চৈতালি দাস

মায়াজম
0
                নতুন করে পাবো বলে



ত দুদিন ধরে লোকটাকে খেয়াল করছে স্বপ্না। ডাইনিং হলে কোণার টেবিলটায় পিছন ফিরে বসে ,নিজের মনে খাবার খায় ,তারপর উঠে চলে যায়। মাম্পিকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো ম্যানেজার বাবুর উনি দূর সম্পর্কের আত্মীয়। বিদেশে থাকেন ,মাঝে মাঝে কলকাতায় আসেন। এবারে ঠিক



করেছেন কয়েকদিন এই বৃদ্ধাবাসে কাটাবেন।
"আনন্দআশ্রম " বৃদ্ধাবাসের তিনতলায় দুটো গেস্টরুমের ব্যবস্থা আছে। এখানে বৃদ্ধ বৃদ্ধারা এসে কয়েকদিন কিংবা কয়েকমাসের জন্যে থাকতে পারেন অতিথি হিসেবে।
স্বপ্না এই বৃদ্ধাবাসে প্রথম দিকে এভাবেই এসে মাঝে মাঝে থাকতো। থাকতো মানে পিন্টুই এসে রেখে যেতো ,যখন পিন্টু আর বউমা ওদের মেয়ে পলাকে নিয়ে পলার গানের প্রোগ্রামের জন্য দেশের বাইরে কোথাও যেতো অথবা গানের ওয়ার্কশপ কিংবা কোনো ট্রেনিং শেসনে মুম্বাই যেত। কয়েকবছর হলো পাকাপাকি ভাবে পিন্টু মুম্বাইয়ের সেটল হয়ে গেছে । কলকাতার চাকরী ছেড়ে মুম্বাইয়ে কিছু একটা কাজ করছে - এ সব কিছুই ও আর বউমা করছে মেয়ের গানের কেরিয়ারের কথা ভেবেই করা। স্বপ্নাও তখন থেকে পাকাপাকি ভাবে এই আনন্দআশ্রমের আবাসিক হয়ে গেছে।
স্বপ্নার কোলে পিঠে পলা বড়ো হয়েছে । স্বপ্নার এই একটাই নাতনী ।যেমন সুন্দর মুখখানা তেমন গানের গলা। স্বপ্না নাতনীকে আদর করে পুলি বলে ডাকে। স্বপ্নাদের বাড়িতে কোনদিন গান বাজনার চল ছিল না ,। পড়াশুনার বাড়ি ছিল ওদের । তখনকার দিনে কলকাতার নাম করা ডাক্তার , ব্যারিস্টার, প্রফেসর ছিল স্বপ্নার বাপের বাড়ি আর শশুরবাড়ির লোকেরা। পল্টু ভালবেসে বিয়ে করেছিল তমালীকে। তমালীর গানের গলা খুব ভালো ছিল ।ওর ইচ্ছে ছিল সিনেমায় গান গাইবে কিন্তু সে সুযোগ ঘটেনি তাই মেয়েকে দিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণই হলো তমালীর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। পল্টুর প্রথমে এতে আপত্তি ছিল কিন্তু তমালী বেঁকে বসায় পল্টুও বাধ্য হয়েছিল মেয়েকে গানের কেরিয়ারে যেতে দিতে। তবে তমালী ওর স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে । পলার যেদিন কোনো চ্যানেলে প্রোগ্ৰাম থাকে সেদিন আশ্রমের সকলের সঙ্গে বসে বিশাল বড়ো দেয়াল টি ভি তে আদরের পুলির গান শুনে মন ভরে যায় স্বপ্নার। আশ্রমের অন্যান্য আবাসিকরাও এখন পুলির ফ্যান। আশ্রমের সবাই এখন স্বপ্নাকে পলা ভট্টাচার্যের ঠাকুমা হিসেবেই বেশী সম্মান করে। স্বপ্নার এখানে সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস । অন্য সকলের চেয়ে সুযোগ সুবিধাও একটু বেশীই পায় স্বপ্না। এই সব দেখে শুনে মনে মনে ভাবে গানের কেরিয়ারে দাঁড়ানো শক্ত কিন্তু একবার দাঁড়াতে পারলে পুরো পরিবারের নাম ডাক হয় শুধু দেশ জুড়ে নয় ,বিশ্বজুড়ে। এ কম কথা নাকি।
খাবার টেবিলে অনিমা সবাইকে বলে গেছে কাল শিক্ষকদিবস উপলক্ষে দোতলার হল ঘরে অনুষ্ঠান হবে বিকেল পাঁচটা থেকে। এই বৃদ্ধাবাসের প্রায় চল্লিশ ভাগ আবাসিকই তাদের চাকরি জীবনে স্কুল কলেজে শিক্ষকতা করেছেন,, তাই এই দিনটিতে বিশেষ ভাবে শিক্ষকদিবস পালন করা হয়। বৃদ্ধাবাসের ট্রাস্টিরাই এক এক বার এক একটা মিউজিক স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ,সেই স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখানে এসে নাচ, গান ,নাটক , আবৃত্তি করে। আবাসিকদের মধ্যে অনেকেই তাদের নিজেদের শিক্ষক জীবনের স্মৃতিচারণ করেন ।
স্বপ্নার পড়াশোনা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত ।সেটাও শেষ করতে পারেনি তার আগেই বিয়ে হয়ে যায় । এই বৃদ্ধাবাসে এসে যখন দেখে তার বয়সী কিংবা তার থেকে বেশী বয়সের কত মহিলা কত শিক্ষিত ,তখন মনে মনে আফসোস হয় আর বাবার উপর রাগ হয় বাবার গোঁড়ামির জন্য।
পাঁচটা বাজতে দশে স্বপ্না ওর তিন তলার ঘর থেকে বেরিয়ে লিফ্টের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখলো ওই ভদ্রলোক ও লিফ্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। দুজনেই দোতলায় নেমে হলঘরে ঢুকলো। এই হলের একদিকের দেয়ালে বিশাল এল. ই. ডি টিভি, অন্য দিকের দেয়ালে ঠাকুরের আসন ,তাতে ঠাকুর রামকৃষ্ণ, মা সারদা আর স্বামীজির ছবি রামকৃষ্ণ মিশনের ধাঁচে সাজানো। স্বপ্না ঠাকুর প্রণাম সেরে নিয়ে সামনের দিকে একটা চেয়ারে বসলো । ভদ্রলোক একেবারে পিছনের সারিতে গিয়ে বসলেন। এক এক করে দীপা দি, সুমিতা , রাণু, সেন দা, সমর দা , বুলা আরো সকলে এসে পড়লো।
মিস্টার পাল হাতে মাইক নিয়ে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করলেন ।তারপর বললেন ,আমাদের মধ্যে আজ আছেন বিখ্যাত স্ট্যাটিসটিশিয়ান ড. নিলয় বসু। ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউটে যিনি বহুদিন অধ্যাপনার পর বিশ্বের নানা বিখ্যাত ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন---- বহুবছর আমেরিকায় বসবাস করে এখন তিনি আবার কলকাতায় ফিরে এসেছেন ----
শেষের দিকের কথা গুলো স্বপ্নার কানে আর ঢুকছিল না যেন। স্বপ্না ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনের সারিতে বসা নিলয়কে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো উঁকি ঝুঁকি দিয়ে। মিস্টার পাল ড. নিলয় বসুকে কিছু বলতে অনুরোধ করায় নিলয় একটু ইতস্তত করে একেবারে সামনে রাখা চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলেন।
নিলয় বসু মি. পাল কে ধন্যবাদ দিয়ে কথা শুরু করলেন।এতক্ষণে স্বপ্না নিলয়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেল । চমকে উঠলো স্বপ্না ,গলার আওয়াজ একটুও পরিবর্তন হয়নি । হ্যাঁ , একেবারে সেই রকম আওয়াজ তবে আগের থেকে একটু ধীরে কথা বলছে বাবু দা ! চোখ দুটো এখনো চকচক করছে আগের মত তবে আগের থেকে আরো অনেক ফর্সা হয়ে গেছে বাবুদা।
স্বপ্নার বাবু দা, মানে ড‌. নিলয় বসু।
বাবা একদিন চেম্বার থেকে ফিরে মাকে বললো ,"আজ সন্ধ্যায় চেম্বারে এসেছিলো বসন্ত দা , ওদের দেশ থেকে এক এক করে সব কলকাতায় চলে আসছে । কদিন হলো একটা ছেলে এসেছে, খুব মেধাবী । কলকাতার কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করতে চায় । বসন্ত দা বলছিল , ছেলেটা এখন বসন্তদার বাড়িতেই আছে , তবে ওর হাত খরচের একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আমি মনে মনে ভাবছি স্বপ্না আর রত্নাকে অঙ্ক আর ইংরিজিটা ও পড়াক। মেয়েদুটোও কিছু শিখবে আর ছেলেটারও দু পয়সা হাতে আসবে।"
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে হাত- পা ধুয়ে খেতে বসে মা বললো ,"স্বপ্না ,রত্না আজ তোমাদের মাষ্টারমশাই মশাই আসবেন । তোমাদের বাবা বলেছেন উনি তোমাদের অঙ্ক আর ইংরিজি পড়াবেন। তাড়াতাড়ি খেয়ে বই খাতা নিয়ে পড়তে বোসো বাইরের ঘরে।"
বাবুদার কাছে অঙ্ক আর ইংরিজি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস, ভূগোল , সিনেমা ,গান সাহিত্য আরো কত কিছু শেখা হয়ে যেত ওদের দুই বোনের। বাবু দা যেদিন ই পড়াতে আসতো , মা বাবুদাকে খাবার খাইয়ে তবেই ছাড়তো। স্বপ্না ,রত্না দুই বোনেরই পরীক্ষার ফল আগের থেকে অনেক ভালো হচ্ছে এখন। বাবু দা এখন বরাহনগরের স্ট্যাটিসটিকালে এম . এস . সি পড়ছে। কলেজ থেকেই চলে আসে স্বপ্নাদের বাড়ি। প্রথম প্রথম সপ্তাহে তিন দিন আসতো এখন রোজ আসে। স্বপ্নার সামনে প্রিইউনিভার্সিটি পরীক্ষা আর রত্নার ক্লাস নাইন। দুজনেরই পড়ার চাপ বেড়েছে।
সামনেই দুর্গাপুজো মা বাবুদার জন্য ধুতি আর সার্ট কিনে আনলো গড়িয়াহাট থেকে।
প্ল্যান হলো সপ্তমীর দিন দুপুরে ওরা দুই বোন আর বাবুদা যাবে উত্তর কলকাতার ঠাকুর দেখতে। সেদিন সকাল থেকে রত্নার ধুম জ্বর। বাবা দু ডোজ ওষুধ দিলো কিন্তু রত্নার জ্বর ছাড়লোনা। দুপুরবেলা বাবুদা এসে হাজির । স্বপ্না কাঁচুমাচু মুখ করে বললো ," আমাদের আজ ঠাকুর দেখতে যাওয়া হবে না গো।রত্নার খুব জ্বর।"
বাবু দা বললো," তাতে কি হয়েছে , তুমি চলো, রত্নার জ্বর ছেড়ে গেলে আর একদিন আমরা সবাই মিলে যাব।"
বাবু দার সঙ্গে একা ঠাকুর দেখতে যাবে শুনে স্বপ্না মনে মনে দারুণ খুশি হলো কিন্তু বোনের জ্বর ,ওকে রেখে যাওয়ার কথা ভেবে খারাপ লাগলো।
মা কে বলতেই মা এক কথায় রাজি হয়ে গেলো , বললো," যা বাবুর সঙ্গে ঘুরে আয় ,ও তোর বড়ো দাদার মত।"
বাবু দা বললো ,"চলো স্বপ্না আজ তোমাকে ট্রামে চড়াবো ।" স্বপ্নাদের গাড়ি , ড্রাইভার সব আছে । ওরা বেশীর ভাগ সময়েই বাইরে গেলে গাড়ি
চড়ে যায়। বছরে হয়তো দু- তিন বার ওরা ট্রামে চড়ে । বাবুদা ট্রামে চড়াবে শুনে স্বপ্না আনন্দে লাফিয়ে ওঠে ।
হাজরা রোডের মোড় থেকেই দুজনে ট্রামে চেপে বসে।
সপ্তমীর দুপুরে রাস্তাঘাটে তেমন ভীড় নেই বিকেল থেকে ভীড় শুরু হবে। দুজনে পাশাপাশি সীটে বসেছে। স্বপ্নার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে , ইচ্ছে করছে বাবু দার হাতটা ধরে বসে কিন্তু বাবুদা যদি ওকে হ্যাংলা ভাবে, খারাপ মেয়ে ভাবে তাই নিজেকে সংযত করে নিলো। বাবু দা ট্রামে যেতে যেতে বিশেষ বিশেষ জায়গা গুলো চিনিয়ে দিচ্ছে স্বপ্নাকে । স্বপ্না এর আগে এসব জায়গা বহুবার দেখেছে কিন্তু আজ তার সব নতুন মনে হচ্ছে। বাবু দার হাত ,কাঁধ মাঝে মাঝে স্বপ্নাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে ,স্বপ্নার গা শিরশির করে উঠছে। এমন অনুভূতি আগে কোনোদিন হয়নি স্বপ্নার।
দূর থেকে দেখা যাচ্ছে নেতাজীর ঘোড়ায় চড়া স্ট্যাচু । শ্যামবাজারের মোড় এসে পড়েছে।
বাবু দা হঠাৎ স্বপ্নার হাতটা বেশ চেপে ধরে বললো ," চলো এসে পড়েছি, নামতে হবে।"
সেদিন ওরা দুজনে দুজনার হাত আর ছাড়েনি।
সন্ধেবেলা বাড়ি ফেরার পর থেকে স্বপ্না একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। সারারাত ঘুমোতে পারেনি। বাবুদা কে ছেড়ে এক মুহুর্ত থাকা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। পুজোর কটা দিন বাবুদা আর আসেনি ।
পুজো শেষ হয়ে গেলো । বাবুদার দেখা নেই। মা একদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করলো ," হ্যাঁ গো, ছেলেটা বিজয়ায় একটা প্রণাম করতেও এলোনা।"
বাবা বললো ," বসন্তদাকে লোক মারফৎ খবর পাঠিয়ে ওই ছোঁড়াটাকে এ বাড়িতে আসতে বারণ করে দিয়েছি। সেদিন তোমার মেয়েকে পুজো দেখার নাম করে নিয়ে বেরিয়ে ওরা বাগবাজারের গঙ্গার ঘাটে বসেছিল। আমার পেশেন্ট চক্রবর্তী বাবু তোমার মেয়ের সঙ্গে ওই ছোঁড়াটাকে দেখে আমাকে খবর দিয়েছেন।"
এরপর স্বপ্নার প্রবল আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তাকে পড়াশোনা ছাড়িয়ে দিয়ে সামনের অগ্ৰহায়নেই বিয়ে দেওয়া হয়েছিল কলকাতার আর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে।
নিলয় বসু এতক্ষণ তার ছাত্রজীবনে গল্প বলে শোনালেন আবাসিকদের। নিলয় বসু,যিনি এতদিন ধরে সকলের অলক্ষে ছিলেন তিনি আজ হয়ে গেলেন সকলের মধ্যমণি। সকলে নিলয় বসুর অধ্যাপনা জীবনের কথা ,বিদেশে পড়ানোর অভিজ্ঞতা জানতে চাইলেন। নিলয় বসু সংক্ষেপে যতটুকু বললেন তাতে বোঝা গেলো তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্ত্য বিশ্ব জুড়ে তাঁর প্রচুর ছাত্রছাত্রী এবং নামডাক। এইসব শুনতে শুনতে সমরদা বললেন ," স্যার আপনি এত কিছু ছেড়ে কলকাতায় ফিরে এলেন কেন ?"
নিলয় বসু এক মুহুর্ত যেন কিছু ভাবলেন তারপর বললেন ," গত বাহান্ন বছর ধরে আমার খুব নিকট আত্মীয়ের জন্য অপেক্ষা করে বসেছিলাম। পৃথিবীর যে দেশেই থাকি না কেন কলকাতায় ফিরে ফিরে এসেছি আর তাকে খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। গত এক'বছর হলো জানতে পেরেছি সে কলকাতার কোনো ব‌দ্ধাবাসে আছে। বিভিন্ন বৃদ্ধাবাসে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি কিন্তু হতাশ হয়েছি। দিন সাতেক আগে আমার আত্মীয়ের কাছে কথায় কথায় জানতে পারলাম নামী প্লেব্যাক সিঙ্গার পলার ঠাকুমা এই বৃদ্ধাবাসে থাকে। মহিলার নাম জানতে চাইলাম। নামটা শুনে মনে হলো আমি যাকে খুঁজছি এ তো সেই হতে পারে , একবার গিয়েই দেখা যাক। শেষমেষ চলে এলাম আপনাদের এখানে আর পেয়ে গেলাম আমার স্বপ্না গাঙ্গুলীকে ,তিনি যদিও এখন স্বপ্না ভট্টাচার্য।"
এতক্ষণে স্বপ্নার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে, বিড়বিড় করে বলছে," বাবু দা , তুমি কি পাগল হয়ে গেছ! এসব কি বলছো?"
নিলয় বসু এগিয়ে এসে স্বপ্নার হাত ধরে বললো , " স্বপ্না, বাহান্ন বছর ধরে তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আজ তোমাকে এমনভাবে পাবো সত্যিই ভাবিনি। তবে অদৃষ্টের পরিহাস দেখো , আজ তুমিও বৃদ্ধাবাসে আর আমিও। আমরা দুজনে মিলে একসঙ্গে থাকতে পারি না কি? তুমি তো জানো আমি আমার জীবন শুরু করেছিলাম শূন্য থেকে , আজ আমার কাছে সব কিছু আছে শুধু নিজের ঘর ছাড়া। যদি আমরা আবার বাহান্ন বছর পিছিয়ে যাই ,শুরু করি আমাদের একসঙ্গে পথ চলা।"
স্বপ্নার চোখে জল চিকচিক করছে । কাঁপা কাঁপা গলায় বললো," এবার থেকে পুজোর পাঁচটা দিনই ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাবে তো ? গাড়িতে নয় কিন্তু ট্রামে করে।"
নিলয় বসুর দরাজ গলার হাসিতে দোতলার হলঘর গমগম করতে লাগলো।
স্বপ্নার চোখের জল গড়িয়ে গলা বুক ভেসে যাচ্ছে। মি. পাল মিষ্টির বাক্সটা তুলে নিয়ে বললেন," এমন আনন্দের দিনে মিষ্টিমুখ হয়ে যাক তাহলে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)