চন্দ্রাণী বসু - মায়াজম

Breaking

৩১ মার্চ, ২০১৭

চন্দ্রাণী বসু

                              অসময়ের বৃষ্টি




প্রেক্ষাগৃহ ভরে করতালির আওয়াজ জানান দিচ্ছে সেমন্তীর চূড়ান্ত বিজয়।মেয়ে হুইল চেয়ার ঠেলে মাকে নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করছে।"বোনম্যারো-ক্যান্সারে" হাঁটতে পারে না এখন আর সেমন্তী।এই হুইল চেয়ারে বসেই লেখা তার একটি কাব্য গ্রন্থের জন্যে "একাডেমী"পুরস্কার পাচ্ছে সে।

মাঝে মাঝেই ঝাপসা হচ্ছে মা আর মেয়ের চোখ।বর্তমান ধুয়ে স্মৃতি স্পষ্ট হচ্ছে।

এই মেয়ে তখন পেটে।স্বামী তিন বছরের বিবাহিত উপাখ্যানের সমাপ্তি চাইল।একটি নীতি কথাও জুড়েছিল উপাখ্যান এর শেষে...সেমন্তি তার পৌরুষ সুখের উপযুক্ত সঙ্গী নয়।

স্বপ্নিল সংসারের মায়া আঁকড়ে রাখার অকারণ চেষ্টা ছিল বাইশ বছরের সেমন্তীর।

অকথ্য অত্যাচারের শুরু হল।দামামা বাজল জীবন যুদ্ধের।

কিছু বছর পর, সেমন্তী একটি স্কুলে চাকরি পেল ।মেয়ের বয়স তখন বারো।নিজের ও যে একটা অস্তিত্ব আছে ,চাপিয়ে দেওয়া সারনেমের বাইরে গিয়ে প্রথম ভাবতে শুরু করল সেমন্তী।

কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস!!বছর চারেক সুখের মুখ দেখতে না দেখতেই ধরা পড়ল তার মারণ রোগ ক্যান্সার।

ডিপ্রেশন ক্রমশ ঘিরে ধরেছিল তাকে।মেয়ের তখন পনেরো।মেয়ে আর তার বন্ধুরা মিলেই জোর করে সে সময় ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিল তার নামে।অনীহা সত্ত্বেও মেয়ের জোড়াজুড়িতেই নাড়াচাড়া শুরু।এরপর পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পাওয়া।ছুঁতে পারা আর একবার শৈশব।ছোটবেলায় লেখালেখির অভ্যেস ছিল তার।পুরনো বন্ধুদের চাপেই পুরু ধুলো পড়া ডায়েরীর হলদেটে ভাঙা ভাঙা পাতার আবছা হওয়া কালি আবার স্পষ্ট হতে শুরু করল।

চিকিৎসা আর লেখা একসাথে চলতে লাগল।নতুন করে মৃত্যুর সামনেও বাঁচতে শিখল সে। ক্রমশ পরিচয় বাড়তে শুরু করল।

বাধা এবার অন্য দিক থেকে।স্বামীর স্পষ্ট নির্দেশ আসে ফেসবুক বন্ধ অথবা চিকিৎসার খরচ।চলবে না এসব ফেসবুকীয় বেলেল্লাপনা।

পনেরোর মেয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল।ফল স্বরূপ শুরু হল মানসিক অত্যাচার।মা আর মেয়ে সম্মিলিত লড়াইয়ে শেষে পিছু হঠল বাবা।

প্রতি মুহূর্তে যন্ত্রণা ভাগ করে নিয়েছিল সেমন্তী ভার্চুয়াল কিছু বন্ধুর সাথে।লড়াই তে তারাও পাশে দাঁড়াল।

যদিও জীবনের শেষ মুহূর্ত তার খুব কাছে।তবুও সেই ভালোবাসার বৃষ্টিতে ধুয়ে গেল সেমন্তীর মৃত্যু ভয়।

সেমন্তী গুহ তাঁর "অসময় বৃষ্টি" কাব্যগ্রন্থের জন্যে......

মাইক্রোফোনের আওয়াজে বর্তমানে ফেরে সেমন্তী।

একবার সামনের চেয়ারগুলোতে চোখ বোলায়।ফেসবুকের সেই ভার্চুয়াল বন্ধুরাই বাস্তবে নেমে করতালিতে ঘোষণা করছে সেমন্তীর বিজয়।

সেমন্তীর দুচোখেও তখন ভরা বাদল..অসময়ে বৃষ্টি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র