১৪২৭
১
অদ্ভুত সব প্রশ্ন কাছে আসে, খুলে দেয় –
তার বিস্তার।
কার ইচ্ছে পূর্ণ হয় ?
ওই প্রান্তরে একটি পাখি ডাকে…
দেখা যায় বহুদূরের পথ, কেঁপে ওঠে হাওয়া…
২
শূন্যতার গা বেয়ে নেমে আসে একটি পাতা…
বহুকাল দেখিনি সেই শ্যামবর্ণ করুণ মহিলাটিকে,
যে প্রেমের প্রথম পাঠ নিয়েছিল
প্রবহমান প্রকৃতির কাছে নির্বাক বিকালের আঁধারে।
তার ইচ্ছের কথা শোনে
রূপকথার সুদূর প্রসারিত গাছ আর ঘুম,
ঘুমের মায়াবর্ণ রাত্রি।
৩
আধখোলা পেন ও একটি ছায়া ঘন হয়,
পেরিয়ে যায় দু’-একটি স্মৃতির পৃষ্ঠা…
কে লেখে ভাঙা জলে বিপন্ন মানুষের কথা ?
জল
বেহুলার নির্জন ভেলা তৃতীয় নয়নে কাকে খোঁজে ?
রাত্রির নীচে জলের গভীরে অন্ধকার মেশে নীরবে।
প্রিয়তমর ঘ্রাণে পার হয়ে যায় অসহায় নির্মম ভেলা
রাত্রি লেখে প্লাবন শব্দটি আজ নিষ্ঠুর কালো ভাষায়
সাদা মেঘ শুকনো মুখে জড়িয়ে যায়, ওড়ে ঘন চুল
অন্ধকার ঘিরে একটি বাতাস ছিটকে ওঠে ওই মুখে
চেয়ে থাকো প্রাণের দিকে, জলের বিন্দু গড়িয়ে পড়ে …
দুফোঁটা জলের সঙ্গে ঝামেলায় কাঁপে শাঁখা ও চুড়ি
টের পাও দৃষ্টি বিনিময়ে ধরেছো ভালোবাসা দুহাতে
রাশি রাশি জল ভাঙে, ব্যথায় কাঁপে বুক, অস্থির জীবন
ভীষণ স্রোতে কাঁপে, মুখের উপর ভাসে কার ইশারা ?
সমস্ত গল্প শেষ হয়ে আসে, কে খোঁজে তার পূর্ণতা ?
ভালোবাসা গল্পটি থেকে যায় নিরাপত্তার অন্ধ ঘরে।
রাত্রির কথা
১
দুটি ঈষৎ ডানা মেলে কৃষ্ণবালিকা নেমে আসছে
মোহিনী মায়ায় একা একা সর্বহারার দেশে।
রাত্রির আলোছায়ায় কে কার নাম লেখে !
দারিদ্রের প্রেম নগর বন্দর জুড়ে জেগে ওঠে
সহচরি তবে আয় – আয় স্পর্শ কর্, খুলে ফ্যাল্
বৃষ্টিতাড়িত হাওয়ায় সবুজ পাতার আগুনবর্ণ মোহরগুলি।
২
ঘনঘোর আঁখির পাতায় রজনী নামে,
লুকিয়ে দ্যাখো ঢেউ তোলা চাউনি, গ্রীবার ভাষা,
বৃষ্টির প্রতীক্ষায় বৃষ্টির গায়ে কারা লেখে
পাশের বাড়ির রোগা ফর্সা মেয়েটির নাম।
৩
চমৎকার পালক খসে পড়ে –
কীভাবে গ্রহণ করো মাত্রাবৃত্তে জেগে ওঠা ছন্দ, রোমাঞ্চের নিঃসঙ্গতা
কার কুসুম শনাক্ত করতে গিয়ে টের পাই
প্রিয়, তোমার রুটি-সেঁকার গন্ধ, রাত্রির বাস, দুটি ঠোঁটের ওঠানামা।
দহন
ঘাতক কিছু লেখা মধ্যরাত্রির ভিতর লাফায়,
চিনে নেয় ভারী বিষাদ, অনন্ত উঁকিঝুঁকি।
নিঃসঙ্গতা আজও স্তব্ধ চোখে কী গো দ্যাখে
কাটাকুটি, ইশারার মারপ্যাঁচ, সমুদ্রের ঢেউ ?
রহস্যময় হাওয়া আঙুলে জড়ায়, কথা বলে –
স্বচ্ছ জলে চাঁদ ভাসে, দোলে সে ভ্রূক্ষেপহীন
কামনার রং ঢেলে কে ধরে অন্ধকার দু’বাহুতে ?
চুড়ির মিষ্টি সুন্দর শব্দের নির্ভুল ছায়াটি পড়ে,
ঘুমের মধ্যে বাজে দু’পায়ে নূপুর বাঁধা নৌকাটি
খুলে যায় একে একে অলিখিত অবিশ্বাস্য জীবন
ফিসফাস কথা বলে শূন্যরাত্রি, সন্দিগ্ধ বাতাস
নিশীথে অতল প্রশ্রয়ে মাছ ভেসে চলে জলে…
মায়া
প্রকৃত ঘুমের নীচের জগত মৃত্যুর কালো রঙে ভেজা
মানুষ বড়ো একা, শুধুই দংশন, অস্থির তরঙ্গে ঢাকা
বিষাক্ত ভালোবাসা শুধু কামড়ে ধরে, অনন্ত চোখের জলে
আঁধার জামাটি ভেজে অন্য দিগন্তে, ছিটকে ওঠে কালো হাসি
বিষণ্ণ ঠোঁট থেকে অন্ধকার ঘরময় অল্প অল্প হাওয়া বয় …
নিঃসঙ্গতা ধাক্কা দেয় বিস্ময়ে, গড়িয়ে নামে দূর থেকে বিরহ
নীরবে দুঃখের গভীরে দেখা দেয় ডুবুরির অস্পষ্ট ছায়া
স্ত্রীর চোখে জল টলমল করে, শূন্য কেঁপে ওঠে আজ শূন্যে …
অপূর্ব সুন্দরের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে রাখি বহুকাল নীরবে
স্তব্ধ চোখের মণি আটকে যায় চির অভিমানে, রোমাঞ্চিত রেখায় –
টুকরো কাগজ উড়ে মিশে যায় মোহিনী মেঘের আড়ালে।
চোখের জলে, লুকোনো কলমের বিষণ্ণ মানুষের ছায়া পড়ে,
মরমি অতীত ছুঁয়ে জাগে সর্বনাশের ভবিষ্যত ব্যথা।
.
সুচিন্তিত মতামত দিন