নার্গিস পারভিন

মায়াজম
0
স্বরূপে সবিভঙ্গে







বশেষে তোমার ডাক এলো!
লকডাউনে, খাবার না পাওয়া কুকুরটার মতোই প্রতিক্ষায় ছিলাম আমিও-
কবে তোমার ডাক আসবে!
রুগ্ন কুকুরটা রোজ ভাবে-
ঐ বুঝি তুলিদি এলো, হাতে পাঁউরুটি কিংবা রুটি নিয়ে। নিদেনপক্ষে বিস্কিটের প্যাকেট নিয়ে।
কুকুরটার প্রতিক্ষা শেষ হয়নি!
আমার ডাক এসেছে।
বলো, কোন সাজে যাই? এই অসময়ে?
তুমি বললে, যেমন আছো তেমনি এসো।
তাই পথে নেমেছি আজ সজ্জা-মুখোশ ছাড়াই।
তাই আর ঢেকে দিইনি চোখের ভাষা, মাস্কারা প্রলেপে।
লুকিয়ে রাখিনি ক্ষতচিহ্ন প্রস্থ মাফিক কনসিলারে।
আড়াল করিনি মুখভঙ্গি কমপ্যাক্টের বেস লেয়ারে।
আজ স্বরূপে, সবিভঙ্গে।
হয়তো তোমার অচেনা লাগবে,
এই মুখোশহীন মুখশ্রী, এই পথশ্রান্ত নিঃশেষিত শরীর।
তবু এভাবেই যাব আমার সবশুদ্ধ নিয়ে, তোমার সম্মুখে।
দেখছো, আমার মুখের প্রতিটা রেখা কেমন বেঁকেচুরে গেছে, প্রসব বেদনায় কাতর ঐ শ্রমিক বৌটার মত।
ওরই মত আমার ভয়ার্ত দুচোখে ফুটেছে, সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের অনিশ্চিত জীবন-পরোয়ানা!
পথচারী শিশুটির মতোই বুকে, আকন্ঠ তৃষ্ণা আমার!
স্পন্দনহীন বৃদ্ধটির ন্যায় তলানিতে জীবনীশক্তি,
তবু আমি এসেছি!
দীর্ঘ পথের ক্লান্তি নিয়ে, পরিযায়ী পায়ে এসে পড়েছি।
না, আমি রেলের চাকায় পিষ্ট হয়ে যাইনি!
সময়ের বুকে এক প্রশ্ন চিহ্ন এঁকে দিয়ে, আমি এসেছি।
একমাত্র সম্পদ আমার জীবনীশক্তিটুকু দাঁও লাগিয়ে, আমি এসে পড়েছি।
তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ না?
নাকি দ্বিধাগ্রস্ত?
এই মুখোশহীন মুখশ্রী সহ্য করতে পারছ না?
গ্রহণ করতে তোমার বাধছে!
এই বসন্তে, অমলতাস আমাকে সাজাবে বলেছিল,
পলাশের উগ্র লালে আমার হৃদয় রাঙানোর কথা ছিল,
অমলতাস অলক্ষ্যে ঝরে গেল!
সব কেমন বদলে গেল!
মানুষ আর সময় যেভাবে বদলে যায়, হঠাৎই!
যদিও, মানুষের উপরেই আমার শেষ আস্থা।
জানি মানুষই আবার লিখবে বদলের গান।
আমি তাই আজও এই মলিন হৃদয়ে তোমার সম্মুখে!
আমি খুব কি অচেনা? সত্যি বলো?
তোমার প্রতিদিনের রোজনামচায়, চোখে পড়ে না, চাপ চাপ রক্তের কাটাকুটি?
কোন ইরেজ়ারে মোছো সেসব দাগ?
পেরেছ কি ইতিহাস চাপা দিতে?
ভালো করে তাকিয়ে দেখো, আমার মুখের প্রতিটি রেখায় খুঁজে পাবে, সেই রক্ত প্রতিলিপি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)