চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য

মায়াজম
0
         নিষিদ্ধ প্রেমের অমর কাহিনী 


প্রেম কি সত্যিই অমর? কত কত প্রেম অকালেই ঝরে যায় বসন্তের ঝরা পাতার মতো। আবার কত প্রেম গড়ে ওঠে বসন্তের কোকিলের ডাকে, ফুলের সৌরভে। তেমনই এক প্রেমের গল্প সৃজন করেছিলেন ফ্রাঞ্জ উনশ্চ আর হেলেনা সিট্রোনেভা। এক নিষিদ্ধ প্রেমের অমর কাহিনী। প্রেম কি কখনও নিষিদ্ধ হয়? হয় না, কিন্তু করা হয়েছিল। কারণ, আর্য গরিমার আত্মভরিতা নিষিদ্ধ করেছিল সেই প্রেমের অধিকার। আর, প্রেমের শক্তিই নাৎসি বাহিনীর গ্যাস চেম্বারের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল সিট্রোনেভাকে। কিন্তু, নাৎসিদের পরাজয়ের পর যুদ্ধ অপরাধী ফ্রাঞ্জের কি হল?
আর্য রক্তের দর্পিত পদভারে আজ আমাদের দেশও প্রকম্পিত। শুধু আমাদের দেশই বা বলি কেন, আমেরিকায় বর্ণান্ধ জাত্যাভিমান সেই দেশে গণবিপ্লবের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমাদের দেশের অনেক প্রস্ফূটিত কুসুমের নিটোল ভালবাসাকে ‘লাভ জেহাদ’ বলে চিহ্নিত করে বিচারের তোয়াক্কা না করেই হত্যা করা হচ্ছে। সিট্রোনেভা আর ফ্রাঞ্জের ঘটনার সময় নাৎসি আইনে তাদের ভালোবাসাকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু ধর্ষণ ছিল আইনসম্মত। প্রস্তাবনাতেই বেশি সময় নেব না, মূল গল্পে আসি।
১৯৪২-এর বসন্তকাল। একটি ট্রেন চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে গড়ে ওঠে এক দেশ স্লোভাকিয়া থেকে ছুটে যাচ্ছে পাশের দেশ পোল্যান্ডের আউশভিৎসজ শহরের দিকে। ট্রেন বোঝাই একদল বন্দী, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তাদের অপরাধ, তাঁরা ইহুদি। তাঁরা শেষবারের মতো দেখছেন সোনালী গমের ক্ষেত, ম্যাপেলের সোনালী পাতা ঝরা পথ, পাহাড়ি ঝর্ণা আর টলটলে নদী। তাদের মনের কোণে জমা সমস্ত যন্ত্রণা, ভয়, রুদ্ধ কান্নার বাষ্প হয়ে লেগে রয়েছে সেই ছুটতে থাকা ট্রেনের ঘষা জানালার কাঁচে। সেই ট্রেনের মেয়েদের ভিড়ে রয়েছেন এক তরুণী হেলেনা সিট্রোনোভা। হেলেনার সঙ্গেই চালান যাচ্ছে তার দিদি ও দিদির দুই সন্তান। হেলেনা ও অন্য মেয়েরা খুব স্পষ্টভাবেই জানেন তাদের পরিণতি মৃত্যু। জানতেন, তাদের বেঁচে থাকা বাকি জীবনটা শুধু সময়ের কাল গোনা। তাঁরা শেষবার জীবনকে ছুঁয়ে দেখার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছিলেন সেই সোনালী গমক্ষেত। ঝরা ম্যাপল পাতা, ঝর্ণা আর নদীর জল দেখে।
এর নয় বছর আগে, ১৯৩৩-এ, জার্মানিতে ক্ষমতায় এসেছেন আর্য রক্তের দর্পে দর্পিত হিটলার। তিনি আসার সঙ্গে সঙ্গেই গেস্টাপো বাহিনীর কুচক্রী আমলারা ন্যুরেমবার্গ আইন তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। কি ছিল সেই আইনে? আর্য রক্তের কেউ কোনও ইহুদিকে ভালবাসতে বা বিয়ে করতে বা প্রেমঘটিত যৌন সম্পর্ক রাখতে পারবে না। অন্যথা হলে শাস্তি নাৎসি জেলখানায়। বিচারে শাস্তির মেয়াদ শেষ হলেও মুক্তি নেই। ইহুদিটি, সে পুরুষ বা নারী যেই হোন, গেস্টাপো বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে পাঠাবে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে এবং তার পরের গন্তব্য গ্যাস চেম্বার। ১৯৩৫ এ রাইখস্ট্যাগ এই আইন গ্রহণ করে। আর, নাৎসি সেনা বাহিনীর কেউ যদি কোনও ইহুদি নারীর প্রেমে পড়েন, তার শাস্তি আরও কড়া।সরাসরি মৃত্যু – গ্যাস চেম্বার বা ফায়ারিং স্কোয়াড।
ফ্রাঞ্জ উনশ্চ ছিলেন হিটলারের শুৎজটাফেল বাহিনীর সদস্য। শুৎজটাফেল বাহিনীকে সংক্ষেপে বলা হতো ‘এসএস’ বাহিনী। এই দেশের আরএসএসের সশস্ত্র বাহিনী বা আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সশস্ত্র কু ক্লুক্স কান বাহিনীর মতোই বাহিনী ‘এসএস’। মাত্র ২০ বছর বয়সের ফ্রাঞ্জ ছিলেন আউশভিৎসজ-এর এসএস গার্ডস, তার ডিউটি ছিল গ্যাস চেম্বারে। এই কাজটা ভয়ঙ্কর কঠিন। প্রাণে দয়ামায়া থাকলে কারও পক্ষে কি প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে, যাদের হাড়সর্বস্ব শরীরে চামড়ার আস্তরণটুকু সম্বল, তাদের হত্যা করা যায়? ফ্রাঞ্জ এমন এক সৈনিক, যাকে প্রতিদিন এই কাজ করতে হয়। আর, সেই কষাইয়ের কাজের পর মদ আর আউশভিৎজের বন্দী মেয়েদের শরীরে তৃপ্তি পাওয়ার ব্যবস্থা তো থাকেই। কিন্তু, নিষেধাজ্ঞা একটাই, ধর্ষণ করা যাবে, ধর্ষণের সময় ধর্ষিতাকে চুমুটাও খাওয়া যাবে না। কোনও আবগে চলবে না।
১৯৪২-এর ২১ মার্চ। ফ্রাঞ্জ ২০ পেরিয়ে ২১ হবে। তার জন্মদিন পালন করবে এসএস গার্ডস। সন্ধ্যা থেকেই ঢালাও ফুর্তির আয়োজন। সকালে নাৎসি সেনারা মেয়েদের ব্যারাকে এসে জানতে চাইল "অ্যাই, তোরা কেউ জন্মদিনের গান গাইতে পারিস? কেউ?" কী নির্মম রসিকতা! মৃত্যু যাদের শিওরে, তাদের কাছে জন্মদিনের গান! হায়, হতভাগা ধর্ম, হায় আর্যজাতির মিথ্যা গর্ব! পায়ে পায়ে এগিয়ে এলেন হেলেনা, “আমি পারি।” মেয়েরা চমকে তাকাল সিট্রোনেভার দিকে- ‘হায়! আজ হয়তো ওখানেই ওকে ছিঁড়ে খাবে দস্যুগুলি, তারপর ছিবড়েটা যাবে ফার্নেসে...”। হেলেনা ভাবছিলেন, “মরতে তো হবেই। মারা যাওয়ার আগে অন্তত এক উৎসবে প্রাণ ঢেলে শেষবারের মতো জীবনের গান গাইবার সুযোগ ছাড়ি কেন? এও তো এক দুর্লভ সৌভাগ্যই!
হেলেনা সিট্রোনেভা এমন কিছু সুন্দরী নন। তার ওপর প্রায় অনাহারে, দিনের পর দিন অকথ্য অত্যাচারে শরীর হাড়সর্বস্ব। তার দিকে এর আগে কোনওদিন নজর পড়েছে কি না, জানেন না এসএস গার্ডসের তরুণ অফিসার ফ্র্যাঞ্জ উনশ্চ। সেদিনও জন্মদিনের কেক কাটার আগে জানতেন, একটা মেয়েকে আনা হয়েছে গান গাইবার জন্য। ব্যাস! ক্যাম্পের অসংখ্য নারী শরীরের একটা, এই তো। প্রাণের সমস্ত আবেগ ঢেলে ফ্রাঞ্জের জন্মদিনের গান গাইলেন হেলেনা, উজাড় করে দিলেন জীবনের প্রতি হেলেনার সমস্ত ভালোবাসা, ঢেলে দিলেন স্লোভাকিয়ায় ফেলে আসা মা, বাবা, ভাই, ক্যাম্পে আটক বোন, বোনের সন্তানদের প্রতি আবেগ আর দেশে ফেলে আসা দয়িতকে না পাওয়ার যন্ত্রনা। অপলক ফ্র্যাঞ্জ! এত সুন্দর কেউ গাইতে পারে? এক কষাইয়ের জন্মদিনে, যার হাতেই তার মরণ বাঁধা, সে এভাবে গাইতে পারে?
অনুষ্ঠান শেষে ভোগ করার পালা। মদের স্রোত বইছে। ফ্রাঞ্জও খেয়েছেন, কিন্তু মন টানছে হেলেনার দিকে। উৎসবে সহযোদ্ধাদের নজর এড়িয়ে একবার নিজের অফিসে গেলেন। পরের দিন যাদের গ্যাস চেম্বারে ঢোকানো হবে, তার তালিকাটা দেখে নিতে। চোখ পড়তেই চমকে উঠলেন – পর পর দুটি নাম – হেলেনা সিট্রোনেভা, রোজিঙ্কা সিট্রোনেভা। রোজিঙ্কা কে? জানেন না। ছুটে গেলেন মেয়েদের ব্যারাকে। এসএস গার্ডসের যাওয়ার অধিকার আছে, মেয়েদের ভোগ করতে তারা যায়ই। খুঁজে টেনে নিলেন হেলেনাকে। সে তখন নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল। তার হাতে ছুঁড়ে দিলেন একটা চিরকুট। হেলেনা অনেক পরে ইজরায়েলে বলেছেন, চিরকুটে লেখা ছিল -- “লাভ। আই ফল ইন লাভ উইথ ইউ।” হেলেনা বলেছেন, “আমার মাথা থেকে পা জ্বলছে। ভাবলাম, একজন এসএস গার্ডসের প্রেমকে স্বীকার করার চেয়ে মরণ ভাল। আমার শরীর রাগে গরগর করছে। ওর দিকে চোক তুলে তাকাতেও ইচ্ছে করেনি।” চিরকূটটা ছুঁড়ে দিলেন ফায়ারপ্লেসের আগুনে।
এর পর হেলেনা বলেছেন ‘এক পর্যায়ে’র কথা। সেই পর্যায়টা অকথিত। সেইদিনই ফ্রাঞ্জ জন্মদিনের শরীরি উৎসবে মেতে ওঠার জন্য টেনে আনে হেলেনাকে। সেই মিলনে ফ্রাঞ্জের আচরণে এমন কিছু ছিল যা ধর্ষণের অতলের নয়। কিছু ইঙ্গিত ছিল ভালোবাসার। এক পর্যায়ে হেলেনা দুর্বল হয়ে পড়েন। বলে দেন, কি হবে ভালোবাসায়, পরদিনই যাদের গ্যাস চেম্বারে পাঠাবে।
ফ্রাঞ্জ বললেন, আমি তার আগেই চাই প্রতিশ্রুতি। চেষ্টা করতে পারি অন্তত, যদি হেলেনা প্রেমকে স্বীকার করে। কেঁদে ফেলেন হেলেনা। বলেন, “বোনকে বাঁচাতে পারবেন? পারবেন না। ওর দুটো বাচ্চা আছে।” বোনের নাম জেনে নেন ফ্রাঞ্জ। বলেন, “রোজিঙ্কা! আহা, বাচ্চাদের কথা ছাড়ো। এখানে বাচ্চারা এমনিতেই বাঁচবে না।” ছুটে যান বধ্যভূমিতে, গ্যাস চেম্বারের যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর হাত থেকে ছিনিয়ে আনেন রোজিঙ্কাকে।
এর পর থেকে ফ্রাঞ্জ হেলেনা আর রোজিঙ্কা যাতে দু’বেলা অন্তত জীবনধারণের মতো খেতে পান, যাতে নিতান্ত লজ্জা নিবারণের কাপড়টুকু পান, সে দিকে সকলের নজর এড়িয়ে খেয়াল রাখতেন ফ্রাঞ্জ। ফ্রাঞ্জ জানতেন, প্রেম নিবেদনের কথা ঘূণাক্ষরেও জানা গেলে তাকেই আগে ঢোকানো হবে গ্যাস চেম্বারে বা ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করানো হবে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও হেলেনা, রোজিঙ্কাদের যাওয়া আটকানো যাবে না, যদি না, গ্যাস চেম্বারের জন্য বরাদ্দদের তালিকা থেকে ওদের বাইরে রাখা যায়। কর্তৃপক্ষকে তুষ্ট করে তালিকা বানানোর দায়িত্বও নিজেই নিলেন। অতি সতর্কতার সঙ্গে তালিকা বানাতেন, যাতে কোনও অসতর্কতায় যেন গ্যাস চেম্বারের যাত্রীদের তালিকায় হেলেনা, রোজিঙ্কার নাম না ঢুকে যায়। আবার, কোনওভাবেই যেন এই নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে। এভাবেই কেটে যায় আরও বছর তিন।
১৯৪৫, ৯ মে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের সময়ে রাইখস্ট্যাগে উড়ল বিজইয়ের লাল পতাকা। গুঁড়িয়ে দেওয়া হল আউশভিৎসজ কারাগারের একাংশ। প্রাণে বেঁচে গেলেন হেলেনা, রোজিঙ্কা আর আরও কিছু ইহুদি বন্দী। আরও যারা রক্ষা পেলেন, তাদের সঙ্গে হেলেনারা চেষ্টা করলেন স্লোভাকিয়া ফেরার। পথে তখন নানা বিপদ। রোজিঙ্কা নিজেকে হেলেনার মায়ের পরিচয় দিয়ে অনেক কষ্টে ফিরলেন দেশে। কাটলো আরও তিন বছর। ১৯৪৮-এ জন্ম নিল ইহুদিদের নিজের রাষ্ট্র ইজরায়েল। রোজিঙ্কা, হেলেনারা চলে এলেন জেরুজালেম। হারিয়ে গেলেন ফ্রাঞ্জ, যদিও অন্তরে রয়ে গেল তার স্পর্শটুকু।
অন্যদিকে পরাজিত জার্মান এস এস গার্ডসের জীবিত সৈনিক ফ্রাঞ্জ ফিরলেন অস্ট্রিয়া। জীবন বয়ে গেল নিজের খাতে। ফ্রাঞ্জ জানেন, জীবনে যেসব কাজ করেছেন, তার শাস্তিই তাঁকে খুঁজে বেড়াবে। হেলেনাকেও খুঁজে পাওয়ার কোনও পথ নেই। তার প্রথম যৌবনে যে শত্রুকে ভালবেসে ফেলেছিলেন, সে তাঁকে হয়তো ভুলেই যাবে। বাকি জীবনটুকু একাই বাঁচবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন ফ্রাঞ্জ।
ডন, ড্যানিয়ুব, কলোন নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেল সময়ের মতো। এল ১৯৭২। যুদ্ধ অপরাধে গ্রেফতার হলেন ১৯৪২-এর গ্যাস চেম্বারের দায়িত্বে থাকা তরুণ অফিসার ফ্রাঞ্জ উনশ্চ। বয়স তখন ৫০ পার হয়েছে। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় শুরু হল তার বিচার। সাক্ষ্য দিতে ডাক পড়লো আউশভিৎজের বন্দীদের। তাঁরা এঁকে এঁকে বলে গেলেন, ফ্রাঞ্জ একটা কষাই। রক্তের কণায় কণায় ইহুদীবিদ্বেষ। এমনকি পূর্ব ইউরোপ থেকে আনা বন্দীদের কাকে কবে গ্যাস চেম্বারে ঢোকানো হবে, তাও নির্ধারণ করতো ফ্রাঞ্জ। প্রতিটি অভিযোগ সত্য। ফ্রাঞ্জ হত্যার জন্য বন্দী নির্বাচনের অধিকার নিজের হাতে নিয়েছিল এবং, নির্মমভাবে তা পালনও করেছে। সেটাও করেছে শুধু দুটি প্রাণের জন্য, তার নিষিদ্ধ প্রেমের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে, সে কথা কেউ জানে না। কেউ তাই সে কথা বলেননি আদালতে। ফলে ফ্রাঞ্জের যুদ্ধ-অপরাধের প্রমাণের কোনও অভাব ছিল না। আউশভিৎজের নথিপত্রও তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। ফলে প্রাণদণ্ড, নিতান্ত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, অবধারিত।
রায় দেওয়ার সময় আগত। এমন সময়ে হন্তদন্ত হয়ে আদালতে এলেন দুই মহিলা। তাঁরা সেই ইজরায়েল থেকে এসেছেন সাক্ষ্য দিতে চান। ফ্রাঞ্জের বিচারের কথা খবরের কাগজে পড়ে। হেলেনা সিট্রোনেভা আর রোজিঙ্কা। রোজিঙ্কাই মূল সাক্ষ্য দিলেন। সেট্রোনেভা প্রথমে মুখ নিচু করে থেকেছেন। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারেননি ফ্রাঞ্জের দিকে। তারপর জেরায় মুখ খুলেছেন। সব, সব অকপটে বলেছেন। বলেছেন হিটলারের বিরুদ্ধে লাভ-জেহাদের কথা। কিভাবে ফ্রাঞ্জ হিটলারের রক্তচোখকে উপেক্ষা করে নাৎসি কাঁটাতারের বেড়ায় ফুটিয়েছেন বিধর্মী ভালবাসার গোলাপ।
আদালতে ফ্রাঞ্জ স্বীকার করেছেন তার এই ‘মহান বিশ্বাসঘাতকতা’-র কথা। বলেছেন, “হ্যাঁ, সত্যিই আমি সিট্রোনেভাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম। আর, ওর প্রভাবে আমি সেদিন থেকেই বদলাতে শুরু করেছিলাম। যুদ্ধ শেষে আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি, কিন্তু নিজেকে পুরোপুরি বদলে ফেলেছি।”
আদালতের কি সাধ্যি, ভালবাসাকে অস্বীকার করে! তাও আবার নিষিদ্ধ ভালবাসার পবিত্র পোলাপ! বেকসুর খালাস পেলেন ফ্রাঞ্জ উনশ্চ।

না, হেলেনা আর ফ্রাঞ্জের বিয়ে হয়নি। ২০৬৫ এ হেলেনা সিট্রোনোভা মারা যান। ২০০৯-এ মারা যান ফ্রাঞ্জ। তাদের অমর প্রেমকথা নিয়ে অনেক উপন্যাস, অনেক গল্প লেখা হয়েছে। ইতিহাসের নথির ভিত্তিতে প্রামণ্য গ্রন্থও আছে। কেউ কেউ দাবি করেন, ফিরে দেখার আগেই হেলেনা আর ফ্রাঞ্জ বিয়ে করেছিলেন আলাদা পুরুষ আর আলাদা নারীকে। ইজরায়েলে তাদের অমর প্রেমকথার ‘দ্য মোস্ট বিউটিফুল ওম্যান’ নামে চলচ্চিত্রায়ন করেছিলেন মায়া সারফাতি নামে একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা। ২০১৬ সালে সেটি ইজরায়েলের আকাদেমি অফ মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’-এর বিচারে স্বর্ণপদক পায়




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)