তন্ময় ধর - মায়াজম

Breaking

১৪ জুন, ২০১৯

তন্ময় ধর

নাক্ষত্রিক ইতিহাস ও মাতৃউপাসনা
              -





সময় আসলে অখন্ড অনন্ত এক প্রবাহ। আমরা বুদ্ধির দোষে, অনুভবের অক্ষমতায় তাকে খন্ড খন্ড করে দেখি। আমাদের সুপ্ত শাশ্বত চেতনা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে অনন্তের পথে। দুম করে যদি প্রশ্ন করেন, আমাদের মধ্যে ভবিষ্যতের স্মৃতি থাকে না কেন? আমরা অতীতকে পরিবর্তন করতে পারি না কেন? দার্শনিক উপায়ে, তাপগতিবিদ্যার সাহায্যে সেসব প্রশ্নের কঠিন কঠিন উত্তর দেওয়া যেতেই পারে। কঠিন উত্তর শোনার প্রয়োজন নেই। রাতের আকাশ যদি পরিষ্কার থাকে তাহলে উত্তর আকাশে ইংরেজি ‘ডব্লিউ’ আকৃতির ‘কাশ্যপেয়া’ তারকামন্ডলীর সামান্য পুবে তাকান তো। আবছা একটা আলোর ছোপ দেখতে পাচ্ছেন? ওটা ২২ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকা অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। ২২ লক্ষ বছর আগে ওই নক্ষত্রজগৎ থেকে যে আলো যাত্রা করেছিল তা আজ এসে আপনার চোখে পৌঁছাল। অর্থাৎ আপনি পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে ২২ লক্ষ বছর আগের ইতিহাস লাইভ দেখছেন। অ্যান্ড্রোমিডায় দাঁড়িয়ে যে মানুষটা এই মুহুর্তে আপনার আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সির দিকে চেয়ে আছে, সে আমাদের ২২ লক্ষ বছর আগের ইতিহাস দেখছে। তখন পৃথিবীতে বানর জাতীয় জীবেরা মাটিতে নেমে দু’পায়ে হাঁটা শেখার চেষ্টা করছে। বুঝলেন কিছু? হ্যাঁ, এভাবেই আকাশে ছড়ানো তারকাদের দেশে আমাদের ইতিহাস এখনো লাইভ রয়েছে। যদি, সময়কে না ছুঁয়ে, কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টে আপনি হঠাৎ হাজির হন একশো আলোকবর্ষ দূরের কোন নক্ষত্রে সেখান থেকে আপনি একশো বছর আগের ইতিহাস দেখতে পাবেন, যেখানে আপনার ঠাকুর্দা কাঁথায় শুয়ে শুয়ে ওয়াঁ-ওয়াঁ করছেন, কাঁথা ভেজাচ্ছেন। থাক, এত দেখতে হবে না। এত সুখ যদি আপনার কপালে/ তবে কেন আপনার ক্যাঁথা বগলে?
এনিওয়ে, মহাভারত যারা খুঁটিয়ে পড়েছেন, দেখেছেন সেখানে আশ্রমবাসিক পর্বে ‘পুত্রদর্শন পর্বাধ্যায়’ নামে একটি অধ্যায় আছে, যেখানে যুদ্ধের পর মৃত কৌরবেরা সশরীরে এসে উপস্থিত হন পিতা-মাতার সামনে। যেন অতীতের বৃন্ত থেকে দুলে উঠে ফুল ফুটল বর্তমানে। বিতর্ক আছে যে, মহাভারত নাকি মর্ত্যভূমির কাহিনী নয়, নক্ষত্রলোকের কাহিনী। আমরা সে বিতর্কে যাব না, আমরা শুধু দেখব, মহাভারতে ত্রিকালজ্ঞ পিতা (ব্যাস) তাঁর অন্ধ পুত্রকে(ধৃতরাষ্ট্র) বারবার দুঃখে সান্ত্বনা দিচ্ছেন ‘দুঃখ কোরো না, পুত্র। কেবল কালের গতি লক্ষ্য করো’। আমরা চোখ থাকতেই কালের গতি বুঝতে পারি না, অন্ধ মানুষ কি করে বুঝবে? এর উত্তর পেতে চলুন যাওয়া যাক আমেরিকায় ওকলাহোমায়। ১৯৪৯ সালে এখানেই জন্মেছেন ডেভিড কেন্ট কুলার্স। জন্মান্ধ এই শিশুটিকে তার পিতা আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে বোঝান রাতের আকাশে ওইখানে ওই তারাটা আছে, ওইখানে নতুন তারকা তৈরি হচ্ছে নীহারিকায়, ওখানে মৃত্যু হচ্ছে নক্ষত্রের, পুনর্জন্ম হচ্ছে। জ্যোতির্বিদ্যার বই খুলে নক্ষত্র সৃষ্টির গল্প বলেন। জন্মান্ধ পুত্রের চোখের অতল অন্ধকারে অন্য এক জ্ঞানের আলো জ্বলে ওঠে, অন্য এক তৃষ্ণার আলো জ্বলে ওঠে। যে আলো পৃথিবী-অন্তরীক্ষ-জ্যোতির্মন্ডল পার হয়ে, এক নীহারিকা থেকে অন্য নীহারিকা পার হয়ে ছুটে চলে অসীমে। জন্মান্ধ ডেভিড বড় হয়ে শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানীই হলেন না, গ্রহান্তরে প্রাণ অনুসন্ধানের যে ‘সেটি’ প্রকল্প (SETI- Search for Extra-Terrestrial Intelligence) তার অধিকর্তা হলেন।
কি বুঝলেন? কিচ্ছু বোঝেন নি। নইলে আপনি ফি-বছর রবীন্দ্রজয়ন্তীতে গলা অস্থির-পঞ্চমে তুলে হারমোনিয়ামের ভুল রীড চেপে ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’ গাইতেন না। আপনি আকাশে যে নক্ষত্রগুলো দেখেন তারা কেউ ২০০০ আলোকবর্ষের চেয়ে দূরে নেই। বরাতজোরে, অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি দেখতে পান। আর আপনার চোখ শুধুমাত্র যে দৃশ্য আলোকতরঙ্গ ধরতে পারে, তার বাইরে অগণন রেডিও তরঙ্গ, তাপতরঙ্গ, অবলোহিত তরঙ্গ, রঞ্জনরশ্মি, গামারশ্মির স্রোত বয়ে চলেছে জগতে। আপনি টেরও পাচ্ছেন না। ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার যেন বলে বসবেন না ‘এ জীবন লইয়া কি করিব?’
টেনিসন মনে পড়ছে না আপনার? ‘চার্জ অফ হেভী ব্রিগেড অ্যাট বালাক্লাভা’ কবিতার এপিলগ-
“But scarce could see, as now we see,
The man in space and time,
So drew perchance a happier lot
Than ours, who rhyme to-day.
The fires that arch this dusky dot—
Yon myriad-worlded way—
The vast sun-clusters’ gather’d blaze,
World-isles in lonely skies,
Whole heavens within themselves, amaze
Our brief humanities”
দুঃখ করবেন না। কেবল নক্ষত্রের গতি লক্ষ করুন। নক্ষত্রের ইতিহাস আপনার জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে। নক্ষত্রের অতীত-ভবিষ্যৎ প্রসুপ্ত হয়ে আছে আপনার সত্তার ভিতর। আপনার শরীরে এই যে এত রাসায়নিক উপাদান, ক্যালসিয়াম-পটাশিয়াম-লোহা সব তৈরি হয়েছিল বহু কোটি বছর আগে এক নক্ষত্রের থার্মোনিউক্লিয়ার দহনে। পরে কালের নিয়মে সে নক্ষত্র সুপারনোভা বিস্ফোরণে ফেটে গিয়ে সব ছড়িয়ে দিয়েছে, তা থেকে জমাট বেঁধে তৈরি হয়েছে সূর্য ও সৌরজগৎ, আর সেই যাবতীয় পদার্থ ও শক্তি আত্তীকৃত হয়েছে আমাদের অন্নময় প্রাণময় জগতে। আমরা নক্ষত্রেরই কণিকা মাত্র।
কিন্তু শুধু শরীর পেলেই তো হবে না, মন পেতে হবে। মন পেতে গেলে তাকাতে হবে প্রধান উৎসব আর লৌকিক ধর্মাচরণে। অর্থাৎ মাতৃ-উপাসনায়। ‘মন তোমার এই ভ্রম গেল না/ কালী কেমন, তাই চেয়ে দেখলে না’ ইত্যাদি গাইবার আগে কৃষিকাজ, নক্ষত্রবিদ্যা আর মাতৃ-উপাসনার কাহিনীটা একটু শুনে নিন। আদিম মানুষ যখন সংহত কৃষিকাজ শিখল, তখনই তাদের উৎসবে, বর্ষপঞ্জিতে, লোকাচারে ঢুকে গেল মাতৃ-উপাসনা আর নক্ষত্রবিদ্যা। কিভাবে? একটু দেখা যাক-
শরতকালে শস্যাগমের সময় জলবিষুব পেরিয়ে শারদীয় শুক্লাতিথিতে দুর্গাপূজা যে হয় সেটা আমরা সবাই জানি। আকাশে সে সময় সূর্য থাকে কন্যারাশিতে। দুর্গাপূজার মূল গ্রন্থ ‘মার্কন্ডেয় চণ্ডী’তে দেবীবাহন সিংহের ধ্যানে রয়েছে ‘সপ্তবিংশতিন্যৃক্ষাণি’ অর্থাৎ সিংহ চান্দ্রপথের মূল সাতাশ নক্ষত্রের অনুগামী। এর প্রাধানিক রহস্যে রয়েছে ‘ভগবন্নবতারা মে চণ্ডিকায়াস্ত্বয়োদিতাঃ’, বৈকৃতিক রহস্যে রয়েছে ‘ত্রিগুণা তামসী দেবী সাত্ত্বিকী যা ত্রিধোদিতা’। এই সমস্ত নিদর্শন দেবীর নাক্ষত্রিক রূপের উদয়ের ইঙ্গিত করছে। কালিকাপুরাণে আকাশপটে দেবীর নাক্ষত্রিক স্থানাঙ্ক নির্দেশ করা হয়েছে- ‘ত্রিশূলং দক্ষিণে দেয়ং খড়্গং চক্রং ক্রমাদধঃ/ঘন্টাং চ পরশুং চাপি বামেহধঃ প্রতিযোজয়েৎ/ অধস্থাৎ মহিষং তদ্বদ বিশিরস্কং প্রদর্শয়েৎ’ – খড়্গ-চক্রের ক্রমিক গতি এবং মহিষ(বৃষ)-এর অর্ধমুন্ড প্রদর্শন নক্ষত্র-গতি সূচিত করছে। দেবী দুর্গার উপাসনার পূর্ববর্তী অমাবস্যা মহালয়ার তর্পণ এবং পরবর্তী অমাবস্যায় দীপাবলী –দুটি অনুষ্ঠানের সাথেই আকাশে আমাদের সুবৃহৎ নাক্ষত্রিক ঘর অর্থাৎ আমাদের গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গার সম্পর্ক রয়েছে। যম চতুর্দশীতে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর তাৎপর্য আমরা প্রবন্ধের পরবর্তী অংশে তুর্কী-মঙ্গোলীয় দেবী উমায়ের উপাসনা রীতি আলোচনার সময় বুঝতে পারব।
এবার দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধ বা বৃষ সংহারের ব্যপারটা একটু দেখা যাক। পন্ডিত উইলিয়াম হার্টনার তাঁর প্রবন্ধে বলেছেন, মোটামুটি ৪০০০ থেকে ৩০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বৃষরাশির মৃত্যু ঘটত শীতের শেষে রবিশস্য বপনের সময়। পরে ১০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে বৃষরাশির মৃত্যু ঘটত বসন্তে যখন দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য এক হত সেই সময়, অর্থাৎ বসন্ত বিষুবচ্ছদে। সেই কারণে পশ্চিম এশিয়ার বাসন্তিক শস্যপ্রধান দেশগুলিতে বসন্তে দেবী উপাসনা হত। প্রাচীন ভারতের পশ্চিমাংশেও দুর্গাপুজো প্রথমে হত বসন্ত কালেই। পরে ৭০০-৮০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে গাঙ্গেয় উপত্যকায় ধান্যনির্ভর কৃষিকার্য শুরু হওয়ায় প্রয়োজন হয় অকাল বোধনের। অকাল বোধনের নাক্ষত্রিক ব্যাখ্যা এবার একটু আলোচনা করা যাক। সূর্য এবং পূর্ণচন্দ্রের শরতে-বসন্তে কন্যারাশিতে থাকার কথা দুর্গার কাহিনির শুরুতেই বলেছিলাম। বিষয়টা আরেকটু সরল করা যাক। বছরের বিভিন্ন সময়ে রাতের আকাশে নক্ষত্রের অবস্থান যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখব, আকাশে বৃষ সংহারের দৃশ্য শুধু বসন্তে নয়, বছরের আর একটি সময়েও দেখা যায়। তবে সেটা সন্ধ্যার আকাশে ঘটে না, ঘটে শেষরাত্রির আকাশে- অর্থাৎ সূর্যোদয়ের ঠিক আগের মূহুর্তে। আগে আমরা সূর্যাস্তের ঠিক পরে বৃষরাশিকে শেষবারের মতো অস্ত যেতে দেখেছিলাম যেদিনের পর থেকে বৃষরাশিকে রাতের আকাশে আর দেখা যায় না, অর্থাৎ বৃষরাশির মৃত্যু ঘটে সেই অস্ত যাওয়ার ঘটনাটি হল Heliacal setting বা সৌর অস্ত। বছরে আরও একটি দিন বৃষরাশিকে শেষবারের মতো সূর্যোদয়ের আগের মূহুর্তে পশ্চিম আকাশে দেখা যায়- সন্ধ্যায় নয়, রাত্রিশেষের প্রাক মূহুর্তে। পরের দিন থেকে বৃষরাশি সূর্যোদয়ের বেশ কিছুক্ষণ আগেই অস্ত যায়, ঠিক প্রাক মূহুর্তে নয়। অর্থাৎ বসন্তের ওই সন্ধ্যাকাশের বৃষরাশির মৃত্যু ছাড়াও বছরে আরেকটি দিন রয়েছে যখন সূর্যোদয়ের প্রাক মূহুর্তে আকাশে বৃষ সংহার হয়। শেষ বারের মতো শেষ রাত্রির পশ্চিম আকাশে বৃষ রাশির এই অস্ত যাওয়াকে বলে Acronychal setting বা প্রভাতকল্পীয় অস্ত। খৃষ্টজন্মের ঠিক ৮০০ বছর আগে বৃষরাশির এই প্রভাতকল্পীয় অস্তের বা বৃষসংহারের ঘটনাটা ঘটত শরত বিষুবচ্ছদ বা অটাম ইকুইনক্সের কাছাকাছি সময়ে। ঐতিহাসিকেরা বলেন, দুর্গাপূজার আকর গ্রন্থ মার্কন্ডেয় চণ্ডী বা সপ্তশতী চণ্ডীও খৃষ্টপূর্ব সপ্তম শতকের রচনা। এবং এই গ্রন্থেরও একেবারে শেষ ভাগে দ্বাদশ অধ্যায়ে ভগবতী-বাক্যে প্রথম উল্লেখ হয়েছে শারদীয় পূজার- ‘শরৎকালে মহাপূজা ক্রিয়তে যা চ বার্ষিকী/তস্যাং মমৈতন্মাহাত্ম্যং শ্রুত্বা ভক্তিসমন্বিতঃ’। শ্লোকের হিসেবে সপ্তশত শ্লোকযুক্ত এই গ্রন্থের ৬৪১টি শ্লোকের পর, দেবী চণ্ডীর যাবতীয় যুদ্ধকাহিনি এবং মাহাত্ম্য বর্ণনার পর। অর্থাৎ যাবতীয় পূজাপাঠ ওই বাসন্তিক দুর্গার মূর্তিতেই হয়। তাতে কোন অসুবিধে নেই। একই দুর্গামূর্তিতে পুজো হতে পারে। কারণ, শুরুতেই বলেছি, শরতে সূর্য কন্যারাশিতে, বসন্তে পূর্ণচন্দ্র কন্যারাশিতে। শরতে দেবী আকাশে থেকেও দৃশ্যমান নন, কেননা তিনি রয়েছেন দিনের আকাশে, সূর্যের আড়ালে। আর রাতে দেবী সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। তাই এটি অকাল, তাই শারদীয়া পূজা অকাল বোধন। অবশ্য অকাল বোধন প্রসঙ্গে আর একটি তত্ত্বও আছে। শরতে সূর্য দক্ষিণায়নে থাকে, তাই উত্তরমন্ডল বা দিব্যমন্ডলের জন্য এটি রাত্রি। সে কারণে দেবতারা নিদ্রিত থাকেন। তাই এটি অকাল।
শতবর্ষ আগে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী তাঁর প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন দেবী দুর্গার নাক্ষত্রিক পটভূমি নিয়ে। ১৮৬৯ সালে জার্মান পন্ডিত কে বি স্টার্ক মিথ্র দেবতার উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বৃষ-সংহারের কথা বলেছেন। ১৮৯৩ সালে লোকমান্য তিলক তাঁর ‘দ্য ওরিয়ন’ বইতে বৃষরাশির কালপুরুষকে হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উৎস বলে ভেবেছেন। আর সেসব সূত্র ধরেই ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞান-ঐতিহাসিক উইলি হার্টনার তাঁর প্রবন্ধে বিশদে বললেন যে, সিংহ কর্তৃক বৃষ সংহারের যে ছবি মধ্য এশিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছে তা আসলে নতুন কৃষিবর্ষের সূচনার ইঙ্গিত। এবং সে সূচনায় স্বাভাবিকভাবেই থাকে শস্যরূপিণী দেবীর উপাসনা। বৃষ সংহার কেন? ওই দিনের পর থেকেই রাতের আকাশে আর বৃষ রাশিকে দেখা যায় না। যেন বৃষ রাশির মৃত্যু হল। আসলে কেন দেখা যায় না, সেটা আমরা জানি। পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্য আকাশের তারাগুলির অবস্থান প্রতি রাতে বদলায়। আজ একটি তারা যেসময় অস্ত যাচ্ছে, আগামীকাল তার চেয়ে ৪ মিনিট আগে অস্ত যাবে। এভাবে ৪ মিনিট করে সরতে সরতে কয়েক মাস পরে রাতের আকাশ থেকে বিদায় নেয় একটি তারামন্ডলী। আবার ঠিক আগের অবস্থানে ফিরে আসে বছরের একই দিনে।
কিন্তু বৃষ রাশি বধে সিংহ বাহিনী কন্যা কেন? বৃষ তারামন্ডলী যখন অস্তপ্রায়, সিংহ রাশি যখন মাথার ওপরে, তখন যদি আমরা আকাশের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব এক তারায় তারায় আঁকা এক নারীমূর্তি। ওটিই কন্যা তারামন্ডলী। গ্রিক উপকথায় ওর নামই ভার্গো। ভার্গোর চারপাশে যদি তাকাই। সামনেই রয়েছে ‘ভূতেশ’ (Bootes) তারামন্ডলী, যার আকার গদার মতো। পাশে রয়েছে চক্রাকৃতি ‘করোনা বোরিয়ালিস’ (Corona Borealis)। অন্যদিকে রয়েছে সর্পাকৃতি হাইড্রা (Hydra)। পায়ের কাছে সিংহরাশি (Leo)। কাছেই উজ্জ্বল কালপুরুষ নক্ষত্রমন্ডলীর কোমরবন্ধনীতে তিনটি উজ্জ্বল তারকা যেন ত্রিশূলের ক্ষতচিহ্ন। তাহলে? দশপ্রহরণধারিণী সিংহবাহিনী দেবীর মূর্তি এবার স্পষ্ট হল কি?
এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে প্রাচীন ধর্মবিশ্বাসে অনুরূপ সিংহবাহিনী মাতৃকামূর্তি রয়েছে। ঐতিহাসিকেরা নাহয় কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নিরিখে দাবী করেছেন যে, সিংহ বাহিনীর মূর্তি পশ্চিম এশিয়া থেকে এসেছে। কিন্তু এর প্রাচীনত্ব ঠিক কতটা?
এর উত্তর খুঁজতে আমাদের আনাতোলিয়া উপত্যকায় যেতে হবে। উপত্যকার শহরটির বর্তমান নাম ‘কন্যা’(প্রাচীন নাম ইকোনিয়াম), পারিপার্শ্বিক সমভূমির নামও কন্যা প্লেইনস (‘ইকোনিয়াম’, ‘কন্যা’ ইত্যাদি নামগুলির উৎস নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে)। সেখানে ৯০০০ বছরের পুরনো ‘কাতলহোয়ুক’ প্রত্নস্থলে যে অজ্ঞাতনামা মাতৃমূর্তি পাওয়া গিয়েছে, তাঁর দেহগঠন অত্যন্ত স্পষ্ট। সেই দেবীর নাভিতে নক্ষত্রচিহ্ন, দুই পায়ের পাশে দু’টি সিংহ, দুই কাঁধে সর্প। তিনি সিংহাসনে আসীন। এত প্রাচীন মূর্তিতেও কন্যারাশির রূপ সুস্পষ্ট। পৃথিবীর কৃষিকাজের ইতিহাস যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখব আনাতোলিয়া উপত্যকার আশেপাশে বার্লি, গম ইত্যাদি বসন্তকালীন ফসলের চাষ শুরু হয়েছিল প্রায় ৯৫০০ বছর আগে। অর্থাৎ কৃষিকর্ম শুরুর সাথে সাথেই মানুষ বীজ বোনার সময়, ফসল কাটার সময় ইত্যাদি নির্দিষ্ট করার জন্য বর্ষপঞ্জি তৈরির তাগিদ অনুভব করেছে, এবং আকাশের নক্ষত্রমন্ডলীর মধ্যে কল্পনা করে নিয়েছে উর্বরতার দেবীমূর্তি বা মাতৃমূর্তিকে। এটিই সম্ভবত প্রাচীনতম সিংহাসীনা দেবীমূর্তি।
‘সম্ভবত’ শব্দটি ব্যবহার করলাম এই কারণেই যে, আনাতোলিয়ার পশ্চিমে পূর্ব ইউরোপের সার্বিয়া-ক্রোয়েশিয়া-পোল্যান্ডে ছড়িয়ে থাকা স্লাভিক উপকথার প্রাচীনতম দেবী ‘মাতি সাইরা জেমিয়া’ আর্দ্র পৃথিবী-মাতার প্রাচীন মূর্তি পাওয়া যায় নি। গবেষকেরা বলছেন, এই আর্দ্র পৃথিবীমাতার উপাসনা নাকি অত্যন্ত প্রাচীন, প্রত্ন প্রস্তরযুগীয়, এমনকি তা ৩০০০০ বছরের পুরনো পর্যন্ত হতে পারে। আর্দ্র বিশ্বমাতৃকা ‘মাতি সাইরা জেমিয়া’র মূর্তিতে পারস্যের দেবী ‘অনাহিতা’, রাশিয়া সীমান্তে মাতৃকা দেবী ‘মোকোশ’-এর অস্তিত্ব মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। এবং সেই হিমযুগীয় মূর্তি পরবর্তীকালের পিতৃতান্ত্রিক খৃষ্টান-ইসলামিক ইত্যাদি ধর্মের দাপটে টিঁকে নেই। উপকথার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে শিল্পীরা মাতকা জেইমার যে ছবি এঁকেছেন তাতে অবশ্য তাঁর নাক্ষত্রিক নারীমূর্তির রূপ কিছুটা ধরা পড়ে। দেবীর দু’পাশে দন্ডায়মান দুই দেবতা সূর্যপথ এবং চান্দ্রপথের প্রতীক। দেবীর পিছনে দন্ডায়মান দন্ডাকার দেবতা ছায়াপথ বা আকাশগঙ্গার প্রতীক। মাতকা জেইমা আকাশের কন্যারাশি, তিনি শরতের দেবী। তাই দুই সন্তান মোরানা এবং জাইলো বিভিন্ন স্লাভিক ভাষায় আক্ষরিক অর্থেই শীত ও বসন্ত।
৩০০০০ বছর আগে কৃষি সভ্যতা ছিল না। কৃষি সহায়ক আবহাওয়া ছিল না। ১০০০০ বছর আগে পর্যন্ত হিমযুগই চলেছে। কাজেই উর্বরতার প্রতীক আর্দ্র-ধরিত্রী-মাতার ধারণা তৈরি হওয়া বিস্ময়কর বৈকি! এই মাতৃকার মূর্তি পাওয়া গেলে, তাঁর উপাসনার সৌরতিথি বা চান্দ্রতিথি জানা থাকলে মাতৃ-উপাসনার ইতিহাস অনেক আলোকিত হত। পশুচারক জনজাতির মধ্যে মাতৃ-উপাসনার ইতিহাস খোঁজার আগে আমরা সারা পৃথিবীর শস্যমাতৃকাদের রূপ একবার দেখে নেব।
খৃষ্টজন্মের ৪০০০ বছর আগে মেসোপটেমিয়ার প্রধান মাতৃকা দেবী ছিলেন ইনান্না। উরুক শহরে ছিল তাঁর প্রধান মন্দির। এছাড়া ইউফ্রেটিস এবং টাইগ্রিস নদীর তীরে তাঁর অসংখ্য মন্দির ছিল। ইনান্নার প্রতীক ছিল একটি অষ্টবিন্দুযুক্ত তারকা। এই দেবী সিংহ বাহিনী। দেবী ইনান্নার উপাসনা হত বসন্ত বিষুবচ্ছদ বা স্প্রিং ইকুইনক্সে, যা সূচনা করত মেসোপটেমিয়ার ক্যালেন্ডারের নতুন বছর। নববর্ষে দেবী-উপাসনার সেই অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘আকিতু’। সে উপাসনায় দেবী ইনান্নার মূর্তির পাশে শস্যপাত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন তাঁর সহচরীরা। তাতে নাহয় তাঁর শস্যাদায়িনী রূপটি স্পষ্ট হল, কিন্তু নাক্ষত্রিক রূপ? ইনান্নার বিভিন্ন স্তোত্রে তাঁর নাক্ষত্রিক রূপটি প্রকাশিত। সুমেরীয় মহাকাব্যের পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শ্লোকে উল্লেখা আছে ‘দেবী ইনান্না আকাশ পরিত্যাগ করলেন, পৃথিবীর প্রান্ত পরিত্যাগ করলেন এবং পর্বতের অন্তরালে চলে গেলেন’। এটি নক্ষত্রমন্ডলীর অস্তের ইঙ্গিত। এছাড়া বসন্তের আকাশে শুকতারা এবং সন্ধ্যাতারার মধ্যবর্তী স্থানে দেবীর অবস্থান সেই কন্যারাশিকেই নির্দেশ করছে। দক্ষিণ ইরাকে সুমেরীয় সভ্যতার বিভিন্ন প্রত্নস্থলে দেবী ইনান্নার যে মূর্তি পাওয়া গিয়েছে যা বর্তমানে ইংল্যন্ড এবং জার্মানির সংগ্রহালয়ের সংরক্ষিত আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে দেবী ইনান্নার পায়ের নীচে দু’টি সিংহের মূর্তি। ওটি সিংহরাশির দু’টি সৌরমাস নির্ণায়ক চান্দ্র নক্ষত্রের প্রতীক। মূর্তিতে দেবী ডানাযুক্ত, যা নক্ষত্রগতির সূচক। সিংহ রাশির পাশে দু’টি পেঁচা রয়েছে, যা রাতের আকাশকে ইঙ্গিত করছে। সুমেরীয় উপকথায় এবং মহাকাব্যে ইনান্না দেবীর আরো গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি জানা যায়, তা হল দেবীর পাতাল প্রবেশ। এটি নিশ্চিতভাবেই কন্যা নক্ষত্রমন্ডলীর উদয়-অস্ত অর্থাৎ রাতের আকাশে ছয় মাস কন্যারাশির অনুপস্থিত থাকা নির্দেশ করে। এবং সেটিই সুমেরীয়দের সাহায্য করতে শস্যকাল তথা বর্ষগণনায়।
তুর্কিস্তান-মঙ্গোলিয়ার দেবী উমাই-এর নাম শুনলেই দেবী ‘উমা’র কথা মনে পড়বে। সংস্কৃত ‘উমা’ শব্দের উৎপত্তি যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখব ‘উ’ অর্থাৎ মহাকালকে পরিমাপ (‘মা’ ধাতুর অর্থ পরিমাপ করা) করেন যিনি। সেই অর্থেই উমা জগৎ প্রসবিনী। তুর্কিস্তান, কাজাক, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়ায়ও দেবী ‘উমাই’ বা ‘উমায়’-এর অর্থ গর্ভধারিণী। এ থেকেই পরে ইংরেজি ‘উম্ব’ শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ গর্ভ। তুর্কি, কিরগিজ, মঙ্গোল এবং সাইবেরীয়দের কাছে দেবী উমায় জগন্মাতৃকা। তিনি নবজাত শিশু এবং নবজাত শস্যকে রক্ষা করেন। মধ্য এবং উত্তর এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাচীন প্রস্তর চিত্রে খোদিত দেবী উমায়ের যে রূপটি পাওয়া গিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে তিনি অষ্টবিন্দুযুক্ত একটি তারকার মধ্যে আসীন। কাজাকস্তানের তারাজ শহরের কাছে প্রাপ্ত খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের উমায় মূর্তির জ্যোতি এবং মুকুট তাঁর নাক্ষত্রিক রূপের ইঙ্গিত করছে। মধ্যযুগে মন্দিরগাত্রে উমায় দেবীর যেসব ছবি এঁকেছেন শিল্পীরা তাতে দেবীর সর্বাঙ্গে আগুন জ্বলছে, মাথার কাছে চন্দ্র, পাশে বিশালকায় সর্প –সব মিলিয়ে রাতের আকাশের সেই কন্যারাশিই। উমাইয় দেবীর যে বার্ষিক অনুষ্ঠান তা পালিত হত মকর সংক্রান্তির পর দ্বিতীয় পূর্ণিমায় অর্থাৎ বসন্ত বিষুবচ্ছদের কাছাকাছি সময়ে। এই অনুষ্ঠানে চৌদ্দটি ধুপকাঠি জ্বালানোর রীতি ছিল, যাকে প্রাচীন মঙ্গোলেরা আকাশের পবিত্র আগুন বলত, তা আসলে কৃত্তিকা নক্ষত্রমন্ডলীর সাতটি তারা এবং সপ্তর্ষিমন্ডলের সাতটি তারার প্রতীক।
সুমেরীয়দের ইনান্না আর ইশতারই নাকি ব্রোঞ্জ যুগে ফিনিশীয় এবং ক্যানানাইটদের কাছে হয়েছে মাতৃকা দেবী অস্তার্তে বা অস্তরেথ বা অষ্টরথ। এই দেবীর প্রতীকেও সেই অষ্টবিন্দুযুক্ত তারকা। দুই হাতে সর্প যা কন্যারাশির পাশে থাকা হাইড্রা বা হ্রদসর্পমন্ডলীকে সূচিত করছে। ভূমধ্যসাগর পারের মানুষের সেকালে সিংহের থেকে ঘোড়ার সাথে পরিচিতি বেশী ছিল, তাই সিংহের পরিবর্তে দেবী অস্তার্তের দু’পাশে দু’টি তেজী ঘোড়া। অস্তার্তে ছিলেন উর্বরতা এবং যুদ্ধের দেবী। ফিনিশীয়দের বিভিন্ন মুদ্রায় অস্তার্তের যে ছবি পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায়, তাঁর পাশে কখনো সিংহ, কখনো ঘোড়া, স্ফিংস, পায়রা এবং একটি তারকা রয়েছে। কন্যারাশির রূপটি বুঝতে অসুবিধে হয় না। ফিনিশীয়দের প্রাচীন শহর সীডনে প্রাপ্ত বেশ কিছু মুদ্রায় দেবী অস্তার্তে রথের উপরে আসীন, যা আকাশপথে নক্ষত্রগতির দ্যোতক।
উত্তর মিশরের দেবী সেখমেট। তাঁর মাথাটি সিংহের। প্রাচীন মিশরীয় শব্দ ‘সেখেম’ থেকে তাঁর নামের উৎপত্তি, অর্থ সর্বশক্তিময়ী। বার্লিনের সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত মিশরীয় নেকলেসে দেখা যাচ্ছে যে, সিংহশীর্ষা দেবী সেখমেট পূর্বমুখী হয়ে সিংহাসনে বসে আছেন, তাঁর পিছনে সর্পমূর্তি। সামনে দেবতা নেখবেট এবং শ্বেতবর্ণ পাখি। অর্থাৎ সেই কন্যারাশির পরিমন্ডল। মিশরে কিন্তু বৃষ সংহারের কাহিনি নেই। কেননা তিন হাজার বছর আগে মিশরে যে কৃষিনির্ভর বর্ষপঞ্জি ছিল তাতে শস্যবপন এবং শস্য আহরণের সময় ছিল অন্যরকম। সে বর্ষপঞ্জিতে সেখমেটের উদয় এবং আলোক উৎসব হত ঠুথি মাসের ২৫ তারিখে, অর্থাৎ বর্তমান গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেবে তা ২৫ অগষ্ট। শস্য আহরণের পর সেখমেটের প্রীতিভোজ পালিত হত মেশির মাসের ১৬ তারিখে, অর্থাৎ গ্রেগরিয়ানের ৩১ ডিসেম্বর।
প্রাচীন পারস্যের দেবী ‘অনাহিতা’। জেন্দ-আবেস্তীয় ভাষা থেকে উদ্ভূত এই দেবীর সম্পূর্ণ নাম ‘আরেদবি সূর অনাহিতা’ যা সম্ভবত আর্য দেবী সূর অনাহিতা বা আর্দ্র দেবী শির অনাহিতা। ‘অনাহিতা’ শব্দের অর্থ আমাদের পরিচিত – বিশুদ্ধ যাকে খন্ডন করা যায় না। দেবী দুর্গার অসংখ্য নামে মধ্যে অনংশা, অনাহিত ইত্যাদি নাম রয়েছে। আর আর্দ্রশির দেবী অনাহিতা মানে বৃষ বিজয়িনী সর্বশক্তিময়ী দেবী, কেননা ‘আর্দ্রা’ তারকা হল বৃষ রাশির সর্বোজ্জ্বল। বৃষরাশি এবং বর্ষাকালের আর্দ্রতার অবসানে তিনি নতুন শস্য আনেন। ইরানের কাঙ্গাবর এবং বিশাপুরে দেবী অনাহিতার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে স্তম্ভাকার গঠন যা আমাদের দেশে সূর্যমন্দিরে দেখা যায় তা দেবী অনাহিতার নাক্ষত্রিক অবস্থান নির্দেশ করছে। খৃষ্টীয় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতকে ইরানের সাসানীয় রাজাদের তৈরি ব্রোঞ্জপাত্রে অলংকৃত দেবী অনহিতার মূর্তিতে দেবীর চারপাশে শস্য, পাখি, সাপ এবং অস্ত্র রয়েছে যা স্বাভাবিকভাবেই আকাশের তারামন্ডলীর প্রতীক।
(পরবর্তী সংখ্যায় নক্ষত্রের ইতিহাস ও বর্ষগণনা)
১। শ্রী শ্রী চন্ডী-উদ্বোধন, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃঃ ৯৫
২। পূজাপার্বণের উৎসকথা- পল্লব সেনগুপ্ত, পুস্তক বিপণি, কলকাতা, ১৯৮৪, পৃঃ ৯২-৯৩
৩। ‘আকাশের তারায় মহিষাসুরমর্দিনী’-বিমান নাথ, দেশ, অক্টোবর ২০০৫
৪। Ancient Goddesses- L. Goodison. C. Morris (Editors). British Museum Press. 1998
৫।The Once and Future Goddess- Elinor W. Gadon, Page 119
৭। A Reconsideration of the Aphrodite-Ashtart Syncretism". - Budin, Stephanie L. (2004). Numen 51 (2): 95–145.
৮। Ancient Egyptian Literature, Volume Two: The New Kingdom. Lichtheim, Miriam (2006) University of California Press. pp. 197–199
৯। "Anāhīd", Encyclopædia Iranica 1- Boyce, Mary (1983), New York: Routledge & Kegan Paul, pp. 1003–1009


২টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র