শান্তনু বেজ - মায়াজম

Breaking

২৪ জানু, ২০১৬

শান্তনু বেজ

                                                ছকছুট টায়ার















.....আমি ছুটছি। ওলিগলি। খেয়ালখুশি। হাফ প্যান্টুল। খালি গা। কাজে চলে গ্যাছে বাবারা। আমি টায়ার নিয়ে ছুটছি। টায়ার ছুটছে আমার ইশারায়। আগে আগে। গতির কি মজা প্রথম টের পাই। সব ছোটানো যেতে পারে। আমার কাঠি সব ছোটাচ্ছে।
তবে আমায় ছুটতে হবে। না, হলে থেমে যাবে। থেমে যাবে গলির পরিপূর্ণ মানচিত্র। আমি আর টায়ারের সম্পর্কের জোর ঐ কাঠি পর্যন্ত ....
হঠাৎ এক গলির বাঁকে একটা লোক আমার হাত ধরলো। টায়ার ছিটকে গেল। একটু দূরে গিয়ে সেটা নোনাধরা দেওয়ালে ঠেস দিয়ে থেমে গেল। আমি হাত ছাড়াতে চাইলাম। সে বললো এর থেকে মজাদার খেলা সে জানে। আমি তখন খেলাই চাইছিলাম। লোকটিও ঠিক আগুন্তক নয়। মুখে মিষ্টি হাসি। বারকয়েক এখানেও দেখেছি। চলে গেলাম নতুন খেলা খেলতে। কাঠিটা এখন ছুঁড়ে দিলাম নর্দমায়...

নাগরিক দূরত্ব বজায় রেখে একটা ধাউস প্রান্তর। খাঁ খাঁ রোদ্দুর। রোদের ভয় নেই এই বয়সে। লোকটা কিছু খেজুর দিল। খিদেও ছিলো। খেয়ে নিলাম। সামনে তিনটি খুঁটি বেশ দূরত্ব রেখে পোঁতা আছে। অনুভূমিকভাবে। প্রথম খুঁটিতে বাঁধা আছে একটা মুরগী। সঙ্গে মোরগ। পরের খুঁটিতে একটা কুকুর। আমাকে দেখেই ঘেউ ঘেউ করছে। বেশ রাগ হ'ল। পরের খুঁটিতে একটা বড়ো উট। আমি তার ছায়ার মধ্যেই হারিয়ে গেলাম। এতো বড়ো ছায়া । আর, সেই টায়ার, কাঠি খেয়ালে নেই ....

লোকটা এগিয়ে এলো। হাতে একটা বন্দুক দিল। একটু ভারি। কিন্তু, চলে যাবে। বললো সহজ খেলা। ঐ মুরগী আর মোরগকে গুলি করতে হবে। আমার একটা ক্যাপ ফাটানো বন্দুক ছিলো। খেলার ছলে কতবার কত কিছু উড়িয়ে দিয়েছি। আর, বাবাকে মুরগী এনে ঘাড়ে কোপ বসাতে দেখেছি প্রতি সপ্তাহে। আন্দাজে আমি বরাবরই ভালো।কাঁচের গুলি খেলায় অনেক গুলি জিতি। টিপ করলাম মুরগীকে। কাছ থেকেই। মুরগী কুঁড়ো খাচ্ছিলো।খুঁটে খুঁটে। মোরগ খালি তার পেছনে ঝটপট করছিল। লক্ষ্যভেদ। গুলির আওয়াজে আমি চমকে গেলাম।আমি জানতাম না এতে সত্যি গুলি ছিল। সত্যি মুরগীটা উড়ে যাবে। শব্দে ও ভয়ে ছিটকে পিছনে পড়ে গেলাম। লোকটা আমাকে তুললো। বললো দেখ এই বন্দুক দিয়ে তুমি সত্যিই সব উড়িয়ে দিতো পার। তোমাকে আর কেউ রাগাতে পারবে না। তুমি পুরোপুরি সুপারম্যান। ভয় কেটে যাচ্ছে শব্দের। উৎসাহ ফিরছে। বাবা যে মুরগী কোপ দিয়ে কাটে , আমার এক ঢিচক্যায় শেষ। মোরগ এবার খুঁটি গোল করে ঘুরছে আর ছটফট করছে। ঝটপট নয় ..। মুরগীর রক্তে লাল তার খাবারের বাটি। দুটো নিশানা ব্যর্থ । জেদ এবার জেদি হচ্ছে। ঢিচক্যা। মোরগ শেষ। এ খেলা বেশ মজার। টায়ার, কাঠির ভালোবাসা আর নেই, এখন বন্দুক এবং বন্দুক। সত্যি গুলির বন্দুক , সত্যিই নিশানা .....

"তাহলে এবার আসি। "। তখনও কুকুরটা আরও জোরে চিৎকার করছিল। লোকটা বলল, "কুকুর টা খুব পাজি। তোমাকে একদম পছন্দ করছে না। " আমারও বেশ রাগ হচ্ছিল। বললাম, "এইটা কুকুরকে উড়িয়ে দিতে পারে"।
হুমমমম। বেশ আবার ঢিচক্যা। কুকুরটা আমার দিকে লেজ নাড়তে নাড়তে চুপচাপ হয়ে গেল। বুঝলাম আমি বেশী রাগী ওর থেকে।
সত্যিই এবার সুপারম্যান লাগছে নিজেকে। এবার বললাম" আমি এই উঠটাকে উড়িয়ে দেব? "। সে বললো এটাই তো আসল খেলা।
আবার পরপর কয়েকটা ঢিচক্যে। ধড়াস করে পরে গেল মাটিতে। তারপর ধড়ফড়। কতো রক্ত। বুঝলাম আমি এখন সব উড়িয়ে দিতে পারি। নিজের ছায়া তৈরী করতেও পারি ...."

উহ্ কি ভীষণ বাজে স্বপ্ন দেখলাম । মাথাটা ভীষণ ভারি হয়ে গ্যাছে। ঘুমে ঠিক ঘুম এলোনা। সবই তো দেখতে পাচ্ছিলাম। এখনও দেখতে পাচ্ছি ভীষণ হাতটা আমাকে ধাউস মাঠের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ৫টা বেজে ১৪।উফফফ! এই ভোর বেলায় একটা চা হলে তবে এই টলমলে অবস্থা কাটে।ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যিই হয়! কোথাও না এটা ঘটেছে! ভোরের পিঠে সবে রোদ চাপছে। আমি ভাইপোর খেলনা বন্দুকের দিকে তাকালাম। কাল অনেক রাত পর্যন্ত আমার সঙ্গে খেলছিল। এখন কাদার মতো ঘুমোচ্ছে। আমার পাশে। আমার টায়ার ছোটানো স্বপ্নের পাশে। খেলনা বন্দুকের ট্রিগারে বেশ মিউজিক হয়। আগে এই মিউজিকটা বেশ ভালো লাগতো। এখন শুধু গতকাল সন্ধ্যার প্যারিসের কথা মনে পড়ছে। মানুষ, হোটেল, অফিস, চলমান একটা সন্ধ্যা যেন টায়ারের সঙ্গে পুড়ে যাচ্ছে। চাদর সরিয়ে উঠে গেলাম জানালার দিকে। পর্দা সরিয়ে একটা সূর্যোদয় দেখছি না। আমার জানালা দিয়ে বস্তির কালো ত্রিপলের ওপর টায়ার চাপানো ঝুপড়ি গুলো দেখা যায়। অফিস যাবার সময় ওদের বাচ্চাদের আদুল গায়ে টায়ার ছোটানো বহুবার দেখেছি। এখন ভেসে ওঠছে ওই ছেলেগুলোর টায়ার ছোটানো, প্যারিসের রাস্তায় অসহায় জুতো, শার্লি এবদো পত্রিকার অফিস, চা বাগানের লক আউট । সঙ্গে গলে যাওয়া মোমবাতির সন্ধ্যা। আচ্ছা, আমিও তো ছোটবেলায় টায়ার নিয়ে ছুটতাম দামোদরের পাড় দিয়ে। সেই টায়ারটা কোথায় আছে কে জানে ....!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র