সোনালী মিত্র

মায়াজম
0
সম্পাদকীয়
বারের সম্পাদকীয় কী লিখিব বুঝিতে পারিতেছি না ।আমি রুখা দেশের বাসিন্দা । তথাপি ১৪০০ কিমি দূরে আমার দেশে বর্ষাকাল আসিয়া পড়িল  । বৃষ্টির জল পাইয়া গাছপালা লকলক করিয়া বাড়িয়া উঠিলো এবং পাতারা আরও সবুজ হইতেও সবুজতর হইয়া উঠিল । মাঠে মাঠে চাষারা নামিয়ে পড়িলেন । চাষের জমিন মা-হওয়ার দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতে লাগিল । কদমগাছে গাছে ফুল ফুটিবার কাল চলিয়া আসিল । কত মেয়ে কন্যা হইতে যুবতীর দিকে অগ্রসর হইল । কলকারখানার শ্রমিক দেশের হাওয়া খাইতে খাইতে বেকার হইয়া পড়িল । ছাত্রছাত্রীদের বই-পুস্তকে ছত্রাক জন্মাইল ,অতঃপর তাহারা মানত করিল তাহাতে বটগাছও জন্মাইতে বিলম্ব না হউক । বিবাহের সন্ধ্যাগুলি  এ যাত্রায় রঙিন হইতে না পারিয়া , আগামীর অপেক্ষায় তীর্থের কাক হইয়া ক্রন্দন করিতে লাগিল।
দেশে দেশে , পৃথিবীতে রোগ আসিল করোনার নাম লইয়া । রোগ মরিল না , রোগী মরিল । সিঁদুর বিধবা হইল । শিশু হইল অনাথ ।  আরবে তেলের দাম কমিল কিন্তু দেশে বাড়িয়া গেল ।মুদ্রাস্ফীতি আকাশ ছুঁইল , ফরেন রিজার্ভ রেকর্ড করিল । গাড়ির বিক্রি কমিল দেখিয়া লালবাতি জ্বলিল বহু চরাচরে । চিনের কমরেড আমাদের কমরেড বলিয়া , এখানে ওখানে আগুন জ্বলিল ।
যুদ্ধ আসিল । সৈন্য মরিল । মায়ের অশ্রুশোক মিডিয়া খাইয়া ফেলিল  । অভাব আসিল , রেশনকার্ডে ডিজিটাল শব্দ বসিল , আলোচালের লাইনে নব্বই বৎসর বয়সীরা দাঁড়াইল নাকে গামছা  বাঁধিয়া । লকডাউন শব্দ এই দেশের মানুষ এই প্রথম শুনিল । রাতে রাতে টিভিতে আসিয়া রাজা দেশোদ্ধার করিলেন । জনগণ দেশকে গিলিল , পান করিল , তবুও মিটিল না ক্ষুধা ।
ডাক্তাররা দেবতা হইয়া উঠিল , মার খাইল , পিপিই পরিয়া সন্তানকে চুমু না খাইতে পারার শোকে পাথর হইয়া উঠিল । হাসপাতাল ভরিল , করিডর ভরিল , মুখ্যমন্ত্রী বলিলেন- দিল্লীবাসী ছাড়া কাহারও চিকিৎসা হইবে না । হেলিকপ্টার উড়িল , বাংলায় আমফানে ঘর ভাঙিল , ঘরছাড়া মানুষ পাইল 'তেরপল' ।নাটক সিনেমার হল খুলিল না , বড় বড় মল খুলিয়া গেল । শিক্ষা আসিল না ,হায় দুঃখ করিও না প্রিয়ে ... বাণিজ্য তো আসিল ।
শহর হইতে নার্সদের উচ্ছেদ হইল , 'পরিযায়ী' শব্দ মানে যে শ্রমিক , বাংলা ডিকশনারিতে ঢুকিল , কেহই 'পিতিবাদ' করিল না । কবিরা কাঁদিল , কবিতা লিখিল , দু একজন ছাড়া সমাজের কাজে কেহ নামিল না । অফিস খুলিল , বাস চলিল , লোকাল ট্রেন চলিল না ,মেট্রো নড়িল না । লোকে মাস্ক কিনিল , গলায় ঝুলাইল , মুখে পরিল না । ব্যাংক খুলিল ,ভিড় বাড়িল , কেবল রোজগার হইল না ।
এমন সময়ে মায়াজম প্রকাশিত হচ্ছে , মানে থেমে থাকার চেয়ে একটু এগিয়ে চলা ভালো । অনেকটা সেই উদ্দেশ্যেই এবারের মায়াজম সংখ্যার প্রকাশ । এবারের মায়াজমে প্রচ্ছদসহ প্রতিটি ছবি দিয়েছেন ফাল্গুনী ফাগুন ঘোষ।সেই জন্য ফাল্গুনীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।এই দুর্দিনকালে মায়াজম তার সমস্ত পাঠক লেখক এবং যারা সঙ্গে আছেন , তাঁদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে । ভালো থাকুন , সুন্দর থাকুন ।

ধন্যবাদ -সোনালী মিত্র

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)