“তুমি একটা পিকিউলিয়ার মেয়ে। ফ্রিজিড। ঠান্ডা। একদম ফ্রিজের মধ্যে মাথা ঢোকালে যে ফিলিং টা হয়। তোমাদের বাড়ির এই অলিগলি চলিরাম গুলোও তেমনি। উফফফ। তোমাদের বাড়িতে আমার পেচ্ছাপ করতেও ভয় করে... হয়ত দুমাইল পেরিয়ে বাথরুম যেতে গিয়ে ভুল করে কোন অন্য ঘরে ঢুকে যাব... ল্যাবাইরিন্থ একটা। এর চেয়ে হাজরা পার্কের সুলভ শৌচালয় ভাল।“
খুব দ্রুত মাথার ভেতরে কথাগুলো রিপ্লে হল অনমিত্রার।
“তোমার মা তোমার ব্যাপারে সব খবর রাখেন। তুমি একটা ভাঙা ঘরে বসে থাক। প্রপার বসার ঘরে প্রেমিককে নিয়ে বসারও ধক নেই তোমার, না? তোমার মা তোমার বাথরুমের সিস্টার্ন কতবার টানা হল সেই শব্দ দিয়ে হিসেব রাখেন, কে কত জল নষ্ট করল, কার পেট খারাপ হল। রান্নাঘর থেকে উনি মাথা বাড়িয়ে দেখেন, আমি যদি তোমাদের বাথরুমে যাই। আর তুমি, তোমার প্রতিটি মুভমেন্টের ওপর উনি নজর রাখেন। কে জানে এই ভাঙা আসবাবের ঘরেই গোপন ক্যামেরা ফিট করা আছে কিনা!”
অনমিত্রার কান ঝাঁঝাঁ করল। তারপর হঠাৎ আবার সব ঠিকঠাক হয়ে গেল...
বিভাজনরেখা। সেটাও অ্যাকশন রিপ্লে হয়েছিল এই সেদিন, দাদা , সর্বজনের প্রিয় কবি নিশীথ চাটুজ্জে যেদিন লাল থেকে নীল , পার্টিবদল করলেন। মনে পড়ে গেছিল, উনিই একদিন একটা সভায়, জীবনানন্দ সভাঘরে বসে, বলেছিলেন, সব হিসেব বুঝে নিতে হবে। বুঝেছ অনমিত্রা। সব হিসেব নিকেশ ভোটের পরে বুঝে নেব। তখন উনি লাল পার্টির।
প্রথম ডায়ালোগ শুনেছিল অনমিত্রা ১। দ্বিতীয় ডায়ালোগ শুনেছিল অনমিত্রা ৩। মধ্যবর্তী অনমিত্রা ২ কিন্তু আসলে পনেরো বছর ধরে শুধু লড়ে গেছে শাশুড়ি আর ননদের সঙ্গে। আশাপূর্ণা দেবীর গল্পের ক্যারেকটার তখন সে।
তিন তিনবার ভার্শান বদলের পর, প্রেমিক থেকে দাদা কবি , শাশুড়ি থেকে রাজনীতিক, সব্বাইকে এক, একই মুদ্রার এপিঠ ও পিঠ মনে হয়। সেই যে , বাড়ির কাজের মহিলা অন্নদাদি বলত, মাছটা এপিটোপিট করে ভেজে দিইচি দিদি।
ক্ষমতা। সবটা ক্ষমতার খেলা , গুরু। আর অনমিত্রা তার মধ্যে একমাত্র মুক্তি পাবে ছাতে গেলে, আর রাস্তায় বেরোলে, আর অনামা হয়ে এই শহরের কোণে কোণে হেঁটে বেড়ালে।
২
অনমিত্রা ভার্শন ১
অনমিত্রার কিছুই ভাল্লাগতো না। কিন্তু দিদির খুব ভাল ভাল পড়াশুনো বলে অন্তত একটা ব্যাপারে ওর কোন অভাব ছিল না। তা হল, কাগজ। দিস্তে দিস্তে কাগজ। অনমিত্রার দিদি সংঘমিত্রা যেন অনমিত্রার বাইনারি অপোজিট , যেন নর্থ পোল সাউথ পোল ওরা।
সংঘমিত্রা অরগানাইজড, সংঘমিত্রা অত্যন্ত মেধাবিনী। ভীষণ সিম্পুল। অনমিত্রার মত গড়বড়ে গোলমেলে জটিল ও মনস্তাত্বিকভাবে পিকিউলিয়ার নয়, যেটা অনমিত্রার মায়ের ভাষা। পিকিউলিয়ার, ইডিয়েট এবং সিক অ্যান্ড টায়ারড এই বাংলা শব্দগুলির বহুমুখী বিচ্ছুরণ এবং অত্যন্ত সুলভ ব্যবহারে শৌচালয়ের মত উন্মুক্ত হয়ে ওঠা মনন ভঙ্গির বিশেষ প্রচলন হয় ৬০ দশকে, অবশ্যই। অতঃপর শিক্ষিত বাঙালি কুলে একটা আধটা পিকিউলিয়ার লোক দেখাই যেত, যাদের উস্কো খুস্কো দাড়ি, জামা তিনদিন না কাচা, না ইস্তিরি করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
ওই দলে অনমিত্রা নাম লেখাল কী উচ্চতা স্পর্শ করে? কেননা ও পাঁউরুটির ধার ফেলে রাখত, হরলিক্স বা ভিভা-র কাপের তলানি ফেলে রাখত, নোংরা আন্ডার ওয়্যার কাচতে দিত না। এমনকি ও পারলে, নিজের ফেলে দেওয়ার যোগ্য ন্যাপকিন বা হাগুও লুকিয়ে রাখত। কোন একটি আত্মহত্যাকারিনী আঠারো বছরের মেয়ের ঘর থেকে নাকি রাশি রাশি না ফেলে দেওয়া শুকনো রক্তের দাগ সমেত স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়া গেছিল, সেরকম পিকিউলিয়ার অনমিত্রা ছিল না, তবে পনেরো ষোল বছর বয়সে সে মাঝে মাঝেই আত্মহত্যার কথা ভাবত।
যখন তার দিদি সংঘমিত্রা বড় বড় থান ইঁটের মত এক একখানা ফিজিক্স বা ম্যাথসের বই মাথায় দিয়ে ঘুমোচ্ছে, কারণ ও বলত, ঘুমোলে ওর পড়া ভাল হয়, বিশেষত বই মাথায় দিয়ে। একটা লাল শানের মেঝের ঘরে, সারা মেঝে বই ছড়িয়ে, মাদুরের এক কোণায় বসে সংঘমিত্রা পড়ত, তারপর ঘন্টা খানেক বা দেড়েক পরে এলে দেখা যেত, ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছে ও... খানিকক্ষণ পড়ার পরেই আসলে বীভৎস মাথার ব্যায়ামে ওর ঘুম পেয়ে যেত। এবং ঘুমের মধ্যে ওর সেরিব্রাল কর্টেক্স ইত্যাদি ইত্যাদি অংশে ঢুকে পড়ত অংকের ফরমুলারা। এবং তারা সেটল ইন করত, আরামসে গুঁজে গুঁজে যেত তার আপাত সিম্পুল জটিলতাহীন মগজে।
সেই সব সময় অনমিত্রা জেগে থাকত, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করত, বেগুন ভাজতে শিখতে গিয়ে বেগুন পোড়াত বা দুধ গরম করতে গিয়ে দুধ উথলিয়ে ফেলে দিত, এবং তার মা চেঁচাতঃ এই বয়সে আমার শ্বশুরবাড়ি করা হয়ে গেসল দু বছর, এরকম সব কান্ড করলে লোকে বলবে কী?
এরও আগে তার মা বলত, পড়াশুনো কর, নইলে বাড়ি বাড়ি বাসন মেজে খাবি।
যারা বাসন মাজে তাদের প্রতি এই অপমান মেনে নিতে পারত না অনমিত্রা। এবং তার বাবা , যে আপাতত মৃত, সে তো ছিল কম্যুনিস্ট! কেমন একটা ভেগভাবে ও জীবিত মায়ের অত্যাচারের বিরুদ্ধে জেহাদ করতে করতে মৃত বাবার পক্ষের , এবং কম্যূনিস্ট হয়ে গেসল। বাবার বইগুলো নামিয়ে নামিয়ে পড়ত। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায়ে নাক গুঁজে ও বাবার আঘ্রাণ নিত, হোঁৎকা প্যাটার্নের হাঙ্গারিয়ান রেভোলিউশন নামের একটা না বোঝা বইয়ের ভেতর ও ঢুকে পড়তে চাইত আশ্রয়ের খোঁজে।
তারপর ওর কবিতা লেখার শুরু ... সংঘমিত্রা যদি না ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটে গিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে এম টেক করত ( পদার্থবিদ্যায় এম এস সি করার পর)... কোণদিন ছোট্ট ডায়েরিতে কবিতা লিখে কবি হওয়া হত না অনমিত্রার। কারণ কাগজের জোগানের সঙ্গে সঙ্গে লেখার জোগানের একটা অদৃশ্য সম্পর্ক ছিল।
সাদা রিম কাগজ ছিল । বরাহনগরের স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটের বিশাল মেনফ্রেম কম্পিউটারে যেগুলো প্রোগ্রাম লিখিত অবস্থআয় বেরিয়ে আসত হড়হড় করে...এবং সেই বেরিয়ে আসাটার ভেতরে একটা অদ্ভুত অর্থহীনতা ছিল, যা অনমিত্রাকে একরকমের শান্তি দিত। যে শান্তি যে কোন গ্রিক বা ল্যাটিনে লিখিত বইতে পাওয়া যায়। যে ভাষা পড়তে পারেনা অনমিত্রা ( সংঘমিত্রা বা তার কূলের কেউ কেউ নিশ্চয় পারে), সেই প্রোগ্রাম ল্যাংগুয়েজে লেখা অসংখ্য অসংখ্য ভাঙা টুকরো টুকরো বাক্য, অনেক ব্র্যাকেট এবং অনেক কী কী সব যেন ভর্তি। সেগুলো পাতার পর পাতা কনটিনুয়াস স্টেশনারি, বেরিয়েই চলে বেরিয়েই চলে মেনফ্রেম কম্পিউটার নামক সুবিপুল একটা যন্ত্র থেকে, যে যন্ত্রটা রাখা থাকে একটা আস্তাবল বা গুদোমঘরের মত বিশাআআআআআআল ঘরে , আই এস আইতে। সেই লেখাগুলো থেকে নাকি সংঘমিত্রারা বাগ বের করে, মানে পোকা বাছে। সেই প্রক্রিয়াটাকে বলে ডিবাগিং।
ডিবাগিং হয়ে গেলে সেই কাগজগুলোর আর কোন কাজ নেই। তখন হেলা ভরে সংঘমিত্রা সেগুলো অনমিত্রাকে দান করে দেয়। আর তার উলটো পিঠগুলো ধবধবে সাদা, শুধ পাশে ফুটো ফুটো, ওই ফুটোর নাম পারফোরেশন, কারণ ঐ ফুটোর ভেতর দিয়ে পিন চালিত হয়, কারণ কাগজটাকে মেশিনের দাঁতে দাঁতে আটকে না রাখলে কাগজ ফর ফর করে উড়ে, পালিয়ে , ঘুরে বেড়িয়ে একশা করতে পারে।
সুতরাং অনমিত্রা সেই সাদা কাগজের , দু ধারে ফুটো ওয়ালা বান্ডিলের মধ্যে দিয়ে গুণসূঁচ চালিয়ে বাঁধাই করে অংক কষার রাফ খাতা বানায়, টুয়েলভ ক্লাসে অংক কষে ও দর্শন নিয়ে পড়তে পড়তে ফার্স্ট ইয়ারে ওই কাগজেই নোট লেখে।
এবং কবিতাও।
কী আরাম ছিল কাগজগুলোয়। সম্পূর্ণ টেকনোলজি সম্পর্কিত এই সময় খন্ড। যখন কবি হতে চাইছে অনমিত্রা।
কিন্তু বেদম ভয় করছে। কারণ কী ভাবে কবি হতে হয় কেউ জানেনা।
জানবে কী করে? অনমিত্রা তখনো বাবার , মানে মৃত, অলরেডি ১৪ বছর আগে মৃত বাবার , কবিতা বইয়ের কালেকশনের বাইরে কোন কবিতাই পড়েনি, মানে সেভাবে পড়েনি। পড়েছে সুভাষ, ওই যে বললাম, পড়েছে বীরেন। কিন্তু পড়েছে কিন্তু বোঝেনি চিকরি চিকরি সবুজ পাতার ছবি দেওয়া ঐ সিগনেটের জীবনানন্দের বইটা, মানে, সেভাবে বোঝেনি। মাথার ভেতরে কোন বোধ কাজ করে পড়লে ওর মাথার ভেতরে কোন বোধ কাজ করেনা।
কোন ম্যাজিক দিয়ে শুষে নেয়নি তখনো জীবনা... ওকে, তার নিজের সরু সুড়ঙ্গটার ভেতরে। ঠিক যেমন, ও তখনো আশাপূর্ণা বিভূতিভূষণ বঙ্কিম শরৎ থেকে বেরোয়নি, ও তখনো কবিতা সিং হ পড়েনি। কিন্তু ও এনিড ব্লাইটন থেকে শরদিন্দুতে প্রবেশ করেছে, আর পরশুরামেও। কিন্তু ও তখনো রবি ঠাকুরের লেখা বলতে ইশকুলের বইগুলোর কবিতা থেকে শুরু করে, মায়ের আলমারির কাব্যগ্রন্থগুলো। মেরুণ চামড়ার বাঁধানো রচনাবলী থেকে একবারই মা নদী আর লক্ষ্মীর পরীক্ষা পড়ে শুনিয়েছিল, ওর তখন বারো। পনেরো বছর বয়সে, এবার ও গোরা পড়বে, চতুরঙ্গ পড়বে, আর পড়বে চোখের বালি।
কিন্তু তখনো রবীন্দ্রনাথ ওর জীবন পরিবর্তন করতে পারবে না। পারে কখনো, যতক্ষণ তো তিনবার শেষের কবিতা পড়েছে কিন্তু কিচ্ছু বোঝেনি, ঘরে বাইরে সিনেমা একলা দেখতে গেছে ক্লাস টেনের দুরুদুরু বুকে, যতক্ষণ না ও বুঝতে পেরে গেছে ঘরে বাইরেও, বইটা এবার... আর হঠাৎ একদিন যোগাযোগ পড়ে ওর মনে হয়েছে মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ল।
সব মিলিয়ে খুব বেশি করে ও বই নির্ভর জীবন কাটিয়েছে বলেই কি ওর কবিতা লেখালেখি? নাকি প্রেম করতে পারে না, ওই যে, সোশ্যাল স্কিল নেই, ছেলেদের একটু একটু করে ভাল লাগতে শুরু করেছে বলে জানালা দিয়ে নিচে যেসব ছেলে ব্যাডমিন্টন খেলে তাদের দিকে তাকায়, স্পেশালি রোগা টিকটিকির মত চশমা পরা ছেলেটাকে ওর খুব ভাল্লাগে বলে আড়াল থেকে ওদিকে নজর রাখে... বুক দুরুদুরু করে...তাই?
নাকি ও মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করলে ওর বুকের মধ্যে ঠান্ডা স্রোত বয়, সেটা থেকে একমাত্র এইসব উল্টোপাল্টা লাইনগুলো লিখলে, আর হ্যাঁ, ডায়েরি লিখলেই একমাত্র ক্ষান্তি মেলে, শান্তি পায়।
ডায়েরিগুলো কে ওকে দিত কে জানে। মোটা রেক্সিন বাঁধানো ডায়েরি, পৃথিবীতে যে ডায়েরিতে কাজের কথা ছাড়া আর সবকিছুই লেখা হয়ে গেছে। অনেক ডায়েরি ওর, আর প্রায় সব পাতাতেই উগরে দেওয়া রাগ, দুঃখ, অপমান, রাগ, আরো আরো রাগ। আর মন খারাপ। আর বলতে থাকা, আমি সুন্দর হতে চাই, শব্দে সুন্দর। সুন্দর হতে পারছি না কেন?
দ্বিতীয় অনমিত্রা
-তুমি অনমিত্রা?
-হ্যাঁ। কে আপনি।
- আমার নাম শুভ সরকার।
- ও! থমকে গিয়ে থেমে যায় । নীরবতার মুহূর্তগুলো দীর্ঘ হয়ে গেলে, অস্বস্তি ভেঙে বলে, একটু হেসে, কেমন আছো শুভ।
এই শুভ সরকারের সঙ্গে ওর পত্রবন্ধুত্ব। পেন ফ্রেন্ড । এই একটা জিনিশ। টেকনোলজির হাত ধরে পৃথিবীতে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা পালটায়। কিশোর রায় আর শুভ সরকার ওর প্রথম পত্র বন্ধু। না কোণ বান্ধবী নেই। কারণ ও জানত না , বন্ধুর লিঙ্গ হয়, আর “বন্ধু” নামক কিশোর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল অনমিত্রা, পত্রবন্ধু চাই। বান্ধবী লেখেনি বলে, বান্ধবী পায়নি।
চিঠি এসেছিল গোটা গোটা অক্ষরে। অনমিত্রা, তোমার বিজ্ঞাপন দেখেছি।
সত্যজিৎ রায় আর গোদার গুনে। শুভ সরকার প্রথম ফিল্ম বাফ হয়ে অনমিত্রার সঙ্গে আলাপ করল। চিঠিতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হল সংস্কৃতি চর্চা। সাংস্কৃতিক কথাবার্তা ভালই চলছিল কিন্তু আবার ফোন কেন? অনমিত্রার আড়ষ্টতা কাটেনা। ঠান্ডা, একদম শক্ত হয়ে যায়।
- আমি তো পত্রবন্ধু চেয়েছি । ফোন বন্ধু তো চাইনি?
-আচ্ছা আচ্ছা আমি পত্রবন্ধুই থাকব। কিন্তু ফোনে কথা কি একদমই বলবে না?
- বলব না তা নয়। ঠিকাছে, বল। ( মনে পড়ে গেছে এতক্ষণে শেষ চিঠিতে ফোন নম্বর দেওয়ার কথাটা)
- এই সবকিছু ভাল তো? একদিন দেখা হবে?
-আমি চেতলায় থাকি।
- সে তো ঠিকানাটাতেই দেখে নিয়েছি। আমি আসতেই পারি একদিন। আসব? কবে আসব?
- এসো, রবিবার। ঠিকাছে।
প্রথম পুরুষবন্ধু শুভ সরকার।
আসলে বোঝেইনি অনমিত্রা । কিন্তু পত্রবন্ধুত্ব থেকে মুখোমুখি বন্ধুত্ব অব্দি হল; গার্লস ইশকুলে পড়া অনমিত্রার প্রথম ছেলেবন্ধু। শুভর মেয়েবন্ধু... না প্রথম কিনা ও জানেনা, জানার ইচ্ছেও ছিল না, তবে কিনা শুভ বার বার সেটা শুনিয়েছে ওকে। গোদার দেখেছে কিনা, ব্রেথলেস। সেই মেয়েটার গায়ে হাত বুলোচ্ছিল হিরো, তাই ওকেও বলতেই হল, ওর অনেক মেয়েবন্ধু, এবং তাদের সঙ্গে ওকে শুয়ে শুয়ে গল্প করার স্বাধীনতা দিয়েছে মেয়েটার বাড়ির লোকেরা।
এত্তো বন্ধুত্ব!
সরি, স্যার, অনমিত্রার মায়ের কিন্তু সেই সেইরকম স্বাধীনতা্র অ্যালাউয়েন্স দেওয়া নেই অনমিত্রাকে। তাই ওরা বসে বসেই গল্প করে, বসবার ঘরে।
নাঃ বসবার ঘরটাও একটা জাম্পকাট ঘর। ওর নিজের জানা নেই কবে যেন মায়ের ওপর বিদ্রোহ হিসেবেই ঘরটার উৎপত্তি। ওটা ওদের মেজেনাইন ফ্লোরের ঘর। কিছু পুরনো জিনিস রাখা থাকত। এক কোণে কিছুটা জায়গা ফাঁকা করে, সেই জায়গাটাতেই ওর পুরনো বেতের চেয়ারে নতুন কাপড় দিয়ে ঢাকা কুশন দিয়ে বসবার জায়গা, আড্ডার ঘর বানানোর চেষ্টা ছিল।
এভাবে ও নিজের এলাকা চিহ্নিত করতে চেয়েছিল বোধ হয়।
কিন্তু আপাতত শুভর সঙ্গে কথা বলছে মাঝে মাঝে, একটু একটু করে ওদের সময় কেটে যাচ্ছে। ওরা টুয়েলভ পাশ করছে। কখনো সামনে থাকা কোন ছেলের সঙ্গে প্রেম ইচ্ছা জাগেনি অনমিত্রার । দিদি অলরেডি প্রেম করছে। সংঘমিত্রার বয়ফ্রেন্ডকে ও মায়ের চোখের সামনেই বসবার ঘরের দরজা বন্ধ করে গল্প করতে দেখেছিল, আড়িও পেতে ছিল। দরজার ফুটোয় চোখ রেখে দেখেছিল অনমিত্রা, সংঘমিত্রাকে চুমু খাচ্ছে নিলয়দা।
কিন্তু দিদি কিনা এম এস সি পড়ে, মেডেল পায়, নিলয়দাও...
কিন্তু দিদি কিনা মায়ের পেয়ারের বড় মেয়ে।
তারপর তিনবছর কেটে গেছে। তিনবছরে ও শুধু নিজের জন্য ছোট্ট ঘর , আড্ডা ঘর বানাতেই পেরেছে। আর কিচ্ছু পারেনি।
খুব অশান্তি করে, খুব চেঁচায় । মায়ের সঙ্গে সকালে অশান্তি বিকেলে দিদির সঙ্গে। বাকি সময় নিজের সঙ্গে।
কেন অশান্তি করে? বেগুন ভাজার জন্য? না ওর কল্পনার দম্পতি নিশিগন্ধা –প্রবালের মধ্যে প্রেম হচ্ছে না, মা বহুদিন দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ির বাইরে যাচ্ছে না বলে, দিদি ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে বলে?
পিকনিকের দিন ওর মুড খারাপ হয়, মা বলে তুই স্পয়েল স্পোর্ট। মামার বাড়ি যেতে হয় , মাসির বাড়ি যেতে হয়, মায়ের সঙ্গে সবসময় কেন ওকেও যেতে হবে ? মা বা দিদির সঙ্গে বেরোতে ওর বাজে লাগে। ও যেতে চায়না।
ওর আসলে ওই সময় নিশিগন্ধা আর প্রবালের প্রেম প্রত্যক্ষ করতে ইচ্ছে করে, ওদের ডায়ালগ ওর মাথার মধ্যে প্লে হয়। কী বোরিং মেয়ে ও। কত অস্বাভাবিক ওর চাহিদা। সামনে থাকা আস্ত ছেলেপুলেদের ওর আকর্ষক লাগেনা, মানে ভালই লাগে কিন্তু এনাফ আকর্ষক লাগেনা।
সর্দি হয়েছিল সেদিন, শুভ এসেছিল। আসতে শুরু করেছে অন্য পত্রবন্ধু কিশোর রায়ও।
কাউকে যে তোর ভাল লাগেনা সেই কথাটা নতুন নাকি? তুই নাক উঁচু, সবসময় কালো আর কুটকুটে লাগে তোর সব কম্বল, কোথাও কোন ভাল লাগার ট্রেস পাস না তুই, কোথাও দেখিস না বেঁচে থাকার ভাল কিছু তুই।
আর সেই একটাই গল্প তুই লিখে যাস পাতায় পাতায় ডালে ডালে।
এই মুহুর্তে তুই এইসবই করছিস।
কিন্তু ডিটেলিং? ডিটেলিং টার কী হবে? তুই তো জানিস, শেষ অবদি আর কিচ্ছু থাকে না ডিটেলিং ছাড়া?
তা আমি দিয়ে দেব ডিটেলিং? এই যে বাড়িটে। এই বাড়ির গল্প তো প্রায় সর্বত্র লিখেছিলি। কিন্তু লিখে লিখে শেষ হচ্ছে না কেন? শেষ হয়না বলেই। কারণ বাস্তব শেষ করা মানুষের কম্মো না।
পঁচিশটা গল্পে তুই একই ডিটেলিং ইউজ করলি । অন্ধের হস্তীদর্শন যেমন তেমনই অন্ধের বাড়ি দর্শনের মত, প্রতিটা বাড়িই আলাদা হয়ে উঠল। লোকে ভাবল আলাদা এরা।
ওই বাড়িই আসলে, সেই একই সিঁড়ি, একই লাল মেঝে। শানের। সেই ভাঙা, লম্বাটে আকারের জানালা, দরজা। এখানে ওখানে ড্যাম্পের দাগ।
এ দিয়ে কী বুঝলি? প্রাণটা পেলি? পেলিনা তো?
এই বাড়িতেই তোর ক্যারেকটার অনমিত্রা প্রথম কবিতা লিখবে। কেন লিখবে? একটা মানুষ কেন লেখে কবিতা?
ওর মন খারাপ থাকত, ও একা বড় হয়েছিল। ওর কোন বন্ধু ছিল না। ওর কোন সামাজিক ক্ষমতা ছিল না। না ছিল লোকের সঙ্গে কথা বলার উপায় বা সুযোগ না ছিল স্কিল। মুখচোরা মেয়ে ও।
তাই কবিতা লিখত? নাকি এই বাড়ির বিভিন্ন দেওয়াল আলমারির ভেতর রাখা ছিল অনেক অনেক কবিতার বই, উই লেগে নষ্ট না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত।
এই একই বাড়িতে ওর দিনগুলো ছিল একঘেয়ে। ওর প্রতিটা দিন ছাত, ঘর, সিঁড়ি, বারান্দা। ওর একাকিত্বের প্রতিটা মাইলস্টোন এই বাড়ির জানালাগুলো, ঘরের সিলিং, ছোপধরা, অথবা আলমারি। হ্যাঁ অবশ্যই আলমারি, বাদামি, গাঢ় বাদামি , প্রচন্ড অগোছালো, কাঠের বা প্লাইয়ের। লোহার নয়, কখনোই লোহার নয়।
অনমিত্রা কিন্তু ভীষণ ভালবাসত একটাই জিনিস। সেটা হচ্ছে নাটকীয়তা। হয়ত সেটাও ও ওর মা, বাবা, দাদার ওপোর সম্পূর্ণ প্রয়োগ করতে পারেনি, হবে হবে কিন্তু হচ্ছে না এমন অনেক প্রেমিক বা সম্ভাব্য প্রেমিকদের ওপর অ্যাপ্লাই করতে পারেনি... তাই। নাটক করতে না পারলে তো নাটক জমে উঠবেই বুকে, আর সেই নাটকটা ঝেড়ে ফেলার জন্য হয় গল্প নয় কবিতা কিছু একটা লিখতেই হবে ওকে। যদি না ও অভিনয় পারে, কিন্তু আগেই বলা হয়েছে যে ও আসলে ওসব কিছুই পারেনা, সোশ্যাল স্কিলই নেই বলে।
৩
অনমিত্রা ভার্শন ২
এক অপরিসীম মূর্খতা, অন্ধতা ও আত্মবিশ্বাসের বশে অনমিত্রা এই ধরাতলে কবিতা নামক চক্রব্যুহটিতে গান্ডীবহীন, চতুরতাহীন, ক্ষমতাহীন অথচ বীরবিক্রমী ইনট্যুইশনধর্মী ইনস্টিংকটিভ রাইটারের ন্যায় ঢুকিয়া গিয়াছিল। অসামাজিক, অপরিকল্পিত, অতি আকাট কিছু লাইন লিখিয়াছিল। নচ্ছারিনী অথবা ... এর মত শব্দ সৃষ্টি করিয়া ফেলিয়াছিল!!! কিন্তু তাহাই শুরু বা শেষ ধরিয়া নিলে চলিবে না।
আমরা তো জানি প্রোডাকশন রিলেশনের কথা, মার্ক্স সায়েব কথিত। আমরা তো জানি উৎপাদন মাধ্যম কত বিশাল ভূমিকায় থাকে ও রহিয়াছে। আমার এযাবতকালের রচিত যাবতীয় অলম্বুশ লেখামালায় লেখন মাধ্যম যতবার পালটায়, আমিও পাল্টাই। তাই একখান আমি নহে, সাত খান আমির সহিত আলাপ হইল এই জন্মে...
অনমিত্রা অমুকদার সঙ্গে শোয়নি। কেন শোয়নি? না শুলে ওর লেখা ছাপা হয় কিভাবে? এটাই ছিল এপিটোপিট সমস্ত কবির প্রশ্ন। যারা অধিকাংশ পুরুষ ও কিছু বা নারী।
একটা চিঠি পেল অনমিত্রা। তাতে লেখা ছিলঃ
তুই অমুক কবির সঙ্গে এই এই করিস। অমুক কবি তোর সঙ্গে এই এই করে। তাই তোর লেখা ছাপা হয় স্বদেশ পত্রিকায়?
ব্রাউন পেপার খামটা, হাতে লেখা চিঠিটা, অনেকক্ষণ নিয়ে হাঁ করে বসে থেকে, তারপর একঝলক ভেবেছিল অনমিত্রা, হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্টের কাছে পাঠানো যায় কিনা।
তারপর ঝেড়ে ফেলেছিল ঘাড় থেকে। বা, স্লোলি, গড়িয়ে পড়ে গিয়েছিল ঘটনাটা ওর পিছল মন থেকে।
ততদিনে প্রোডাকশন রিলেশন পরিবর্তিত হয়েছে কিছুটা। অনমিত্রা এখন ডায়েরিতে, অফিসের ফাইলের বর্জ্য কাগজের পেছনদিকে, জেরক্স পেপারের এ ফোর সাইজে , এবং খামের কেটে নেওয়া টুকরোয় কবিতা লেখে।
তার বিবাহ হয়েছে। তাই সে যা লেখে, একজন প্রাজ্ঞ পুরুষ কবি সে বিষয়ে নাক সিঁটকে টিপ্পনী দিয়ে থাকে বিবিধ ফোরামেঃ আত্মজৈবনিক। অনমিত্রার কবিতা থেকে অনমিত্রার জীবনকে পড়ে নেওয়া যায়। এই যে ও বিবাহ বিষয়ে কবিতা লিখল। তারপর ও শ্বশুরবাড়ি বিষয়ে কবিতা লিখবে। তারপর ও ধারার ৪৯৮ এ বিষয়ে কবিতা লিখবে। তারপর ও প্রেগনেন্সি মাপক কালার টেস্ট স্ট্রিপ নিয়ে কবিতা লিখবে। তারপর ও বাচ্চার পেচ্ছাপ নিয়ে কবিতা লিখবে। তারপর ও সন্তানের বেড়ে ওঠা নিয়ে কবিতা লিখবে। মহামান্য হুজুরগণ, মিলিয়ে নিন। অনমিত্রা যা লেখে, কোনটাই তার আত্মজীবনীর উর্ধে উঠতে পারে না। ইন ফ্যাক্ট কোন মেয়ের লেখাই কোনদিন আত্মজীবনীর উর্ধে উঠতে পারেনি।
এটাও অনমিত্রা শুনেছে, আর শোনাটা গড়িয়ে পড়ে গেছে তার গা দিয়ে। ততদিনে তার শাশুড়ির সঙ্গে রান্নাঘরের অধিকার নিয়ে এক নীরব যুদ্ধ চলছে। ততদিনে তার সন্তানের বেড়ে ওঠার পর্বে তার অভিজ্ঞতায় আনন্দ আর ডিপ্রেশন, ভয়াল দোষারোপ আর দায়িত্বকর্তব্য, হিশির কাঁথা মেলে দেওয়ার জায়গা নিয়ে ননদের ঘরের লাগোয়া বারান্দার এলাকাভিত্তিক পলিটিকস, সবকিছুর সঙ্গে মোকাবিলা চলছে।
বাড়ি থেকে অফিসে পালায় অনমিত্রা, আর অফিস থেকে কবিতায় পালায়। কবিতা সব ছাপা হয়না। কিছু কবিতার স্ক্রিপ্ট কিছু কবিদের কাছে পড়ে থাকে... স্ট্রাগলিং অনমিত্রা তার মাতৃত্বে ও কবিত্বে ইকুয়ালি স্ট্রাগলিং।
৪
অনমিত্রা ভার্শন ৩
তারপর একদিন টাকাপয়সার মত অনমিত্রা পুরনো হয়ে গেল। ওর জীবন ওর কাছে পুরনো হয়ে গেল।
একদিন অনমিত্রা অর্কুট জয়েন করল, তারপর ফেসবুকও।
একদিন অনমিত্রার প্রোডাকশন রিলেশন পালটে গেল। ও কাট কপি পেস্টের জমানায় এসে পড়ল । ব্যাস। অর্ধেক জয় । কেননা, কুঁড়ের বাদশা অনমিত্রা , যে কোনদিন গদ্য বা গল্প লিখতে পারত না, কাটাকুটি ভরা ড্রাফট থেকে ফেয়ার কপি করতে হবে এই ভয়ে, সেই অনমিত্রা এখন প্রথমে বাংলা ওয়ার্ড সফট ওয়্যারে তারপর ইউনিকোড অভ্রতে লিখতে পারে।
ওর সন্তান, মেয়ে প্রত্যুষার বয়স হয়ে গেছে আট। সে আর আগের মত ওর সমস্ত সময়টা জুড়ে থাকে না। ওর শাশুড়ির বয়স হয়ে গেছে সত্তর। তিনি এখন অসুস্থ , গৃহকর্মে নিপুণা নন আগের মত। ফ্রিজে খাবার পচে যায়, সবজি পচে যায় তাঁর। শাশুড়ির সঙ্গে অনমিত্রার আর কোন ঝগড়া নেই। উনিও রান্নাঘরে যান না, অনমিত্রাও না। শুধু প্রত্যুষার জলখাবার , ম্যাগি বা চিজ পাউঁরুটি বানানো ছাড়া অনমিত্রা অন্য কোন রান্না করেনা। শুধু এক রান্নার লোক তার ইচ্ছেমত প্রচুর তেল ঢেলে কি কি সব রান্না করে রেখে যায়। যা ইচ্ছে তাই। অনমিত্রা খায়। শাশুড়ি খান।
আর এইভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়ে যায়। অনমিত্রা বকে কাজের লোককে। আগে শাশুড়ি বকতেন। অনমিত্রা বস হয়ে যায় অফিসে। আগে বস ওকে অত্যাচার করত। এখন অনমিত্রা অত্যাচার করে ওর সাবর্ডিনেটদের।
এখন রান্নার মেয়েটি বলে ওকে, ওদের গ্রামের কথা। জমি দখলের কথা। লাল পার্টির শ্বেত সন্ত্রাসের কথা। ও শোনে, লেখে, কাগজে আর্টিকেল। আর্টিকেল পড়ে সবাই ওর পিঠ চাপড়ায়। সেই দাদা কবি, যে বলেছিল, মেয়েদের সব লেখাই আত্মজৈবনিক, এখন নিজেই আত্মজীবনী লিখছেন। কিছুদিন পর তিনি আত্মহত্যাও করবেন।
এইভাবেই, একদিন অনমিত্রার প্রদেশের শাসকের রঙ বদলে গেল। অনমিত্রা সেই রঙ বদলের সময়ে প্রতিবাদী হয়েছিল, তাই ওকে দেখে নেওয়া হবে বলা হয়েছিল। অন্নদাদি যেমন বলত, পিতিবাদি।
আর কিছুদিন পরে, রাজনৈতিক পার্টির বদলটাও, এপিটোপিট হয়ে যাবে। অনমিত্রা আবার প্রতিবাদী হলে, কেউ কেউ উড়ো চিঠি দেবেঃ সাবধান। তোমার ওপোর নজর আছে।
আর , অনমিত্রা নিজেই লিখতে শুরু করবে তার এপিটাফ। নিজের এপিটাফ।
এইখানে কবি এক ঘুমায়েছে। কম্পিউটার প্রিন্টাউট দিয়ে মোড়া তার লাশ।
এইখানে ঘুমায়েছে, প্রেম আর হাগামোতা, নারী আর পুরুষের সঙ্গের সন্ত্রাস
এইখানে ঘুমায়েছে... ক্ষমতার , ক্ষমতার , হস্তান্তরের ইতিহাস।
**********************************************
Unique, both content and the form..
উত্তরমুছুনকি ডিটেলিং! খুব ভালো লেগেছে চলনটা।
উত্তরমুছুনগল্প লেখা বা বলার আর্ট যে কতো যোজন এগিয়ে গেছে এইরকম লেখা পড়লে তা মালুম হয় !
উত্তরমুছুনশ্রদ্ধা ভালবাসা আমার প্রিয় লেখক কে
মুছুনকাঁটার খোঁচার মতো
উত্তরমুছুনকাঁটার খোঁচার মতো
উত্তরমুছুনঅসাধারণ লেগেছে
উত্তরমুছুন