অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়

মায়াজম
0
                            অস্পৃশ্যনামা 





শেষ  অংশ---


        শূদ্রগণ বড়ো অস্পৃশ্য। মাছ মারে বলে ধীবর ও কৈবর্তের জল অস্পৃশ্য, কিন্তু তাদের হাতের জলটুকু পান করলে যাদের জাত মারা যায়, তাদের কাছে পরম উপাদেয় আহার। শুঁড়ির হাতে মদ্য পান করলে জাত যায় না, তবে জল পান করলে জাত যায়। হাড়ি শূয়োর পালন করে বলে অস্পৃশ্য, কিন্তু হিন্দু রাজপুতেরা অনেক ক্ষেত্রেই শূয়োর ভক্ষণ করেও উচ্চশ্রেণির। নমঃশূদ্রের হাতের জল অচল, কিন্তু কারিগর কারা জেনেও বিরিয়ানি গপগপ করে খেতে কোনো প্রশ্ন ওঠে না।সোমরস পানের জন্য ব্রাহ্মণগণের তো শূদ্রই একমাত্র অবলম্বন ছিল, অবশ্য তার বিনিময়ে একটি বাছুর দেওয়া হত ; সোমরস দিয়ে শূদ্র কিছুদূর যাওয়ার পর পথিমধ্যে সেই দেওয়া বাছুর কেড়ে নেওয়া হত শূ্দ্রের গালে চড় মেরে।

এই হল ভারতের সামাজিক ভিত। শূদ্রদের অপমানের উপর যে সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে শূদ্রদের কতটা মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পারলাম। ন্যূনতম সদিচ্ছা আছে কী ? সংবিধান রচনার সময় বলা হয়েছিল আগামী ১০ বছরের মধ্যে শূদ্রের হৃত সন্মান ফিরিয়ে দিতে হবে। চাকরির ক্ষেত্রে, শিক্ষার ক্ষেত্রে সংরক্ষণ দিয়ে তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতির মানুষদের সমান উচ্চতায় আনা হবে। কিস্যু হয়নি। ১৫ বছরে তো হয়ইনি, ৭০ বছরেও হয়নি। হয়নি, কারণ সংরক্ষণের নামে ওদের নিয়ে কেবলই নোংরা রাজনীতি হয়েছে। তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতির মানুষগুলো রাজনীতির বোড়ে। এই বোড়ে চেলে উত্তরপ্রদেশের মায়াবতী যেমন মুখ্যমন্ত্রী হয়, বিহারে লালু-নিতীশরা মুখ্যমন্ত্রী হয়।তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতির মানুষদের কিছু হয় না। এই সংরক্ষণের সুবিধা প্রকৃতই যাদের প্রয়োজন তারা অধরাই থেকে যায়, ক্রিমি লেয়ারে অবস্থিত তফসিলি জাতির মানুষ তেলে মাথায় তেল পায়। এক প্রকৃত দরিদ্র মেধাবী ছাত্রীকে নিয়ে বিডিও অফিসে গিয়েছিলাম শিডিউল কাস্ট সার্টিফিকেটের জন্য। সেখানকার অফিসার জানালেন এমন কোনো দলিল দেখাতে হবে যাতে প্রমাণ হবে যে সে ৫০ বছর আগেও শিডিউল কাস্ট ছিল। না, দেখানো যায়নি। কারণ তারা এতটাই গরিব ছিল যে কোনো সম্পত্তি-সম্পদ তাদের ছিল না। তাই প্রমাণ করাও গেল না যে সে তফসিলি উপজাতি। সে ছিল জাতিতে বাগদি। বাগদি কি উচ্চবর্ণ ! আমি নিজ দায়িত্বে তাকে বিনা পয়সায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত টিউশন দিতে পেরেছিলাম, কিন্তু সংরক্ষণের সুযোগসুবিধা নেওয়াতে পারিনি। মেধা অকালেই ঝরে গেল !

সুষ্ঠুভাবে সমাজ, সংসার মায় রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে কর্ম-বিভাজন অত্যন্ত আবশ্যিক, বর্ণ-বিভাজন নয়। যাকে যে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হবে তাকেই সেই কাজ করতে হবে। যে যেই কাজে দক্ষ সে সেই কাজ করবে, সেটাই স্বাভাবিক।মানবসমাজের প্রতিটি মানুষই হাতে হাত মিলিয়ে সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছেন এইভাবে। তাহলে কেন  শুধু দ্বিজরাই সর্বোচ্চ সন্মান পাবে, উচ্চাসনে উপবেশনের মর্যাদা পাবে – কেন সেই মর্যাদার অংশীদার শূদ্ররাও পাবে না ? কেন তাদের কীটাণুকীটের মতো ঘৃণা করা হবে ? মানুষ কেন মানুষকে ঘৃণা করবে শুধুমাত্র ‘নিচু কাজ’ করার জন্য।অফিস-আদালতে-বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে ‘এ গ্রুপ’ ‘বি গ্রুপ’ ‘সি গ্রুপ’ ‘ডি গ্রুপ’-এর কর্মচারীরা বিভিন্ন কাজ করেন । সন্মান ও মর্যাদাও তাই ভিন্ন ভিন্ন। ‘এ গ্রুপ’ যেমন ব্রাহ্মণ বর্ণের মর্যাদা পায়, তেমনি শূদ্রের মর্যাদা পায় ডি গ্রুপের কর্মচারীরা। ডি গ্রুপের কাজ উপরের তিন গ্রুপের সেবা করা। এ গ্রুপের স্যরেরা নীচের দুটি গ্রুপের কর্মচারীদের কর্তৃত্ব করলেও তার সীমাবদ্ধতা আছে। ডি গ্রুপের কর্মচারীদেরকে দিয়ে সবরকম কাজ করিয়ে পারবে। জুতো পরিয়ে দেওয়া, বাজার করানো থেকে সবরকমের ফাইফরমাস করে খাটিয়ে নেওয়া যায়।ডি গ্রুপের মন চাইলে কর্মচারীকে কান ধরে উঠ-বোস করিয়ে দেওয়া হয়। উপরের তিন গ্রুপের বসার জন্য নির্দিষ্ট চেয়ার বরাদ্দ থাকলেও ডি গ্রুপের বসবার জন্য কোনো চেয়ার থাকে না।উপরের তিন গ্রুপের সামনে প্রায়-ক্রীতদাসের মতো দাঁড়িয়ে থাকে হয় পরবর্তী হুকুমের জন্য। ডি গ্রুপের কর্মচারীরা উপরের তিন গ্রুপের সামনের আসনে বসে পড়া বা বসে থাকা অভদ্রতা। সারা ভারতে তেমনটা নাহলেও পশ্চিমবঙ্গে সাতাত্তরে বামফ্রন্ট সরকারের শাসনকালে ডি গ্রুপের কর্মচারীদের শূদ্রত্ব কিছুটা কাটে। বসার চেয়ার-টেবিল হয়েছে, একটা সংগঠন হয়েছে অভাব-অভিযোগ জানানোর জন্য।মর্যাদা বৃদ্ধি হয়েছে কি ? না, হয়নি। আমি বেশ কয়েকটি অফিস-আদালতে গিয়ে দেখেছি উচ্চবর্ণের মানে সন্তানের বয়সি এ বি সি গ্রুপের কর্মচারীরা মা বা বাবার বয়সি ডি গ্রুপের কর্মচারীদের অবজ্ঞা-ভরা ‘তুমি’ সম্বোধন করে কথা বলেন, দুর্ব্যবহার করেন। এটা নিশ্চয় অসন্মানজনক।অফিস-আদালতেও বর্ণবাদ অত্যন্ত সক্রিয়।ডি গ্রুপের কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে উপরের গ্রুপ কর্তৃক।

বৃহৎ শূদ্রসমাজকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের উপর শাসন ও শোষণের যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, তা আজও অব্যাহত। হিন্দুসমাজের অধিকাংশ মানুষ গভীর নিষ্ঠা সহকারে পালন করে স্বেচ্ছায় ব্রাহ্মণশ্রেণির খবরদারি ও শোষণের বলি হয়ে চলেছে।হিন্দুসমাজে বিভেদমূলক জাতিভেদ প্রথা ও পুজো-পার্বণের মধ্য দিয়ে চিরস্থায়ী অর্থনৈতিক শোষণের ব্যবস্থা কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে।ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩.৫ ব্রাহ্মণগণ এখনও রীতিমতোভাবে শূদ্রদের ভীরুতার সুযোগ নিয়ে শাসন ও শোষণ করে চলেছে। তাই শূদ্রদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে তারা যে তিমিরে সেই তিমিরেই আছে।কারণ কাদা দিয়ে যেমন কাদা পরিষ্কার করা যায় না, তেমনি বুদ্ধিজীবী শোষকশ্রেণির নেতৃত্বে কখনও শোষণের অবসান ঘটানো গেল না।শোষণকে উচ্ছেদ করতে হলে প্রয়োজন শোষিত উৎপাদক শ্রেণির নেতৃত্ব।ডঃ আম্বেদকরের মতে, ‘জাতব্যবস্থার বিলুপ্তি’ ঘটাতে পারলেই আসবে শ্রেণি-সংগ্রাম।যারা জাতকে বহাল রেখে শ্রেণি-সংগ্রামের কথা বলছেন তারা শ্রমজীবী মানুষদের ধোঁকা দিচ্ছে।জগজীবন রাম বলেছেন – “Any movement for social equality must be anti-Brahmin in character.” অর্থাৎ সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য যদি কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে হয় তবে তা হতে হবে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী।ডঃ আম্বেদকরের ভাষায় – “The Brahmin is always opposed to change. For, to him change means loss of power and loss of pelf.” অর্থাৎ ব্রাহ্মণজাতি সর্বদা পরিবর্তনের বিরোধী। কারণ তাদের কাছে পরিবর্তনের অর্থ হল প্রভাব ও সম্পদলাভের সমূহ ক্ষতি।

ভারতে ব্রিটিশ মুক্তির পর বাবা সাহেবের তত্ত্বাবধানে তফসিলিদের জন্য যে সংরক্ষণ চালু হল, সেটার যথাযথ প্রয়োগ হল কি ? না, প্রয়োগ হয়নি। চাকুরিতে কোটা হয়েছে, শিক্ষা ইত্যাদিতেও কোটা হয়েছে। কারা পাচ্ছেন এইসব সুবিধা ? যাদের দারিদ্রতা থেকে মুক্তি হয়নি তারা পেল কি ? আলোকিত মানুষরা আরও বেশি করে আলোকিত হল বটে, যে বৃহৎ অংশ আঁধারে ছিল, তারা আঁধারেই আছে। উল্টে সংরক্ষণ ভোগীরা সমাজে বিদ্রুপের পাত্র হয়ে গেলেন। সংরক্ষণ কোটায় চাকরি বা শিক্ষায় যারা প্রবেশাধিকার পায়, তাদেরকে অন্যরা করুণার চোখে দেখে, তিরস্কৃত হয়। এই সংরক্ষণ আসলে সমাজকে বিভাজিত করে রাখল, একত্রিত করতে পারেনি। ব্রাহ্মণ্যবাদের এই সুচতুর কৌশলে ১০০ ভাগ ব্যর্থ হয়ে গেল বাবা সাহেবের স্বপ্ন।আজও, এখনও উচ্চবর্ণেরা মায় নিন্মবর্ণ পর্যন্ত কোনো চিকিৎসকের নামের পিছনে দাস-মণ্ডল-বিশ্বাস পদবি থাকলে তার কাছে চিকিৎসা করাতে দ্বিধা বা কুণ্ঠাবোধ করে। কম নম্বর পেয়েও বিশেষ কোটায় প্রাপ্ত চাকরি বা পেশায় যুক্ত ব্যক্তিকে অযোগ্য কম শিক্ষিত ভাববে এটা আর নতুন কী ! তাঁর জ্ঞান তাঁর দক্ষতা নিয়ে তো প্রশ্ন ওঠবেই।

হার্দিক পটেলের মামলায় গুজরাত হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিলেন। ওই মামলায় রায় গিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘দু’টি জিনিস দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বা বলা ভাল, দেশকে সঠিক পথে এগোতে দেয়নি। এক, সংরক্ষণ, দুই, দুর্নীতি।’ সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ‘অসাংবিধানিক’ মন্তব্য করায় গুজরাত হাইকোর্টের এই বিচারপতিকে ‘ইমপিচ’ করা অর্থাৎ সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছিল সংসদে।যে ৫৮ জন সাংসদ চেয়ারম্যানকে দেওয়া পিটিশনে সই করেছেন, তাঁদের মধ্যে কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই, জেডি(ইউ), বিএসপি, ডিএমকে, এনসিপি — সব দলের সদস্যই রয়েছে। তবে তৃণমূলের কেউ ছিল না।কংগ্রেসের তরফে আনন্দ শর্মা, অশ্বিনীকুমার, অস্কার ফার্নান্ডেজ, অম্বিকা সোনি, বি কে হরিপ্রসাদ, সিপিআই-এর ডি রাজা, সিপিএমের কে এন বালগোপাল, জেডি(ইউ)-র শরদ যাদবরা ওই পিটিশনে সই করেছিলেন।গুজরাতের বিচারপতির বিরুদ্ধে পিটিশনে বলা হয়েছে— বিচারপতি পর্দিওয়ালা হার্দিক পটেলের মামলার রায়ে বলেন, “যখন সংবিধান তৈরি হয়েছিল, এটা ধরে নেওয়া হয়েছিল যে দশ বছরের জন্য সংরক্ষণ প্রথা বজায় থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল, স্বাধীনতার ৬৫ বছর পরেও সংরক্ষণ চলছে।” সাংসদের যুক্তি, “সংবিধানে দশ বছরের রাজনৈতিক সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। সেটি সংসদ বা বিধানসভায় তফসিলি জাতি-উপজাতির জন্য সংরক্ষণের বিষয়। তার সঙ্গে শিক্ষা বা চাকরিতে সংরক্ষণের সম্পর্ক নেই। একজন বিচারপতি যে তফসিলিভুক্ত মানুষের সংরক্ষণের বিষয়ে অবহিত নন, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।”

তবে সংরক্ষণ শুধু রাজনৈতিক, চাকুরি আর শিক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকবে ? সমাজে সাম্যতার প্রয়োজন নেই ? সমাজে সাম্যতার জন্য ভোট-রাজনীতিকরা কী কী প্রকল্প ভেবেছেন ? ভাবেননি, ভাবলে আজও দলিত শ্রেণির মানুষ অপমানিত হত না, নির্যাতিত হত না, লাঞ্ছিত হত না, ছোটোজাতের মানুষ হয়ে জীবন ধারণ করতে হত না। ভোট-রাজনীতি বা ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে উঠে এল কাঁসিরামের দলিত সম্প্রদায়, বহুজন সমাজ পার্টি বা বিএসপি। খুব সহজ ছিল না সেই যাত্রাপথ।ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বড়ো চমক ছিল মায়াবতী এবং মুলায়ম সিং যাদব। প্রচারের আলো মুলায়মের উপর কিছুটা পড়লেও মায়াবতী অন্ধকারে। দলিত মায়াবতীকে পদে পদে হেয় এবং হাস্যাস্পদ করে বর্ণহিন্দুর সমাজ-রাজনীতি-গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে সার্থক করতে চাইছিল। মিডিয়ার উপেক্ষা, উপেক্ষা আর অপেক্ষা। মায়াবতীকে ধর্তব্যের মধ্যেই রাখা হল না। বস্তুত কারোকে হেয় করার পক্ষে উপেক্ষার চেয়ে আর কোন্ অস্ত্র সর্বাধিক ধাঁরালো হতে পারে ! কিন্তু সেই অমোঘ উপেক্ষাকে অগ্রাহ্য করে মায়াবতী একাই ছুটলেন তাঁর রাজ্যের ৮৫টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রতিটি কোনায় কোনায়।রাস্তার ধুলো উড়িয়ে তাঁর মোটরগাড়ি এক সভাস্থল থেকে অন্য সভাস্থলে ছুটে গেছে । গোরুর গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়িতে চড়তে অনভ্যস্ত দলিতরা তাঁদের নেত্রীর এই মোটরগাড়ি চড়তে গর্বিত বোধ করেছে।“ভোট হামারা রাজ তুমহারা, নেহি চলেগা নেহি চলেগা” -- অবশেষে ব্রাহ্মণ্যবাদ তথা শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এসে গেল দলিত শ্রেণির চোখ-ধাঁধানো সাফল্য।তিলতিল করে গড়ে তোলা নিজেদের গণভিত্তি ধরে রাখতে পেরেছিলেন তাঁরা। তৎসহ তাঁদের বার্তা সম্প্রসারিত করতে পেরেছিলেন নতুন নতুন জনগোষ্ঠীর মধ্যে।দলিত মায়াবতী অত্যন্ত নিপুণ চাতুর্যের সঙ্গে পাটিগণিতের মিশেল ঘটিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে চলে এলেন, সদলবলে। বর্ণহিন্দুদের আধিপত্য খর্ব হল, দলিত শ্রেণির ক্ষমতায়ন হল।এখন প্রশ্ন – শুধুমাত্র দলিতের ভোটেই ক্ষমতার অলিন্দে আসা সম্ভব ? না, নিশ্চয়ই সম্ভব নয়।যে পার্টি শুধুমাত্র দলিতদের জন্য, সেই দলকে অন্যেরা ভোট দেবে কেন? দেবে, কারণ রাজ্যের জনবিন্যাসের কাঠামোয় সম্প্রদায় ও জাতের অনুপাত অনুযায়ী তিনি ৩৮ শতাংশ অনগ্রসর, ২০ শতাংশ দলিত, ১৭ শতাংশ মুসলিম এবং ১০ শতাংশ উচ্চবর্ণীয় প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছিলেন। প্রজাতন্ত্রের সমগ্র ইতিহাসে যেসব ‘ছোটোজাত’ ‘অস্পৃশ্য’ বুথের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিত না, সেই ছোটোজাতরাই লোকসভা অলংকৃত এবং আলোকিত করে রাখলেন।

এতদসত্ত্বেও মায়াবতীর কার্যকলাপে দলিতরা শেষপর্যন্ত অনাস্থা জ্ঞাপন করলেন।কারণ মায়াবতীরা সুশাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেননি। নন্দিত নয়, নিন্দিত হলেন দেশজুড়ে। কারণ ক্ষমতার গোলকধাঁধায় মায়াবতীরাও ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতিলিপি হয়ে উঠলেন। ক্রমে ক্রমে মায়াবতীও ‘দেবী’ হলেন, মানে ব্রাহ্মণ্যধর্মের অনুকরণে ‘ঈশ্বর’ হয়ে গেলেন। রাজ্যের দিকে দিকে ‘ভগবান’ মায়াবতীর মূর্তি হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। জাস্ট ব্রাহ্মণ্যবাদের অন্ধ অনুসরণ করলে শাসনের নতুন ধারা পেলেন কি দলিতরা ? ভাবলে অবাক লাগে উত্তরপ্রদেশের দলিত শ্রেণি থেকে উঠে আসা ধনী মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী যখন দলিতদের জন্য কোনো মঙ্গলই করতে পারেন না। উল্টে আইপিএস অফিসারকে দিয়ে নিজের জুতো পরিষ্কার করান, মাথার উপর এসি নিয়ে মিটিং-মিছিল করান ইত্যাদি। আহা, মর্যাদার কী অপচয় ! অথচ কাঁসিরামের বহুজন সমাজ পার্টি এই উত্তরপ্রদেশেই যখন শাসনক্ষমতার অংশীদার হন তখন সর্বজনীন ভোটাধিকারের সুযোগ সদ্ব্যবহার করে দলিত-অনুসূচিতরাও যে ক্ষমতা দখল করতে পারে তা কাঁসিরাম হাতেকলমে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন।দেশব্যাপী নিন্মবর্গীয় সমাজের গ্লানি ও হীনম্মন্যতা যেমন অনেকাংশে কেটেছে, উজ্জীবিত করেছে।দলিত শ্রেণি তো শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশেই নেই, ভারতের সমস্ত রাজ্যেই তারা বিপুল সংখ্যায় আছেন – তা সত্ত্বেও কাঁসিরামের দল ‘বহুজন সমাজ পার্টি’ অন্য কোনো রাজ্যে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেননি। শূদ্র জাগরণ দূর-অস্ত ? ভোটে রাজনীতিতে জাগরণ না-হলেও সামাজিক জাগরণে বাধা কোথায় ?

বাবাসাহেব আম্বেদকর থেকে জগজীবন রাম, মায়াবতী থেকে শিবু সোরেন – সকলেই হয় জাতীয় কংগ্রেস, না-হয় বিজেপির খপ্পরে গ্রাসিত হয়েছেন। ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের যিনি ঝড়-বৃষ্টি-অগ্নি, সেই দলিত শিবু সোরেন পর্যুদস্ত হলেন জাতীয় রাজনীতিকদের ষড়যন্ত্রে। কেন্দ্রের ইউপিএ জোট সরকারের তিন শরিক দল - জেএমএম, কংগ্রেস ও আরজেডি'র কোয়ালিশন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শিবু সোরেন৷ শিবু সোরেন আগে ছিলেন কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী৷ অবশেষে শিবু সোরেনও বর্ণহিন্দুদের ফাঁদে শরীর ডোবালেন। দুর্নীতি ও খুনের মামলায় তাঁকে পদত্যাগ করতে হল৷ বিচারে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন৷ ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার জোট সরকারে ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে এমন বিধায়কের সংখ্যা ৩১। এদের নিয়েই নতুন ঝাড়খণ্ড সরকার গড়বেন দলিত শিবু সোরেন। সে কথা ঘোষণা করতে এসে বড়ো মুখে বললেন দুর্নীতিমুক্ত সরকার জনসাধারণকে উপহার দেওয়াই তার লক্ষ্য।ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নিজেরই ১৮ জন বিধায়কের মধ্যে ১৭ জন, দাগি আসামি হিসাবে পুলিশের খাতায় জ্বলজ্বল করছে। একমাত্র ক্রিমিনাল রেকর্ডহীন বিধায়ক শিবু সোরেনের পুত্রবধূ প্রয়াত দুর্গা সোরেনের স্ত্রী সিতা সোরেন। শিবুর বিধায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ অপরাধের অভিযোগটি আছে জগন্নাথ মাহাতোর নামে। তার নামে দায়ের করা আছে ১৪টি অপরাধ। শিবুর ছেলে হেমন্ত সোরেনের নামে আছে ৬ টি অপরাধের অভিযোগ। জে.এম.এম ছাড়াও জোট সঙ্গীদের মধ্যে আছেন বাকি ১৪ জন বিধায়ক, যারা নরহত্যা সহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত।

শিবু সোরেনও দলিতদের নিয়ে ঝাড়খণ্ড বানালেন, মুখ্যমন্ত্রী হলেন। ব্রাহ্মণ্যবাদের অন্ধ অনুসরণ করলেন এবং পুনরায় পতিত হলেন। ঝাড়খণ্ড এবং শিবু সোরেন আদিবাসী চেতনায় একটি সমার্থক শব্দ হওয়া সত্ত্বে পতন হল। বর্ণবাদের বিষ বড়োই ভয়ানক। শিবু সোরেনরা কখনোই অরণ্যের অধিকার, মাটির অধিকার, জলের অধিকার, আকাশের অধিকার, বাতাসের অধিকার অর্জন করতে পাবে না ? ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যের মসৃণ অগ্রগতির পথ থেকে ‘অস্পৃশ্যদের’ সরে যেতেই হবে ! ষড়যন্ত্র আর প্রতারণার শিকার হবে ! শম্বুক, একলব্যরা কি চিরকাল হননযোগ্য হয়েই থাকবে ?

এমন ঘৃণা আর অস্পৃশ্যতা আদিকাল থেকেই ছিল ! উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গ্রন্থ ‘জাতের বিড়ম্বনা’-য় বলছেন – না। বলছেন – “স্মৃতিশাস্ত্রকে এখন রান্নাঘরের হাঁড়িকুঁড়ির শাস্ত্র বলিলেই চলে। রন্ধনটা যে ব্রাহ্মণের একটা বিশেষ কার্য্য একথা সেকালের ধর্ম্মশাস্ত্রকারেরা লিখিতে ভুলিয়া গিয়াছিলেন। আমাদের একালের পণ্ডিত মহাশয়েরা সে ভুলটা সংশোধন করিয়া লইয়াছেন। এখন ‘বামুন ঠাকুর, অর্থে রাঁধুনি। আজকাল ব্রাহ্মণ ভিন্ন অন্য জাতের ভাত খাইলে আমাদের ঠাকুর মহাশয়দের এক তাল গোবর খাইয়া সে ভাত হজম করিতে হয়।কিন্তু সেকালে ব্রাহ্মণদের এতটা অজীর্ণ হয় নাই। ক্ষত্রিয় বা বৈশ্যের অন্নের ত কথাই নাই; অনেক শূদ্রের হাতের ভাতও তাঁহারা নির্ব্বিবাদে হজম করিতেন। তাঁহাদের জাতটি যে তাহাতে মারা যাইত, এরূপ কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। আজকাল আহার বিষয়ে যিনি যত বড়ো “ছুৎমার্গী”, তিনি তত বড়ো পণ্ডিত।”

কিন্তু কী আশ্চর্য ! অস্পৃশ্যের অজুহাতে যে ঘৃণা যে প্রকার উচ্চবর্ণেরা করে থাকে তা মূল শাস্ত্রীয় বিধিতে পাওয়া যায় না। লৌকিক যুক্তিও নেই।যা আজকাল চল আছে তা হল অহংকারপ্রসূত দেশাচারমাত্র।শাস্ত্রে যা নির্দেশ আছে তা নিশ্চয় কার্যকর হয় না। কারণ মাছ মরে বলে ধীবর বা জেলে ও কৈবর্তের জল অস্পৃশ্য।  তাদের হাতে জল পান করলে জাত মারা যায় বটে।কিন্তু তাদের ধরা মাছ খেলে জাত যায় না, পরম উপাদেয় আহার। শুঁড়ির হাতে চোলাই খেলে জাত যায় না, জল পান করলে জাত যায় যে ! হাড়ি বা মেথর শুয়োর ভক্ষণ করে বলে তারা অস্পৃশ্য, রাজপুতেরা অনেকক্ষেত্রে শুয়োর ভক্ষণ করলেও তারা উচ্চবর্ণ হিন্দু। মুচি বা ঢুলি বা চর্মশিল্পী গোরু-ছাগলের ছাল ছাড়ায় বলে তারা খুবই ঘৃণ্য, কিন্তু তাদের তৈরি তবলা-ঢোলক ব্যবহার করলে ঘৃণ্য হই না, টিউবওয়েলে গোরুর চামড়ার ওয়াশার ধোয়া জল খেলে জাত যায় না।নমঃশূদ্রের জল অচল --  মুসলমানের বরফ, ডাবের জল, খাসির মাংস, বিরিয়ানি খেলে জাত যায় না।যদিও একটা পর্যায়ে মুসলমানরাও ভয়ানক অচ্ছুৎ।আসলে হিন্দুসমাজের চোখে মুসলমানেরাও তো দলিত শ্রেণিই।দলিত খ্রিস্টান কিংবা দলিত মুসলিমদের ধারণাটি আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী বলে মনে হতে পারে। ভারতে মতো দেশে দলিতরাই প্রধানত খ্রিস্টান বা ইসলাম ধর্মে অন্তরিত হয়েছেন।অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদপীড়িত হিন্দুসমাজের নিম্নবর্গীয় জনসমাজই সাম্য ও সৌভ্রাত্র্যের আকর্ষণে একদিন হিন্দুধর্ম ছেড়ে ইসলামকে বরণ করেছিলেন। বরং বলা ভালো – হিন্দুধর্মে তাঁরা কখনোই সেভাবে আঁকড়ে ধরার সুযোগই পাননি, ধর্মধ্বজাধারীরা ও সমাজপতিরা কাঁটাতারের ওপারেই রেখে দিয়েছিলেন।দলিত হিন্দুরাই যে ধর্মান্তরিত হয়ে ভারতীয় মুসলমান কিংবা খ্রিস্টান হয়েছেন, এটা ঐতিহাসিক সত্য।যেহেতু সেই দলিতই আজকের মুসলিম, তাই মুসলমানও অস্পৃশ্য। কিন্তু দলিত হয়েও ভারতীয় খ্রিস্টানরা কী আদরনীয়। ২৫ ডিসেম্বর বড়োদিন এবং ফার্স্ট জানুয়ারি হিন্দুদের উল্লাসে কোনো খামতি দেখি না।ঘরে ঘরে সান্তাক্লজ এসে মোজায় উপহার দিয়ে যাওয়ার নিয়ম পালন করে, কেক খান।কিন্তু ইদের দিনে কোনো হিন্দুকে দেখিনি বিরিয়ানি-ফিরনি খেতে।ডাবল স্টান্ডার্ড মানসিকতা কেন ? মর্মান্তিক হলেও সত্য, ইসলাম বা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেও ভরতীয় দলিত ও জনজাতীয়রা আগের মতো প্রান্তিক হয়ে থেকে গেছেন। নতুন সম্প্রদায় হয়েও জাতে উঠতে পারল না ভারতীয় সমাজে।

জাতপাত ব্যবস্থা বর্ণগত মই বাহিত হয়ে নিচে নেমে যায় এবং কখনোই পুরোপুরি অদৃশ্য না-হওয়ায় আম্বেদকরের বর্ণিত ‘অনুকরণের সংক্রমণ’ প্রতিটি বর্ণেরই ক্রমপরম্পরায় নিম্নতর বর্ণের উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা হয়।তেজস্ক্রিয় অণুর অর্ধেক জীবনের মতো ‘অনুকরণের সংক্রমণ’ গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নষ্ট করে দেয়। এর ফলে এমন এক ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে যেটাকে আম্বেদকর বলেছেন ‘ক্রমবিন্যস্থ বৈষম্য’। এতে আরও নিচুর তুলনায় নিচু বর্ণও বিশেষ অধিকার ভোগের অবস্থানে থাকে। প্রতিটি বর্ণই বিশেষ অধিকার ভোগ করে, প্রতিটি শ্রেণিই ব্যবস্থাটি বজায় রাখার ব্যাপারে আগ্রহী।আমাদের সমাজে পচনের মূলেই আছে এই জাতপাত প্রথা। অধস্তন জাতের প্রতি যা কিছু করা হয়েছে, তা তো আছেই, সেইসঙ্গে এটা বিশেষ অধিকারভোগকারী বর্ণের নৈতিকতার মূলে পচন ধরিয়েছে।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর মতে, প্রতি ১৬ মিনিটে একজন দলিতের সঙ্গে আর-একজন অদলিত অপরাধ করে, প্রতিদিন ৪ জনেরও বেশি অস্পৃশ্য নারী স্পৃশ্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়। প্রতি সপ্তাহে ১১ জন দলিত খুন হয় এবং ৬ জন দলিত অপহৃত হয়। শুধুমাত্র ২০১২ সালেই ২৩ বছর বয়েসের ১ জন নারী দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার হয়, ১৫৭৪ জন দলিত নারী ধর্ষিত হয় (বৃদ্ধাঙ্গুলির শাসানির জোরে দলিতদের সঙ্গে ঘটা ধর্ষণ বা অন্যান্য অপরাধের মাত্র ১০ ভাগ প্রকাশিত হয়) এবং ৬৫১ জন দলিতকে হত্যা করা হয়। এগুলি ছিল ধর্ষণ ও বর্বরতা, যা লুণ্ঠন আর নগ্ন হতে বাধ্য করাই নয়, জোরপূর্বক মানুষের মল খাওয়ানো, জমি দখল,সমাজচ্যুত করা, খাওয়ার জল আনতে বাঁধা দেওয়া। এ পরিসংখ্যানে পাঞ্জাবের বান্ত সিংয়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি, যিনি ছিলেন একজন মাজহাবি দলিত শিখ। ২০০৫ সালে যার দুই হাত এবং একটি পা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে দেওয়া হয়। কারণ সে তার মেয়েকে গণধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার দুঃসাহস দেখিয়েছিল। তিনটি অঙ্গ ছেদ হওয়া ব্যক্তির জন্য আলাদা কোনো পরিসংখ্যান নেই।কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে --

ঘটনা – ১ : ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর। মধ্যপ্রদেশ। তার খেতে ঢুকে ফসল খেয়ে নিচ্ছিল গরুর দল। গোরুর মালিককে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে গিয়ে চরম লাঞ্ছনার শিকার হতে হল এক দলিত নারীকে। তাকে নগ্ন করে মারধরের পর প্রস্রাব খেতেও বাধ্য করা হয়। ছত্তরপুর জেলায় এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় স্থানীয় থানার নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসেছিল। ওই মহিলাকে নিয়ে দলিত সম্প্রদায়ের কয়েকজন জেলার সহকারী পুলিশ সুপার নিরজ পান্ডের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় নওগং থানা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।নিগৃহীতার অভিযোগ, বিজয় যাদবের বাড়িতে গিয়ে তার খেতে গওরু ঢোকার বিষয়টি জানান। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে বিজয় ও তার স্ত্রী বিমলা তাকে মারধর করেন। এমনকি জামাকাপড় খুলে তাকে প্রস্রাব খেতেও বাধ্য করা হয়।

ঘটনা – ২ : ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর।উত্তরপ্রদেশ। এক দলিত পরিবারের পুরুষ ও নারীদের প্রকাশ্যে নগ্ন করে পেটাল পুলিশ।  সন্তান ও লোকজনের সামনে এই দম্পতিকে গণনগ্ন করার ঘটনা ঘটল। বুদ্ধনগর জেলার ধানকুড় থানায় এই ঘটনা ঘটে। স্থানটি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঘটনার দিন ধানকুড় থানায় একটি ডাকাতির মামলা করতে যান সুনীল গৌতম নামে একজন দলিত পুরুষ। পুলিশ ওই মামলা না-নিয়ে স্ত্রীসহ সুনীলকে বাজারে রাস্তার মধ্যে কাপড় খুলে সম্পূর্ণ নগ্ন করে দাঁড় করিয়ে রাখে। এরপর নগ্ন দম্পতিকে পেটায়।

এ ঘটনার পর স্থানীয় এক সাংবাদিক পুরো ঘটনাটির একটি ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ পোশাক পরা এক ব্যক্তি রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ওই দম্পতির কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলছে। আর পাশেই দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছে পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর সেই পুলিশও মারধরে অংশ নেয়। ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত দুজনকে পুলিশ বলে চিহ্নিত করেছেন ওই দলিত দম্পতি।

ঘটনা – ৩ : ২০১৫ সালের ১৯ মে। উত্তরপ্রদেশ। শাহজানপুর জেলার জালালাবাদের কাছে একটি গ্রামের অন্তত পাঁচজন দলিত মহিলা অভিযোগ করেছেন, তাদের চেয়ে তুলনায় উঁচু জাতের কাশ্যপ সমাজের অন্তত পনেরো জন নারীপুরুষ সেদিন সকালে তাদের উপর চড়াও হয়। তারপর তাদের কাপড়চোপড় খুলে নিয়ে রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তাদের বেত দিয়ে পিটনো হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে এই নির্যাতন। দলিত সমাজের একটি ছেলে কাশ্যপদের একটি নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে তাদের উপর এই নির্যাতন চালানো হয়।  ওই মেয়েটির মা এবং অন্য আত্মীয়রা এসে ছেলেটির মা-নানি-চাচিদের উপর হামলা চালান। তাদের মারধর করা হয়, শাড়ি ও কাপড়চোপড় খুলে নেওয়া হয়।  এসময় হামলাকারীরা বলতে থাকেন- “আমাদের সম্মান যারা নষ্ট করেছে তাদের আবার ঘোমটা কীসের, তাদেরকেও আমরা ইজ্জত রাখতে দেব না।” ঘটনার তদন্তে যে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন তারা এসে রিপোর্ট দিয়েছেন দলিত মহিলাদের অবশ্যই নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছিল। এসময় প্রশাসনও প্রথমে নির্বিকার ছিল। তবে জানা গেছে দলিতদের বে-ইজ্জতি করার জন্য কাশ্যপ সমাজের মোট দশজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও তিনজন মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও তিনজন পলাতক মহিলাকে ধরার জন্য বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছে।

ঘটনা – ৪ : ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি। মহারাষ্ট্র। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বিরাজ চ্যাবনের নিজ জেলায়ই এক মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে। এ ঘটনার আগে ৪৫ বছর বয়সি ওই নারীকে একদল মানুষ প্রহার করে। এসব ঘটনার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দলিত শ্রেণির ওই মহিলা এখন বিচার চাইছেন সবার কাছে। কিন্তু তিনি দলিত শ্রেণির বলে তার অভিযোগ নিবন্ধিত করতে বিলম্ব করা হয়। অভিযোগ আছে, ওই ঘটনায় জড়িতরা মুখ্যমন্ত্রীর খুব কাছের বলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বিলম্ব করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে না।২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর উচ্চবংশীয় এক যুবতীকে নিয়ে পালিয়ে যায় নির্যাতিত ওই দলিত মহিলার ছেলে। এরপর ওই যুবতীর অভিভাবকরা তাদের মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে মর্মে একটি অভিযোগ দাখিল করে। একই সঙ্গে তারা ওই মহিলাকে তাদের মেয়ে বের করে দিতে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে।ওই সময় তিনি জানিয়ে দেন তার ছেলে ও ওই মেয়ে পালিয়ে কোথায় গেছে তা তিনি জানেন না। নিখোঁজ যুবতীর পরিবার  একটি স্থানে ডেকে নেয় দলিত শ্রেণির ওই মহিলাকে। এরপর তাকে প্রশ্নবাণে তারা জর্জরিত করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা তাকে ধমকাতে থাকে, প্রহার করতে থাকে, এমনকি তাকে নগ্ন করে গ্রাম ঘুরতে বাধ্য করে। এ ঘটনায় ওই মহিলা মারাত্মক আহত হন। তাকে পরের দিন একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দলিত মহাসংঘ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাচিন্দ্র সাকাতে বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিজের জেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ চোখ বন্ধ করে আছে। তারা রাজনৈতিক কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

ঘটনা – ৫ : ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি। পশ্চিমবঙ্গ। কুড়ি বছরের এক আদিবাসী তরুণীকে ১২ জন ব্যক্তি গণধর্ষণ করেছে  বীরভূম জেলায়। গ্রামে সালিশী সভায় ওই তরুণীকে ‘অপরাধী’ বলে চিহ্নিত করে গণধর্ষণের শাস্তি দেওয়া হয়।ওই মেয়েটির ‘অপরাধ’ অনাদিবাসী একটি ছেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল গত পাঁচ বছর ধরে। গ্রামের মোড়ল ও ধর্ষণকারী সহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।বীরভূমের পুলিশ প্রধান সি সুধাকর জানিয়েছেন, “সোমবার রাতে রাজারামপুর গ্রামে সালিশী সভায় ওই গণধর্ষণের নির্দেশ দেন গ্রামের মোড়ল বলাই মান্ডি। অভিযোগে বলা হয়েছে, চৌহাট্টা গ্রামের এক অনাদিবাসী ছেলের সঙ্গে অত্যাচারিতা ওই মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হয় ।সেদিনই সালিশী সভায় দুজনকে অপরাধী বলে চিহ্নিত করা হয় আর ২৫০০০ টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হয়। যুবকের পরিবার টাকা মিটিয়ে দিতে পারলেও ওই তরুণীর পরিবার তাদের আর্থিক অবস্থার কথা জানিয়ে টাকা দিতে পারবে না বলে জানায় গ্রামের প্রধানদের।তখনই মোড়ল বলাই মান্ডি বলে “যাও, ওকে নিয়ে মজা করো"। পরপর ১২ জন ধর্ষণ করে তরুণীটিকে, যাদের মধ্যে মেয়েটির বাবার বয়সি লোকও ছিল, আবার তার ভাইয়ের বয়সি ছেলেও ছিল। প্রধান বলাই মান্ডি আবার ওই তরুণীর গ্রাম সম্পর্কে কাকা। ২০১০ সালে এক তরুণীকে নগ্ন করে গ্রামে ঘোরানো হয় এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে।আদিবাসী সমাজে অনাদিবাসী কাউকে বিয়ে করলে সমাজচ্যুত করার চল রয়েছে। এ হল দলিত কর্তৃক দলিতের লাঞ্ছনা।

ঘটনা – ৬ : ২০১৫ সালের ২১ জুলাই। আসাম। ডাইনি সন্দেহে এক বৃদ্ধাকে নগ্ন করে শিরোশ্ছেদ করা হয়েছে। আসামের সোনিতপুর জেলায় আদিবাসীদের একটি গ্রামের এ ঘটনায় পুলিশ দুজন মহিলা সহ সাতজনকে আটক করেছে।পুলিশের স্থানীয় এক কর্মকর্তা সামাদ হুসেন বলেন, ওই গ্রামে গত কিছুদিন ধরে অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ছিল। এর জের ধরে গ্রামবাসীরা ৬৩ বছর বয়সি পুরনি ওরাংকে দায়ী করা শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা ওই বৃদ্ধাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে শিরোশ্ছেদ করে।প্রসঙ্গত, আসামে অনেক আদিবাসী সমাজে এবং চা শ্রমিকদের মধ্যে মহিলাদের ডাইনি হিসাবে সন্দেহ করার চল রয়েছে। গত বছর অক্টোবর মাসে দেবযানী বোরা নামে ভারতের জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটকে ডাইনি হিসাবে অভিযুক্ত তাকে বেদম মারধর করা হয়।রাজ্য পুলিশের দেওয়া হিসাবে, গত ছয় বছরে ডাইনি সন্দেহে আসামে ৯০ জনকে হয় মাথা কেটে নেওয়া হয়েছে অথবা  জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে।

২০০৫ সালে ৩১ আগস্ট হরিয়ানার গোহানায় বর্ণহিন্দুদের জনাকয়েক ক্ষমতাবান লোক দলিতদের একটি বস্তির ডজনখানেক বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।সরকার থেকে ঘোষণা করা হল পুড়ে যাওয়া বস্তির প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু অন্যায় কাজটি করল তাদের কী শাস্তি হল কেউ জানে না।হরিয়ানায় যখন দলিতদের বস্তি পুড়ে ‘রাখ’, ঠিক তখনই বিহারে রণবীর সেনাদের গুলিতে ঝাঁঝরা দলিত মানুষেরা। এ-রকম না-হলেও অন্য-রকম হতে বাধা কোথায় পশ্চিমবঙ্গে ! তমলুক শহরের পদুমপুর গ্রামের তফসিলিভুক্ত পরিবারগুলি মন্দিরে ঢুকতে পারে না।পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য প্রভাস ধাড়া স্বীকার করেছেন, গ্রাম কমিটির নামে মোড়লদের দাপট এখানে এতটাই বেশি যে অনেকবার বৈঠক করেও তফসিলিদের মন্দিরে ঢোকার ব্যবস্থা যায়নি। ফলে তফসিলি পরিবারগুলি পুজো দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত।” এ-সময় রাজ্যের তখত-এ-তাউসে উপবিষ্ট কমঃ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

বর্ণহিন্দু মানে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের কথা বলা হয় না, বর্ণহিন্দু বলতে বোঝায় শূদ্র ছাড়া বাকি সকল দ্বিজজাতি। এখানে বিষয়ে উল্লেখ করা প্রয়োজন, তা হল দলিতদের উপর শুধুমাত্র বর্ণহিন্দুরাই অচ্ছুৎ বা অস্পৃশ্য ভাবে বা নির্যাতন করে, তা বললে সত্যের অপলাপ হয়। ঘৃণা নিচু জাতের সঙ্গে নিচুজাতেরও কম নেই। স্তরে স্তরে ঘৃণা। সকলেই একে অপরের থেকে উঁচু জাত সেটাই প্রমাণ করতে চায়।হিন্দুসমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র – এই চারভাগে ভাগে ভাগ করেছে ব্রাহ্মণ্যবাদ। কিন্তু শূদ্ররা নিজেরাই বিভাজিত হয়ে আছেন হাজার ভাগে।মুচিরা মেথরদের ঘৃণা করেন, মেথররা ডোমদের ঘৃণা করেন, মণ্ডল মজুমদারদের ঘৃণা, হালদাররা প্রমাণিকদের ঘৃণা করেন, বিশ্বাসরা ঘৃণা করেন বাগদিদের  ইত্যাদি। অত্যাচার-নির্যাতনও চলে। একে অপরের সঙ্গে বিবাহ-শুভকার্যাদিও করেন না। উচ্চবর্ণে উন্নীত হওয়ার আকুতি অন্ত্যজদেরও বিভাজিত করে রেখেছে।উচ্চবর্ণরাই দলিতদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করেন তা সবসময়ই নয়, অন্ত্যজরাও অন্ত্যজদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করেন ‘ছোটোজাতের’ অস্পৃশ্যতায়। চারখানি ঘর তো ছিলই, এই ঘরের মধ্যে ঘর তুলেছে দলিতরাও।

এ রকম হাজার হাজার ঘটনা উল্লেখ করা যায়। তাতে লাভ কী ! এমন ঘটনা যেমন মায়াবতীর রাজ্যে সংঘটিত হয়, তেমনি কমিউনিস্টদের রাজ্যেও হয়।ভারতের যে-কোনো গ্রাম্য পুলিশকে তার কর্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলবে, তাদের কাজ ‘শান্তি রক্ষা করা’। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটি করা হয়, অবশ্যই বর্ণপ্রথাকে ধারণ করার মাধ্যমে। কারণ দলিতদের উচ্চাভিলাষই শান্তি ভঙ্গ করে।মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি  ১৯২১ সালে তিনি তার ‘নবজীবন’ নামের গুজরাটি জার্নালে লিখেছেন – “আমি বিশ্বাস করি যে বর্ণ প্রথার উপর প্রতিষ্ঠিত বলে হিন্দুধর্ম আজও বেঁচে আছে।বর্ণ প্রথা লোপ করে পাশ্চাত্য ইউরোপিয়ান ব্যবস্থাকে গ্রহণ করা মানে হচ্ছে হিন্দুদের অবশ্যই বর্ণপ্রথার মূল ভিত্তিকে অর্থাৎ তাদের পূর্বপুরুষের পেশাকে ত্যাগ করতে হবে।উত্তরাধিকার সূত্র একটি চিরন্তন সূত্র।একে পরিবর্তন করা মানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।আমার কাছে একজন ব্রাহ্মণের কোনো দাম নেই যদি জীবনের মূল্যেও আমি তাকে ব্রাহ্মণ না ডাকতে পারি।যদি প্রতিদিন একজন ব্রাহ্মণ শূদ্রতে এবং একজন শূদ্র ব্রাহ্মণে রূপান্তরিত হয় তবে তা বিশৃঙ্খলার জন্ম দেবে।”

নমশূদ্ররা দাবি করেন বল্লালসেনের আমলেই তাদের সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার হরণ করে, তাদের ‘চণ্ডাল’ নামে অভিহিত করা হয়। তখন থেকেই তারা হিন্দু সমাজের নিন্মতর বর্ণে অধঃপতিত হয়ে যায়।তবে ১৯১৯ সাল নাগাদ ইংরেজ শাসনকালে আদমসুমারিতে অসন্মানজনক ‘চণ্ডাল’ নামের পরিবর্তে তাদের নতুন নাম ‘নমশূদ্র’ আনুষ্ঠানিক অনুমোদন লাভ করে।ভারতের ব্রিটিশ-মুক্তির পর চণ্ডাল তথা নমশূদ্রের নতুন পরিচয় হল ‘তফসিলি’ (তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং ওবিসি বা অনগ্রসর জাতি)।তফসিলি সৃষ্টি করে হিন্দু সমাজে তৈরি হল নতুন বর্ণবাদ। আর তাই ৭০ বছরেও শূদ্রাবস্থার অবসান হল না। তফসিলিভুক্ত সব জাতিই নিন্মবর্ণের। অর্থাৎ পূর্বে যারা শূদ্র ছিলেন, আজও তারা শূদ্রই আছেন।কারোর কারোর ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তফসিলি জাতিরা [Scheduled Castes (Dalit)] কিছুটা ভালো অবস্থায় থাকলেও তফসিলি জনজাতিদের [Scheduled Tribes (Adivasi)] একদম সঙ্গিন।

কারণ সদিচ্ছার অভাব।তফসিলি জাতি ও তফসিলি জনজাতিরা সত্যি সত্যিই সাম্যবাদ সম-মর্যাদা ভোগ করুক এটা কেউ কোনোদিন মনেপ্রাণে চায়নি।ব্রিটিশ-ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তব সম্ভাবনা একটা তৈরি হয়েছিল বর্ণবাদের অস্পৃশ্য সমাজব্যবস্থার জগদ্দল পাথরকে উপড়ে ফেলার।কিন্তু বাস্তবে সেই উজ্জ্বল সম্ভাবনাটাকে বাস্তবায়িত করা গেল না।কেন বাস্তবায়িত করা গেল না ? ব্রিটিশ-বিরোধী জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্বে প্রায় সবাই-ই ছিলেন উচ্চবর্ণের লোক। তাঁরা কেলই নানা পথে নানা ফন্দি-ফিকিরে নরমে-গরমে, কখনো আপোস করে কখনো পাপোস হয়ে নিজেরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতেই বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন।মৌলিক সামাজিক-অর্থনৈতিক কিংবা মতাদর্শগত কোনো অর্থেই পরিবর্তন ঘটানোর প্রকৃত ইচ্ছা প্রায় ছিলই না।জমিদারি স্বার্থের বিরুদ্ধে তাঁরা কখনো যেতে চাননি। বস্তুত শ্রেণিগত বিচারে যাওয়াটা তাঁদের পক্ষে  সম্ভব ছিল না।অতএব প্রাচীন সমাজের জাতিবর্ণগত অবস্থানকে মৌলিকভাবে পরিবর্তনের কোনো কর্মসূচি কোনোদিনই জাতীয় আন্দোলনে নেওয়া হয়নি।জাতীয় আন্দোলনে ক্রমবর্ধমান জোয়ারে নিচুবর্ণের মানুষেরা প্রচুর সংখ্যায় এলেও জাতিবর্ণগত বিভেদের মূল উৎপাটনে জাতীয় নেতৃত্বের অনীহা ও বাস্তব সক্রিয়তার অভাব অনেক সময়েই তাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে।দূরে সরিয়ে দিলেই কি দূরে সরানো যায় ! শূদ্রজাতিদের যতই  এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে জাতীয় নেতৃত্ব শূদ্রেরা ততই সংঘবদ্ধ হয়েছে।ততই প্রকটিত হয়েছে।

১৯২৭ সাল। সেদিন ছিল বড়োদিন। বাবাসাহেব ডাক দিলেন মহারদের সহ অন্যান্য দলিতদের – এসো, আমরা ওই নিষিদ্ধ জলে স্নান করি, ওই নিষিদ্ধ জল পান করি। ‘নিষিদ্ধ জল’ কেন ! যুগ যুগ ধরে চাভাদর সরোবরের জল স্পর্শও করতে পারত না দলিতরা। ব্রাহ্মণ্যবাদীদের এটাই নিষেধাজ্ঞা। সেই সরোবরের জল বর্ণহিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান-কুকুর-গোরু-মোষ-গাধা কারোরই জন্য নিষেধ ছিল না, বাদ ছিল দলিতরাই। যাই হোক, বাবাসাহেবের ডাকে সেই সরোবরে জমায়েত হলেন হাজার হাজার দলিত মানুষ।বিশাল এক সমাবেশ হল। উচ্চবর্ণদের সাহসে কুলালো না একজন দলিতের মাথা ডাণ্ডা মেরে ঠান্ডা করার।পুলিশ পুতুল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল অকুস্থলে।হাজার হাজার দলিত মানুষ সেই সরোবরের জলে নেমে পড়লেন। শিশুদের মতো জলে নেমে স্নান করতে থাকলেন এবং নাচতে থাকলেন।সরোবরের পাড়েই আয়োজিত হল বিরাট জনসভা। পুড়িয়ে দেওয়া সেই গ্রন্থ, যে গ্রন্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ শূদ্রদের ঘৃণ্য করেছে – মনুসংহিতা।সেইদিন থেকে এমন গ্রন্থ সমাজ থেকে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। উচ্চবর্ণের উচ্চাসন টলে যাবে যে !

১৯৩২ সালে দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন – “সকল জাতিকেই আমাদের জলচল করিয়া লইতে হবে।” কীভাবে জলচল করে নেওয়া যাবে যতদিন মনুসংহিতার প্রভাব থাকবে ! ভারতের সেকুলার শাসনকর্তারা ভারতের অস্পৃশ্য-অচ্ছুৎদের জলচল করে তোলার শিক্ষা দিতে ভয় পায়, নিতেও। কারণ হিন্দুত্বকে ধ্বংস না নিন্মবর্গদের জলচল করা সম্ভব নয়। তাই বোধহয় দলিতদের শ্লোগান এমনই হয়ে যায় – “তিলক, তরাজু অওর তলোয়ার ইনকো মারো জুতে চার”।ব্রাহ্মণের তিলক, ক্ষত্রিয়ের তলোয়ার এবং বেনিয়ার তরাজু (দাঁড়িপাল্লা)। উত্তরপ্রদেশের ‘চামার কি বেটি’ মায়াবতী মুখে দলিতদের কথা বললেও ব্রাহ্মণরা স্বাগত ছিলেন। তাঁর কাছে বেনিয়া-ক্ষত্রিয়রা অচ্ছুৎ হলেও, ব্রাহ্মণরা নন।ক্ষমতার রাজনীতি বড়ো বালাই, সত্যি ! অথচ মনুবাদের যথার্থ এবং প্রবলতম প্রবর্তক এই ব্রাহ্মণরাই। কারণ কী ? বর্ণযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ? হ্যাঁ, ভারতের প্রথম বর্ণযোদ্ধাই পরশুরাম, যিনি ব্রাহ্মণ।একবার নয়, একুশবার ধরিত্রীকে নিঃক্ষত্রিয় করার যুদ্ধ। ব্রাহ্মণ বনাম ক্ষত্রিয়ের যে দ্বন্দ্ব একদা আর্য ও দ্রাবিড়ভূমিকে দীর্ণ করেছিল, ব্রাহ্মণদের তরফে পরশুরামই ক্ষত্রিয় হৈহয় অধিপতি কার্তবীর্যার্জুনকে সপরিবার নিধন করে তার শীর্যবিন্দু রচনা করেন।এমন বর্ণযোদ্ধাকে ‘দেবী’ মায়াবতী আর কোথায় পাবেন ! সেই কারণেই কাঁসিরামের মানসপ্রতিমা মায়াবতীকে উত্তরপ্রদেশের জেলায় জেলায় ‘ব্রাহ্মণ সম্মেলন’ করে বেড়াতে দেখা যায়। সেই ব্রাহ্মণ সম্মেলনের মঞ্চে দেখা যায় একদিকে একটি বাবাসাহেব আম্বেদকর, অন্য একটি পরশুরামের মাল্যবান কাট-আউট। একটা বড়ো প্রশ্ন – তা হল উচ্চবর্ণের সর্বোচ্চ আসনে উপবিষ্ট ব্রাহ্মণরা কেন ঘৃণ্য ‘চামার কি বেটি’ মায়াবতীর বহুজন সমাজের হাতি চিহ্ন-সংবলিত পতাকার নীচে আশ্রয় নিল ? আসলে উত্তরপ্রদেশে সৃষ্ট হওয়া গড্ডলিকা প্রবাহ। এখানে দলিতদের সংগঠন আছে, জনজাতিদের সংগঠন আছে, অনগ্রসরদেরও সংগঠন আছে – ব্রাহ্মণদের কোনো সংগঠন নেই।তার মানে কী ব্রাহ্মণ্যবাদী আর্যাবর্তের দলিতায়ন থেকে দলিতের ক্ষমতায়নের রূপান্তর !

ভারতীয় সংবিধান ভারতের অনগ্রসর জনসমষ্টিকে তিনভাগে ভাগ করেছে। (১) তফসিলি জাতি (Scheduled Caste বা S.C.), (২) তফসিলি উপজাতি (Scheduled Tribes বা S.T.) এবং (৩) অন্যান্য অনগ্রসর জাতিসমূহ (Other backward Classes বা O.B.C.)।ভারত সরকার সংবিধানের ৩৪০ ধারা অনুযায়ী ভারতের অনগ্রসর শ্রেণিগুলির সমস্যাদির অনুসন্ধান এবং তা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার সুপারিশ গ্রহণের জন্য এ পর্যন্ত দুটি কমিশন নিযুক্ত হয়েছে।১৯৫৩ সালে কাকা কালেলকার কমিশন এবং ১৯৭৮ সালে মণ্ডল কমিশন। লক্ষণীয় যে, সংবিধান তফসিলি জাতি বা উপজাতিদের তালিকা নির্ণয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিনির্ধারণ করলেও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়গুলির ক্ষেত্রে তেমন কিছু করেনি। কেবল বলা হয়েছে, যে আদেশবলে কমিশন নিযুক্ত হবে সেই আদেশেই কমিশনের কার্যপদ্ধতি বিবৃত থাকবে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা সম্প্রদায়েরই সংগত অধিকার ও আকাঙ্ক্ষা থাকে দেশের শাসন-প্রশাসনে অংশগ্রহণ করার। যে পরিস্থিতি দেশের ৫২% জনগণকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তার জরুরি সংশোধন প্রয়োজন।

ভারত স্বাধীনতা অর্জনের পর যে নতুন সংবিধান গৃহীত হল তাতে ন্যায়, স্বাধীনতা এবং সমতার প্রতিশ্রুতি রক্ষার কথা বলা হল। বলা হল আইনের চোখে সব নাগরিকই সমান এবং ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী আইন তাদের এই অধিকার রক্ষা করবে।১৫ এবং ১৬ নম্বর ধারা মোতাবেক কারও প্রতি বৈষম্য না-করার নীতি গৃহীত হল।১৭ নম্বর ধারা মোতাবেক অস্পৃশ্যতার মতো ঘৃণ্য প্রথা নিষিদ্ধ করা হল।পাশাপাশি সংবিধান সামাজিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোকে বিশেষ সহায়তাকে স্বীকৃতি দেয়। কিছু পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীকে ক্ষতিপূরণমূলক বৈষম্যের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্টের ১৯ নম্বর সাংবিধানিক আদেশে (তফসিলি জাতি) যেসব জাতিকে তফসিলি জাতি বলে গণ্য করা হবে তার তালিকা দেওয়া হয়। শুধু হিন্দুরাই নয়, শিখ-বৌদ্ধরাও তফসিলি জাতিভুক্ত। পূর্বে যাদের অস্পৃশ্য জাতি বলা হত তারাই স্বাধীনোত্তর ভারতে তফসিলি।এদের সুযোগ-সুবিধার কথা বলা আছে তা মূলত তিন প্রকারের। প্রথমত : এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের আইনসভায়, সরকার-চালিত বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ। দ্বিতীয়ত : ঋণ, স্কলারশিপ, জমির পাট্টা ইত্যাদি নানাবিধ আর্থিক সুবিধা। তৃতীয়ত : অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে নানাবিধ ব্যবস্থা এবং আবদ্ধ শ্রমিকদের মুক্ত করার কিছু পদক্ষেপ।বাস্তবে ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে আধিপত্য ছিল ইংরেজি জানা শহুরে রাজনৈতিক নেতাদের।বস্তুত রাজ্য ও স্থানীয় স্তরে উচ্চবর্ণের এবং অন্তত উত্তর ভারতে এরা ছিলেন উচ্চবর্ণ জমি মালিক শ্রেণির।দক্ষিণ ভারতে পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা ছিল। কারণ পঞ্চাশের দশকের মধ্যেই নিন্মবর্ণ নেতারা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঢুকতে শুরু করেছিলেন। ১৯৬০ সালে তামিলনাড়ুতে দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাঘাম ক্ষমতায় আসে। এটা ছিল একটি অ-ব্রাহ্মণ পার্টি। ৫০/৬০  দশকে দক্ষিণ ভারতের নিন্মবর্ণগুলি নিজেদের পার্টি ও নেতা তৈরি করে ফেলেছিল।৮০ এবং ৯০-এর দশকে উত্তর ভারতেও নিন্মবর্ণ রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয়ে যায়।বারংবার লালুপ্রসাদ যাদব, কাঁসিরাম এবং মায়াবতীর নাম সমনে আসতে থাকে।১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ এবং আবার ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ মূলত নিন্মবর্ণ রাজনৈতিক জোট দিল্লির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে।

১৯৪৭ সালে অখণ্ড ভারত খণ্ড খণ্ড হয়ে গেল রাজনৈতিক কুটিলতায়। ঘরছাড়া হয়ে ভেসে গেল লক্ষ লক্ষ মানুষ, এদের মধ্য একটাো অংশই ছিল দলিত শ্রেণি।১৯৪৭, ১৯৪৯-এর পর ১৯৫০ সালে সরকারি হিসাব অনুযায়ী আসাম-ত্রিপুরা-পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে পনেরো লক্ষ বিরাশি হাজার উদ্বাস্তু ভারতে চলে আসে। এদের মধ্যে প্রায় ১৬ আনাই ছিল দলিত শ্রেণি এবং বেশিরভাগই নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ। ভারতে এদের অবস্থা মোটেই ভালো হয়নি, আজও। সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান চালু হতেই যে জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়ন শেষ হয়ে গেল তা বলা যায় না।তবে পূর্বে যেমন সমস্ত রকমের নিপীড়ন মুখ বুজে সহ্য করে যেত, এখন তেমন নয়।প্রতিবাদ করতে শিখেছে।দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলিত হতে থাকল শূদ্র জাগরণের তরঙ্গ।নিচুজাতির মানুষেরা নিজেদের দাবি উত্থাপন করার এবং জাতিব্যবস্থাকে বিরোধিতা করার আন্দোলন ক্রমশ জঙ্গিরূপ গ্রহণ করতে থাকে। মন্দিরে ঢোকা, পুকুর-কুয়ো-রাস্তা ব্যবহারের আন্দোলনের মধ্যে এটা লক্ষ করা যায়। ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবস্থার বিরোধিতা শুধু অস্পৃশ্য জাতিগুলি করেনি, যারা অস্পৃশ্য ছিল না সেই শূদ্র জাতিগুলিও সামনে এগিয়ে আসতে থাকে।দক্ষিণ ভারতে ই ভি রামসামির নেতৃত্বে এই শূদ্র প্রতিবাদ সুসংহত রূপ ধারণ করে।সংগঠিত হল এবং বিপ্লবী রূপ গ্রহণ করল। তিনি তামিলনাড়ুর অব্রাহ্মণদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পশ্চাদপদতার জন্য ব্রাহ্মণদের এবং তাদের সংস্কৃতভিত্তিক ভাবধারাকে দায়ী করে।তিনি সেই সংস্কৃতির শিকড় সমূলে উৎপাটন করতে চেয়েছিলেন।শুধু তাই নয়, যেসব বিষয়ে ই ভি আরের নেতৃত্বাধীন ‘আত্মসম্মান’ আন্দোলন লাগাতার সংগ্রাম গড়ে তোলে সেগুলি হল মন্দিরে প্রবেশ, সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং রাস্তয় প্রবেশের অধিকার, অস্পৃশ্যতা বর্জন, তদুপরি ব্রাহ্মণ্যবাদ-জাতিব্যবস্থা-ধর্মের বিরোধিতা করা। এই আত্মসম্মানপন্থীরা ছিলেন ব্রাহ্মণ পুরোহিত ও ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী, ধর্মশাস্ত্র বিরোধী এবং ধর্মীয় বিশ্বদৃষ্টিকোণ ও রীতিনীতির বিরোধী তথা ধর্মীয় উৎসবের বিরোধী।

সবই আছে, কিন্তু প্রয়োগ কোথায় ? সুরক্ষা আছে, সুরক্ষার কবচও আছে – কার বাজুতে বাঁধা আছে সেই কবচ ? কেমন সেই কবচ ? একনজরে দেখে নিতে পারি সকলের অবগতের জন্য।তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতিদের উপর তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি নয় এমন কেউ যে যে নিপীড়ন চালানোর অপরাধে যেরকম শাস্তির বিধান আছে, সেগুলি হল – (১) যদি তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো ব্যক্তিকে কোনো অখাদ্য বা অপেয় বস্তু খেতে বা পান করতে বাধ্য করলে, (২) যদি তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো মানুষের বাড়ির উঠোনে বা আশেপাশে মলমূত্র, বর্জ্য পদার্থ, মরা পশু বা অন্যান্য আপত্তিকর বস্তু নিক্ষেপ করলে এবং এইভাবে সেই ব্যক্তিকে আহত, অপমানিত বিরক্ত করলে, (৩) যদি তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো মানুষের শরীর থেকে কাপড় খুলে নিলে, বা তাকে নগ্ন করে হাঁটায়, বা তার মুখে রং মাখিয়ে হাঁটায় বা এই ধরনের মানবিক মর্যাদা হানিকর অপর কোনো কাজ করলে, (৪) যদি তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো ব্যক্তির মালিকাধীন বা যথাসাধ্য কর্তৃপক্ষ তাকে যে জমি চাষ করার জন্য দিয়েছে সেই জমি অন্যায়ভাবে দখল করার চেষ্টা করলে বা সেই জমি হস্তান্তরিত করে নিলে,(৫) যদি তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো ব্যক্তিকে তার জমি বা বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করলে অথবা জমি, বাসস্থান বা জলের উপর যে অধিকার সে ভোগ করছে তা থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করলে, (৬) যদি তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো মানুষকে ‘বেগার’ বা অন্য কোনো ধরনের বাধ্যতামূলক শ্রম করতে বাধ্য করলে, (৭) যদি তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে বা না দিতে বাধ্য করলে অথবা আইনানুগ নয় এমনভাবে ভোট দিতে বাধ্য করলে, (৮) যদি তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো ব্যক্তির নামে মিথ্যা বা উদ্দেশ্যমূলক মামলা করলে, (৯) কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে এমন কোনো তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা বা সাজানো অভিযোগ করে যার ভিত্তিতে ওই সরকারি ব্যক্তি সেই  তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষটির কোনো ক্ষতি বা তাকে বিরক্ত করলে, (১০) প্রকাশ্য স্থানে কোনো  তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি ভুক্ত মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করে বা ভয় দেখায়, (১১) কোনো  তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মহিলাকে অসম্মান বা শ্লীলতাহানির জন্য ভয় দেখালে, (১২) নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে কোনো  তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মহিলার উপর যৌনশোষণ চালায়(এই ক্ষমতা না থাকলে মহিলাটি যৌনক্রিয়ায় রাজি হবে না), (১৩) তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্তদের ব্যবহার্য পুকুর, কুয়ো বা খালের জল দূষিত করলে এবং সেটাকে ব্যবহারের অযোগ্য করলে, (১৪) সর্বসাধারণের ব্যবহার্য যেসব স্থান অন্যরা ব্যবহার করে এবং তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতিদের সেগুলি ব্যবহার করতে বাধা দিলে, (১৫) কোনো তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি মানুষকে গ্রাম বা তার বাসস্থান ছাড়তে বাধ্য করলে – এইসব অপরাধের জন্য অপরাধীর ন্যূনতম ছয়মাস এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।

এখানেই শেষ নয়, যদি (১) তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি নয় এমন কেউ তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় (এটা জেনে যে ওই সাক্ষ্যের ফলে তার মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে), তাহলে এই অপরাধের জন্য তার যাবজ্জীবন সাজা এবং জরিমানা হতে পারে; এবং যদি এই ধরনের সাক্ষ্যের ফলে কোনো তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতির তালিকাভুক্ত ব্যক্তির সাজা ও মৃত্যুদণ্ড হয়ে যায় তাহলে মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারী ব্যক্তির সাজা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।(২) যদি অগ্নিসংযোগ করে বা বিস্ফোরক ফাটায় (এটা জেনে যে তাতে তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতির মানুষদের সম্পত্তির ক্ষতি হতে পারে) তাহলে ওই ব্যক্তির সর্বনিম্ন ছয়মাস সাজা হতে পারে বা সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।

রাষ্ট্রের কাছে গচ্ছিত আছে আপনাদের রক্ষাকবচ, আর আপনাদের কমণ্ডলুতে আছে ব্রাহ্মণ্যবাদের রক্ষাকবচ। ছুঁড়ে ফেলে দিন। একদা যে ব্রাহ্মণ্যবাদকে ঘিরে হিন্দুধর্ম পরিপূর্ণতা এবং পরিপুষ্টতা লাভ করেছিল, সেই ব্রাহ্মণ্যবাদের কারণেই হিন্দুধর্ম ক্ষয়িষ্ণুর পথে।ব্রাহ্মণ্যবাদই হিন্দুধর্মের আধার। এই ব্রাহ্মণ্যবাদ ধ্বংস নাহলে হিন্দুধর্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কালের স্রোতে।বহু বিভাজনে কোনো জাতি টিকে থাকতে পারে না। যতদিন না এক মন এক মত এক জাতি এক ধর্ম হবে ততদিন বিচ্ছিন্ন হতে হতে একটা জাতি অক্ষমের লড়াই করতে থাকবে আরএসএসের হাত ধরে।আক্ষেপের বিষয় হল এই যে, ব্রাহ্মণ্যবাদ যত-না মুষ্ঠিমেয় উচ্চবর্ণীয়রা অনুসরণ করে তার চেয়ে অনুসরণ করে তথাকথিত নিন্মবর্ণীয় বৃহৎ সংখ্যক মানুষেরা।অথচ বিবেকানন্দ থেকে জগজীবন রাম প্রত্যেকেই পইপই করে বলেছেন – ব্রাহ্মণ্যবাদ ধ্বংস করো, পুরোহিততন্ত্রের বিনাশ করো। শুধু ‘আমরা দলিত আমরা দলিত’ বলে চিৎকার করলে কিস্যু হবে না, ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদগুলি ইগনোর করতে হবে। সেইজন্যই জগজীবন রামের কথা স্মর্তব্য – “Any movement for social equaliy must be anti-Brahmin in character.” অর্থাৎ সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য যদি কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে  হয় তবে তা হতে হবে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী।“হিন্দুধর্মের যথার্থ নাম ব্রাহ্মণ্যবাদ, আর হিন্দুধর্ম হল প্রকৃতপক্ষে জাতব্যবস্থা। ব্রাহ্মণ্যবাদ ধ্বংস নাহলে ভারতে সমাজতন্ত্র আসতে পারে না (“Brahminism, which is the appropriate name for Hinduism, is nothing but Cast System. Socialism will not come to India without destroying Brahminsim” – V.T. Rajshekhar)।

ইগনোর করুন ব্রাহ্মণ্য-ব্যবস্থা।কীভাবে ইগনোর করবেন ? শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে ব্রাহ্মণদের নির্দেশ হলে এমন সব নির্দেশ অগ্রাহ্য করুন। কারণ তথাকথিত শাস্ত্র যা, শাস্ত্রের লিখন যা – তার সবই ব্রাহ্মণ-শাসক দ্বারা রচিত। যেমন – মন্ত্রপাঠ করে বিয়ে করা (রেজিস্ট্রি করে ম্যারেজ করুন, সামর্থ্য অনুযায়ী প্রীতিভোজ দিন )। শিশু প্রথম ভাত খাক এবং তা মামাই খাওয়াক (পুরোহিত আনবেন না), প্রীতিভোজও সামর্থ্য অনুযায়ী।পুজো করতে চাইলে আপনি নিজে করুন, পুরোহিতের প্রয়োজন নেই, মন্ত্রও লাগে না।প্রিয়জন বিয়োগে মৃতদেহ দাহ করুন বা মাটি দেন – এখানেই সৎকার শেষ করুন। হবিষ্যি খাওয়া, অশৌচ পালন, ধরা বাঁধা, মস্তক মুণ্ডনাদি ক্ষৌরকর্ম, পিণ্ডদান, ব্রাহ্মণভোজন, প্রীতিভোজ বাতিল করুন। সবচেয়ে উত্তম হয় যদি আপনার আত্মীয়ের মরদেহ মেডিক্যালে বিজ্ঞানের স্বার্থে দান করতে পারেন। উত্তম এই কারণে যে, মানুষের মৃত্যুর পর মরণোত্তর দেহদানের পর কী করণীয় তার কোনো শাস্ত্রীয় অঙ্গুলি-নির্দেশ বা বিধান নেই।তাই কোনো চাপও থাকছে না।অ-কার্যকর সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরোধিতা করুন, এ ব্যবস্থা আপনার কোনো কাজে লাগে না। এ ব্যবস্থা আপনাকে ভয়ানকভাবে চিহ্নিত করে যে, আপনি দুর্বল, অযোগ্য, আপনি ছোটোজাত, আপনি পরাজিতের দলে, আপনি অসুর-দৈত্য-দানো।যোগ্যতার মাপকাঠিতে সমস্ত ক্ষমতা অর্জন করতে হবে, মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে হবে, নইলে নয়।দয়া নয়, অর্জন করে নিতে হবে। আপনারা সংখ্যালঘু নন, আপনারাই সংখ্যাগুরু।

==========================================================

তথ্যসূত্র : ১. ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস – নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ২. বৌদ্ধ দর্শন – রাহুল সাংকৃত্যায়ন ৩. অলৌকিক নয় লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) – প্রবীর ঘোষ ৪. মুসলিম সমাজ কয়েকটি প্রাসঙ্গিক আলোচনা – মইনুল হাসান ৫. বাংলার সমাজে ইসলাম সুচনাপর্ব – অতীশ দাশগুপ্ত ৬. ব্রাহ্মণ্যবাদ – রণজিৎ কুমার সিকদার ৭. অনীক(অক্টোবর-নভেম্বর ২০০৫) ৮. আমি শূদ্র, আমি মন্ত্রহীন – কঙ্কর সিংহ ৯. মনুসংহিতা – সুরেন্দ্রচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১০. ক্ষমতা হস্তান্তর ও দেশবিভাগ – লাডলীমোহন রায়চৌধুরী ১১. অনীক (অক্টোবর-নভেম্বর ২০০৫) ১২. মানবাধিকার ও দলিত – দেবী চ্যাটার্জী, ১৩. শূদ্র জাগরণ – গৌতম রায়, ১৪. বর্তমান ভারত – স্বামী বিবেকানন্দ।

@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@









গ্রন্থ সমালোচনা “লিঙ্গপুরাণ”

--- পায়েল গুপ্তা

বইপোকা পাঠকরা বই পড়বেন এ আবার নতুন কথা কী ! কিন্তু সেই পাঠক যদি কোনো বিশেষ বই পড়ে আপ্লুত হয়, মুগ্ধ হয় এবং তা যদি সকলের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে চায়, তাহলে কি খুব অন্যায় হবে ? বইটি অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ-গ্রন্থ “লিঙ্গপুরাণ”। এটি প্রকাশ করেছে আরোহী প্রকাশন। ৮০ টাকা মূ্ল্যের এই গ্রন্থে মোট ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে সাতটি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে । “লিঙ্গপুরাণ” নামক প্রবন্ধে লিঙ্গ বিষয়ক যাবতীয় তথ্য স্ত্রী-পুরুষ-হিজড়া নির্বিশেষে তদুপরি কৃত্রিম লিঙ্গের ব্যবহারবিধি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এছাড়া লিঙ্গভেদে কীভাবে বাঙালি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল তাও জানা গেল। এখানেই শেষ নয়, কীভাবে যৌনজীবন সুখময় হতে পারে তারও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে “লিঙ্গপুরাণ : আদি ও অকৃত্রিম মহানায়কের উত্থান-পতন” নাম-প্রবন্ধে।ব্রাহ্মণরা তথা হিন্দুরাও যে একসময় পরম তৃপ্তি সহযোগে ভোজন করতেন সে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে প্রবন্ধকার “নিছক গোরুর রচনা এবং গোমাতা” প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ প্রবন্ধে এমন আরও অনেক সত্য উন্মোচিত হয়েছে । এই প্রবন্ধটি না পড়লে কত কিছুই-না অন্ধকারে থেকে যেত। ভাগ্যিস ! প্রবন্ধকার “পদবিনামার চালচলন” প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন পদবির বিবর্তন এবং উৎস নিয়ে। জানতে পারা গেল কীভাবে পদবির প্রচলন হল। জানতে পারলাম আদতে ব্রাহ্মণ কে বা কারা। জানা গেল ব্রাহ্মণ্যবাদের ব্যাখ্যা।‘লিঙ্গপুরাণ’ গ্রন্থটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ হল “একটি শাস্ত্রীয় ভাষা এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট”।এই প্রবন্ধে যাবতীয় মিথ ভেঙে প্রবন্ধকার বিশ্লেষণ করেছেন কীভাবে সংস্কৃত ভাষা সংস্কার হতে হতে সমৃদ্ধ হল, সাবালক হল। সংস্কৃত ভাষার গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সবকিছু রহস্য-আবরণ উন্মোচন করে দিয়েছে এই গ্রন্থটি।বাংলা-সংস্কৃত-লাতিন-জার্মান-ফরাসি-প্রাচীন ইংরেজি ইত্যাদি ভাষার শব্দের উৎস-তালিকাটি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ করেছে।

যাঁরা শিক্ষকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের প্রত্যেককে অনুরোধ করব এই মূল্যবান বইটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন এবং পড়ুন। অবশ্য প্রতিটি মানুষকেই এই গ্রন্থটি পাঠ করা উচিত।মানুষের অনেক কৌতূহলের অবসান ঘটাতে সক্ষম এই প্রবন্ধের সংকলনটি। বিষয় প্রকরণের প্রতি প্রাবন্ধিকের স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গি গদ্যের গঠনশৈলীতে এনেছে বাধাহীন গতি, যা কোনো সময়েই পাঠককে ক্লান্তিভারে আচ্ছন্ন করবে না। প্রাবন্ধিকের খোলামেলা লঘু ফুরফুরে মেজাজে আমাদের জ্ঞানের সমুদ্রে তলিয়ে রাখে। যতদূর জানি, অনির্বাণবাবু শুধু একজন প্রাবন্ধিকই নন -- তিনি একাধারে সু-কবি, গল্পকার, সাংবাদিক, সুচিন্তক, মগ্ন পাঠক, অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী। সর্বোপরি, দার্শনিক – ঋগবেদ, মনুসংহিতা, পুরাণ, বৌদ্ধদর্শন, রামায়ণ, মহাভারত থেকে আধুনিক সাহিত্য তাঁর রক্তজালিকার শিরায় শিরায় বহমান। এইসব কিছুর পথপ্রদর্শক, তার প্রতিফলন ও অজস্র তথ্য সমৃদ্ধ বইটি আমাদের সকলের পড়া উচিত। আমি পেশাদার গ্রন্থ সমালোচক নই। বইটি পাঠ করে আমার যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সেটাই আমার সকল বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করলাম।










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)