লুকোনো তাঁবুর বাঘ
বেগুন কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছে নীল। বউ অতসী ওকে বারবার বারণ করেছিল, নীল শোনেনি। অনেকক্ষন হল নীল বেডরুমে ঢুকেছে। এদিকে রান্নাঘরে পোড়া গন্ধ পেয়ে সোফায় বসে সমানে চেঁচাচ্ছেন দূর্বা দেবী, নীলের মা। মায়ের চিৎকারে নীল বা অতসী কেউই সাড়া দেয় না। নাচতে নাচতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে নকশী, নীলের বোন। দরজায় বেলজ্জের মতো ঘা কতক দিয়ে বলে উঠল, 'সেই একই কাজ দিনে কতবার করবি নীল? এরপর ইউরিনারী ইনফেকশন হয়ে যাবে তো!'
কথাবার্তায় নকশী এমনিতেই অনেকটা বেপরোয়া! এছাড়া নীল আর নকশী বিদেশের মাটিতেই লেখাপড়া শিখে পিঠোপিঠি বড় হয়েছে। সেকারণে বোধহয় যেকোনো ধরণের কথাবার্তায় ওরা কোনোরকম জড়তা অনুভব করেনা। নীল সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার। নকশী বড়পর্দার উঠতি নায়িকা।
-"কী রে ওঠ! বউটা এবার নিগঘাত মরবে!"
সত্যি সত্যি নীলের স্বরটা লজ্জিত লাগল। সে ভেতর থেকেই গলা খাঁকারী দিয়ে বলে উঠল, "আরে না। এই দেখ না এইমাত্র ঘরটা মুছে দিয়ে গেলাম। অমনি বাঁদরটা এসে বাবেলস উড়িয়ে নোংরা করে গেল! তোরটা কি মুছতে হবে নকশী?"
এমনিতেই নকশী নেকু একট্রেস হিসাবে টলিপাড়ায় পরিচিত। সে ঢুলুনি গলায় পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে বলল, " আগে যে পাহাড়ে চাপা পড়ে আছিস, সেখান থেকে আগে তো ওঠ! তারপর আমার ঘর স্যানিটাইজ করিস!"
নকশী বরাবরের জন্যেই কেন জানি অতসীর বুকের সৌন্দর্যটুকু নিয়ে ঈর্ষা করে। অতসী অহংকারে অভিমান মিশিয়ে বলল, "পাহাড় মোটেও না!" অতসী ব্লাউজের ঘাট ঠিক করতে আরও একটু সময় নেয়। কিন্তু নকশীর অত সময় নেই। সে সাংঘাতিক একটা কাজ করে ফেলেছে! এই একুশ দিনের প্রচেষ্টায় চুলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্প্যানিশ উকুনটাকে পাকড়াও করতে পেরেছে! এটা দুবার দূর্বা দেবীকে দেখানো হয়ে গেছে। নীলের ছেলে অরু, সেও বহুবার চিৎ-কাত করে বিভিন্ন এংগেলে ছবি তুলে রেখেছে। বাকি ছিল অতসী আর নীল, কিন্তু ওরা কী পরিমাণে হেংলা! এ কথা ভেবে নকশীর মাথা ব্লক হয়ে আসে! বাধ্য হয়ে সে ওখান থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর ছাদে উঠে ভিডিও কল করে বিলাসকে। বিলাস নকশীর লিভইন পার্টনার। উকুনটাকে একবার পালিশ করা নখের ওপর, একবার তুলতুলে আঙুলের ফাঁকে কখনো বা টিশার্টের বোতাম খুলে দিয়ে স্তনবিভাজিকায় ছেড়ে দিয়ে, খেলিয়ে খেলিয়ে বিলাসের সাথে ফোনালাপ করতে থাকে নকশী।
ফোনের ওপার থেকে বন্দি পুরুষের মতো বিলাসের আফসোস ভেসে আসে," যাইহোক, চিন্তা রিমুভ হল তাহলে?"
-"সে আর বলতে? স্পেনের উকুন বলে কথা!"
-"এখন স্পেনে মরতেও কেউ যায় নাকি!"
-"ধুর। সামান্য কয়েকটা শট, তাও ডিরেক্টর কেন যে ওই ধ্যাড়ধেড়ে গোবিন্দপুরে মরতে গেলেন!"
বিলাস খ্যাকখ্যাক করে হেসে ওঠে, "যাব্বা ওটা এখন গোবিন্দপুরের সারিতে নেমে এল! তা মালটাকে এবার মারার ব্যবস্থা করো। নাহলে অন্য শেল্টার খুঁজে নেবে কিন্তু!"
-"মারব না মানে! ছেড়ে দেব ভেবেছে! নখের আগায় পিষে মারব ব্যাটাকে! ও দেশের চিন্তাশীল রাজপুত্তুর আমার কত রাতের ঘুম হারাম করেছে তার যদি হিসাব দিই...!"
কলিং বেল বেজে উঠতেই কথা থামিয়ে স্যানিটাইজার নিয়ে রে রে করে ছুটে এল নকশী, " কী রে তোরা! বাইরে তিন সাইডেই তো দড়ির সাথে ব্যাগ ঝুলিয়ে রেখেছি। ফর্দ, টাকা সব ওখানে। তাও বেল টেপার নেশা কিছুতেই ছাড়াতে পারলাম না!"
ঘন্টায় দুবার করে ভলান্টিয়ার ছেলেরা এসে নকশীর মেকআপ, কসমেটিকস, কাঁচানো জামাকাপড়, নীলের দূর্বা দেবীর সংসারের মুদি, চাল আটা, দুধ মাছ সব দিয়ে যাচ্ছে। আপাতত মাংস-মাছে দুটো ফ্রিজ ফুল প্যাকড। দুধ অল্পই জমাতে দিয়েছে অতসী। মাত্র পঞ্চাশ লিটার। কেননা অতসী ওর দিদির কাছ থেকে অলরেডি শুনে নিয়েছে মিষ্টির দোকান চালু না হলে, দেশের খানা ডোবাও ফ্যানা ফ্যানা হয়ে যাবে আর কিছুদিনের মধ্যে! অতএব দুধ অল্পই জমা থাক!'
দশটা বেজে গেলে বাজারের তাজা অনাজগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে। এসব সাতপাঁচ ভেবে দূর্বা দেবী অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "আহা, বাছাগুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে! কী কী লাগবে তাড়াতাড়ি একটু বলে মরবে তোমরা?"
স্টোররুমে উঁকি মেরে নীলের কানের লতি আনন্দে উত্তেজনায় লাল হয়ে ওঠে। এমনিতেই সে সুন্দর। দীর্ঘদিন অস্ট্রেলিয়ায় থেকে থেকে ওরও উত্তেজনায় লাল হয়ে ওঠার লক্ষণগুলো ফুটে ওঠে!
-"না মা কিছুরই অভাব নেই। মোটামুটি যা জমিয়ে ফেলেছি, তা দিয়ে ছ সাত মাস তো হামেশাই...!"
-"এই এদিকে একটু শোনো না!" অতসী ডাকে।
-"ভিজে ভিজে লাগছে! মনে হয় আজই হবে। হুইস্পার দু প্যাকেট ছিল জানি। কিন্তু ওতেও যদি না কুলোয়?... স্টে ফ্রি অথবা অন্য যেকোনও কোম্পানির দু চার প্যাক ওদের দিয়ে আনানো যাবে সোনা?"
নীলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে,"দিলে তো সব মাটি করে! হবার আর সময় পেল না বা....ল!"
-"রাগ করছ কেন? এতে আমার হাত কোথায় বলো?"
-"এসব জিনিস ওদের দিয়ে আনালে পাড়ায় জানাজানি হলে কী হবে ভেবেছ!"
মুহূর্তের মধ্যে রোমান্স অর্ধেক হয়ে আসে নীলের। আজ দুদিন হল। দুপুরে ভাত ঘুমে ডুব দেওয়ার কথা ভুলে ছাদে একা একা অর্থহীন পায়চারি করে সময় অতিবাহিত করে নীল। আট বছরের অরু ওর বাপিকে একলা পেলেই কঠিন কঠিন কোশ্চেন করে, "বাপি, সার্কাস কোম্পানিগুলো আর বাঘের খেলা দেখায় না কেন গো?"
-"সরকারের বারণ আছে!"
-"কেন? বেশি খেললে ওদের রাগ কমে যায় বুঝি?"
-"না। ওয়াইল্ড এনিমেলকে এভাবে খাঁচায় বন্দি করা আইনের চোখে অপরাধ!"
-"তুমিও তো অনেকদিন হল ঘরে লুকিয়ে আছ!'
-"আছি, কেননা দরকার আছে। ছাড়া পেলে কেউ কি ইচ্ছে করে আটকা থাকতে চায় বলো?...তোমারও পালিয়ে একটু খেলার মাঠে যেতে ইচ্ছে করছে না?"
-"তাহলে ওদের যে পোষা বাঘগুলো ছিল,...সেগুলো কোথায় গেল? জঙ্গলেও যে কয়টা আছে ওগুলো তো কাউন্টেড। তো...?"
-"তাঁবুর তলায় কোথাও না কোথাও লুকিয়ে রেখেছে নিশ্চই। আইন উঠে গেলে আবার ...!"
-"কোথায় সেই হিডেন তাঁবুগুলো?"
-"তুমি চুপ করবে?"
কথার ফাঁকে অতসী আসে। ওর চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ।
-"কী হল আবার?"
-"বললাম তো প্যাকেটগুলো খুঁজে পাচ্ছিনা!"
-"ওফঃ! তোমাদের মাথায় একটাকিছু ঢুকল তো ওটা নিয়েই চলতে থাকবে!"
নীল টানপায়ে নিচে নেমে এল। ঝটপট একটা এন নাইনটি ফাইভ মাস্ক নাকের সাথে সাঁটিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। দুপুর রোদে চক-খড়ির বৃত্তের মধ্যে ক্যাঙারুর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বেশ কটি মেডিকেল স্টোরসের কাছাকাছি গিয়েও লজ্জার মাথা খেয়ে বলতে পারেনি নীল, "ও দাদা, স্যানিটারি ন্যাপকিন....?" কেননা তখন মেডিকেল স্টোরসের আকাশে বাতাসে কেবলমাত্র জীবনদায়ী ঔষধের জন্যে দেশের মানুষে কী ভীষণ হুড়োহুড়ি! একসাথে এতো অসুস্থ মানুষের হাহাকার শুনে চমকে ওঠে নীল, "এ কোন ভারত?"
একসময় শামুকের মতো নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে নীল ফিরে আসে! বিরসমুখে ছেলেকে ঘরে ফিরতে দেখে দূর্বাদেবী আতঙ্কে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন,"ওরে ও সোনা! কী হয়েছে তোর? কেন বাইরে বেরলি বল আমায়? লুকোসনে মানিক বল!"
-"প্যানিক করো না! থামুন বলছি!" অতসী ঝাঁঝানি দিয়ে শাশুড়িকে থামিয়ে দেয়।
রাতের রান্নায় এখন আর মাতব্বরি করতে দিচ্ছে না অতসী। লক ডাউনের পর থেকেই নীলের পুরুষালী ভাবটাও কেমন যেন ম্যানতা ম্যানতা হয়ে যাচ্ছে! ওদিকে দূর্বা দেবী নতুন শুরু হওয়া রামায়ণ নিয়ে দারুণ উচ্ছসিত! নকশী টিভি ফিবি দেখে না। স্ক্রিনে একটানা তাকিয়ে থাকলে ওর নাকি চোখের নিচে ডার্কসার্কেল পড়ে যায়। সে অরুর সাথে খেলায় মেতে ওঠে।
সেদিন সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ মাংসের গামলায় একপাটি জুতো এসে পড়ল। গরম মাংসের ঝোল সারা গায়ে ছিটকে লাগলেও একটুর জন্যে চোখদুটো সেদ্ধ হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায় অতসীর! জুতোটা নকশীরই ছিল। এটা স্পেনের রাজ পরিবারের কোনোও এক রিলেটিভ নাকি নকশীকে গিফট করেছিলেন। ঝুটা পান্নার কারুকাজ করা একজোড়া নরম লেদারের জুতো। আর এটা নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম আর ধৈর্যশীল প্রাণীর চামড়া দিয়ে তৈরি ছিল। জুতোজোড়াটার আরও একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হল একটু গরম পেলেই ছোট্ট একটা বাদুড়ের ডানার আকার ধারণ করে।
আর আজ সেটা দিয়েই দুর্দান্ত একটা টিকটক ভিডিও বানাচ্ছিল নকশী আর অরু। অরু আর নকশী ভেবেছিল তামাম ইন্ডিয়ানকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্যে এটাই হবে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ টিকটক!
অনেক্ষন হল মাংসের গামলাটা নিয়ে নিচে নেমেছেন দূর্বা দেবী। কমনরুমে হাই ভলিউমে টিভি চালিয়ে নীল বাঁধভাঙা হাসিতে একা একাই গড়াগড়ি খেতে থাকে। হাতে বার্নল মাখিয়ে অতসী মুখ ঝামটা দিয়ে ওঠে, "এতে আবার এত হাসির কী হল বুঝিনা বাপু!"
-"আরে তা না। এই দেখো টিভিতে দেখাচ্ছে, দিল্লি মহারাষ্ট্র থেকে পালানো বেচারা লেবারগুলোকে কীভাবে শোধন করছে উইপি গভমেন্ট!"
-"কী স্প্রে করছে ও?"
-"কীটনাশক হাহাহাহাহা!"
অতসীর গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, "জীবনে আর কী কী দেখে যেতে হবে কে জানে!"
এমন সময় অরু চিৎকার জুড়ে দিল, "বাপি, বাঘ! বাঘ!"
সবাই হুদ্দাড়িয়ে তিনতলার ব্যালকনিতে এসে ঝুঁকে পড়ল।
-"ও মা গো! এটা কি রিয়েল?" বিস্ময়ে ফেটে পড়ল অতসী!
-"হুম। তাই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু এখানে বাঘ এল কোত্থেকে?"
অরু আনন্দে আকাশ কাঁপিয়ে বলে উঠল, "বাপি, ওটাই বোধহয় সেই লুকিয়ে রাখা বাঘটা!"
নকশী বিরক্তিকর চিৎকার উগরে দিল, "ছো! বাঘ না ছাই!...মা, আমার জুতো?"
দূর্বা দেবী প্রায় কেঁদেই ফেললেন,"এতক্ষণ এখানে মরে পড়ে রয়েছি সাধে? আমি তো ভাবলাম আমাদের বাঘা। কিন্তু যেই না মাটনের গামলা ওর মুখের কাছে ধরেছি, অমনি খপাত করে আগেই জুতোটা খেয়ে ফেলল! এত সুন্দর করে রান্নাকরা মাংস খাচ্ছে না দেখে আমি ওর কানের গোড়ায় দুটো চড় দিতেই হালুম করে উঠল! ওমা গো মা! দেখি এ তো বাঘা নয় সত্যি সত্যি বাঘ!"
-"আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা! জাস্ট কিছুই শুনতে চাইনা!" নকশী নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে পাগলের মতো আচরণ শুরু করে দিল।
দূর্বা দেবী ভয় পেয়ে গেলেন। এবার তিনি ও মেয়ের জন্য মরিয়া হয়ে বাঘটার মুখের মধ্যে হাত পুরে দিয়ে হাতড়াতে লাগলেন। কিছুই পেলেন না। আবার মুখের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে যতটা যাওয়া যায় ঢুকে, মেয়ের জুতোটা খোঁজবার চেষ্টা চালাতে লাগলেন। কিন্তু নাহ! পেলেন না।
অরু ছুটে গিয়ে মোবাইল আনল। সে এখন ভিডিও করতে ব্যস্ত।
নীল চাপাস্বরে কাতর আবেদন করতে লাগল, "মা, প্লিজ! কথা শোনো, উঠে এসো!"
-"ও বাপ নীল, কাঁচা মাংস আর আছে রে? একটু নিচের দিকে আয় দিকিনি!" অতসী নীলের কলার ধরে হিরহির করে ঘরে টেনে নিয়ে গেল।
অন্যদিকে নকশী তার মাকে পুনঃপুনঃ শাসাতে লাগল ,"আমি কিন্তু সিরিয়াস বলছি মা, জুতোটা না পেলে তোমার গুণধর ছেলের কথা আমিও কিন্তু দেশের লোকের কাছে ফাঁস করে দেব!"
ঘর থেকে দৌড়ে এসে অতসী নকশীর মুখ চেপে ধরল, " ইডিয়েট! তুমি বুঝি ফরেন থেকে ফেরনি?"
-"মোটেও বাজে বকবে না!"
-"তবে বিলাসকে নিয়ে এদ্দিন কোথায় কাটিয়ে এলে?"
এতক্ষণে নীলের রক্ত হিম হয়ে আসতে শুরু করেছে। তখনো দেখা যাচ্ছিল দূর্বা দেবীর পা দুখানা খানিকটা বেরোনো অবস্থায় ডলফিন মাছের লেজের মতো তিরতির করে কাঁপছে!
নীল অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করল, "ফ্রিজে আর কতটা মাংস আছে অতসী?"
-"কেন কী হবে?"
-"আঃ! যা বলছি শোনো! বার করো।"
অবশেষে সাত আট পদের মাছের ঢিবি সরিয়ে, অনেক খোঁচাখুঁচির পর এক ট্রে মাটন বার করা গেল।
-"কিন্তু এ তো সব বরফ! বাঘে খাবে কেন?"
-"ভাঙ সব গলে জল হয়ে যাবে! একবার এগুলো গেলাতে পারলে মাকে নিশ্চই উগরে দেবে!"
-"এ রাম! ঘরময় রক্ত জলের কী বিচ্ছিরি ছড়াছড়ি! চলো এক কাজ করি,.. ছাদে যাই!"
হিমশীতল মাংসের ঢেলা নিয়ে ছাদে উঠল নীল। এমন সময় ওর কানে এল কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো বিরাট শোরগোল। নিচে নজর পড়তেই ওর চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেল। দেখল কারও কাঁধে বাচ্চাকাচ্চা, কারও মাথায় মোটঘাট, লোটাকম্বল .... সবাই যেন আগুন ডিঙিয়ে ছুটছে! নীল অতসীকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, "আরে! এসব কারা? কোত্থেকে আসছে এত লোক?"
-"তুমিও যেমন মাথামোটা! এইবার বুঝলে বাঘটা কেন ছাড়া হয়েছে!"
নীলের মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে উঠল। ওর গা বমি বমি করতে লাগল। অতসী মেডিসিন আনবার জন্যে ছুটল। হঠাৎ শুনতে পেল মায়ের গলার আওয়াজ।নীল দেখল তার মা ভয়ঙ্কর ওই দানবটার পেটে পা দিয়ে চেপে ধরে, অনেকটা উঁচুতে শহরের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত শৌখিন স্ট্যাচুটির মতো দাঁড়িয়ে সমানে কাকুতি মিনতি করেই চলেছে,"এই তোরা কারা? কোত্থেকে আসছিস?...কোন কারখানার শ্রমিক রে? আমাদের একপাটি জুতো বের করে দিতে দিতে পারিস? বাঘে গিলেছে রে! খুব দামি চামড়া। রাজপরিবারের.... ..!
সুচিন্তিত মতামত দিন