মেয়েলি
সূর্য যতক্ষণে মধ্যগগন পার, ততক্ষণে দেহ থেকে ঝরে ঝরে পরে নুন । তেপান্তরের ধূ ধূ মাঠ মন দূর পুকুরের কালো জল দেখে ।প্রতিদিন বেঁচে উঠি প্রতিদিন মরি ।
অনেকগুলো আমি দিয়ে গাঁথা এই একক " আমি"____মেয়েমানুষ ।
যেদিন প্রথম ৃতুমতী হলাম সেদিন মরলো মানুষটা ।জন্ম নিলো মেয়ে ।চারিদিকে ফিসফাস কেউ যেন জানতে না পারে ।এদিকে সবাই জানে সৃষ্টির মূলকথা ।
আমার নানা হিসেবে গরমিল হতে লাগলো ।ছন্দের সঙ্গে মেলেনা ছন্দ ।রঙের সাথে মেলেনা রঙ ।
কালিঘাটে-কামাখ্যায় তিনদিন মন্দির বন্ধ ।দেবী রিতুমতী ।তারপর সেই লাল কাপড় তাবিজ করে নর নারী সবাই কিনে পরছে ।পুরুষের তবু জানতে মানা মাসিকের কথা ।
বয়ঃসন্ধিতে সব মেয়ে নারসিস্ট ।আয়নায় ঘুরে ফিরে দেখা নিজেকে । বাড়ন্ত স্তন ,গালের ব্রণ ,ছেলেদের মুগ্ধ দৃষ্টি..... রোদেলা স্ন্যাপশট মেয়েজীবনের ।
বাচালপ্রিয় মন দক্ষিণ হাওয়ায় হাসে ।স্রেফ একজোড়া নর ও নারী চুদবে বলে সানাই বাজিয়ে ,লোক জড়ো করে কত না উপাচারের ধূম । অতঃপর প্রজননহেতু মৈথুন আইনসঙ্গত ।
সে নরম আলোর দিনে নেলপালিশের রঙ বেছে নেওয়া ছিলো মহাজাগতিক সমস্যা ,যেন পাড়ার মোড়ের ছেলেটা___ যে এখন ঝুঁকে পড়া দেহে বাজারের থলি হাতে ঘরে ঢোকে ,তাকে একবার না দেখতে পেলে জীবনটাই হয়ে যায় অর্থহীন ।
একটুকু বাতাসেই ঢেউ ওঠে তখনো ।বালুচর নদীর অনেক নীচে ।
ক্রমশ জমা হয় মনখারাপের মেঘ ।ট্রেনে বাসে ভীড়ের মধ্যে অচেনা পুরুষ পেছনে চেপে ধরে তার পুরুষাঙ্গ ।সরে দাঁড়াই তখনই কর্কশ হাত আঁকড়াতে চায় নতুন নরম স্তন ।
সদ্য গজিয়ে ওঠা সে শুভ্র স্তন ,গেলাপ যোনি ছুঁয়ে দিতে চায় তুতো দাদা ,পাড়া কাকা ,মাস্টার মশাই ,পরিজন ।
নদী সরে ।সূর্যের তেজ বাড়ে। ক্লান্ত লাগে কোনও কোনও দিন ।রান্না বান্না ,চাকরী বাকরী ,শরীর খারাপ ......মধ্যরাতে তবু এগিয়ে আসে হাত ।ইস্পাত কঠিন পুরুষযন্ত্র নিস্পেষিত করে ছাদনাতলায় কোনো এক লগ্নের মালাবদলের সুদ।
আমরা মেয়েরা ক্রমে নির্বাসিত হই একা বালুচরে ।তবু লিখি ।কবিতা ,গদ্য.....
সুন্দরের পূজারী হয়ে ঢেকে দিতে চাই যাবতীয় অসুন্দর । লেখার সূত্রে কচি লেখিকার দেখা হয় বিগতযৌবন সম্পাদকের সঙ্গে ।স্নেহ করে পিঠে হাত ।.... এ হাত বড়ো চেনা লাগে ।হাতে আঁশ গন্ধ বিব্রত করে ।তাঁর দুঃখী আত্মা দেহে ভর করে ।লেখা মুদ্রণের পূর্বাভাসে অন্তরঙ্গতা কামনা করেন ।
লোমশ মেঘে আকাশ ছেয়ে যায় ।বিদ্যুত্ চমকায় ।
তবুও ত স্নাত হই আমরা ।শূন্য বালুচরে খুঁজে নিই একফোঁটা শান্ত ছায়া ।
প্রেম আসে ।চলেও যায় ।ভাঙা শানকিতে পা কাটে ।
আবারো বৃষ্টি পড়ে ।
কখনো অচেনা পুরুষের সাথে চোখাচোখি মেট্রোতে, মুহূর্ত থেমে থাকে ..
রাতে একা শয্যায় তাকে নিয়ে চলে যাই সঙ্গমপুরে ।
স্বপ্নের ভেতর বেঁচে থাকে সুরঞ্জনা ।
এসব মায়া মোড়কে ঢাকা আবহমানের মেয়েলি কথা ।
লেখক পরিচিতি-জয়িতা ভট্টাচার্য _ পেশায় শিক্ষক ।শূন্যদশকের কবি ও কথাশিল্পী ।কলকাতা নিবাসী এই সাহিত্যিকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ " নিঃশব্দ শিশির হৃদয় "ও প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ " সন্ত্রাসকে ভালোবেসে " ।তিনি পশ্চিমবঙ্গ তথা উত্তর পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখে থাকেন ।
ছোটোর মধ্যে ভালো লিখেছিস ।
উত্তরমুছুন