরীর।না কোনো বাধায় বাধা হয়নি।ভালবাসার নিবিড়তায় আছড়ে পড়েছে শরীরের সবটুকু।কোথাও মানেনি নিষেধের বেড়াজাল।স্বামীর চোখ রাঙানী,পেশীশক্তি কিজানি ছায়া ফেলেনি কোথাও।
বাড়ী ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কখন জানিনা।গর্জে ওঠা এক গুলিখাওয়া বাঘের আর্তনাদে পালায় ঘুম।বল কবে ডিভোর্স দিবি?অবাক হয়ে ভাবি কে এই পুরুষ।লক্ষ টাকা ব্যায়ে যার সঙ্গে আমায় এক নিরুদ্দেশের পথে বিধাতার মুখ চেয়ে একরকম তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বাড়ী থেকে এই তো সেই।বললাম কবে চাই তোমার মুক্তি।বজ্রনিনাদে ফাটল কান আজই,এখুনি বেরিয়ে যা!!কিন্তু এই বাড়ীরলোনের টাকা তো আমিই দিই কেন আমি বেরোব?তুই অন্য পুরুষ ছুঁয়েছিস। তোকে কি পুজো করব? তো!!তুমিও তো অনেক নারী ঘেঁটেছ?অনেকের দেহাংশ চেটেপুটে চোখ দিয়ে গলাধঃকৃত করেছ?তার পরেও তো তুমি আমারি স্বামী থেকেছ।তুমি সন্তান ধারণে অক্ষম তাই পারনি।কিন্তু কাজ সেই প্রকারান্তরে এক।বোবা ঘাতকের সেই লুকোচুরি! তুই আমি কি সমান?কেননই?তোমার কি দশখানা মাথা?আটখানা হাত পা আছে? মাইনে তো তোমার সমান পাই!এবারে ওপাশ থেকে তেড়ে এল এক দুর্জেয় পুরুষ আলেকজান্ডারের বিশ্ববিজয়ের ভঙ্গীতে।তোরা যতই কর নীচেই থাকিস কুলটা তোরা!!আমাদের তলায় তোরা! একদম প্রত্যাশিত কথাটাই দেরোতে হলেও বেরিয়ে এল মানুষটির।একদম প্রকৃত পুরুষ স্বামীর বয়ান।এক নিমেষে নামিয়ে আনলাম আমি পরিবারের সম্মান রাস্তায়।এক নিমেষে পুরুষের কাজ আমার খাতায় তার মত করে লিখতেই আমি তাজ্য ঘোষিত হলাম।সহনের নাম সতীত্ব।প্রতিবাদের নাম নারীবাদ।কিন্তু নারীত্বের সতীত্ব ক্ষয় হয়,পৌরুষের দিনে দিনে প্রখর হয় একথা কে প্রতিষ্ঠা করেছিল জানিনা কিন্তু আমি এই বিধানের পরোয়া করাকে আর অন্যায়ের সাথে আপোষ কে এক সরল রেখায় দেখি।এক পুরুষের কাছে তার মা বাদ দিয়ে প্রায় সবাই নারী আর এক নারীর কাছে সব পুরুষইবাবা,দাদা,কাকারমত।মেয়েদের এই সততার জায়গা জন্ম দিয়েছে বিষধর সাপের মত ফনাতোলা আগ্রাসী পৌরুষকে।তারই এক প্রতিরূপ এই ব্যক্তিও লালন করেন যিনি পরিচয়ে স্বামী,জ্ঞেন্ডারে মনে পুরুষ।তিনি পুরুষের নিষিদ্ধপল্লী থেকে আকণ্ঠ মদগেলার সহকারী কিন্তু নারীকে সে মনের অন্দরমহলে তুলসীতলাতেই চায় পিঠঢাকাব্লাউজ,পুরুষবিহীন সৎ চরিত্রা,স্বামী যেমন চান তেমন রতিক্রিয়া মানে সবটাই যেন তিনার মন ও মাথার ডাইরেক্সন অনুযায়ী চলে।যেন তিনি বুক ফুলিয়ে বাইরে বলতে পারেন আমি স্ত্রী কে একচড়দিলেও সে বাইরে বলবেনা। তার এই মিথ্যা দম্ভের মুখে ছাই পড়ায় তার এমন উন্মাদনা।তার দর্প স্ত্রীর সতীত্ব আর স্ত্রীর অসহায়তা তার মানুষের হাজার ছিদ্রে ঢাকা দেওয়া আর গয়না, শাড়ী দিয়ে পত্নীর অবস্থান কে মহিমান্বিত করা।
এতক্ষণ যিনি কথা বলছিলেন তিনি আমারই স্বামী মানে অধিকাংশ নারীর স্বামী কিন্তু আমি অধিকাংশর মত নই। আমি সেই রূপক যাকে অবয়ব করার দায় এসে পড়েছে নারী সমাজের।যখন সন্তান জন্ম নেয় তখন সে মা শেখে।যখন সে পুরুষ হয় তখন সে ম,খ,চ,ক্রিয়া যোগে নারীকে সম্বোধন করতে শেখে।নারী দেহের অপরিসীম আকাঙ্ক্ষা মেটায় পর্ন সাইট তারপর মিলে যায় এক আসল দেহ।পথ ঘাট প্রতিবেশী বন্ধু স্কুল কলেজ কোথাও থেকে সেই দেহ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার মসিহা এসেই পড়ে।নইলে প্রেমে পরে দেহদানের পর্ব শেষমেশ সম্পন্ন হয়।আসল শুরু বুঝি এবার।মেয়ে শরীরের যাবতীয় কৌতূহল মিটিয়ে এবার শুরু হয় এক্সপ্লোরেশন। নারী এক্ষেত্রে এক ইন্সট্রুমেন্টালফ্যাক্টর।ভালবাসায় ভাসতে চায় নীল সমুদ্রে।এক নাবিকের নাম প্রেমিক হয় যেন।তার হাত ধরে অচেনা সবটুকুই যেন সে হয় একক মালিকিন।গালিচা,পালংক,বাগান সেখানের সব প্রজাপতি,বিছানার চাদরের ফুলটুকু তেও তার চাই একচ্ছত্র অধিকার।এইলড়াইয়ের অন্তর্দ্বন্দে সে নিজেকে নিঃস্ব করে।শেষমেশ নিজে একটি মস্তবড় শূন্য ছাড়া কিছুই হতে পারেনা।ভালবেসে সে অশ্লীলতা মূলধন করে,ত্যাগ করে সে একপক্ষের প্রশ্রয় বা আবদারের অসীম দিগন্তের রূপরেখা আঁকে।
আমি বিশ্বাস করি আবরসন বা ধর্ষণ এত কথার অবকাশ রাখে কেনকি সেই বলটা মেয়েদের কোর্টে থাকে যদি সেটা পুরুষের বহনের দায় থাকত তবে বুঝি তা সহজ হত।যেমন টাইভটিজিং,পন,এগুলি আইন মেনেও সহজ।তবে কি ইটের জবাব পাথরে দিলে রাতারাতি ভেঙে যাবে আমার দাম্পত্য?যে পুরুষ বিবাহিত ও অবিবাহিত জীবনে একাধিক নারী সংগ উপভোগ করেছে সে স্বামী আর যে তাকে অনুকরণ করেছে একবার তাই তাকে হারাতে হবে স্ত্রীর মান।মর্যাদার এই ভিন্ন মানদন্ডের ঝান্ডা আর কতদিন,কতযুগউত্তলনেই আনন্দ খুঁজে পাবে নারী।একবার তো হাতবদলের উত্তরণে সারি সারি গর্ভধারিণী অবিচল হবে।ঘোষণা করবে বদল চাই পৌরুষকনসেপ্টের।শরীরের পবিত্রতা রক্ষার যদি কোনো দায় থাকে তবে তা মসৃণ পথ ধরেই চলবে।এক রাস্তা, এক গন্তব্য হবে আমাদের।পুরুষের ব্যাভিচার আর নারীর নষ্টামি এক আয়নায় এক প্রতিরূপ নিক। আমার সন্তান আমারি হবে।আমার একার অস্তিত্বে বিরাজ করবে তার আধান।বাচ্চা কার?একও অদ্বিতীয় উত্তর হবে গর্ভধারিণী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

  1. পিসি নিয়ে সমস্যা বেশকিছুদিন থেকে। আনরয়েডে লিখে ফাইল সেন্ড করেছিলাম স্পেসেও বেশ গোলমাল দেখলাম।যাক মায়াজমকে ধন্যবাদ সহযোগিতা ও আন্তরিকতার জন্য।

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন