যুগান্তর মিত্র - মায়াজম

Breaking

২৯ জুল, ২০১৬

যুগান্তর মিত্র


                            পাগল ঠাকুর










পাগল ঠাকুরের সঙ্গে ভুবনের খুব ভাব। দুই অসম বয়সির এই ভাবের আদানপ্রদান নিয়ে অনেকেই অবাক। বিশেষ করে ভুবনের বাবা আর পাগল ঠাকুরের বাড়ির লোকজন। 
ভুবনের পুরো নাম ভুবন সোম। ওর বাবা পরিমল সোম সিনেমা-পাগল মানুষ। মৃণাল সেনের পরম ভক্ত। “মৃণালদা হলেন গে জিনিয়াস লোক। কী সব ছবি বানিয়েছেন গো !” এই হল তাঁর কথা। কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, তুমি মৃণাল সেনকে চেনো নাকি ? তাঁর সরল জবাব, “চিনি মানে সিনেমা থেকে যেটুক জানি আর কি। আলাপ নাই। দেখিও নাই কোনোদিন।” তা আলাপ নাই, দেখো নাই, তাঁকে মৃণালদা বলছ কেন ? “মৃণালদারে কেমন য্যান আপন-আপন লাগে। তাই মৃণালদা কই আর কি !” অকপট মন্তব্য তাঁর। যদিও এখন আর মৃণাল সেনের ছবি দেখার সুযোগই হয় না। 
বাড়ির দরজার উপরে একটুকরো টিনের মধ্যে লিখে রেখেছেন ‘একদিন প্রতিদিন’। বাড়ি বলতে দরমার বেড়া, উপরে টালির ছাউনি। তরিতরকারির বাজারে ভ্যান টানেন পরিমল। আলু, পেঁয়াজ যে দোকানি যেমনটা বলে তারই মাল টানেন। মাঝেসাঝে সিমেন্টের বস্তাও টানেন। তবে তা খুবই কম। আয় হয় সামান্যই! আজকাল পায়ে চালানো ভ্যানের কদর তেমন নেই। মটরচালিত ভ্যানেই গাদাগাদা মাল টানায় সবাই। তাই চিরকেলে মুলি বাঁশের বেড়ার ঘর আর পাকা হয়ে ওঠেনি। অবশ্য পরিমল সোমের এর থেকে বেশি চাহিদাও নেই বলেই মনে হয়।
নিজের পদবি সোম। তাই মৃণাল-ভক্ত পরিমলের যখন ছেলে হল, তখন জুতসই নাম রাখার সুযোগ পেলেন তিনি। ছেলের নাম রাখলেন ভুবন। এই নামটা রেখে নিজে বেজায় খুশি। সুযোগ পেলেই গর্বের সঙ্গে জানিয়ে দেন তাঁর ব্যাটার নাম ভুবন সোম। এমনকি মাঝেমাঝেই ছেলেকে ডাকেন, “ভুবন সোম, এদিকি আয় দিকি বাপ।” যেন গোটাটাই নাম, পদবি অন্যকিছু। সেই ভুবন সোমের সঙ্গে পাগল ঠাকুরের এত মিলমিশ পরিমল সোমের ভালো লাগে না মোটেই। 
পাগল ঠাকুরের একটু পরিচয় দেওয়া যাক। আমার জ্যাঠামশাই, নাম সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়। আমরা আড়ালে বলি সিধু জ্যাঠা। সামনে অবশ্য জ্যাঠামশাই বলেই ডাকার কথা। কিন্তু আমি তাঁকে কিছুই ডাকি না। পারতপক্ষে কথাই বলি না তাঁর সঙ্গে। কেউ কেউ অবশ্য সিধুবাবু, বা সিধে অথবা সিদ্ধি নামে ডাকত। কিন্তু এখন আর প্রায় কেউই এইসব নামে ডাকে না, এখন তাঁর নামই হয়ে গেছে পাগল ঠাকুর। 
দত্ত বাড়ির ‘কাজের মাসি’ বাতাসির মা বলে ‘সোনার গৌরাঙ্গ’। তার ভাষায়, ‘বড় ভালো মানুষ গো। শুধু একটু পাগল। আমাগো পাপতাপ হরণ করতে এয়েচেন।’ সেই বাতাসির মায়ের ভক্তি আর প্রাচারেই মূলত সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায় এখন পাগল ঠাকুর হয়ে গেছেন। প্রথম প্রথম পাগল ঠাকুর শুনলে ভুরু কোঁচকাতেন জ্যাঠামশাই। এখন গা-সওয়া হয়ে গেছে তাঁর এবং সবারই। ব্যাপারটা এমন হয়েছে যে তাঁর আসল নামও প্রায় সকলেই ভুলে গেছেন। 
অথচ পাগল বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু তিনি নন। বলতে গেলে পাগলামি তিনি কিছুই করেন না। কারো সঙ্গে পারতপক্ষে কথা বলেন না। একা-একাই নিজের মনে থাকেন। রাস্তায় রাস্তায় একা-একাই ঘোরেন। মাঝেমাঝে এলাকা ছেড়ে কোথায় যেন চলে যান। আবার নিজেই ফিরে আসেন। অনেকেই তাঁকে টিকিট কেটে ট্রেনে চাপতে দেখেছেন। তবে কোথায় যান জিজ্ঞাসা করলে কাঁধ ঝাঁকিয়ে এড়িয়ে যান। বাড়িতেও এ নিয়ে এখন আর কেউ কিছু জানতেও চায় না। জানার মধ্যে আমার বাবা আর আমাদের রান্নার বুলাদি। আমি বরাবরই জ্যাঠামশাইকে এড়িয়ে চলতাম। ফলে আমার জিজ্ঞাসার কোনো প্রশ্নই নেই। 
একবার পিয়নকাকু একটা চিঠি নিয়ে এলেন। বাবাকে বললেন, দেখুন তো মুখুজ্জেবাবু, এটা কার চিঠি। ঠিকানাটা তো আপনাদেরই। বাবা দেখলেন সরকারি অশোকস্তম্ভের ছাপমারা বন্ধখামে একটা রেজিস্ট্রি চিঠি সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের নামে। বললেন, চিঠিটা দিন। আমি দাদার হয়ে সই করে নিচ্ছি।
~ তার মানে ? এটা আপনার দাদার চিঠি ? 
~ হ্যাঁ, বললাম তো। 
~ আপনার দাদা ?
বাবা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসে থাকা জ্যাঠামশাইকে দেখিয়ে দিলেন। পিয়নের চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
~ পাগল ঠাকুরেরে নাম ? সরকারি চিঠি ...
বাবা গম্ভীরভাবে বললেন, হ্যাঁ, দাদার নাম। দাদা একসময় রাজ্য সরকারি চাকরি করতেন। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। বছর দশেক চাকরি করার পর একদিন ‘ধুত্তোরি’ বলে সব ছেড়ে চলে এলেন।
স্পষ্ট দেখতে পেলাম পিয়নকাকুর চোখমুখ থেকে ঝরঝর করে সম্ভ্রমের গুঁড়ো গুঁড়ো পরাগরেণু ঝরে পড়ছে।
~ তা উনি যদি নিজেই সই করে নেন। দ্বিধাকণ্ঠে পিয়নকাকু বললেন।
~ দাদার এখন মুড নেই। সই করবেন না। আপনি যদি আমাকে না-দিতে চান তো পরে আসুন। দাদার মুড থাকলে স্বাক্ষর করে দেবেন।
পিয়নকাকু আর কিছু না-বলে বাবাকে সই করিয়ে চিঠিটা বাবার হাতেই দিলেন। সম্ভ্রমবশত নাকি কর্তব্যের খাতিরে জানি না, জ্যাঠামশাইয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন।
~ সিদ্ধেরশ্বরবাবু, আপনার একটা রেজিস্ট্রি চিঠি দিয়ে এলাম।
পিয়নের মুখে বহুদিন বাদে নিজের নাম শুনেই হয়তো একবার তাকালেন তাঁর দিকে। তারপর ভাবলেশহীন মুখে তাকিয়ে থেকে বললেন, “বেশ”। 
~ চিঠিটা আপনার ভাইয়ের হাতে দিয়ে গেলাম।
জ্যাঠামশাই হাতজোড় করে নমস্কার জানালেন। মুখে একটিও কথা নেই। পিয়ন কোনোক্রমে সাইকেল দাঁড় করিয়ে পরম বিস্ময়ে প্রতিনমস্কার করলেন। পৃথীবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি দেখার মতো বিস্ময়ের রেখাপাত তাঁর মুখে। তারপর ধীরে ধীরে সাইকেল নিয়ে চলে গেলেন তিনি। 
জ্যাঠামশাইয়ের পাগল ঠাকুর নামটা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পেছনে তাঁর নিজের আচরণও অনেকটা দায়ী। তিনি লম্বা লম্বা পা ফেলে রাস্তায় একা একা হাঁটেন। সাদা পায়জামা পরা। কখনো খালি গায়ে, তো কখনো পাতলা ফতুয়া। গলায় কোমড় ছাড়িয়ে পৈতে ঝুলছে। কারো সঙ্গেই প্রায় কথা বলেন না। শুধু ভুবনের সঙ্গেই প্রাণখুলে কথা বলেন। কেউ কিছু বললে বা কুশল জিজ্ঞাসা করলে নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকেন। কিংবা কাঁধ ঝাঁকিয়ে এড়িয়ে যান। 
ভুবনের কোনো বন্ধু নেই। থাকার কথাও নয়। স্কুল, বাড়ি আর পাগল ঠাকুর। এই হল ওর রুটিন। আসলে ভুবনদের মতো ভ্যানচালকের ছেলের তেমন মাপের বন্ধুও হয় না। কারণ এ তল্লাটে ওর বাবার মতো পেশার লোক বড়-একটা নেই। যাও দু-একজন আছে, তাদের ছেলেপিলেরাও ভুবনের থেকে বড় কিংবা পড়াশোনা করে না। 
ভুবন সকালে বাড়িতেই পড়াশোনা করে। তারপর স্কুল থেকে ফিরে এসে কোনোক্রমে খেয়েই চলে আসে জ্যাঠামশাইয়ের কাছে। দুজনে মিলে সারা বিকেল ও সন্ধ্যা ঘুরে বেড়ায় এখানে-ওখানে। যেদিন জ্যাঠামশাই দূরে কোথাও যান, সেদিন ভুবনের মন খুব খারাপ থাকে। বারবার আমাদের বাড়ির দিকে চোখ রাখে। যদিও সে জানে জ্যাঠামশাই আজ সন্ধ্যার পরে ছাড়া ফিরবেন না। 
ভুবনের বাবা কতবার বারণ করেছেন ভুবনকে পাগল ঠাকুরের সঙ্গে মিশতে। ভুবন শোনেনি। “কত করি ভুবনরে কই পাগলের সাথে মিশিস না বাপ, এট্টু তফাত থাক, তা কথাই শোনে না। বলে কিনা খুব ভালো লাগে মিশতি। তোমরা ওনারে পাগল ভাবো ক্যান ? এট্টুও পাগল নয়। কত কিছু জানে। খুব জ্ঞানী। তা আমি বলি জ্ঞানী হলি কি পাগল হতি পারে না ? কে জানে, কী আছে আমার অদ্দিষ্টে।”
ভুবনের বাবার পাগল ঠাকুরকে নিয়ে সংশয় থাকলেও জ্যাঠামশাইয়ের কিন্তু ভুবনকে নিয়ে কোনো সংশয় নেই। ভুবনের উপর তাঁর খুব ভরসা। “তোকে অনেক বড় হতে হবে ভুবন। তোর নাম ভুবন। গোটা ভুবনের জ্ঞান যতটা পারিস নিজের মধ্যে সঞ্চয় করিস। তুই পারবি, ঠিক পারবি।”
জ্যাঠামশাই ভুবনের সঙ্গে নানা ধরনের গল্প করেন। আর ভুবন বাধ্য ছাত্রের মতো জ্যাঠামশাইয়ের সব কথা শোনে। নানা প্রশ্ন করে। পাগল ঠাকুর সেসব প্রশ্নের উত্তরও দেন ধৈর্য নিয়ে।





দত্ত বাড়িতে দিন শুরু হয় একটু দেরিতে। ফলে বাতাসির মা বাড়ির সব কাজ সেরে দেরিতেই কাজে যায়। বাতাসি স্কুলে গেছে। ফিরে এসে খাবে বলে রুটি-তরকারিও করা হয়ে গেছে। এমন সময় ঘরের বাইরে এক পুরুষ কণ্ঠের ডাক, বাতাসির মা, বাড়িতে আছো ? 
বাতাসির বাবা ওর মাকে ছেড়ে চলে গেছে বছর খানেক আগে। ঘরামির কাজ করত। বাতাসির মা বলতে অজ্ঞান ছিল সে। তা সেই লোকটাই একদিন খালপাড়ের মালতিকে নিয়ে সংসার পাতল আলাদা করে। বাতাসি তখন মাত্র তিন বছরের শিশু।
বাড়ি বলতে দরমার বেড়ার উপর টিনের চাল। চালার নীচে আবার বেড়া দেওয়া, যাতে গরমের সময় রোদের তাপ আটকায়। নিজে ঘরামি বলে খুব যত্ন নিয়ে ঘরটা বানিয়েছিল। একটা ঘর আর বারান্দা। বারান্দা আবার চৌকো ফাঁক-ফাঁক বেড়া দিয়ে ঘেরা। ভারি পছন্দ হয়েছিল বাতাসির মায়ের। 
সেদিনের কথা খুব মনে পড়ে তার। ঘর বানানোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। সন্ধ্যার একটু আগে বেরিয়ে গেল বাতাসির বাবা। খানিক বাদে ফিরে এল প্লাস্টিকের প্যাকেট ঝুলিয়ে হাতের আঙুলে। তাতে আছে কাগজের ঠোঙায় সিঙাড়া আর লাড্ডু। আর স্টিলের গ্লাশে কাগজ-চাপা দিয়ে চা।
~ এই নাও বাতাসির মা। এট্টু চা করো দিকি। চা-সিঙারা খাই। তার আগে লাড্ডু একটা করি খাও।
~ কী ব্যাপার গো ! উলাল লাগল যে বড় । চা তো আমরা বাড়িতে খাই না।
~ নতুন ঘর হল, একটু ইয়ে করতে হবে না ? ওই কী যেন বলে, উজ্জাপন। কেষ্টবাবুর বাড়ি হল। ঘটা রি তার উজ্জাপন হল। কত লোক খেল। তা আমরা গরিব বলে কি গিহপবেশ হবেনি ? নিজেরা-নিজেরাই খাব আর মজা করব।
সেই লোক কী হয়ে গেল ! ভাবে বাতাসির মা। 
বাতাসির বাবা চলে যাওয়ার পর অনেক পুরুষই নানাভাবে বাতাসির মার দিকে নজর দিয়েছিল, কিন্তু কোনো প্রলোভনেই সেই ফাঁদে পা দেয়নি সে। তাদের এমন সব কথা শুনিয়েছে যে তারা আর দ্বিতীয়বার এদিকে পা বাড়ানোর সাহস পায়নি। একজনকে তো বটি-দা নিয়েই তাড়া করেছিল মাঝরাতে। সে খবর জানাজানি হতেও বেশি সময় লাগেনি। এরপর থেকে আর কোনো পুরুষ মানুষের পা পড়েনি এ বাড়িতে। তাই হঠাৎ সকালবেলায় গম্ভীর পুরুষকণ্ঠের ডাকে চমকেই যায় সে। 
~ ও বাতাসির মা, ঘরে নেই নাকি ?
এবার সম্বিত ফেরে। গলাটা চেনা ঠেকে না, তাই ইতস্তত করে দরজা দিয়ে মুখ বাড়ায় সে। আর তারপরেই মহা বিস্ময় তার।
~ পাগল ঠাকুর যে !
~ এই নাও চা, চিনি, দুধ। একটু চা করো তো দেখি। বিস্কুট আনতে ভুলে গেছি। তা শুধু চা-ই খাবো। কী আর করা যাবে !
বিস্ময়ের পর বিস্ময়। বলে কি পাগল ঠাকুর ! তাড়াতাড়ি ঘোমটা টেনে মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে দূর থেকেই প্রণাম করে সে। 
~ করো কী, করো কী বাতাসির মা ?
~ আমার ঘরে স্বয়ং গৌরাঙ্গের পায়ের ধুলো পড়িছে। এট্টু পেন্নাম করি গো ঠাকুর।
~ মানুষ এত বড় হয় না যে তাকে প্রণাম করতে হবে। (এটা উৎপল দত্তের একটা ভালো সিনেমার ডায়লগ। সেটা বাতাসির মাকে বলে লাভ নেই। ভাবেন পাগল ঠাকুর।) 
~ আপনি মানুষ নয় গো ঠাকুর, আপনি হল গিয়ে দেবতা !
~ তা যাক গে, তোমার বিশ্বাসে আমি করাত চালাব না। তবে বলি, আর যাকে ভাবো, আমাকে কখনো দেবতা ভেবো না বাতাসির মা।
তারপর একটু থেমে বলেন, কই, একটু চা করো। আজ সকালে তোমার হাতের চা খেতে খুব ইচ্ছে করছে গো বাতাসির মা। 
~ কিন্তু ঠাকুর, আমাদের তো কাপ-ডিশ নাই।
~ আরে বাবা, জলের গ্লাশ আছে তো ! তাতেই দেবে। খাওয়া নিয়ে কথা। 
বাতাসির মা তাড়াতাড়ি স্টোভ ধরায়। একটা বাটিতে আন্দাজ করে জল বসায়। তড়িঘড়ি একটা ছেঁড়া মাদুর বারান্দায় পেতে দেয়।
~ এখেনে বসেন গো ঠাকুর। আমি তোমার জন্য চা করে দিই।
তারপর কাঁসার গ্লাশ বের করে চৌকির নীচ থেকে। কলতলায় গিয়ে ভালো করে মেজে ঝকঝকে করার চেষ্টা করে সে। দত্ত বাড়িতে নিয়মিত চা করার অভ্যেস আছে। তাই সহজেই চা করে কাঁসার গ্লাশে দেয় তার পাগল ঠাকুরকে। 
পাগল ঠাকুর চায়ের গ্লাশ হাতে নিয়ে চোখ বুজে চা-টা পান করেন। দেখেই বোঝা যায় পরম তৃপ্তি অনুভব করছেন তিনি। অস্ফুটে বেরিয়ে আসে আঃ শব্দ। 
এদিকে দেবতাকে অঞ্জলি দিতে পেরে তার ভক্ত বাতাসির মাও পরম তৃপ্তিতে চোখ বোজে। মনে মনে ভাবে আজ তার জীবন সার্থক হল।
~ বুঝলে বাতাসির মা, বহুদিন ধরে তোমার হাতের চা খাওয়ার ইচ্ছে ছিল। আজ খেতে পেয়ে কী যে ভালো লাগছে ! একদিন তোমার বাড়িতে মাছের ঝোল আর ভাত খাবো।
~ সে তো আমার পরম ভাগ্যি গো ঠাকুর। কবে আপনি খাবে, সেকথা বললিই হবে। আমি সব ব্যবস্তা করি রাখব’খন। 
এরপর আর কোনো কথা বলেন না তিনি। কিছুক্ষণ বসে থেকে সোজা উঠে চলে যান। আর ঈশ্বরের যাওয়ার পথের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে বাতাসির মা কপালে হাত ঠেকায়।
এই ঘটনা গোটা পাড়ায় জানাজানি হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ভক্তের বাড়িতে ভগবানের এই আগমন ফলাও করে বাতাসির মা-ই বলে বেড়িয়েছে। শুনে কেউ বলল, এ হল পাগলের খেয়াল। কারো মতে পাগল ঠাকুর এমন একজন মানুষ যে উচ্চনীচ ভেদাভেদ করেন না। তা না-হলে বাতাসির মায়ের মতো একজন কাজের মাসির বাড়িতে যেচে কেউ চা খেতে পারেন ? 
বিধবা বাতাসির মার বাড়িতে অকৃতদার পাগল ঠাকুরের যাওয়া নিয়ে অবশ্য অন্যরকম কথাবার্তা হয়নি। হওয়ার সুযোগও ছিল না। আসলে তাঁর অতীত-ঘটনা এখনও এই অঞ্চলের অনেকেরই মনে আছে। আর সেই কাহিনী ডালপালা ছড়িয়ে দিয়েছে কারো কারো কাছে। কোনো মহিলার প্রতিই পাগল ঠাকুর ফিরেও তাকান না। কোনো মহিলা কিছু জিজ্ঞাসা করলে তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে তার জবাব দেন। সেই তিনি বাতাসির মার বাড়িতে নিজে থেকে চা খেয়েছেন এ এক বিস্ময় অনেকের কাছে।
তখন তাঁর আটাশ-ঊনত্রিশ বছর বয়স। কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলেন না। অবশ্য কেন রাজি হচ্ছিলেন না তা তাঁর বাবা আর অল্প কয়েকজন আন্দাজ করতে পারছিলেন। তবু বাবা অনেক বলেকয়ে রাজি করান। মেয়ে অসম্ভব সুশ্রী। যারা বরযাত্রী গেছে, তারা তো দেখে মহা খুশি। সকলেই একবাক্যে বলেছে সিধুর রাজেন্দ্রাণীর সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু এইসব উচ্ছ্বসিত আলাপচারিতা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। গোটা রাস্তা ফুলসজ্জিত গাড়িতে গম্ভীর হয়ে বসেছিলেন সিদ্ধ্বেশ্বর। মাঝেমাঝে তাঁর উশখুশ ভাবও চোখ এড়ায়নি বরকর্তা পিসেমশাইয়ের। কিন্তু বিয়ে করতে যাওয়ার টেনশন ভেবে তা খুব-একটা গায়েও মাখেননি তিনি। গাড়ি থেকে নামার আগে নিয়মমতো বরণকুলা নিয়ে আসছিলেন হবু শাশুড়ি। তার আগেই সিদ্ধেশ্বর গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে ভেতরে চলে যান। কেমন যেন ছন্দপতন ঘটে যায়। হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন হবু শাশুড়ি। শঙ্খ হাতে মহিলারা হতবাক হয়ে পড়েন। ফটোগ্রাফারের দু-একটা আলোর ঝলকানির পর তাও থেমে যায়। 
পিসেমশাই হইহই করে ওঠেন। ‘ও সিধু, করো কি, করো কি’ বলে তিনি পিছন পিছন ছুটতে থাকেন।
~ আপনি একটু এদিকে আসুন পিসেমশাই। খুব দরকার।
বরাবরই একটু একগুঁয়ে প্রকৃতির বলে সিধুকে জানেন তিনি, তাই সিধুর ডাকে বুঝতে পারেন কোনো 
বিপদ সংকেত লুকিয়ে আছে। অস্বস্তি আর সংশয় নিয়ে সিধুকে অনুসরণ করে একটা ঘরের কোণের 
দিকে আসেন তিনি। 
~ শুনুন পিসেমশাই, আমি এ বিয়ে করতে পারব না।
~ সে কি কথা ! এসব কী বলছ তুমি ?
~ যা বলছি শুনুন। আমি বাবাকে বারবার বলেছিলাম আমার দ্বারা বিয়ে করা সম্ভব নয়। বাবা শোনেননি। বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছিলাম। আসার পথেই পাকা সিদ্ধান্ত নিলাম … 
~ তোমার কি অন্য কোথাও … কথা শেষ করার আগেই উত্তর চলে আসে।
~ না, সেসব কিছু নয়। বিয়ে করার জন্য যে মানসিক প্রস্তুতি দরকার একটা লোকের, সেটা আমার এই মুহূর্তে নেই। আর সেই মানসিক শক্তিও আমার নেই। ফলে …
~ সেকথা সকালে বলোনি কেন ? কিংবা এখানে আসার আগে ? তাহলে তো অপদস্ত হতে হত না আমাদের !
~ আমি অনেকবার ভেবেছি, কিন্তু স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। গাড়িতে ওঠার পূর্বমুহূর্তে একটা খবর পেয়ে আসার পথে সিদ্ধান্তটা নিলাম।
~ কী খবর ?
~ সেকথা আপনাকে জানানো যাবে না।
~ সে না হয় হল, কিন্তু এখন উপায় ? এই মেয়েটার কী হবে ? আমি তোমার বাবাকে কী বলব ? কীভাবে সবার সামনে এখন মুখ দেখাব ? এঁদের জানাবোই-বা কীকরে ?
~ এত প্রশ্ন একবারে করছেন কেন ? ধমকের সুরে বলে ওঠেন সিধু। প্রথম কথা হল এই মেয়েটার কী হবে তা ভাবার কথা আমার নয়। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিতে পারি, অন্য কারো নয়। দ্বিতীয় কথা হল বাবাকে কী বলবেন বা না বলবেন তা আপনার বিষয়, আমার নয়। আর আপনি সবার সামনে মুখ দেখাবেন নাকি মুখ ঢেকে রাখবেন তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি এখুনি এখান থেকে ফিরতে চাই। ব্যবস্থা করুন।
সিধুর একনাগাড়ে কথার তোড়ে পিসেমশাই থতমত খেয়ে যান। কিন্তু একদা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেন্দ্রপ্রসাদ নিজেকে দ্রুত সামলেও নেন। তারপর বলেন, তোমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যখন তোমার একার, তখন ফেরার ব্যাপারেও তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তোমার তো আমাদের ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই, তোমার ব্যাপারেই-বা আমরা ভাবব কেন ? 
একটানা কথাগুলি বলে তিনি যেন একটু হাঁপিয়ে পড়লেন। পাশের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়েন। এদিকে সিধুও সম্ভবত এমন উত্তর আশা করেননি। তাই খানিকটা স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। তারপর হনহন করে বেরিয়ে যান বিয়ের পোশাক পরেই।
ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মতো খবরটা চাউর হয়ে গেল গোটা বিয়েবাড়িতে। চাপা উত্তেজনা ও ফিসফাসের মধ্যে শুধু কয়েকজন মহিলার কান্নার দমক জেগে রইল যেন।
সিধুর তৃতীয় ভ্রাতা ব্রজেশ্বর বা ব্রজ ছুটে এলেন পিসেমশাইয়ের কাছে। বন্ধুবান্ধব নিয়ে তিনি বিয়ের আসরে বেশ মজায় সময় কাটাচ্ছিলেন। খবরটা তাঁর কানে পৌঁছোতেই তিনি তার সত্যতা জানতে এসেছেন। পিসেমশাইয়ের কাছে সব শুনে তিনিও স্তম্ভিত। মেয়ের বাবা ঋষিকেশবাবু পিসেমশাইয়ের সামনে কাঁচুমাচু হয়ে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। মুখ তাঁর বিমর্ষ। পাত্রীপক্ষের কেউ কেউ কটুকাটব্য করতেও ছাড়ছে না। এমনকি সিদ্ধেশ্বরকে কেন পালিয়ে যেতে দেওয়া হল, হাতের সামনে পেলে তারা যে তাঁর সঙ্গেই বুঝে নিত সেকথাও বলল কেউ কেউ। 
~ আপনি বাবাকে জানিয়েছেন পিসেমশাই ?
~ ঐ যাহ্‌, এমন বিপদে পড়লাম যে কিছুই মাথার ঠিক নেই।
~ আপনি তাড়াতাড়ি বাবাকে জানান। আমিও বাবা-মাকে জানাচ্ছি সব। আগে আপনার জানানোটা ভালো।
সুরেন্দ্রনাথ শশব্যস্ত হয়ে মেয়ের বাবাকে বললেন ফোনের কথা। তিনি বারান্দায় যেখানে ফোন রাখা আছে সেখানে নিয়ে গেলেন তাঁকে। সুরেন্দ্রনাথ সংক্ষেপে ঘটনাটা জানালেন। ও পাশ থেকে কী কথা হল বোঝা গেল না। তবে তাঁর থমথমে মুখ দেখে বোঝা গেল ওদিকেও বেশ টানাপোড়েন চলছে। ব্রজেশ্বরও সেখানে এগিয়ে গেলেন। তিনিও সামান্য কিছু সময় বাবা-মার সঙ্গে কথা বললেন। নীচু গলার কথাবার্তার মধ্যে একটু জোরে শেষ যে কথাটা শোনা গেল তা হল, হয় সম্ভাবনা এক, নয়তো দুই। দুটোর মধ্যে একটা বেছে নিতে হবে। সেটা যে কী বোঝা গেল না তাঁর মুখ দেখে। 
~ সুরেন্দ্রবাবু, কিছু একটা করুন। আমি যে আর ভাবতে পারছি না।
ঋষিকেশবাবুর অনুনয় শুনে সুরেন্দ্রনাথের মাথা যেন আরও ঝুঁকে পড়ল নীচে। পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রজেশ্বরও। তিনি হাতজোড় করে মেয়ের বাবাকে বললেন, আমার দাদার এই আচরণের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। 
~ শুধু ক্ষমা চাইলেই তো আর মেয়েটার কোনো হিল্লে হবে না ! পাত্রীপক্ষের কোনো একজনের তীর ছুটে এল। হাতটা তুলে ব্রজেশ্বর যেন সেই তীরের গতি রোধ করার চেষ্টা করলেন। 
~ আমি একটা উপায় ভেবেছি। আপনারা আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিন। তারপর আপনাদের সঙ্গে কথা বলব। প্লিজ, এইটুকু সাহায্য আমাকে করুন।
~ দেখো বাবা, যা হোক একটা উপায় বের করো।
~ আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে একটু কথা বলে তারপর আপনাদের জানাব। একটু আলাদা করে কথা বলতে দিন। আপনাদের ভয় নেই, আমি পালাব না। সন্দেহ থাকলে আপনারা আমার দিকে নজর রাখতে পারেন।
তিন-চারজন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে মেইন গেটের থেকে একটু তফাতে গিয়ে দাঁড়ালেন ব্রজেশ্বর। কোনো ব্রাহ্মণ বন্ধুই চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। দূর থেকে দেখা গেল হাত নেড়ে সবাই কীসব আলোচনা করছেন। মেজোভাই গোপেশ্বরও সেখানে উপস্থিত। সংসারে কোনো কোনো সদস্য থাকেন যিনি কোনো ব্যাপারেই নিজেকে জড়ান না, আলগোছে থাকেন। এঁরা হলেন পরমহংস। সংসারের কোনো পাঁকই গায়ে লাগতে দেন না। মেজোভাই সেইরকমই একজন। নিজের পছন্দে বিয়ে করে তিনি ইতিমধ্যেই আলাদা থাকেন। এখানেও তিনি সবই শুনছেন। কিন্তু সমাধানের ক্ষেত্রে কোনো মতামত দিচ্ছেন না। 
পাঁচ মিনিট নয়, প্রায় মিনিট দশেক পর তাঁরা ফিরে এলেন। ব্রজেশ্বর বললেন, আর এক মিনিট। বলেই নীচুস্বরে পিসেমশাইয়ের সঙ্গে কথা বললেন। সুরেন্দ্রনাথের চোখেমুখে আলো ছড়িয়ে পড়ল। তিনি প্রায় চিৎকার করে উঠলেন, ওহ্‌, বাঁচালে বাবা ! এর চেয়ে ভালো সমাধান আর কিছু হতেই পারে না।
উৎসুক চোখ এবার এঁদের দুজনের দিকে। সমস্ত জটলা এক নিমেষে যেন থেমে গেল। ব্রজেশ্বর সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। পঞ্চাশ-ষাট জনের ভিড় তাঁর সামনে। যেন এক দক্ষ যাদুকর যাদুর ভেলকি দেখাবেন। এঁরা তার দর্শক।
~ দেখুন, আপনারা জানেন যে আমি একটি বিদেশি ব্যাঙ্কে চাকরি করি। একটা ভদ্রস্থ মাইনে পাই। আমার দাদার কৃতকর্মের জন্য বা বলা ভালো অবিমৃশ্যকারিতার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এই অবস্থায়, আপনারা যদি চান তো আমিই এই বিয়েটা করতে পারি। আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। পিসেমশাইয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমার বাবা-মার সাথেও ইতিমধ্যেই কথা বলে নিয়েছি। এটা আমার প্রস্তাব। এবার আপনারা বিবেচনা করে দেখুন। 
ইচ্ছে করেই ব্রজেশ্বর তাঁর বক্তব্যকে অনেকটা ভাষণের মতো করে উপস্থাপন করেছেন। কৃতকর্ম, অবিমৃশ্যকারিতা ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগ করে গুরুগম্ভীর করে তুললেন ব্যাপারটা। তিনি জানেন শব্দের বাঁধুনি দিয়ে অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হল। অনেকটা সাধু সাধু রব যেন। তাঁর মধ্যেই খানিকটা সংশয়ের বাতাসও যেন বয়ে গেল।
~ আপনারা একটু সময় নিন। আপনাদের মেয়েকে জিজ্ঞাসা করুন সে এই প্রস্তাবে রাজি হয় কিনা।
~ হ্যাঁ হ্যাঁ, রাজি হয়ে যাবে। এ তো অতি উত্তম প্রস্তাব। মেয়ের মামা বলে উঠলেন। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন হয়তো, ব্রজেশ্বর তাঁকে থামিয়ে দিলেন।
~ আমার মনে হয় মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করে, অন্য সকলের মতামত নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত জানানো ভালো। তাছাড়া লগ্ন শেষ হতে এখনও ঢের দেরি আছে। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন আপনারা। 
কিছুটা ম্রিয়মাণ হয়েই তিনি ভেতরের দিকে পা বাড়ালেন। সঙ্গে ডেকে নিয়ে গেলেন তাঁর জামাইবাবু ঋষিকেশবাবুকে। প্রথমটায় হতভম্ব হয়ে পড়া বাবা এবার যেন সম্বিত ফিরে পেলেন।
~ হ্যাঁ হ্যাঁ, চলো। ভেতরে গিয়ে একটু পরামর্শ করা যাক।
অনেকেই এ ঘর থেকে সরে গেলেন ভেতরের ঘরের দিকে। কেউ কেউ অবাক বিস্ময়ে দেখতে থাকলেন ব্রজেশ্বরের দিকে। বিষয়টা একটু অস্বস্তিকর বলে ব্রজেশ্বরও তাঁর বন্ধুদের নিয়ে রাস্তার দিকে পা বাড়ালেন। সেখানে সিগারেট টানতে টানতে আকাশের তারা, এলাকার ঘরবাড়ি ইত্যাকার অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে লাগলেন বন্ধুদের সঙ্গে।







কালো পাঞ্জাবি, কোঁকড়ানো চুল, সোনালি ফ্রেমের চশমা-পরা গোলগাল চেহারার একজন যুবক খানিক বাদে ওঁদের কাছে এগিয়ে এলেন।
~ নমস্কার ! আমি পাত্রীর দাদা, মানে সুবর্ণা আমার পিসতুতো বোন।
~ নমস্কার !
সকলের জিজ্ঞাসু চোখ তাঁর দিকে। তিনি যে শুধু পরিচয় করতে আসেননি বোঝাই যায়। পিসতুতো বোন, মানে ইনি পাত্রীর মামাতো দাদা। কর্তাব্যক্তি মামারই ছেলে কিনা জানা গেল না।
~ হ্যাঁ বলুন। ব্রজেশ্বরের বন্ধু বিমল কথাটা ছুঁড়ে দিলেন। 
~ মানে বলছিলাম কি, সুবর্ণা আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চায়। আপনি যদি একা এই ঘরে আসেন। মানে একটু কথা বলে নিতে চায় আমার বোন আর কি। মানে ...
ব্রজের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন। মানে, একটু, যদি ইত্যাদি শব্দে বোঝা যায় তিনি নিজেই একটু সংশয়ে আছেন।
~ হ্যাঁ চলুন। তোরা এখানেই দাঁড়া।
শেষের কথাটা বন্ধুদের বলে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে তাঁর পিছন পিছন গেলেন ব্রজ। যে ঘরে একটু আগে ব্রজেশ্বররা ছিলেন, তার পাশের একটা ছোট্ট ঘরে তাঁকে এনে সেই মামাতো দাদা বললেন, আপনি একটু বসুন এখানে, আমি বোনকে ডেকে আনছি।
চিত্রনাট্য যেন প্রস্তুতই ছিল। কথা শেষ হওয়ার আগেই সুসজ্জিতা সুবর্ণা ঘরে ঢুকলেন। ‘তোরা কথা বল, আমি আসছি’ বলে দাদাটি বেরিয়ে গেলেন। সুবর্ণা জানালার দিকে মুখ করে কথা বলা শুরু করলেন।
~ আপনার প্রস্তাবটা আমি শুনলাম। বেশ লাগল। 
তারপর নীরবতা। ব্রজেশ্বর বুঝতে পারছেন না প্রস্তাবটাতে সুবর্ণা রাজি কিনা। নাকি সামান্য শ্লেষ মিশে আছে তাঁর কথায়। এও বুঝতে পারছেন না যে এর উত্তরে কী বলবেন। সুবর্ণাই পরের কথাটা বললেন।
~ আপনার প্রস্তাব বা ইচ্ছেতে রাজি না-হওয়ার কোনো কারণ নেই। তার আগে একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে।
প্রথমটায় ব্রজেশ্বরের শরীরে বিদ্যুৎরেখা খেলে গিয়েছিল। কিন্তু পরক্ষণেই একটা শীতল হাওয়ার ঝাপট এসে লাগল। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললেন, বলুন কী জানতে চান ?
~ আপনি কী আমাকে করুণা করছেন ?
বিদেশি ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্তা ব্রজেশ্বর এইরকম একটা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তবে পেশাদারি জগতে সফল বলে তিনি জানেন এক্ষেত্রে কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, কীভাবে ভাবার সময় বের করতে হয়।
~ তার মানে ? ঠিক বুঝলাম না।
যখন বক্তা ব্যাখ্যা করবেন তার মধ্যেই মনে মনে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার এটা একটা কৌশল। 
~ না, বলছিলাম, দাদা বিয়ে করতে রাজি হলেন না, ভাই যেচে রাজি হয়ে গেলেন ! এর মধ্যে কি অন্য কোনো ভাবনা কাজ করছে ? যেমন আমি লগ্নভ্রষ্টা হব, আমার পরিবার-পরিজন চরম আতান্তরে পড়েছে, সেখান থেকে তাঁদের রক্ষা করা, নিজেদের পরিবারের সম্মান রক্ষা এইসব ভেবেই এগিয়ে এলেন কিনা তাই জানতে চাইছি।
এতটা কঠিন প্রশ্ন ছুটে আসবে ভাবেননি ব্রজেশ্বর। তবে নানা পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকায় দ্রুত ইনসুইং বলে ব্যাট ঘুরিয়ে বল ঠেলে দিলেন বাউন্ডারিরদিকে।
~ সেভাবে কিছু ভাবিনি। তবে দাদা আচমকা এমন কাণ্ড করায় আমি ভেবে ভেবে এটাই সেরা সমাধান মনে করেছিলাম। পাত্রী হিসাবে আপনি যথেষ্ট উপযুক্ত এটাও আমার মাথায় ছিল। আর আমিও যে পাত্র হিসাবে মন্দের ভালো সেকথা আশা করি মানবেন। তবে এটুকু বলতে পারি, হিরো সাজার বাসনা আমার মনে উদয় হয়নি একটুও।
এতক্ষণ জানালার দিকে মুখ করে বা অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছিলেন সুবর্ণা। এবার সরাসরি ব্রজেশ্বরের মুখের দিকে তাকিয়েই কথা বললেন।
~ হিরো আপনি ইতিমধ্যেই হয়ে গেছেন। ... আমি আসছি।
কথাটা শেষ করেই দ্রুত চলে গেলেন সুবর্ণা। ব্রজেশ্বর বুঝে উঠতে পারলেন না সুবর্ণা অরাজি, নাকি নিমরাজি, নাকি পুরোপুরি রাজি হলেন বিয়ে করতে ! শীতের প্রাবল্যেও কপালের দুপাশে কি একটু স্বেদবিন্দু দেখা দিচ্ছে তাঁর !
মামাতো দাদা এসে গেলেন এইসব ভাবনার মধ্যেই। ‘আপনার ধুতিটা এনে দিচ্ছি, এই ঘরেই চেঞ্জ করে নিতে পারেন’ এই কথা বলেই বেরিয়ে গেলেন তিনি। এভাবেই সুবর্ণার মতামত কিছুটা জেনে গেলেন ব্রজেশ্বর। তবে বিয়ের আসরে সুবর্ণার আচরণে বুঝতে বাকি রইল না তাঁর মনোভাব। তিনি যে সানন্দেই এই বিয়েতে রাজি হয়েছেন তা ভেবে নিলেন ব্রজেশ্বর। 
ব্রজ একবার ভাবলেন জিন্স-টি শার্ট পরে বিয়ে করা যায় না ? নিজের মনেই হেসে নিলেন খানিকটা। এটা বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। 
তারপর যথাবিহিত ২৬ বছরের ব্রজেশ্বরের সঙ্গে ২৩ বছরের সুবর্ণার বিয়েটা হয়ে গেল। শেষ রাতে বিয়েপর্ব মিটে যাওয়ার পর, তিনি যখন নববধূর সঙ্গে আপ্যায়নের আসরে খেতে বসলেন, তখন মেনুকার্ডের বাঁদিকে ‘সিদ্ধেশ্বর ও সুবর্ণার শুভ পরিণয়’ লেখার উপর তাঁর চোখ আটকে গেল। তিনি কার্ডটা পাইপের মতো গোল করে টেবিলের একপাশে ঠেলে সরিয়ে দিলেন।
সেমসয় মেনুকার্ডের চল খুব-একটা ছিল না। কোনো কোনো পরিবার মেনুকার্ড ছাপাত। এই দুই পরিবারের শিক্ষা, প্রতিপত্তি, আধুনিকতার সঙ্গে মেনুকার্ড বেশ মানানসই ছিল। কিন্তু নাম বদলটা তাতে যেন চরম বিদ্রুপ হয়ে থেকে গেল।





বিয়ের আসর থেকে সিদ্ধেশ্বর সোজা চলে গেলেন তাঁর পিসিমার বাড়িতে। হাতিবাগানের বনেদি বাড়িতে একদা একান্নবর্তী পরিবার ছিল। এখন কয়েক টুকরো হয়ে গেছে। পিসিমার এক দেওর মারা গেছেন কয়েকদিন আগে। তাই কালাশৌচ বলে বিয়েবাড়িতে তাঁরা কেউ যাননি। মধ্যরাতে সিদ্ধেশ্বরকে দেখে পিসিমা ও তাঁর ছোটো ছেলে বিস্মিত। তাও আবার বিয়ের পোশাকে। তারপর তাঁর মুখেই ঘটনার কিছুটা শুনলেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত সে সম্পর্কে কিছুই বললেন না। তাঁরা জানেন সিদ্ধেশ্বর বরাবরই খামখেয়ালি। তাঁর যে বিয়ের ব্যবস্থা করা ঠিক হয়নি একথাই মনে হল তাঁদের। 
যে ঘরে সিদ্ধেশ্বরকে ঘুমাতে দিয়েছেন, সেখানেই বাড়ির ল্যান্ড ফোন। তাছাড়া এত রাতে এই ব্যাপারে ফোন করতেও তাঁর ছেলেকে বারণ করে দিয়েছেন পিসিমা। পরদিন খুব ভোরে সিদ্ধেশ্বরকে না-জানিয়ে ছোটো ছেলে এ বাড়িতে এসে গতরাতের ঘটনার অনুপুঙ্খ জেনে ফিরে গেলেন। সেই সঙ্গে এ বাড়ির সকলেই জেনে গেল যে সিদ্ধেশ্বর বড় পিসিমার বাড়িতে আছেন। অবশ্য বাড়ির প্রায় সকলেই জানেন, সিদ্ধেশ্বর চেনাজানা কারো বাড়িতেই থাকবেন। বাড়ি ছেড়ে এখানে-ওখানে চলে যাওয়া সিদ্ধেশ্বরের কাছে নতুন কিছু নয়। কিশোর বয়স থেকেই কাউকে কিছু না-বলে হুট করে কোথাও চলে যাওয়া তাঁর অভ্যেস। সম্প্রতি বেশ কিছুদিন যাচ্ছেন না এটা ঠিক। তবু তাঁর এই স্বভাবের জন্য তাঁর অন্তর্ধান নিয়ে খুব চিন্তিত কেউই প্রায় ছিলেন না। 
সন্ধ্যায় নববধূ সুবর্ণাকে নিয়ে ঘরে এলেন ব্রজেশ্বর। তাঁর আগে ফোন করে বাবাকে বলে দিয়েছেন দাদা যেন কোনোভাবেই বাড়িতে না-থাকেন। যে মেয়ে তাঁর বউ হতে পারতেন, তিনি এখন তাঁর ভ্রাতৃবধূ। সুতরাং তাঁর সামনে ব্রজেশ্বররা দাঁড়াতে চান না একথা স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন তিনি। 
তাঁর বাবা বিভূতিভূষণও পিসিমার বাড়িতে ফোন করলেন। তিনি তাঁর বড়দিকে ফোনে জানিয়ে দিলেন সিদ্ধেশ্বর যেন আপাতত এ বাড়িতে না-আসে। ব্রজেশ্বর এর মধ্যেই কোথাও ফ্ল্যাট কিনে চলে যাবে বা সিদ্ধেশ্বরকেই অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করা হবে এইরকম বিষয়ও আলোচনা করে নিলেন তাঁর বড়দির সঙ্গে। অন্তত মাস খানেক তো এ ব্যাপারে সময় লাগবেই। সিধুকে যেন এই ব্যাপারটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন তাঁর বড়দিরা, তাও জানিয়ে দিলেন। 
মাসখানেক নয়, সিদ্ধেশ্বর বাড়িতে ফিরলেন প্রায় মাস সাতেক পরে। সেই ঘটনার পর পিসিমার বাড়িতে আর এক রাত ছিলেন সিদ্ধেশ্বর। পরদিন ভোরেই বালিশের নীচে একটা চিঠি লিখে তিনি চলে গেলেন।
পূজনীয় পিসিমা,
আমি চললাম কিছুদিনের জন্য। অহেতুক আমাকে খোঁজাখুঁজি করে লাভ হবে না। পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ারও কোনো দরকার নেই। যদিও সে সম্ভাবনা কমই। তবু বলে রাখলাম। যথাসময়ে আমি ফিরে আসব। 
ইতি 
প্রণত সিধু 
সিদ্ধেশ্বর তখন একটা এমএনসিতে চাকরি করতেন। কিছুদিন তিনি এখানে চাকরি করেছেন। এই সময়ই তাঁর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। পরে অবশ্য রাইটার্স বিল্ডিংয়ে সেচ দপ্তরের অফিসার পদে যোগ দিয়েছিলেন। যাই হোক, ব্রজেশ্বরের বিয়েপর্ব মিটে যাওয়ার পর সেজো ভাই গোপেশ্বরকেই সবাই বুঝিয়েশুনিয়ে বড়দার খোঁজ নেওয়ার ব্যাপারে রাজি করালেন। গোপেশ্বর বড়দার অফিসে একদিন খোঁজ নিতে এলেন। পিসিমার বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার খবর পাওয়ার পরই ঠিক হয়েছিল বিয়ের কাজ মোটামুটি মিটে গেলে সিদ্ধেশ্বরের খোঁজ নেওয়া হবে। খোঁজ নিতে এসে অবশ্য তেমন আশাব্যঞ্জক কিছু জানা গেল না।
~ আপনি মুখার্জিদার ভাই ?
~ হ্যাঁ, দাদার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। 
~ আপনার দাদা তো ছুটিতে আছেন। অফিসে আসেননি তো !
ইউনিয়নের সেক্রেটারি তরফদারবাবু এগিয়ে এলেন। প্রায় মধ্যবয়সী। কানের দুপাশে সাদা চুল। চোখে চশমা। মুখে চালাক-চালাক ভাব থাকে সবসময়। 
~ তোমার দাদার ব্যাপারটা কী বলো তো ভাই ? তুমি বললাম বলে কিছু মনে করলে না তো ?
~ না না, ঠিক আছে।
~ তা বেশ। বলছি বিয়েটা নিয়ে কী গোলমাল হল বলো তো ? আমাদের বৌভাতের নেমত্তন্ন ছিল। বিয়ের জন্য ১৫ দিনের ছুটিও নিয়েছিল, তা যেদিন বৌভাত হওয়ার কথা সেদিনই সকাল-সকাল অফিসে এসে হাজির !
~ আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, কী হে মুখুজ্জে, বৌভাতের দিন, বাড়িতে হইচই। তা কী মনে করে তুমি এই সময় ?
কথাটা বললেন সিদ্ধেশ্বরের আর-এক কলিগ। তারপর বললেন, তা বলে কিনা বিয়েটা আমার হয়নি। পরে একসময় বলব। এখন একটু ব্যস্ত আছি। তোমাদের আজকের বৌভাতের নিমন্ত্রণ বাতিল করলাম। কিছু মনে কোরো না। তারপর ড্রয়ার থেকে চেক বইটা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে চলে গেল। 
এরপর নানা প্রশ্ন, উত্তর আর কথোপকথনে সেদিনের ঘটনা মোটামুটি জেনে গেল সিদ্ধেশ্বরের অফিস। আর গোপেশ্বর জেনে গেলেন, দাদার খবর অফিসের কেউই জানেন না। শুধু বলে গেছেন কিছুদিন পরে আসবেন। কতদিন বাদে সে ব্যাপারেও কেউ কিছু বলতে পারলেন না স্বাভাবিকভাবেই। 
দিন কুড়ি পর বাড়িতে নিজেই ফোন করলেন সিদ্ধেশ্বর। জানালেন তিনি নিয়মিতই অফিস করছেন। কলেজস্ট্রিটের কাছে এক মেসে থাকেন। তাঁকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ভালোই আছেন। ইত্যাদি।
ফোনটা ধরেছিলেন তাঁর বাবা। সিদ্ধেশ্বর একে-একে বাড়ির সবার খোঁজ নিলেন। শুধু সেজো ভাইটির কথা একবারও উচ্চারণ করলেন না। আগবাড়িয়ে বাবাই জানিয়ে দিলেন ব্রজ আর বউমাও ভালোই আছে। দিন সাতেক বাদে ব্রজ ভিলাইতে চলে যাচ্ছে। সেখানে তাঁর চাকরির ট্রান্সফার হয়েছে। যে-কথা বললেন না, সেটা হল, এবার তুই বাড়িতে ফিরতে পারিস। আর কোনো বাধা রইল না। সিদ্ধেশ্বরও সে-কথা বিলক্ষণ বুঝেছেন। তিনি সামান্য নীরবতার পর বললেন, এখন রাখছি বাবা। আগামী মাসে একবার বাড়িতে যাব। তোমরা সবাই ভালো থেকো। ‘তুইও ভালো থাকিস’ এ কথাটা বলার সুযোগ পেলেন না। তার আগেই সিদ্ধেশ্বর ফোন কেটে দিলেন। 
পরের মাসে নয়, সিদ্ধেশ্বর ফিরলেন প্রায় সাত মাস পরে। মেসে খেয়েই হোক বা অনিয়মের জন্যই হোক, পেটের সমস্যা বাঁধিয়ে ঘরে ফিরলেন তিনি। চেহারার পারিপাট্য সামান্য টাল খেয়েছে। কেউ কেউ রটিয়ে দিয়েছিল সিধু নাকি সন্ন্যাস নিয়েছেন। কেউ আবার নাকি হরিদ্বারে বেড়াতে গিয়ে তাঁকে সাধুর বেশে দেখেওছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁর বাড়ি থেকে যতই বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে তিনি কলকাতায় মেসে থেকে দিব্যি অফিস করছেন, এ কথা কেউ মানতে চায়নি। বিয়ের পিঁড়ি থেকে চলে গেছেন তো সন্ন্যাস নেবেন বলেই, এমন বদ্ধমূল ধারণা প্রচার হয়ে গেল আশেপাশে। সিদ্ধেশ্বর ফিরে আসার পর তাঁর কানেও এমন সম্ভাবনার কথা এসেছে। তিনি জবাব এড়িয়ে মনে মনে হেসেছেন। এই প্রশ্রয়ই আরও নানা ডালপালা ছড়িয়েছে। এর পাশাপাশি তাঁর নানা আচরণ তাঁর পাগলামোর পরিচয় দৃঢ় করেছে। পরবর্তীতে তিনি যে পাগল ঠাকুর নামে পরিচিত হন তাঁর পিছনে তাঁর এহেন আচরণও দায়ী।


ক্রমশ;

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র