শিউলি ফোটার বেলায়--
-- একটু খানি প্লিজ প্লিজ এসো, পাঁচ মিনিট
-- পাগল নাকি তুমি, নবমীর অঞ্জলি হবে এক্ষুনি আমার ডাক পড়বে--
-- পড়ুক, তুমি ছাড়া কি পাড়ায় আর লোক নেই!
-- তা থাকবে না কেন! এরকম বেরনো যায় কাজ করতে করতে
ছিঃ! একি পাগলামো তোমার!
-- আমি যে প্রেমিক! তোমার দুর্মর প্রেমিক!
-- হ্যাঁ এক মাথা সাদা চুল ওলা প্রেমিক! তায় বিবাহিত, মেয়ের বাপ--
-- হা হা হা, আগেতো আমার জীবনে আসো নি তুমি!
-- আমি তোমার থেকে অনেক টাই ছোট ভাই!! আসব কি করে!
ঠিক আছে তুমি এসো তো! এই, কি শাড়ি পরেছ!
-- কি পরবো! তাঁতের ছাড়া! কাজ করতে হয় সকালে
-- আর আমার টা কবে পরবে! সখ করে রঙোলি থেকে শাড়ি দিলাম!
-- ইস! এমনকরে বলো না, এত দামী শাড়ি কেন দিলে গো
লজ্জা করে আমার!
-- তুমি ব্রান্ডেড ছাড়া পরো না তো। আরে তোমার থেকে দামী কি আছে! কিন্তু আমি দেখতে পাই না! কষ্ট লাগে-
-- আমার লজ্জা করে, আমি পরবাসে থাকি! কিছুই করতে পারি না-- কখোনো সখনো একটু দেখা ছাড়া-- আবার এই শাড়ির বিল নিয়ে বাড়িতে তো ধরাও পড়ে গেলে বলো, ইসস ছিঃ
-- আমার হাতের পোখরাজ টা? সেটা যে তুমি দিলে!
-- আরে, সে কে বলেছিল, চাকরীর প্রমোশন হবে তাই ইই
-- অত টাকাও কি আমার ছিল তখন! তুমি বড়লোকের বউ!!
-- ছিঃ ছিঃ একি কথা --
-- শিউলি কি রোজ রোজ ফোটে? আমার বাড়ির শিউলি গাছ টা মায়ের হাতের করা-- মহালয়ার দিন বড় বেশি মার কথামনে পড়ে-- তুমি আমার সেই একটু ক্ষণের শিউলি ফুল, সুরবাহারের ঠাঁট,
-- আর তুমি! আমার কাশ ফুল-- তোমার মত বলতে পারি না তো!
--- আজ সিঁদুর নিয়ে আসবো।দশমীর দিন তুমি এই সিঁদুর ঠেকিও দূর্গার পায়ে-- আর যদি ছোঁয়াও! তারপর একটি বারের জন্য পুরোপুরি আমার হবে? বড় ইচ্ছা তোমাকে দেখি--
--- আমি বিবাহিত! এই টা আমি পারবো না কোনদিনও। আমায় মাপ করো।
হ্যালো হ্যালো-- কি রাগ করলে, প্লিজ। এতে তোমার স্ত্রীর ও অপমান। একটু বোঝো-- সব জিনিষ দেওয়া যায় না। তিনি আমায় দেখেন, পালন করেন আমি বড় ঋণী।
অকৃতজ্ঞ হওয়া উচিত নয়! তুমিও হয়ো না--
-- রাগ করিনি, শুধু কষ্ট পেলাম। তোমার টান দেখে, কত সংস্কার আমি স্পর্শ করলে,
-- সংস্কার নয়, আভিজাত্য! এ টান তোমারো আছে! বলতে পারবে সব সত্যি তাকে!পেরেছো? পারো নি! মিথ্যা দিয়ে ভুলিয়ে রেখেছ, জানলে কি কেউ থাকে--
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল ঠাকুরদালানে বসে তনুশ্রী! কাল মহালয়া। অনেক ভোরে উঠতে হবে পুজোর আরম্ভ। সব ঠিক আছে শুধু সেই নেই! তনুশ্রী কি সত্যি ই অন্যায় করেছিল সেদিন, না দরকার ছিল সত্যি ই জানানোর--
সে কৃতঘ্ন হতে পারবে না। বরং তাকেই ত্যাগ করা অনেক সহজ- ছিল--
পায়ে পায়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো তনুশ্রী। হৃদয় পুর স্টেশনের পাশে লেবেল ক্রসিং এর পাশেফুটে রয়েছে সারি সারি কাশফুল---
পূজো কেটে যাবে আসবে শীত, কাশ ফুল মলিন হয়ে যাবে আবার
জীবন ই তো এই ভাবে গল্প বলে রোজের। সে থেমে থাকে না, ঋতুতে ঋতুতে পালটায় উৎসবের গন্ধে--
সুচিন্তিত মতামত দিন