শ্রী দে. দা. (দেবাশীষ দাস) - মায়াজম

Breaking

১১ আগ, ২০১৭

শ্রী দে. দা. (দেবাশীষ দাস)

              রক তো প্রেম, রক তো গান..







প্রকৃতিগত দিক থেকে বাঙালি বোধকরি বড়ো ভীতু জাত, অথবা চিৎকার-পরিপন্থী। আবার চিৎকার যে করেনা, তাও নয়। নিজের ঘর ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলেই দেখা যায় আসল চেহারা। নইলে বলুন দেখি যে নজরুল দেশের জন্য, দশের জন্য নিজে 'পরশুরাম' হলেন, তাঁর কুঠারে আমরা জীবিত থাকাকালীন কীসের গন্ধ পেলাম? প্রেম কি ছিল না? আচ্ছা বিদ্রোহীরা কি শুধুই বিপ্লব বোঝে? বা বিপ্লবের মধ্যেও কি তারা প্রেমের আস্বাদন খোঁজে না? কিংবা কবীর সুমন যখন গেয়ে ওঠেন, 'ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড করো'.. তখনও 'ব্যারিকেড'টাই কি মুখ্য হয়ে ওঠে? আদতে তা নয়; অ্যাকেবারেই নয়। খুঁজতে চাইলে কাঁটাতারের নেপথ্যেও পাওয়া যায় কোনো একক বা অ্যাকাধিকের প্রেম। হোক না তা দেশপ্রেম... আসলে তো প্রেমই। সুতরাং ভালো-মন্দ সবকিছুর উৎস অ্যাকটাই এবং সেটা হোলা প্রেম। এই 'বস্তু'টি ছাড়া ভালো, মন্দ, দ্বন্দ্ব, ধন্দ ইত্যাদি সবই অচল অ্যাকপ্রকার। শিলু দা যথার্থই বলেছেন, ''প্রেম ছাড়া কি দিন বদলের গান শোনানো যায়?''। যায় না। এইরূপ ধারণা থেকেই শিল্পীর মনে জন্ম নেয় অপ-বস্তু বা অপ-বিষয়ের প্রতি ক্ষোভ। আর সেগুলিই হয়তো তাঁরা উগরে দেন তাঁদের শিল্পে। সুকান্ত যখন বলেছিলেন 'হে মহাজীবন, আর পদ্য নয়', পদ্যের কোমলতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি বলেছিলেন কথাটি; পদ্যেরই আদলে। শুধু বলার ধরন বদলালেন। সেও কি প্রেমের জন্য নয়? সেসব হজম করতে আমাদের সমস্যা হয়নি। তবে গানের ক্ষেত্রে ক্যানো এই বিভেদ? ক্যানো আজও রক সম্পর্কে মানুষ কেবল উচ্ছৃঙ্খলতা দ্যাখে(?)? ক্যানো তারা মনে করে যে এ কেবল ঝকমারি চিৎকার প্রদর্শন। চুল বড়ো করে, থুতনিতে দু'গাছা দাড়ি দেখে তারা মনে মনেই সমীকরণ কষে নেয় কিংবা অন্তর্যামীর মতো পড়ে নেয় রক-প্রিয়ের দর্শন। জঙ্গলই দেখলে বন্ধু, শিকড় চিনতে পারলে কই!?
এবার সময় এসেছে বদলানোর; নতুন কিছু করার। চাঁদ-সূর্য তো অনেক দেখলাম... মামারা আছেন, থাকবেনও। মামাদের জন্মদাতারাও অমর। কিন্তু গপ্পো তো অন্য জায়গায়... আজ, এই মুহূর্তে ঘুম ভাঙা পৃথিবী যখন স্বপ্ন দেখতে ভয় পাচ্ছে, চাঁদ-সূর্যকে বিরোধীর আস্ত অ্যাক ষড়যন্ত্র ঠাওরাচ্ছে, তখন অন্তত দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকার সময় নয়। সময় নয় টুকরো হওয়া মেরুদণ্ডকে জোড়া লাগানোর ভান করা। অতএব, ছুটতে হবে, জিততে হবে। মনে মনেই গড়ে নিতে হবে আসল সাম্রাজ্য। সর্বোপরি, হতে হবে মেরুদণ্ডী। গোপন দেহ-মন ব্যবসা তো অনেক হোল নিজের সাথে! সস্তা সহজ মগজকে এবার অন্তত ভাবান। কারণ... 
''দেয়ালে যদি পিঠ ঠেকে যায়, 
তবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।''।
অ্যাখনকার বাংলা গানের আসলিয়াৎ বোঝাতে গিয়ে কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন, ''বাংলা গানের ভাষা ও বিষয় যেখানে আটকে পড়েছিল, তাকে বলাই যায় আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের যথার্থ বাস্তবতা থেকে অনেক দূরবর্তী, নতুন প্রজন্ম তাকে অ্যাকটা সাজানো মিথ্যাচার বলেই অগ্রাহ্য করেছিল, খানিকটা ছেলেমানুষি বলেই ভাবছিল। সুমনদের গানের ভাষা-বিষয় সেই সাজানো খেলনা জগৎ থেকে দৈনন্দিন পথের জীবনে ছড়িয়ে পড়তে চেয়েছিল।'' যতবার কথাগুলো মনের মধ্যে দৃশ্যমান হবে, ততোবারই হয়তো পাঠকের মনে প্রতিবিম্বিত হবে গান শুধু গান নয়, হতে পারে আস্ত অ্যাকটা প্রেমের GUN. পৃথিবীর বুকে বর্ষিত হবে প্রেমের গুলি। বিপ্লব-বিদ্রোহ য্যামন নিছক ত্রাস সঞ্চারের বিষয় নয়, তেমনি বন্দুকে শুধু হত্যার কাহিনী বর্ণিত থাকে না বোধ করি, থাকেনা কেবল সন্ত্রস্তের চোখের কান্না। আর থাকলেও তা যদি মিথ্যে হয়, তাহলে জন লিলির ''All's fair in love and war.'' কথাটাই মিথ্যে। মোদ্দা কথা হলো, গুলি নামক সুন্দর সত্যও শিরায়-ধমনীতে বইয়ে দিতে পারে প্রেম, যেখানে অন্তত ছলনা নামক পাপিষ্ঠের ভ্রূণ থাকবে না। নজরুল ইসলাম নিজেও সম্ভবত এই কারণেই কেবল 'বিদ্রোহী' বিশেষণটিকে অমান্য করতে চেয়েছিলেন। আসলে সত্যটুকুই তো চায় মানুষ। রবীন্দ্রনাথও মৃত্যুর কয়েক মাস পূর্বে পুনরায় তা স্বীকার করেছিলেন তাঁর 'রূপনারানের কূলে' কবিতায়। এর যথার্থ কারণ, অবশ্যই পরিণত ভাবনাচিন্তা। এই পরিণত মগজের সন্ধিৎসাটুকুই তো প্রাথমিক পাথেয় এ' বিশাল জীবনের। মৃত্যুপথযাত্রী মহামানবও বোধহয় সম্ভাব্য মৃত্যুকে উপেক্ষা করতে চায়, খড়-কুটো ভেবে আঁকড়ে ধরতে চায় গত সময়ের প্রেম-প্রীতিকে। এই লড়াই ক্রমবর্ধমান, এই লড়াই সদা প্রচলিত। ধান্দাবাজ পরিস্থিতি যখন মাস্কের অন্তরালে ছক কষবে এবং বুদ্ধিমান প্রজাতির দাবিদাওয়াসম্বল মানুষ ছেলেভুলানো ছড়ায় সেই ছককে কেবল মায়াবী জালবিস্তারস্বরূপ আবদ্ধ করতে চাইবে, সেই জাতিকে সম্বলহীনের বদলে আচার-সর্বস্বতায় নিমজ্জিত বলাই যুক্তিযুক্ত বোধ করি। ভাষা ভাবনা কিংবা বিষয় ভাবনায় বৈচিত্র্য আনয়নের উপযুক্ত সময় বুঝি এর থেকে ভালো হয় না! এ'সময়ের প্রাত্যহিকী নাটকে ভিলেনের বিরুদ্ধে প্রাচীর হয়ে দাঁড়াক মহানায়করূপী কোনো ভিলেনই। বদল চাই, ঝাঁপিয়ে পড়ুক বদলওয়ালা মহামানবেরা। নিমেষেই রক তো মিশে যাবেই রক্তে! মেরুদণ্ডী হয়ে মানুষ আজ জন্ম দিক হাজারো তরতাজা রক্তকণিকা-অণুচক্রিকা।

সুবিধাবাদী তোষণের ক্ষত গহ্বরে পেলব স্পর্শপ্রদান নিষ্ফল উপশমেরই অন্য নাম। এই নামান্তরের প্রলেপে সঞ্জীবনী অমৃত হোক ভাষার প্রাবল্য। দৃপ্ত ভাষার প্রয়োজন। প্রয়োজন চোখে চোখ রেখে সোচ্চার আহ্বানের। যে চিৎকার চিৎ হয়ে পড়ে থাকা ফুটপাথের আঁধার ঘোচাতে পারবে, যে চিৎকার পারবে জন্ম দিতে লক্ষ-কোটি নিরন্নের নীরবে হতভাগ্য স্বীকার করে নেওয়ার পথে তীব্র কৌতূহল। সহস্র আঁক কাটার মানচিত্রে দেশ থাক অ্যাকটা মাত্র... পৃথিবী, অধিকার অর্জনের পৃথিবী, মানুষের পৃথিবী। আর সেই স্বাধিকার অর্জনের মহা অস্ত্রই হলো প্রেম। প্রেম আর চিৎকার সমীকৃত হয়ে নতুন ভাষা স্বীকৃতি পেয়ে যাক আজ। আর সে' ভাষা গানের ভাষা; প্রেমের ভাষা : রকের ভাষা

২টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র