নতুন দিল্লী কালীবাড়ি
১৯৩০ –এর দশকের গোড়ার দিকে দিল্লীর মন্দির মার্গের কালীমন্দিরটি তৈরি হয়। তবে ১৯৩০ খৃষ্টাব্দে নতুন মন্দির গঠিত হবার আগে মন্দির পরিসরে একটি ছোট মন্দির নির্মান করা হয়েছিল এবং সেখানে কোলকাতার কালীঘাট মন্দিরের মায়ের মূর্তিটির আদলে নির্মিত করা হয় কালী দেবীর মূর্তি ।এই মন্দিরটি দেবী কালীকে উত্সর্গীকৃত, মন্দিরটি মন্দির মার্গে, নয়াদিল্লি এবং ভারতের রাজধানীতে অবস্থিত। এই মন্দিরটি বিখ্যাত লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের খুব কাছে।
এই কালী মন্দিরের দুর্গাপূজা দিল্লীর সবচাইতে পুরানো দুর্গাপূজার অন্যতম ।এক একর জমির উপর অবস্থিত এই মন্দিরটি। ১৯২৫ সালে দিল্লীর প্রথম দুর্গাপূজা এতে অনুষ্ঠিত হয়।পুরানো মন্দিরটি অধুনা বাংলাসাহিব রোডে অবস্থিত ছিল। যার নাম তখন বৈয়ার্ড রোড ছিল। ১৯৩০-এর পরে কোনও কারণে এই মন্দিরটি বর্তমান মন্দিরের জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছিল তখনই তৈরি হয় আজকের এই অধুনা মন্দিরটি এবং এই মন্দির ভবনটি উদ্বোধন করেন মম্মথনাথ মুখোপাধ্যায়। এরপর ১৯৩৫ সালে প্রথম মন্দির কমিটি গঠিত হয় যার সভাপতিত্ব করেন নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু। কালী বাড়ি মন্দির বিশেষত বাঙালি সম্প্রদায়ের কাছে একটি হিন্দু মন্দির।এই দুর্গা পূজা উপলক্ষে দিল্লীর বাঙালী সমাজ এখানে এসে একত্রিত হতেন।আজ দিল্লীর বিভিন্ন যায়গাতে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও এখানের ভিড় এখনও কমে যায়নি।
মন্দির মার্গে প্রধান মন্দিরটি তৈরি হবার পর ১৯৩১ সালে মূল দেবী ও এখানে স্থান্তরিত হয় এবং তখন থেকে দুর্গা পূজাও এখানে পালিত হতে থাকে। কাশ্মীরি গেটের দুর্গাপূজাটি যা কিনা ১৯১০ সালে শুরু হয়েছিল সেটা সেখানকার স্থানীয় তিমারপুর ও সিভিল লাইন সমিতির দ্বারা প্রতিপালিত হয়।
সনাতনী পরম্পরায় মন্দির মার্গের দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যাকে আমরা একচালার ঠাকুর বা একলাধর ঠাকুর বলে থাকি। একটি পটেই মা দুর্গার সাথে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিকের ঠাকুর থাকে আর শোলার সাজসজ্জা হয়ে থাকে। সে এক অপুর্ব ঐতিজ্যের সমাবেশের সম্ভার নিয়ে এই কালীবাড়ির পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এমন কি ১৯৩৬ সালে যেভাবে ধর্মানুষ্ঠান করা হয়েছিল সেই ঐতিহ্য আজও অব্যাহত আছে। দুর্গাপূজার প্যান্ড্যালটি তৈরি করতে কোলকাতা থেকে শিল্পীদের আনা হয়। দুর্গাপূজার সময় এখানে রবীন্দ্র সংগীত ও আবৃত্তি এখনও অনুষ্ঠিত হয়।মন্দিরের গোড়ায় একটি বিশাল পিপাল গাছ রয়েছে, যা সমস্ত ভক্তদের দ্বারা অত্যন্ত পবিত্র হিসাবে বিবেচিত হয়। ভক্ত প্রায়শই একটি লাল সুতোর গাছের কাণ্ডের চারপাশে বেঁধে থাকে এবং ভক্ত তার ইচ্ছা পূরণের জন্য আবদ্ধ হয় এবং যখন ভক্তের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয় তখন লাল সুতোটি খোলা হয়।
দিল্লীর কয়েকটি পর্যটক স্থলের দূরত্ব এই মন্দির থেকে বেশী দূরে নয়। যেমন বিড়লা মন্দিরের দূরত্ব ০.৪ কিমি, বাংলাসাহিবের দূরত্ব ১.১ কিমি, গুরুদ্বারা রাকাব গঞ্জের দূরত্ব ১.৩ কিমি, গুরুদ্বারা মাতাসুন্দরির দূরত্ব ৩.৪ কিমি, গুরুদ্বারা নানক পিয়াও সাহিব ৭ কিমি, নানকসার গুরুদ্বারা ১০ কিমি, গুরুদ্বারা পশ্চিম জ্যোতি নগর ১১ কিমি ,লোনি বর্ডার গউশালা ১২ কিমি এবং ইন্দ্রাপুরি গুরুদ্বারা ১৪ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
এছাড়া তালকোটড়া স্টেডিয়াম ০.৭ কিমি, পার্লামেন্ট স্যাক্রেটারিয়েট ১.৬ কিমি, রাষ্ট্রপতি ভবন ১.৮ কিমি দূরত্বে রয়েছে।রাম কৃষ্ণ আশ্রম মেট্রো ষ্টেশনে এসে সেখান থেকে রিক্সা অথবা অটো নিয়ে খুব সহজেই এই মন্দিরে আসা যায়।
যা বলছিলাম,প্রথম মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন স্যার বিচারপতি মম্মথনাথ মুখার্জি। এর পরে কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থী এবং অতিথিদের জন্য একটি বিশ্রামগার বা ধর্মশালা স্থাপন করে। বাঙালি পর্যটকদের এখানে থাকার জন্য কক্ষ বা ছাত্রাবাসের সুবিধাও দেওয়া হয়। দিল্লী কালীবাড়ির গ্রন্থগার একটি পুরাতন এবং সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার।এই কালী মন্দিরটি দিল্লীর সর্বপুরাতন বাঙালীদের মিলন স্থল তা আগেই উল্লেক করেছি। মন্দিরের ধর্মশালাতে নুন্যতম টাকা দিয়ে যেমন থাকা যায় তেমনই প্রায় বিনি পয়সায় মাছ ভাত ও পাওয়া যায়। ধর্মশালাতে একরাতের জন্য ২৫০ টাকা দিয়ে একটি বিছানা পাওয়া যায়। তবে কম্বল আর গরম জলের জন্যে আপানাকে টাকা দিতে হবে তাও অতি সামান্য। দিল্লীর প্রাণকেন্দ্র কোনাট প্লেসে অবস্থিত বলে পর্জটকদের জন্যে সুবিধাজনক । মন্দিরের কালী মাতার মূর্তিটি এতো জীবন্ত লাগে যে হাত জোড় করে একাত্মবোধ হওয়া যায়। এটি আজ দিল্লীর শত শত দুর্গাপূজা কমিটির নোডাল পয়েন্ট হয়ে উঠেছে, এবং দিল্লীর বাঙালিদের মধ্যে এটি ব্যাপকভাবে সম্মানিত।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার উইকি
উল্লেখস্বীকার উইকি,
সুচিন্তিত মতামত দিন