অরিন্দম চ্যাটার্জী - মায়াজম

Breaking

১৭ এপ্রি, ২০২০

অরিন্দম চ্যাটার্জী

নাজি জমানা আর সার্কাস
সার্কাস বলতে কি বুঝি তা নিশ্চয়ই ব্যাখা করার দরকার নেই, আমি আজকে ইউরোপের সার্কাসের কথা বলবো ভাবছি, আরো ভালো করে বললে কর্মসূত্রে যেখানে থাকি সেই জার্মানির সার্কাসের কথা, প্রধানত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অর্থাৎ কিনা নাজি জমানা আর সার্কাস !
তার আগে সার্কাসের উৎপত্তি সম্পর্কে দু চার কথা বলা যাক !
আধুনিক সার্কাসের উদ্ভব রোমান যুগে হয়েছিল এটি একটি জনপ্রিয় ভুল ধারণা । প্রকৃতপক্ষে, রোমান সার্কাসের সাথে আধুনিক সার্কাসের একমাত্র সংযোগ হ'ল শব্দটি, রোমে যার অর্থ ছিল বৃত্ত। রোমান সার্কাস ছিল একটি বিশাল উন্মুক্ত জায়গা যা রথ এবং ঘোড়দৌড়ের জন্য ব্যবহৃত হত , আধুনিক যুগে এর তুলনা বরং রেসকোর্স বা অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকের সাথে করা যায় !
সার্কাসের ইতিহাসবিদরা সকলেই একমত যে আধুনিক সার্কাসের সূচনা হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে ফিলিপ অ্যাসলের হাতে। যিনি সেনাবাহিনীতে অশ্বারোহী সার্জেন্ট-মেজর ছিলেন, সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পরে তিনি ভাবলেন যে ঘোড়া নিয়ে কিছু করা যায় কিনা, পরে তিনি ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজের নিকটে একটি ঘোড়সওয়ারি শো শুরু করেন ! এখানে একটি বৃত্তাকার জায়গায় কয়েকজন ঘোড়সওয়ার নানা রকম কসরত দেখাতেন ! প্রাথমিক ভাবে এটা ষাট ফুট ব্যাসের ছিল, পরে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করে মোটামুটি চল্লিশ ফুট ব্যাসের হয়, পরবর্তীকালে এটাই সার্কাসের রিং হিসেবে পরিচিত হয় !
প্রথম দুই মরসুমে অ্যাসলের শো ভালোই চলে কিন্তু তারপর দর্শকদের উৎসাহে ভাটা পড়তে শুরু করে , ভাবনাচিন্তার পরে তার মনে হয় যে শোয়ে আরো মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা দরকার । সুতরাং 1777 সালে তিনি নর্তকী, জিমন্যাস্টিক এইসব অন্তর্ভুক্ত করেন এবং পরবর্তীকালে জোকারদের ও অন্তর্ভুক্ত করেন ! তার সফলতা আরো অনেককে আগ্রহী করে তোলে এবং শীঘ্রই প্রায় প্রতিটি বড় ইউরোপীয় শহরে সার্কাস ছড়িয়ে পড়ে , মনে রাখতে হবে এইসব সার্কাসগুলোর নিজস্ব স্থায়ী আস্তানা ছিল, অনেকসময়ে এই সার্কাস বিল্ডিঙের স্থাপত্য শহরের বিখ্যাত থিয়েটারগুলোর সাথে পাল্লা দিতো ! ভ্রাম্যমান সার্কাসের চল তখনো হয় নি !
ভ্রাম্যমান সার্কাস মূলত প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । তার একটা সহজ কারণ ছিল ছোট শহর এবং গ্রামাঞ্চলের দর্শকরা ! ১৯১৮ সালে জার্মানিতে ৪৩ টি ভ্রাম্যমান সার্কাস ছিল, প্রধানত পারিবারিকভাবে পরিচালিত উদ্যোগে, এই পরিবারগুলোর নামেই সার্কাস পরিচিত হয়, বিখ্যাত সার্কাস পরিবারগুলো ছিল ক্রোন, সররাসানী, বুশ, অ্যালথফ এবং হ্যাগেনবেকস ! এই সার্কাসগুলি জার্মানির বাইরেও ঘুরে বেড়াতো এবং এইভাবে ব্রিটেনে শুরু হলেও জার্মান সার্কাস বিশ্বজুড়ে বেশি খ্যাতিমান হয়ে ওঠে । এই পরিবারগুলি সাধারণত একটি শহরে নিজেদের বেস তৈরী করতো, মানে একটা স্থায়ী সার্কাস আরেনা এবং তার সঙ্গে ভ্রাম্যমান সার্কাস দল , এরা নানা তাদের জার্মান শহরে নিজস্ব স্টেশন সার্কাস ভবন তৈরি করেছিল ,যেমন মিউনিখের সার্কাস ক্রোন, ড্রেসডেনের সরাসানী, বার্লিনের সার্কাস বুশ, হামবুর্গ, ব্রেস্লাউ এবং ভিয়েনার হ্যাগেনব্যাকস ইত্যাদি !
ইহুদি এবং জার্মান সার্কাস
-------
স্থায়ী সার্কাসগুলি মূলত অভিজাত জার্মান পরিবার দ্বারা পরিচালিত হতো এবং ভ্রমণকারী সার্কাসগুলি মূলত ইহুদি পরিবারগুলির দ্বারা পরিচালিত ছিল , সার্কাস ব্লুমেনফিল্ডস, সার্কাস লোরচ ,সার্কাস স্ট্রেসবার্গার ইত্যাদি ছিল জনপ্রিয় ইহুদি সার্কাস । পরিচালক জার্মান পরিবার না ইহুদি পরিবার, এই ব্যাপারটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অপ্রাসঙ্গিক ছিল , সার্কাসগুলো এমনিতেই বহুভাষিক এবং বহুসংস্কৃতি প্রকৃতির ছিল কারণ হলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন এখানে কাজ করতো এবং দুটি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে নাজি উত্থান না ঘটলে এটা অপ্রাসঙ্গিক হয়েই হয়তো থেকে যেত । কিন্ত তা হয়নি !
১৯৩৩ সালে নাজি শাসনের ক্ষমতায় আরোহণ করার পরে প্রথমদিকে হিটলার সার্কাসকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হিসাবে বিবেচনা করেন নি , তিনি বরং সংস্কৃতির অন্যান্য ক্ষেত্রে নজর দেন,কিন্তু রাইখের প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবেলস এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে দেরি করেননি , তিনি সার্কাসকেও জার্মান জাতীয়তাবাদ প্রচারের হাতিযার করেন , হ্যাগেনবেকসের মতো জার্মান পরিচালিত সার্কাস গুলোকে বেশি বেশি করে আন্তর্জাতিক ট্যুরে পাঠাতে শুরু করেন , যা জাতীয় গর্বের প্রতীক হিসাবে জার্মান প্রচারের পক্ষে ভাল ছিল, এবং অবশ্যই ইহুদি সার্কাসগুলির জন্য পরিস্থিতি এতটা সুখকর ছিল না এবং ইহুদি সার্কাস পরিবারগুলি এর আগে যে স্বাধীনতা এবং বাণিজ্যিক সুযোগগুলি উপভোগ করেছিল তা কমতে শুরু করে , একসময় ইহুদিদের সার্কাসে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয় ফলে অনেক ইহুদি সার্কাস বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে , অন্যায় সার্কাসেরও এতে নানা অসুবিধা হয় !
অন্ধকারে আলোর রেখা
---------
জার্মান পরিচালিত সার্কাসের মালিকরা তাদের ইহুদি কর্মীদের বাঁচানোর জন্যে চেষ্টা যে করতো না এমন কিন্তু না , চলুন এমন একজনের কথা শোনা যাক !
আইলিন ড্যানার-বেন্টোর জন্ম ১৯২৩ সালের ২৮ শে জানুয়ারী, এশলব্রুকেনের ক্ষুদ্র জার্মান শহরতলিতে, সে ছিল হানস ড্যানার এবং এলিস লোরচের কন্যা ,হ্যানস ছিল জার্মান এবং সার্কাসের খেলোয়াড় এবং আইরিনের মাতৃ পরিবার ছিল ইহুদি - লোরচস - ১৮ শতক থেকে লোরচরা সার্কাসের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং এত বিখ্যাত ছিল যে লোরচরা যে রাস্তায় বাস করত তার নাম দেওয়া হয়েছিল "লোরচস" লেন। একসময় লোরচদের নিজেদের সার্কাস থাকলেও উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের সময় এরা ছিল এক সফল পারিবারিক সার্কাস খেলোয়াড় ট্রুপ , রিংলিং ব্রাদার্স হিসেবে বিখ্যাত ,আইরিনের দাদু জুলিয়াস তখন পরিবারের প্রধান ছিলেন ! তাদের খ্যাতি ছিল আন্তর্জাতিক ,1909-1912 সালে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং 1923-1925 সাল পর্যন্ত সার্কাস সরসানির সাথে দক্ষিণ আমেরিকাও ভ্রমণ করেছিল। জুলিয়াসের স্ত্রী সেসি তার নাতনী আইরিন এবং তার ছোট বোন গার্ডাকে বড় করেছিলেন , কারণ জুলিয়াস এবং আইরিনের বাবা-মাকে সাধারণত বাইরে পারফর্ম করে বেড়াতে হতো । আইরিন খুব অল্প বয়স থেকেই সার্কাসের জীবনে মুগ্ধ হয়েছিল এবং তার পারিবারিক ট্রুপে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু 1941 সালে, আইরিন যখন 18 বছর বয়সে সে এবং তার বোন আরেক বিখ্যাত অ্যালথফ সার্কাস দেখতে গিয়েছিল , সেই সার্কাসের এক তরুণ কর্মী পিটার বেন্টো আইরিনের হৃদয়হরন করে বসল । স্বভাবতই পিটার তার সার্কাস মালিক অ্যাডলফ অ্যালথফের কাছে আইরিনকে সার্কাসে চাকরি দেওয়ার জন্য ঝুলোঝুলি করতে শুরু করলো । অ্যালথফ তাতে রাজি হয়ে গেলেন ।
আইরিন শীঘ্রই গর্ভবতী হয়েছিল এবং 1942 সালে ডিসেম্বরে তাদের পুত্রের জন্ম দেয় । লোরচ পরিবার খুশিই ছিল, তারা বুঝতে পারেনি পরিবারের ওপরে কি দুর্ভাগ্য নেমে আসছে , সেই বছরের মার্চ মাসে, মাত্র কয়েক মাসের প্রসবোত্তর সময়ে , যখন আইরিন তার পৈতৃক এস্কলব্রুকেন বাড়িতে ছিল , গেস্টাপো এসে তাঁর ঠাকুমা সেসিকে বন্দী করলো , সেসি যিনি আইরিনের মায়ের মতো ছিলেন, তার সঙ্গে আইরিনের আর কখনো দেখা হয়নি ! আইরিনের অবস্থা দেখে তাকে সেদিন গ্রেপ্তার করা হয়নি, হয়তো তার পিতৃ পরিচয় এর কারণ ছিল , কিন্তু আইরিন বুঝতে পেরেছিল তার মতন 'মিশ্র রক্তের' ভবিষ্যৎ কি হতে পারে !
সুতরাং পিটারের সঙ্গে আইরিন অ্যালথফের সার্কাসে ফিরে গেল , সব শুনে অ্যালথফ তাদের আশ্রয় দিয়ে আপত্তি করেননি , এমনকি কিছুদিন পরে অ্যালথফ আইরিনের মা, বাবা এবং বোনকেও আশ্রয় দিতে রাজি হলেন , আইরিনের বাবা মার পক্ষেও আর প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো নিরাপদ ছিল না । পরের কয়েক বছর অ্যালথফ সার্কাসে লোরচ পরিবার এক ইতালিয়ান ছদ্মনামে পারফর্ম করতে থাকে , যদিও বেশিরভাগ সার্কাস কর্মী জানত যে তারা আসলে কে ছিল। নাজীরা যখনই পরিদর্শনের জন্য আসত, অ্যাডলফ অ্যালথফ তাদের প্রচুর আপ্যায়ন করতেন, এবং নানা সার্কাসের গল্প ইত্যাদি বলে বিভ্রান্ত করতেন, আর আইরিন এবং তার পরিবার তাদের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত একটি সার্কাস ওয়াগনের এক গোপন করিডোরে লুকিয়ে থাকতেন । নাজীরা কখনোই তাদের ধরতে পারেনি ! এই গল্পের আরেকজন নায়ক ছিলেন মরোক্কান-মুসলিম সার্কাস জিমন্যাস্ট মোহাম্মদ সাহারৌই, তিনি এবং অ্যালথফ আরো অনেক ইহুদি পরিবারকে নানা ভাবে সাহায্য করেছিলেন , সাহারৌই ছিলেন এইসব পরিবারের এবং অ্যালথফের মধ্যে সংযোগ সূত্র !
এইভাবে অ্যাডলফ এবং তার স্ত্রী মারিয়া প্রাণ রক্ষা করেছিলেন আইরিন এবং তার পরিবারের ! ১৯৯৫ সালে ইস্রায়েল অ্যালথফকে বিশেষ ভাবে সম্মানিত করে, অ্যালথফরা এবং বেন্টোস পরিবার তাদের পুরো জীবন জুড়ে বন্ধু ছিল, আইরিন এবং পিটারের পাঁচটি বাচ্চা ছিল, তাদের সবারই বেড়ে ওঠা সার্কাসে। তাদের মধ্যে তিনজন - জ্যানো, মেরি এবং অ্যাস্ট্রিড ফিরে গিয়েছিলো এশলব্রুকেনে, তাদের পারিবারিক বাড়িতে যেখানে তাদের পরিবার বহু প্রজন্ম ধরে বাস করেছিল।
শুধুই ইহুদিরা ?
-------------------------
যদি ভেবে থাকেন যে নাজী জমানাতে শুধুই ইহুদিরা অসুবিধার মধ্যে পড়েছিল তবে তা ঠিক না, চলুন আরেকজনের গল্প শোনা যাক ! এনার নাম পাউলা বুশ ! ইনি ছিলেন পল বুশের মেয়ে যিনি এক বিখ্যাত জার্মান সার্কাস বুশ সার্কাসের প্রতিষ্ঠাতা ! বুশ সার্কাস ছিল জার্মানির অন্যতম বৃহৎ সার্কাস , এদের স্থায়ী বিল্ডিঙ ছিল হামবুর্গ, ভিয়েনা, বার্লিন এবং ব্রেস্লাউ শহরে ! ১৯১৫ সালে পাউলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় ক্ষ্যান্ত দিয়ে বাবার সাথে ব্যবসায়ে যোগ দিলেন ! পাউলা নিজেও খেলা দেখাতেন এবং তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন "প্যান্টোমাইমস মাস্টার" হিসাবে, তার একটা বিখ্যাত খেলার নাম ছিল ‘The Snake of Durgha’, জানিনা এর সঙ্গে ভারতীয় দুর্গার কোনো যোগ ছিল কিনা, তবে তখন প্ৰাচ্যের রহস্য ইউরোপ খুব পছন্দ করতো তাই হয়তো এই নাম !
১৯২৭ সালে পিতার মৃত্যুর পরে পাউলাই সার্কাসের মালিক হন এবং সফল ভাবে চালাতে থাকেন ! সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু ১৯৩৪ সালে হিটলার বার্লিনের বুশ সার্কাস বিল্ডিং ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন , কারণ দেখানো হয় রাজধানীর সম্প্রসারণ ! পাউলা অবশ্য সহজে হার মানতে রাজি ছিলেন না , কিন্তু ১৯৩৭ সালে তার সমস্ত আপত্তি অগ্রাহ্য করে বিল্ডিংটা ভেঙে ফেলা হয় !
বার্লিনের ক্ষতি পূরণ করার জন্যে পাউলা ভ্রাম্যমান সার্কাসে বিনিয়োগ করার কথা ভাবেন, তিনি শেষে বেলজিয়ামের স্ট্রাসবার্গার পরিবারের সার্কাস কেনেন ! এই সার্কাস নিয়ে তিনি ইউরোপের নানা দেশ ভ্রমণ করতে শুরু করেন !
১৯৪০ সালে আবার আঘাত আসে, এবার বুশ কোম্পানির হামবুর্গের সার্কাস বিল্ডিং সরকার অধিগ্রহণ করে, যুদ্ধবন্দীদের শিবির করার জন্যে ! ১৯৪৩ সালে মিত্রবাহিনীর হামলায় বিল্ডিংটা পুরোই ধ্বংস হয়ে যায় !
পাউলার হাতে এখন থাকলো শুধু ব্র্রেস্লাউয়ের সার্কাস বিল্ডিং, ভিয়েনার বিল্ডিংটি ১৯২০ সালেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো , তার বাবার সময়ে ! ১৯৪৫ সালে এই শহরটি প্রচন্ড সোভিয়েত আক্রমনের মুখে পড়ে, অনেক লোকের মতন পাউলা ও শহর ছাড়তে বাধ্য হন ! ১৯৪৫ এর এপ্রিলে ব্র্রেস্লাউয়ের সার্কাস বিল্ডিংটাও আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায় !
কিন্তু পাউলা তাও হাল ছাড়েননি ! তিনি তার ভ্রাম্যমান সার্কাস চালিয়ে যেতে থাকেন , এবং ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের সাথে সাথে বার্লিনে এসে উপস্থিত হন ! তার ভ্রাম্যমান সার্কাস তখন মূলত খোলা জায়গাতেই সার্কাস শো করতে থাকলেও সেই অস্থির সময়েও তিনি আরেকটি স্থায়ী সার্কাস বিল্ডিং বানানোর চেষ্টা করতে থাকেন , তিনি পূর্ববর্তী প্লানেটোরিয়ামের বিল্ডিংটা মেরামত করে স্থায়ী সার্কাস বিল্ডিং বানানোর অনুমতি পান ! তিন বছর পরে যখন তার প্রচেষ্টা একটু সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে তখন প্লানেটোরিয়ামের পাশ্ববর্তী চিড়িয়াখানায় বানানো বাঙ্কার ধ্বংস করতে গিয়ে ব্রিটিশ বাহিনী তার সার্কাসও ধ্বংস করে ফেলে ! কয়েকমাস পরে আমেরিকা আর সোভিয়েতের বার্লিন অবরোধের সময়ে তাকে ভ্রাম্যমান সার্কাসটিও বন্ধ করে দিতে হয় !
১৯৫২ সালে তিনি আবার ফিরে আসার চেষ্টা করেন , কিন্তু তা সফল হয়নি, ১৯৬১ সালে তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় ! শেষ পর্যন্ত তিনি বুশ সার্কাস নামটার স্বত্বাধিকার ব্রেমেনের সার্কাস রোল্যান্ডের কাছে বিক্রি করে দেন, এই সার্কাসটি বুশ-রোল্যান্ড হিসেবে কাজ করতে শুরু করে !
পাউলা বুশ নামটি জার্মান সার্কাসের ইতিহাসে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় , তিনি The Grande Dame of German Circus হিসেবে অমর হয়ে আছেন !
বর্তমান জার্মান সার্কাস
-------------------
জার্মানরা হার মানা জাতি না, দু দুটো বিশ্বযুদ্ধের পরও তারা আবার উঠে দাঁড়িয়েছে ! সার্কাস এখনো জার্মানিতে জনপ্রিয় এবং স্থায়ী সার্কাস বিল্ডিং আবার গড়ে উঠেছে ! তবে পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার মতনই পশুপাখির ব্যবহার কমে এসেছে , মূলত এক্রোব্যাটিক্সের চল আছে ! এরই মধ্যে Circus Roncalli, যেটা ১৯৭৬ সালে স্থাপিত, তারা এক নতুন পন্থার আশ্রয় নিয়েছে, তাদের সার্কাসে কোনো জন্তুর ব্যবহার হয়না, পরিবর্তে ব্যবহার হয় হলোগ্রামের ! ইউটিউবে খুঁজলে এদের শোএর কিছু ঝলক দেখতে পাবেন ! সব মিলিয়ে বলা যায় জার্মান সার্কাস আবার নতুন ভাবে পথ চলতে শুরু করেছে !
তথ্যসূত্র :
নিম্নলিখিত ওয়েবসাইট গুলি
Sarah Matthias
CircusTalk
DivergingFates
Smithsonian Magazine

xxxxxxxxxxxxxxxxxx

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র