মিঠুন কুমারের অভিসার যাত্রা
শ্রী মিঠুন কুমার মণ্ডল অলস দুপুরে দোকানে বসে মাছি তাড়াচ্ছিলো আর মনে মনে একটা লিস্ট ভাঁজছিলো। নাঃ এ লিস্ট খাতায় লেখা সম্ভব নয়, কে কোথায় দেখতে পাবে। এ লিস্ট মনের গোপন কন্দরে লুকিয়ে রাখার লিস্ট।
ব্যাপার হলো গিয়ে একমাস বাদেই পুজো। পুজো উপলক্ষে মিঠুনের একখান গার্ল ফ্রেন্ড চাই। না না সারাবছর ধরে বান্ধবীর নখরা সহ্য করা মিঠুনের ধাতে নেই। তার চাই স্পেশাল অকেশনের জন্য হাতে গরম ইস্পিশাল প্রেমিকা। ষষ্ঠীতে বোধন করে দশমীতে বিসর্জন দিতে পারলেই কাফি কিন্তু আজকাল মেয়েগুলো এমন হাড়ে বজ্জাত একমাস আগে থেকে প্রেম পিরীতি না দেখালে পুজোর সময়ে মিঠুনের পক্ষীরাজ থুরি বাইকে চড়ে বেড়াবেই না। হ্যাঁ মিঠুনের একটা থার্ড হ্যান্ড মোটরবাইক আছে, আর আছে একটা পুরনো ভাঙা চোরা জিনিসের অর্থাত্ কিনা কাবাড়িওয়ালার দোকান। মা বাবা দেশে চলে যাবার আগে মিঠুনের বিয়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট চাপ দিয়েছিলো। কিন্তু মিঠুন কুমার তার রঙিন পাখাদুটো ছাঁটতে মোটেই উৎসাহী নয়। কত ফুলে কতো মধু, ঘরের ভরা পাত্রে মিঠুনের কি তেষ্টা মেটে?
তা যা বলছিলাম মিঠুন দোকানে বসে মনে মনে লিস্ট বানাচ্ছিলো, মেয়েদের নামের লিস্ট। মেয়েগুলোর নাম কি? আরে মশাই নামে কিবা আসে যায় জুলি,শিলা,রানো,জমালো যে কোন বেপাড়ার মেয়ে চলবে। না না পাড়ার মেয়ের হেভি রিস্ক... বিসর্জনের পরেও প্যানপ্যান করে পেছন পেছন ঘুরে বেড়ায়, কেলোর কারবার। সে বার দুয়েক কেস খেতে খেতে বেঁচে গেছে। মিঠুন নিজেকে রণবীর কাপুর কি এমরান হাশমি ভাবতে ভালোবাসে, পাড়ার মেয়েদের খালি ঝুলে পড়ার তাল। অন্য এলাকার মেয়ে হলে চট করে পাত্তাই জোগাড় করতে পারবে না, ফলে তার জন্য বেপাড়ার মেয়ে জিন্দাবাদ। সারা বছর মিঠুন ইদিক উদিক বৌদিবাজি করতেই বেশি পছন্দ করে। বেশ ঠান্ডা সিনেমা হলে বসে মিঠে খুনসুটি। ট্যাক্সি চড়বে মিঠুন ভাড়া গুনবে দাদা। একে তো রিস্ক কম তার ওপর মিঠুন এটাকে সোশ্যাল ওয়ার্ক বলেও মনে করে। স্বামীরা সময় না দিলে বৌদিগুলো কেমন দুঃখী দুঃখী মুখ করে ঘুরে বেড়ায়, মিঠুনের বড্ড কষ্ট হয়। তবে পুজোর কথা আলাদা। দাদারা সে সময়ে বাড়িতে থাকে বৌদিগুলোও লাল পাড় শাড়ী সিঁদুর পরে বরের ল্যাজ ধরে এমন সতী লক্ষী ভাব দেখায় যে মিঠুনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে যায়। তবে কিনা পুজো একটা ইস্পিশাল সময় এই সময় মিঠুন চার চারটে দিন দোকান অব্দি বন্ধ রাখে।তাছাড়া কাজ কি কম, একমাস আগে থেকে শর্ট লিস্ট করা মেয়েগুলোর পেছন পেছন ঘুরঘুর করে দেখে নিতে হয় কোনটাকে তোলা যাবে।
দেখতে দেখতে খাটাখাটনির মধ্যে একটা মাস তো পেরিয়ে গেলো। এবার মিঠুনের হাতে একটা দারুণ ছম্মকছল্লো ফেঁসেছে। মেয়েটার নাম ববিতা। একটু মনটা খচখচ করছে ববিতার বাড়ি খুব একটা দূরে নয় স্রেফ দুটো পাড়া ছেড়েই। কিন্তু ও মেয়ের কি ইস্টাইল, হাই হিল জুতোর কি খটমট... শাড়ির কি খসখস। উড়ন্ত হাউই যেমন ফোঁস করে আকাশের বুক চিরে বেরিয়ে যায় ববিতা রাণীও তেমন মিঠুন কুমারের দিল জিগরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মিঠুন আর ববিতা পুরো হৃত্বিক ক্যাটরিনার মতো পুজো প্যান্ডেল কাঁপিয়ে ঘুরে বেড়ালো। ফুচকা খেলো, আইসক্রিম খেলো এমনকি পর্দা টানা রেস্টুরেন্টে বসে চুমুর টাকনা দিয়ে দিয়ে চিকেন কাটলেট অব্দি খেলো। লেটেস্ট ট্রেন্ড ফলো করে মিঠুনের নীল টিশার্টের সাথে ম্যাচ করে ববিতা নীল শাড়ি পড়লো। যাকে বলে পুরো মাখোমাখো প্রেম। প্রেম ট্রেম তো ঠিক আছে কিন্তু মেয়েটা পুরোপুরি মিঠুনের হাতে তো আসেনা, একটু ছোঁয়া দিয়ে ভেগে যায়। এদিকে মিঠুনের জেদ চেপে গেছে ছম্মকছল্লোকে একবার অন্তত হানড্রেড পারসেন্ট চাইইই চাই। অক্টোবর শেষাশেষি পুজো ছিল, অক্টোবর কেটে নভেম্বরের মাঝামাঝি হয়ে গেল, মিঠুন ববিতাকে পটিয়েই যাচ্ছে। কতো গিফট, কতো সোনামনা, কতো জন্মান্তরের সম্পর্কের প্রতিজ্ঞার শেষে মিঠুন ববিতার সেন্টুতে সুড়সুড়ি দেওয়া ধরলো। এ ববিতার কেমন প্রেম ? যার সাথে এত্তো ভালোবাসা তাকে বিশ্বাস অব্দি করেনা? কেন মিঠুন কি ভেগে যাবে? এই চিনলো সে মিঠুনের অমর প্রেমকে। তেমন তেমন তেলে ভগবানের আসন টলে এতো তেল আর সেন্টুর কম্বো প্যাক, ববিতা রাণীও কুপোকাত। শেষ পর্যন্ত ববিতা বললো আগামী শনিবার সন্ধ্যেবেলা তার বাড়িতে কেউ থাকবেনা, মিঠুন যেন চুপিসারে তার সাথে দেখা করতে আসে।
শনিবার সন্ধ্যে বেলা মিঠুন টগবগে মেজাজে সেন্টে চান আল পাউডারে হোয়াইট ওয়াশ করে পকেটে স্ট্রবেরি গন্ধি ড্যাশ আবরক নিয়ে চিকলেট চেবাতে চেবাতে ববিতার বাড়িতে অভিসার যাত্রা করলো। বাইকটা নিতে মানা, পাড়া পড়শি পাছে টের পায়। দরজায় টুকটুক করে টোকা দিতে না দিতেই লালে লালেশ্বরী ববিতা দরজা খুলে দিলো। উঃ ঘরে আবার ধুপ জ্বেলেছে মেয়েটা…. মিঠুন খুশিতে ডগমগ। দরজা বন্ধ করে গুছিয়ে বসে চুমচাম খেয়ে ব্লাউজের হুক খোলা শুরু করেছে কি করেনি দরজায় ধাঁই ধাঁই ধাক্কা। বাপরে বাপ সে কি ধাক্কা যেন বাড়িতে পুলিশ পড়েছে, পলকা প্লাইয়ের দরজা ভাঙে আর কি। ববিতা মিঠুনকে কোন রকমে খাটের তলায় চালান করে শাড়িটা আলুথালু ভাবে জড়িয়ে ছিটকিনি খুলে দিলো। ববিতার বাপ, মা দুই মস্তান ভাই আর পিছনে পঙ্গপালের মতো লোক। সবাই মিলে মিঠুনকে টেনেটুনে খাটের তলা থেকে বের করে আনলো। খাটের তলায় ঢোকার সময়ে মিঠুন কুমারের মাথায় একটা নৈনিতালের নতুন আলু হয়ে গিয়েছিল বেরোনোর সময়ে পায়ের গোড়ালিটা গেলো মচকে। জনগণ ফুঁসছে, ববিতা ফোঁপাচ্ছে…. কে যেন মিঠুনের চোয়ালে একটা জম্পেশ আপারকাট ঝেড়ে দিলো। পাড়ার মেয়ের ইজ্জতে হাত, এর একটাই প্রতিকার... বিয়ে করতে হবে। মিঠুনের অভিসার যাত্রা মারমুখী জনতার হাতে শ্মশান যাত্রা হয় আর কি। গণপিটুনির ভয়ে শ্রী মিঠুন কুমার মণ্ডলের বিয়েতে রাজি না হয়ে উপায়ই বা কি। মুহূর্তের মধ্যে মারমুখী জনতা বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে গেল। ম্যাজিকের মতো টোপর মুকুট ধুতি ঠাকুরমশাই ফুলের মালা সব জোগাড় হয়ে গেল। ববিতা তো আগে থেকে লাল শাড়ি পরেই ছিল মিঠুনের মাথার আলু ঢেকে গেলো টোপরে এমন কি বড় বড় হাঁড়ি ডেকচিতে মাংস ভাতও চড়ে গেল। পুরো ব্যাপারটাই এত ক্ষিপ্রতা এবং পারফেকশের সাথে হতে লাগলো যে মিঠুন কেমন প্লানিং এর গন্ধ পাচ্ছিলো। কিন্তু পাশেই ববিতার ভাইয়ের কোমরের কাছে উঁচু হয়ে থাকা মালটা যে ছঘরার আসলি চিজ সেটাও বুঝতে তার কোন অসুবিধাই হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত পুঁই পুঁই সিটি উলু শাঁখ বাজিয়ে ববিতা আর মিঠুনের শুভ পরিণয় সম্পন্ন হলো। খচখচ করে সবাই মোবাইলে ছবি তুলছে। তাই দেখে মিঠুনের নিজের মোবাইলটার কথা মনে পড়ে যেতে সে দেখলো মোবাইলটা এই হুলস্থুলের মধ্যে কে যেন ঝেড়ে দিয়েছে।
সারা রাত বাসর জাগার পর মিঠুন ভোরবেলা লেঙচে লেঙচে উঠোনের একপাশে বাথরুমে গেল। উঠোনের মাঝখানে তখনো তার হাড়িকাঠ থুরি বিয়ের যজ্ঞটা পরিষ্কার করা হয়নি। বাথরুমে একটু একা হয়ে মিঠুন তলিয়ে ভাবলো অসুবিধা তেমন কিছু হবেনা। ববিতা বাড়িতে থাকবে রান্নাবাড়া করবে। সে দোকানে যাওয়ার নামে বৌদিবাজি করে আসবে, বৌ মোটেও টের পাবেনা। মিঠুনের আঁশটে মন আসতে আসতে সবে ফুরফুরে হয়ে উঠছিলো সে শুনতে পেলো বাথরুমের পেছন দিকের পচা ডোবাটার ধারে দাঁড়িয়ে ববিতা কাকে যেন বলছে
" বে হয়ে গেলো তো কি হলো কেল্টুদা? দুপুর বেলা ও তো দোকানেই থাকবে। তোমরা না হয় মাঝেমধ্যে করে যেয়ে আমার শরীর গতিকের খবর নিয়ে এসো…."
বৌয়ের খিলখিল হাসি কানে যেতেই মিঠুনের ঘুঁষি খাওয়া চোয়ালটা আবার চিনচিন করে উঠলো।
সুচিন্তিত মতামত দিন