তুষ্টি ভট্টাচার্য

মায়াজম
4




'পিল'- এর আমি 'পিল' -এর তুমি





মাদের দেশ বা প্রাচ্যের দেশগুলোতে এখনও কর্মক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সংখ্যা সমপরিমাণ নয়। আগের থেকে অনেক বেশি সংখ্যক মেয়েরা কাজের জগতে আসছেন, তাঁদের কেরিয়ার নিজেদের মনের মত করে গড়ে তুলছেন ঠিকই, কিন্তু পাশ্চাত্যের সঙ্গে তুলনা করলে তার হার অনেক কম। যেভাবে নারী স্বাধীনতা পাশ্চাত্য থেকে বয়ে নিয়ে এসেছিলেন এখানকার কিছু ইংরেজি জানা উদারমনস্ক পুরুষ, তাঁদের হাত ধরেই এ দেশে নারী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কাজের জগতে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটছিল ধীরে ধীরে। ফলে সেই পিছিয়ে চলার রীতি এখনও এদেশে বর্তমান। অ্যামেরিকার ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলেই চিত্রটা পরিষ্কার হয়ে আসবে। যেখানে ১৯৬৭সালে মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা ছিল এক তৃতীয়াংশ, ২০০৯সালে সেটা বদলিয়ে হল অর্ধেক। আর এখন কাজের জগতে মহিলারা পুরুষদের থেকে সংখ্যায় যেমন বেশি, দক্ষতা বা স্কিল পাওয়ারেও তারা পুরুষদের টপকে গেছে। কিন্তু এই লক্ষ্যে পৌঁছনো কীভাবে সম্ভব হল?

এক সময়ে দেখা গেল কলেজ-শিক্ষিত মহিলারা তাদের মায়েদের মত গৃহবধূর জীবন কাটাতে অস্বীকার করল। কিছু কিছু কোম্পানি তাদের নিজেদের প্রয়োজনে মহিলাদের ‘হোয়াইট-কলার অফিস স্কিল’ কাজে লাগাতে শুরু করল। এবং দেশের অর্থনীতি চাইল নারী ও পুরুষ উভয়েই রোজগার করুক যাতে দেশের অর্থনীতির পরিকাঠামো আরও মজবুত হয়। মেয়েরা ঘরের বাইরে এলেও তাদের মাতৃত্বকে তো আর অস্বীকার করতে পারবে না! ফলে মায়েরা তাদের শিশুকে ক্রেশে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করল। এর পরেও যে যে অসুবিধেগুলো দেখা দিল, তার মধ্যে অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের স্থান একেবারেই প্রথমে। এই সমস্যার মোকাবিলার অব্যর্থ হাতিয়ার হিসেবে এবার এল মহিলাদের ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল, যার ডাকনাম দেওয়া হল ‘পিল’। এই পিল আসলে কি বস্তু? যে কোন ট্যাবলেটের থেকে একে আলাদা করা যায় কীভাবে? কমবাইন্ড ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল (COCP) বা পিল তৈরি হয় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টোজেন নামক হরমোন-এর মিশ্রণে। রোজ একটি করে খেলে মেয়েদের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা বা ফার্টিলিটি কমে যায়, ফলে জন্ম নিয়ন্ত্রণের এমন একটি ঝুটঝামেলা বিহীন এবং প্রায় নিশ্চিত একটি উপায় এসে গেলে, তা যে জনপ্রিয় হবেই, এ তো জানা কথাই। ১৯৬০ সালে অ্যামেরিকায় এই পিলকে প্রথম জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রায় ১০০মিলিয়ন মহিলা এই পিল ব্যবহার করে, যার মধ্যে ১২ মিলিয়ন মহিলা অ্যামেরিকার, এবং ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়স পর্যন্ত মহিলাদের মধ্যে এই পদ্ধতি অত্যন্ত প্রচলিত।
পিল সাধারণত ২১টি বা ২৮টির স্ট্রিপে বিক্রি হয়। মেয়েদের ২৮দিনের ঋতুচক্রের অনুসারে পাঁচদিন থেকে রোজ একই সময়ে একটি করে ট্যাবলেট খেতে হয়। একটি ট্যাবলেট ভুলে গেলে ১২ঘন্টার মধ্যেই তার কন্ট্রাসেপটিভ পাওয়ার কমতে থাকে, এই সতর্কতা মাথায় রেখে ভুলে যাওয়ার খেসারত হিসেবে পরেরদিন এক সঙ্গে দুটি ট্যাবলেট খেয়ে নেওয়া নিয়ম। ২১দিনের পর সাতদিন সাধারণত মাসিক স্রাবের দিন, তাই এমনিতেই সুরক্ষিত থাকে। যে সমস্ত স্ট্রিপে ২৮টি ট্যাবলেট থাকে শেষের অন্য রঙের সাতটি ট্যাবলেট প্রকৃত অর্থে হল সুগার পিল বা প্ল্যাসেবো পিলস। এই ট্যাবলেট খেলে যেমন কিছুটা আয়রন শরীরে আসে, তেমনি রোজকার ট্যাবলেট খাওয়ার অভ্যেস বজায় থাকে।
এলেন টেলর মে’র লেখা ‘অ্যামেরিকা অ্যান্ড দ্য পিল’ বইটি প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। পিল বিষয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও যৌনতা নিয়ে ঐতিহাসিকরা এতদিন পর্যন্ত যা বলেছিলেন তার বাইরে গিয়ে এলেন টেলর এই বইতে একটু অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে আবিষ্কৃত এই পিল মহিলাদের বিভিন্ন প্রজন্মে মানসিক ভাবে কীভাবে প্রতিক্রিয়া ঘটিয়েছে, ভয় বা আশার জন্ম দিয়েছে, বিস্তৃত ভাবে লিখেছেন মে। মে’র উদ্দেশ্য ছিল, নারীবাদী আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা না নিয়েও, পিল কীভাবে খুব সহজে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে এক মূল্যবান হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল চাকুরিরতা মহিলাদের কাছে, এই যুক্তির প্রতিষ্ঠা করা।

প্রাক-বিংশ শতাব্দীতে নারীর অধিকার রক্ষার আন্দোলনে মেয়েদের নিজেদের যৌনতা ও জননের অধিকার নিজেদের কাছেই থাকবে, এই ইস্যু থেকে মে লিখতে শুরু করেন। ওরাল কন্ট্রাসেপটিভের ভূমিকা ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রথম বলেন মার্গারেট সাঙ্গার, ক্যাথরিন ম্যাককরনিক বলেন এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। এই দুজন মহিলা দুই বিজ্ঞানী গ্রেগর পিনকাস ও জন রক-এর সঙ্গে একটি দল তৈরি করেন এবং খাদ্য ও ঔষধ দপ্তরের অধিকর্তা অবশেষে ১৯৫৭ সালে পিলকে অনিয়মিত ঋতুচক্র এবং বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার জন্য ছাড়পত্র দেন। ১৯৬০ সাল থেকে পিল কন্ট্রাসেপটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে মে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জনসংখ্যার হার রীতিমত বেড়ে যাওয়ায় পিল এক কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল, সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সেই সময়ের বেশির ভাগ অ্যামেরিকান রাজনীতিকরা যুদ্ধের ফসল হিসেবে পাওয়া ক্ষুধার্ত মানুষদের সমস্যা বুঝতেই পারেন নি, কেন কমিউনিজমের দিকে এরা ঝুঁকেছিল, তারও দিশা পান নি তাই। তাঁরা শুধু মেয়েদের পিল ব্যবহার করার নির্দেশ দেন, ফলে একদিক থেকে সুবিধে পেয়ে যায় নারী স্বাধীনতাকামীরা। এমনকি, এই রাজনীতিকদের বর্ণবিদ্বেষী স্বভাবও অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান কালো মেয়েদের পিল ব্যবহার করা থেকে আটকাতে পারে নি।

তৃতীয় অধ্যায়ে মে পুরুষদের ওপরে পিলের কী প্রভাব পড়েছিল, সেই নিয়ে বলেছেন। একদিকে কিছু ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিল ছেলেদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেবে, তারা যে সন্তান উৎপাদনে সক্ষম, সেটাই ভুলে যাবে। অন্যদিকে পিলের সমর্থক যারা, যেমন ‘প্লেবয়’ বলছে, পিল পুরুষদের দায় দায়িত্বের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে একটা উন্মুক্ত জীবন দেবে। মে এক্ষেত্রে এও বলেছেন, যেসব পুরুষরা মেয়েদের যৌন স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছেন, তারা কিন্তু চেয়েছেন, সেই মেয়েদের স্বাধীনতা পুরুষদের জন্যই, মেয়েদের নিজেদের জন্য না। এই প্রসঙ্গে তাঁর বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে লিখেছেন, ছেলেদের জন্য পিল তৈরি করার সম্ভাবনা এই যুক্তিতেই শেষ হয়ে গেছে।
প্রথম থেকে যেভাবে বলা হচ্ছিল, পিল কিন্তু সেভাবে জনসংখ্যা কমানোয় তেমন অগ্রগণী ভূমিকা নিল না। আবার পিলকে ঘিরে কোন যৌন বিপ্লবও শুরু হল না। মে এরপর বুঝিয়ে দিলেন, এর বদলে যেসব মহিলারা পিল ব্যবহার করেছেন, তারা অবাঞ্ছিত মাতৃত্বর লজ্জা থেকে মুক্তি পেলেন। তিনি বললেন, যৌন বিপ্লব ঠিক ততটা ‘বৈপ্লবিক’ ছিল না আদৌ। বরং ১৯৫০-এ যখন মেয়েরা শুধুমাত্র বিবাহিত জীবনেই যৌনক্ষম থাকতে বাধ্য হয়েছিল, সেই সময়ে যৌন স্বাধীনতার যে রেওয়াজ উঠেছিল, তার যৌক্তিকতা ছিল কিছুটা। মে তাঁর শেষ চ্যাপ্টারে বলেন যদিও পিলকে ভালবেসে গ্রহণ বা বর্জন কেউ করুক বা না করুক, ২০১০সালে পিল এক দায়মুক্ত, ঝঞ্ঝাটমুক্ত জীবন দিয়েছিল এবং এটা প্রমাণ হয়ে গেছিল যে পিল অ্যামেরিকান সভ্যতায় এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। মে’র এই বইটিতে পিলের ভূমিকা যতটা ছিল জন্মনিয়ন্ত্রণের নিয়ন্ত্রক হিসেবে, তার থেকেও বেশি ছিল কোল্ড ওয়ার আর পিলের সম্পর্ককে নিয়ে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নারী-পুরুষ উভয় লিঙ্গের কাছেই পিল এক মুক্তির আবহাওয়া এনে দিয়েছিল। ইতিহাস এবং সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রদের কাছে এই বইটির গুরুত্ব তাই অপরিসীম।

জেন ওয়ার্ল্যান্ড(৫২), ডারমালজিকা স্কিনকেয়ারের সিইও, যিনি ৩৬বছর বয়সে তাঁর প্রথম সন্তান নেন, আর সেই প্রসঙ্গে বলেন, ‘বার্থ কন্ট্রোল পিল আমাকে দেরীতে সন্তান ধারনের সুযোগ করে দিয়েছিল বলে আমি আমার নিজের কম্পানি শুরু করতে পেরেছি। পিল আমাকে অসময়ের মাতৃত্বর বোঝা থেকে মুক্ত করেছে।‘ ওয়ার্ল্যান্ড-এর মত এমন অনেক প্রফেসনাল, ডাক্তার, উকিল এভাবেই তাঁদের সন্তানকে নিজের সুবিধে মত সময়ে এনেছেন।

পিল না থাকলে প্রফেশনাল ভূমিকায় নারীদের উচ্চ পদে কোনমতেই দেখা যেত না। কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের ব্যাপক পরিমাণে দেখা যেতে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বার্থ কন্ট্রোল পিল ফেমিনিজমের সেকেন্ড ওয়েভকে অনেকটা এগিতে দিতে সাহায্য করল। পুরুষদের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিয়ে মেয়েরা তখন সমান অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। তারা এতদিন প্রথমে মায়ের ভূমিকায় থাকত, তারপরে তাদের জায়গা থাকত কাজের জগতে। পিল এবার থেকে কাজের জগতেও তাদের এগিয়ে নিতে হাত বাড়াল। এছাড়া এটাও অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই যে, পিল যৌন বিপ্লবকেও অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল। মেয়েদের অযথা মা হওয়ার ভয় কমে গেল, ফলে তারা বিবাহিত জীবনের বাইরেও যৌনতা উপভোগ করার স্বাধীনতা পেয়ে গেল।

গ্লোরিয়া ফেল্ট (৬৮), প্ল্যানড পেরেন্টহুড-এর সিইও ছিলেন, এখন যিনি ক্ষমতা ও নারীর সম্পর্ক নিয়ে একটি বই লিখছেন, জানান, ‘আমি এমন একজন যার ২০বছর বয়সে তিনটি সন্তান হয়ে গেছিল, পরবর্তী জীবনে পিল না থাকলে হয়ত আমার আরও একটি বা দুটি সন্তান এসে যেত। পিল সত্যি বলতে কি আমার জীবন বাঁচিয়েছে। আমি আমার জীবনকে যেভাবে সাজাতে চেয়েছি, পিল আমাকে তাই দিয়েছে। আমাকে কলেজে পড়ার সুযোগ এবং কর্মজীবনের সুযোগ করে দিয়েছে‘। ‘মেয়েরা যদি সমাজে তাদের ক্ষমতা এবং অধিকার চায়, তাহলে তাদের সন্তান জন্মানোর সময়কে নিজের আয়ত্বে আনতে হবে আর তবেই তারা অর্থ রোজগারের সুবিধে পাবে। পিল একসঙ্গে অর্থনীতি ও জন্মনিয়ন্ত্রণকে একই প্যাকেজে উপস্থাপন করেছে এভাবেই’।

অন্য কথায় বলতে গেলে, মেয়েদের ২০থেকে ৩০বছর বয়স পর্যন্ত সময়কে শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদন বা তাদের দেখভাল নিয়ে মাথা না ঘামিয়েও কেরিয়ারের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব এই পিলের।
ওয়াশিংটন বেসড কনসাল্টিং ফার্ম, বিংহ্যাম কন্সাল্টিং গ্রুপে, এলএলসির প্রিন্সিপাল সুজান স্পল্ডিং (৫৩), বলেন, ‘৩০বছর বয়সের আগে আমি আমার প্রথম সন্তানকে আনি নি। ফলে আমি ল স্কুল শেষ করে ভাল ভাবে আমার কেরিয়ার তৈরি করতে পেরেছি’। ল স্কুলের পরে তিনি সেন আরলেন স্পেকটার এবং সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সিতে যোগ দেন। স্পল্ডিং দেখেছিলেন তাঁর বড় বোন ল স্কুলে যখন যেতেন, বাড়িতে তাঁর দুই শিশুকে একলা রেখে যেতেন। ফলে মাতৃত্ব, পড়াশুনো, কাজের জগত – এই তিনের টানপোড়েনে তাঁর নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল।
জন মিকেলস (৫৩) কোন সন্তান নেন নি। জেবি মিকেলসন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস –এর প্রেসিডেন্ট তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের শরীরের ওপর আমার নিজের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেয়েছি অন্য কারুর সাহায্য ছাড়াই। সন্তান নিই নি বলে কাজের জগতে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পেরেছি, আর সফল হয়েছি’।

গ্লোরিয়া জ্যাকবস ( ৬৩), ফেমিনিস্ট প্রেস-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জানান, ‘আমি আমার প্রথম সন্তান নিয়েছি ৩৫ বছর বয়সে। তার আগে আমি লেখক ও সম্পাদক হিসেবে নিজের কাজ করেছি সফলতার সঙ্গে। পিল আমাকে এই সুযোগ দিয়েছে বলে আমি অত্যন্ত সুখী।‘


আমাদের দেশেও পিল কম জনপ্রিয় হয় নি। যেহেতু এই দেশে এখনও বিবাহিত জীবনের বাইরে যৌন স্বাধীনতা উপভোগ করার আন্দোলন ধোপে টেঁকে না, ফলে বিবাহিত জীবনের পরিসরেই পিল মূলত ব্যবহৃত হয়েছে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য। অবাঞ্ছিত মাতৃত্বর হাত থেকে মুক্তির জন্যও যেমন, তেমনি জনসংখ্যা হ্রাসের জন্যও সরকারী কর্মসূচীতে এই পিলের অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। বিনামূল্যে গ্রামে, গঞ্জে, স্বাস্থ্য শিবিরে পিল দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। শহরাঞ্চলের বাইরে গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য শিবিরের প্রশিক্ষিত মেয়েরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মেয়েদের হাতে পিল তুলে দিয়েছে। ফলে লোকলজ্জার ভয় না থাকায়, অর্থাৎ বাড়ি থেকে বেরিয়ে দোকানে গিয়ে কিনে আনার ‘লজ্জা’ না থাকায় মেয়েরা নির্ভয়ে ও নিশ্চিন্তে পিল ব্যবহার করেছে। একটি বা দুটি সন্তান নিয়ে তারা শান্তিতে ঘরসংসার করতে পেরেছে। ‘বছর বিয়োনি’র তকমা ছুঁড়ে ফেলতে তাদের এখন আর আটকায় না। এক সময়ে দেখা যেত, মা এবং মেয়ের একই সঙ্গে সন্তান প্রসব হচ্ছে। এই সিস্টেমের মূলে আঘাত করেছে পিল। যেহেতু পুরুষদের ভাসেকটমি করাতে ‘পৌরুষ’-এ বাঁধে, কন্ডোম ব্যবহারে অনীহা, তাই মেয়েরা পিলকে নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে নিজেদের সুরক্ষার জন্যই। আর কর্মক্ষেত্রেও আমাদের দেশের মেয়েদের অ্যামেরিকার মেয়েদের মতই স্বাধীনতা দিয়েছে এই পিল। ওখানকার মত হারে না হলেও, মেয়েদের কাজের জগতে আসার হার বাড়ছে। উঁচু পদে তাদের সংখ্যাও বাড়ছে ক্রমশ। এবং এখানেও ধীরে ধীরে মেয়েদের কর্মকুশলতা প্রমাণিত হচ্ছে। পিলের দীর্ঘপ্রসারী ভূমিকাকে এখন আর কোন দেশের মেয়েরাই অস্বীকার করতে পারবেন না। শুধু মেয়েরাই বা কেন, পুরুষরাও পরোক্ষে এর সুফল ভোগ করছে। তারাও অনেক বাড়তি দায়িত্বর হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছে পিল আসার পরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন