নেশা
----এই শুনছো, কেমন একটা আওয়াজ আসছে শুনছো!!!!
----ও কিছু না, বাইরে কোথাও.....
ঘুমের মধ্যেই জড়ানো গলায় উত্তর দিয়ে পাশ ফিরে শোয় আদিত্য।
---- না গো, সিঁড়ির তলা থেকে আওয়াজটা আসছে যেন। বিছানার মধ্যেই উঠে বসে পরমা। একটু জোরে নাড়া দে আদিত্যকে। আশ্চর্য ঘুম বলিহারি!!!! ওঠো না, চোর ঢোকেনি তো?
ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে লোকাল থানার সেকেণ্ড অফিসার আদিত্য চৌধুরী।
ঘরের লাইটটা জ্বালাতে গেলে বাধা দেয় পরমা।
আলো জ্বাললেই তো চোর বুঝে যাবে আমরা জেগে গেছি। হয় পালাবে নাহলে আমাদের ওপর আক্রমণ করবে!!!!
তাহলে কি করবো, ঘুম নষ্ট করে সারারাত জেগে বসে চোরকে পাহাড়া দেব? একরাশ বিরক্তি আদিত্যর গলাতে। সব তো বন্ধই করা ছিল, চোর ঢুকবে কোথা দিয়ে !!!!
বিছানা থেকে নামছিল আদিত্য। পরমা হাতটা চেপে ধরে থামিয়ে দেয়। মালা চোরদের দলের লোক নয় তো? ওই ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়নি তো ?
না না ওতো আমাদের হাবিলদার্ সুবোধের চেনা, ওর মা সুবোধের বাড়ি কাজ করে। তেমন হলে কি ওকে কাজের জন্য আমাদের কাছে পাঠায়। থানার মেজবাবু বলে আমাকে ওরা কতটা সম্মান করে জানো তো।
রাখো তো তোমার সম্মান। এরা পুরো একটা চক্র কাজ করে। হয়তো চুরির প্ল্যান নিয়েই....
পরমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বিছানা থেকে নেমে পড়ে আদিত্য। বাংলা সিরিয়াল দেখে দেখে পরমার মাথাটাই গেছে। ঐ দশ-এগারো বছরের রোগা ক্যাংলা খেতে না পাওয়া মেয়েটাকেও সন্দেহ করছে।
পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে আদিত্য। হাতে চার ব্যাটারির টর্চটা, দরকারে জ্বালাবে। আবার একঘায়ে চোরকে কুপোকাত করতে টর্চটার একটা ঘা-ই যথেষ্ট। পুলিশ অফিসারের ঘরে চুরি করার রস আজ গুটিয়ে দেবে আদিত্য।
খসখস আওয়াজটা সিঁড়ির তলা থেকেই আসছে। গোটা বাড়ি অন্ধকার হলেও, চোখ যেন কিছুটা ধাতস্থ হয়ে এসেছে এতক্ষণে। উফ্ পিছন পিছন পরমাও উঠে এসেছে। পরমাকে ঘরে যেতে বলে সিঁড়ির দিকে যায় আদিত্য। সশব্দ নিঃশ্বাসে কারও উপস্থিতি অনুভব করছে আদিত্য।
টর্চটা জ্বালতেই চমকে ওঠে আদিত্য। মালা !!!!!!!!
আদিত্যর চিৎকারে ছুটে আসে পরমা। ততক্ষণে আলো জ্বেলেছে আদিত্য। একি নাকে-মুখে জুতোর কালি মেখে মালার মুখের একি দশা!!!!!
অনেক জিজ্ঞাসা আর বকুনির পর জানা যায়, জুতোর গন্ধ সোঁকার নেশাটা মালার সেই ছোট থেকে। আগের বাড়িতে এই স্বভাবের জন্য কাজটা গিয়েছিল ওর। মা বারবার বারণ করেছিল। কদিন নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে রেখেছিল। আজ আর কিছুতেই সামলাতে পারেনি। দিনের আলোতে মন চাইলেও আটকে রেখেছিল নিজেকে। সবাই ঘুমোতেই রাতের অন্ধকারে ছুটে এসেছিল নেশার টানে।
শোয়ার আগেই অফিসের জুতোতে কালি করেছিল আদিত্য, তখনও শুকোয়নি হয়তো। জুতোর কালি নাকেমুখে লেখে যা তা দশা মালার। বৌদিমণি আমি আর এমনকি করবো না। আমাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিওনা। কাঁদছে মালা। এমন নেশাও মানুষের হতে পারে !!!!
চলো শুতে চলো এবার, সকালে আবার ডিউটি আছে। পরমা বাথরুম থেকে এসে বিছানায় যায়। আদিত্য একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দেয়। ধুর সাথে সাথে কাশিটা শুরু হয়। বেশ কিছুদিন ধরে কাশিটা বড্ড জ্বালাচ্ছে। ডাক্তারবাবু বলেছেন, সিগারেট না খেতে। কিন্তু সিগারেটের নেশাটা কিছুতেই ছাড়তে পারছে না আদিত্য....
সুচিন্তিত মতামত দিন