অভিমন্যূ
উফফ তখন শালা কালুটাকে বলেছিলাম, এই খোচোর গলিতে ঢুকিস না… রস তবু কম না… লাজো! লাজো! লাজো না ছাতা… শালা একের নম্বরের উদ্গান্ডু মাল… যেমন বুক তেমন পাছা… শালা বমি উঠে আসছিল… কিন্তু ভেবে করবটাই বা কি? বেঁচে বেরোই আগে… পাছা ছিল বটে রমিতার… মাইরি দুলে দুলে যখন যেত… মনে হতো পুরো তানপুরো… ম্যাকেনাস গোল্ড-এ ও রকম এক পিস তানপুরো দেখেছিলাম মাইরি… রমিতাকে বলতেই শালি ঢলে পড়েছিল গায়ের উপর খিল খিল করে… তারপর কোনদিকে যে ঢলল… য্যাগগে ‘গতোস্য শোচনা নাস্তি’… অবশ্য এখন যদি বেরোতে না পারি ও সব বোকাচোদার মত সংস্কৃত কপচে কি করব?
অবশ্য এ রকমটা কি হবার কথা ছিল? যখন এসেছিলাম শালা আকাশের তারা পর্যন্ত বলছিল, “রাজু আজ তোর দিন বে… লুটে লে লুল্লু…”
মেজাজটা একদম চটে গেল…আমার নাম কা ওয়াস্তে বাপটাই মাইরি যত নষ্টের গোড়া… কে যে শালা এতো পড়াশুনো করতে বলেছিল… দিন রাত শুধু বই আর বই… ভাঁটের বাপের ভাঁটের বই ছাড়া কোনোদিকে তাকাবার সময় ছিল না… বউ তো ফালতু সময় কাটাবার গোঁজ… বাপের বউটাও মাইরি কি ছেনাল কি ছেনাল… এর ওর তার সঙ্গে দরজায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দেবে…
দেওরগুলোর আদর যত্ন করবে আর আমাকে ‘বেজন্মা’ বলে গাল পারবে শালি রেন… …যেন ওর খাই, পড়ি আমি…
অথচ, আমার মা কিন্তু অমন ছিল না… আমায় কত বার বলত,
-বাপি, বড় হলে কিন্তু বাবার মতো অনেক পড়তে হবে রে সোনা…
তখন কিন্তু বাবাই আমার চোখে হিরো ছিল… মাথা উঁচু করে বলতাম,
-আমি আশুতোষ মুখুজ্জের ছেলে, বিশ্বতোষ…
একডাকে সবাই চিনতো। আমি তখন কাঁধে ব্যাগ আর জলের বোতল ঝুলিয়ে ইস্কুল যেতাম… মাষ্টারগুলো ভালো বাসত বেশ… পড়াশুনোয় ভালো ছিলাম তো… গন্ডগোলটা শুরু হলো মাকে যখন কাল রোগে ধরল… বাবা ঘাবড়ে গেসল… বাহ্যিক ব্যাপারে তো জ্ঞান ছিল না কখনোই… মামাদের ডেকেছিল… ফতুর হয়ে গেছিল… ইন্সুরেন্সের ধার ধারে নি। মা যাবার সময় আমাদের আলোটাকেই নিয়ে চলে গেছিল…
বাবাটাও কেমন হয়ে গেল… আমার দিকে তাকাতোও না… একবার আমার জ্বর হয়েছিল তখন আঠেরো হয়েছি… ধূম জ্বর… উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া হল না… বাবার কোনো পরোয়া ছিল না… সন্ধ্যা মাসিকে বলেছিল একটু দেখো… তা সে আমায় দেখতে এসে কি দেখালো কে জানে… বাপ মালটা ওই খানকিটার পিছনেই বয়ে গেল। শালা যেদিন ঘরে তুলল সেদিনই বেরিয়ে গেসলাম…
সারা রাত মাকুর ঠেকে পড়েছিলাম… হুঁস ছিল না…
সকালে দেখি বাজুদার আড্ডায় শুয়ে আছি… ঝাপসা চোখে বুঝলাম চার পাঁচটা মুখ আমার নাকের ডগার অক্সিজেনটা শুষে নিচ্ছে… তার মধ্যে যেটাকে একদম কানাচোদার মতো দেখতে সেটাই বাজুদা… আমার কাঁধে হাত দিয়ে উঠে বসিয়ে বলল,
-বাপি তোমার হবে, জান আছে মাইরি তোমার… নীট তিন বোতল যা ওড়ালে লোকে তো টেঁসে যেত… তা এবার বাড়ি যেতে পারবে তো?
মাথা নেড়ে বললাম,
-যাব কি যাব না তাতে আপনার কি?
পোষা লেড়োগুলো তেড়ে এসেছিল, বাজুদা এক ধমকে থামালো, তার পর শান্ত স্বরে বলল,
-যাবে না তো কি করবে? কোথায় যাবে? খাবে কি?
আমার তেজ তখনো কমে নি… কিন্তু হাতটা কাঁধ থেকে নামায় নি বাজুদা… বাজুদাই তারপর ধীরে ধীরে হাতে ধরে কাজ শেখালো… একটা জীবন দিল নতুন… নাকি তখন থেকেই মরে গেছি? কে জানে? গত ৮ বছরে ১২টা খুন, কিডন্যাপিং, ওয়াগন ব্রেকিং… তোয়াক্কা করি নি কাউকে… বাজুদাকেও না… প্রথম প্রথম কিছু বলত না। বাড় খাওয়াতো বা**ত…
তারপর বাজুদার মন্তর দেবার লোক পালটে গেল… দু চারটে লেড়ো আমার সঙ্গে কমপিট করতে এসেছিল কিন্তু ইয়েটা কুটুত করে ছোট করে দিতেই কাঁই মাই করে বাজুদার কাছে গিয়ে লাগালো… শালা আমারো দোষ আছে… তেল আমি মনে করি খালি মুরগী আর মাথাতেই দেওয়া উচিত… বা**তটা বেশ কিছুদিন ধরে মাপছিল আমায়…আজকের কেসটাও বোধহয় আগে থেকেই ছকে রেখেছিল… নাহলে এখানকার খবর গেল কি করে কুত্তাগুলোর কাছে?
কালুকে বললাম
-তুই ভিতরে থেকে ঢুঁ মেরে আয় দিকি… কপচাই খবরগুলো আমার চাই… কে করল কেসটা?
একটু ঘাপটি মেরে বসলাম… মাথার উপরের আর সামনের দুটো ল্যাম্প পোষ্টের টুনি, ঢিল মেরে ভেঙে দিয়েছি আগে থেকেই, যাতে কোথায় আছি দেখা না যায়… বড় রাস্তাটা কিন্তু খুব দেখা যাচ্ছে… হাতের চেটোর উল্টোদিক দিয়ে কপালটা মুছলাম… কপাল… কপালই বটে…
বাবার কথা মনে পড়ছে খুব, ছোট বেলায় কতো ভালো ছিল… কখনো মারে নি বকে নি… দুষ্টুমি করলে বরং বসে বোঝাতো…গল্প বলত অভিমন্যুর… বলত,
-দেখো বাপি, তোমার যে ফ্যামিলিতে জন্ম সেখানে কেউ মাথা নোয়ায় না। মাথাটা সব সময় উঁচু রাখবে। ঘোর অভাবেও… অভিমন্যু বেরোতে জানতো না কিন্তু তাও চক্রবুহ্যের ভিতর ঢুকেছিল… লড়াই ছাড়ে নি।
আমিও ছাড়ছি না… হে হে বাওয়া… একশো জন এলেও খাপে খাপ বসিয়ে দেব শালা… জানের মায়া দয়া নেই আমার……
মায়া দয়া কিন্তু বাবার খুব ছিল…ভালবাসতো আমায় খুব, কিন্তু কেন যে দূরে সরিয়ে দিল… আচ্ছা মা কি আমার জন্য বৃষ্টিতে চলে গেছিল? আমার তো তখন খেলার সময় ছিল বাবা, আমি তো চলেই আসতাম… কিন্তু রাজুরা হঠাৎ ‘ঘুষখোরের ব্যাটা’ বলে আওয়াজ দিচ্ছিল… মাথার ঠিক রাখতে পারি নি বাবা… ব্যান্ডেজ বাঁধিয়ে যখন ফিরি তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে… তুমি তারও পরে ফিরলে… মা-এর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলো… মা বলছিল,
-আজ তোমার জন্য আমার ছেলেটার এই দশা।
অথচ আমি জানতাম তো আমার বাবা কখনো বাজে হতে পারে না। ছুটে গিয়ে মাকে বলেছিলাম, -মিথ্যুক তুমি মিথ্যুক!
তুমি কিছু বললে না কেন বাবা? মা কে আটকাতে পারতে না? তারপর তো তুমি একবারও আমার দিকে চোখ তুলে ভালো করে কথা বলো নি বাবা… কেন বাবা? আমি তো তোমারই ছেলে…
চোখটা ভিজে গেছিল, হঠাৎ হুঁস ফিরলো কালুর খোঁচায়, বলল,
-তোর ফোরকাষ্ট ঠিক বে… বাজুদাই… শালা তোর বাড় বাড়ন্ত হজম হচ্ছিল না… তাই! শালা বোকাচোদাটার গাঁড়ে তিন কিলো এসিড ঢেলে দিলে তবে শান্তি…
গুম হয়ে বসেছিলাম। তারপর নিজের মনেই হেসে উঠলাম… কালুকে বললাম,
-দ্যাখ তোর সঙ্গে বাজুদার কোন গন্ডগোল নেই… আর কুত্তাগুলোও তোর জন্য আসে নি তাই তুই পিছনের গলিটা দিয়ে সটকে যা বে… সুযোগ পেলে তোর চম্পাকলি লাজোর গালেতে একটা তিনকোনা ডিপ কাট মেরে দিস বে কেকের মতো করে আর বলে দিস “হ্যাপি বাড্ডে টু ইউ”! মাগিটা বাজুদার কাছে আমায় বেচে দিল বে…
যাচ্ছিল না, ঘোড়াটা মাথায় ঠেকাতেই… কালু বছর তিনেক আমার সঙ্গে ছিল… জানে চেম্বার রাজু কখনো ফালতুকা কুমীর দেখায় না…
এখন আমি আর ডজন খানেক পিস্তলওলা কুত্তার মধ্যে আছে আমার চেম্বারখানা, দু তিনটে আধো অন্ধকার ল্যাম্পপোষ্ট, একটা সবুজ আর একটা নীল ডাষ্টবিন… ওদিক থেকে আওয়াজ কানে আসছিল, হোঁদল কুৎকুৎ শর্মার।
লম্পট লোকটা হ্যান্ড মাইক নিয়ে বলছিল,
-বিশোয়াতোষ মুখাজ্জি, হাম জানতে হ্যায় আপ ওহি পে হ্যায়। পিস্তল নীচে রাখকে বাহার আ জাইয়ে হাত সর কে উপর… হাম কুছ নেহী করেঙ্গে… দশ তক গিনুঙ্গা…
এক… দো… বাবা, অভিমন্যুকে কি অর্জুন ভালো বাসত? তিন… চার… অভিমন্যুকে তো সুভদ্রা মানুষ করেছিল বাবা… আমার তো মাও চলে গেছিল… পাঁচ… ছে… সুভদ্রা ঘুমিয়ে পড়েছিল কেন বাবা? পুরোটা শুনে ঘুমোতে কি হয়েছিল…সাত… আট… আমার মামাগুলো কৃষ্ণ ছিল না কংস? নও… আমি কিন্তু অভিমন্যুর মতো চাকা হাতে বোকার মতো লড়ব না বাবা… এই চক্রবুহ্য থেকে বেরোবই… এ ভাবে না হলে ও ভাবে। ইস পার নয় তো উস পার…কিন্তু পাঁকে আর ডুবব না… পারো তো একটা রজনীগন্ধার চাকা রেখো বাবা আমার জন্য… মা খুব ভালোবাসত গন্ধটা…
দশশশশশশশ…
এক লাথি মেরে সবুজ ডাষ্টবিনটা ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম… চেম্বারে বারোটা গুলি আছে দেখে নিয়েছি… আরে ও সাম্বা… কিতনে আদমি থে রে বে????????
সুচিন্তিত মতামত দিন