মলয় চট্টোপাধ্যায়

মায়াজম
1

                                   মাতৃরূপেন সংস্থিতা






- লো এ ফর এ্যাপেল। বি ফর বল। কি হলো জানো না বুঝি ? ও তুমি তো আবার ইংরাজী জানো না। ঠিক আছে বাংলায় বলো অ-য় অজগর আসছে তেড়ে.....
ওই তো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে সাদা থোকা থোকা ফুলে উপচে পড়া কামিনী গাছটার সামনে। লিকলিকে কচি ডানহাত আর মাথা ঝাঁকিয়ে পড়া ধরছে এইখানে ওর বন্ধু ওই কামিনীগাছটাকেই। মাঝে মাঝে একটা ঝিরঝিরে হাওয়া এসে দুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে কামিনী গাছটাকে। আর কেন জানিনা সেসময় আচমকাই হেসে উঠছে বাচ্চা ছেলেটা। মনে হয় ভাবছে যে ওর কথা শুনে বাধ্য ছাত্রের মতো মাথা নাড়াচ্ছে গাছটা।
গাছ যদিও এই বাড়িতে আরও বেশ কিছু আছে। ওই তো ভাঙ্গা পাঁচিলের একপাশেই আছে দুটো নারকোল গাছ। আর এ বাড়ির নড়বড়ে কাঠের দরজার বলতে গেলে গায়েই লাগানো আছে আতা গাছটা। উঠোনের একধারে আম আর পেয়ারা গাছও আছে। কিন্তু সব ছেড়ে এই বাচ্চাটার যেন অসময়ের খেলার সাথী হয়েছে এই কামিনী গাছটাই।
এই সময়েই আসে বাচ্চা মেয়েটা। একেবারে এই ছেলেটারই সমবয়সী। এসেই বায়না ধরে যে সেও খেলবে। ছেলেটার তাতে ভারী আপত্তি। খালি মাথা নাড়ে আর বলে ...
-- না না না , এখন আমি পড়া ধরবো। তুই এখন যা রুকি।
যায় না তবুও এই রুকি নামের মেয়েটা। যার পুরো নাম রুকসানা খাতুন। আসলে এ ছেলেটার জন্মের একমাসের মধ্যেই এর মায়ের হয়েছিল কলেরা। সে একেবারে যমে মানুষে টানাটানি। বাড়ির সবাই তখন হাসপাতাল ঘর করে বেড়াচ্ছে। ছেলেটার বাবা পড়েছিল মহা চিন্তায়। এই একমাসের একরত্তি ছেলেকে দেখবে কে সেসময় এটাও ছিল একটা বিশাল চিন্তার বিষয়। এই রুকসানার মা সাকিনা কাজ করতো তখন এ বাড়িতে। সে অবশ্য এখনো কাজ করে। কিন্তু সে সময় ওই সাকিনাও চার মাস আগে জন্ম দিয়েছে মেয়ে রুকসানার। ফলে সে সময় তারও এখানে কাজে আসাটা ছিল একেবারেই অনিয়মিত। কিন্তু সে সব উপেক্ষা করেই সাকিনা প্রস্তাব দিয়েছিল এই ছেলেটার বাবার কাছে। এবং কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়াই নিজের এক মাসের ছেলেকে ওই সাকিনার হাতে তুলে দিতে কোনো দ্বিধাবোধই করেননি তিনি।
তারপর নিজের চারমাসের মেয়ে রুকসানা আর ওই একমাসের ছেলেকে নিজের কাছে রেখেই মানুষ করেছিল সাকিনা। এমনকি নিয়মিত স্তন্যপানও করিয়েছে এই দুই ছেলে মেয়েকে। এ ছেলের মা হাসপাতাল থেকে ফেরার পর আরো প্রায় সাতমাস নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিল সাকিনা। সেই থেকেই রুকসানা যেন এ বাড়ির মেয়ের মতোই হয়ে গেছে।
এখন খেলার সঙ্গী না হতে পারে ভারী রাগ হয় রুকসানার। কিন্তু সুবিধা করতে না পেরে মুখ ভেংচেই চলে যায় আপাতত।
*****
রুনার সাথে আলাপ হয়েছিল কলেজের ওপরের দিকে ধাপে উঠে। আমি তখন লেখাপড়ার সাথেসাথে রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয়। রুনার বাড়ি ছিল আমাদের পাড়ার থেকে সাত আটটা পাড়া টপকে। তখন ও সবে পাস করেছে উচ্চমাধ্যমিক। সম্পূর্ণ ঘরোয়া একটা মেয়ে , যার সাথে আমার পরিচয় হওয়ার কোনো কথাই নয়। কিন্তু তবু পরিচয়টা হয়েছিল। আসলে রুনার বাবা সুবোধকাকু ছিলেন আমার বাবার স্কুলজীবনের বন্ধু। বাবারই যাতায়াতটা ছিল ওই বাড়িতে। বাবার সাথে মাও গিয়েছিল তিনচারবার। আমি প্রথম গেলাম এক বর্ষার সকালে কাকভেজা হয়ে ওদের বাড়িতে। তার ঠিক আগের দিন আমার বাবা এ বাড়িতে এসে ওনার বন্ধুর সাথে ঘন্টাদুয়েক আড্ডা মেরে বাড়ি ফেরার সময় বেভুলে ছাতাটা সেখানেই ফেলে বাড়ি চলে এসেছেন। পরদিন সকালেই সে ছাতার খোঁজ পড়াতে ওনার মনে পড়লো আগের দিনের কথা। এবং দ্বিরুক্তি না করে হুকুম হলো আমার প্রতি ওই ছাতা নিয়ে আসার জন্য। বেজার মুখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে খানিকটা যাওয়ার পরেই আচমকা এমন বৃষ্টি শুরু হলো যে কোথাও মাথা বাঁচাবার জন্য দাঁড়াবার আগেই গেলাম পুরো চুপসি মার্কা ভিজে। ওই ভেজা অবস্থাতেই সুবোধকাকুর বাড়ির দরজায় গিয়ে কড়া নাড়াতে দেখি একটা শ্যামলা রঙের মেয়ে দরজাটা খুললো। দিলাম আমার পরিচয় , আর বললাম সেথায় গমনের হেতু। ওমা , মেয়েটা দেখি আমায় ওই দরজাতে দাঁড় করিয়ে ভেতরে গেল আর একটু পরেই ছাতাটা এনে আমার হাতে দিয়ে , আমার মুখের ওপরেই দিল দরজা বন্ধ করে। ভাবলাম ভারী অভদ্র মেয়ে তো। পরে শুনেছিলাম যে সে মেয়ে নাকি তার মা কে বলেছিল "যে কেউ এসে বাবার নাম ধরে ডাকলেই তাকে ঘরে ঢুকতে দিতে হবে নাকি ?" সেই শুরু , সম্পর্কের শুরুটা এমন ট্যাড়াবেঁকা হলেও কিভাবে জানিনা আস্তে আস্তে ওই রুনার সাথেই পুরো জড়িয়ে গেলাম একেবারে। দেখাসাক্ষাৎ যে খুব বেশি হতো এমনটা নয় , কিন্তু বুঝতে পারছিলাম যে আমি ভালোবাসার জোরে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ছি ওর সাথে। এমনিতে ও ছিল খুবই ঘরোয়া আর শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে , শুধু একটা ব্যাপারেই কেন জানিনা আমার মনটা খচখচ করতো মাঝেমাঝেই। সুবোধকাকু যেমন ছিলেন প্রচন্ড গোঁড়া , সেই একই গোঁড়ামি যেন ঢুকে বসেছিল রুনার মনেও।
*****
-- এই জানিস তো , আমার না বিয়ের কথা চলছে।
-- বিয়ে ? তোর ? এই বয়সে ? ভ্যাট , আর গুল দেওয়ার জায়গা পাস না , তাই না ?
-- না রে , সত্যিই আমার বিয়ের কথা চলছে রে।
-- দ্যাখ রুকি , ফালতু কথা বলিস না। এই তো সব মাধ্যমিক দিলি। এখন আবার বিয়ে কিসের রে ? আর তাছাড়া চাচীরই বা আক্কেলটা কি শুনি। তোকে এই বয়সেই বিয়ে দেওয়াচ্ছে।
-- বাব্বা , এমন করে বলছিস যেন তোর অনেক বয়স হয়ে গেছে। ভুলে যাস না যে তুই আমার থেকে তিনমাসের ছোট কিন্তু।
-- কি আমার বড় রে। কিন্তু সত্যিই তুই বিয়ে করবি নাকি ?
-- তুই কি বোকা রে , আমি বিয়ে করার কে। বললাম না আমার বিয়ে দেওয়ার কথা হচ্ছে। জানিস তো ছেলের শুনেছি দুটো ম্যাটাডোর আছে। একটা নিজেই চালায় , আর একটা ড্রাইভার দিয়ে চালায়। নিজের গাড়িটা নিয়েই তো সপ্তাহে দুদিনমতো হাওড়ার হাটে আসে।
-- আসে মানে ? বাড়ি কোথায় রে সেই ছেলের ?
-- বাড়ি বর্ধমানে। আর জানিস তো আমার বিয়ের পরেই দাদারা মা কে নিয়ে আমাদের দেশের বাড়িতে চলে যাবে বলেছে।
-- তোদের দেশের বাড়ি মানে তো সেই সুন্দরবন রে ! ও তো অনেকদূর রে এখান থেকে। কিন্তু তাহলে তোর সাথে আর দেখা হবে না নাকি আমার ?
-- জানিনা রে ভাই , তবে যে আমার বর হবে সেই লোকটা শুনেছি খুব ভালো।
-- অ্যাই , তুই লোক বলছিস কেন রে রুকি ? তোর থেকে অনেক বড় নাকি রে ?
-- হ্যাঁ তো , শুনেছি নাকি তিরিশ বছর বয়স।
-- বলিস কি ! এ তো প্রায় তোর ডাবল বয়স রে !
*****
কিছুতেই বুঝে পাই না কেন এটা হয়। এমনিতে যে ঠাকুর দেবতার ওপর রুনার বিশেষ ভক্তি আছে তেমনটা নয় , কিন্তু এই ছোঁয়াছুঁয়ি বাতিকটা ওর বড্ড বেশি। সিরাজ কি আমিনিয়ায় মতো নামী মুসলিম রেস্তোরাঁয় খেতে ওর কোনো আপত্তি নেই , কিন্তু যখনই পার্ক সার্কাসের ওপর দিয়ে আসবে তখনই নাক সিঁটকে থাকবে। আবার কোনো মন্দিরে যাওয়ার কথা বললেই সবেগে মাথা নেড়ে আপত্তি জানাবে। বিয়ের পর পুরী ঘুরতে যাওয়ার সময় বাড়ির থেকে সবাই কত কি আনতে বলে দিলো। সে সব শুনে পুরীতে গিয়ে সাতটা দিন শুধু সমুদ্র দেখেই কাটিয়ে দিলাম আমরা। জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দেওয়ার বদলে রুনা ব্যস্ত হয়ে পড়লো মন্দিরের গায়ের পাথরে খোদাই করা ভাস্কর্যের কাজ নিয়ে। এমনকি বসে বসে শুনলো কয়েকজনের থেকে যে কিভাবে কাঠ কেটে রথ তৈরী হয়। কোনারক ঘুরতে গিয়েও ওই ভাস্কর্য দেখেই দিন কাটালো ও। তবে ওর সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ছিল উদয়গিরি খণ্ডগিরির গুহাগুলোকে নিয়ে। কিছুতেই বুঝে পাই না যে একটা মানুষ একই সাথে এইভাবে মুসলিম মহল্লা দেখে নাকও কুঁচকায় , আবার হিন্দু মন্দিরে ভক্তদের ভীড় দেখে পালায় কিভাবে।
*****
ফিরোজার বয়স এখন আঠারো হলে কি হবে , প্রথম যখন ওকে দেখেছিল ছেলেটা তখন ফিরোজার বয়স সবে সাত পার করে আটমাসে পড়েছে। বিয়ের দুবছরের মাথায় মা হয়েছিল রুকসানা। ফোনে সে খবর শুনেই বলে উঠেছিল ছেলেটা .....
-- এ বাবা , তুইও মা হয়ে গেলি রুকি ? কিন্তু তুই আসবি কবে ?
-- তুইও যেমন , এখন কি যাওয়া যায় নাকি। হ্যাঁ রে আমরা যে ঘরটায় থাকতাম সেটা এখন কেমন আছে রে ?
-- সে কি রে ! তুই জানিস না কিছু ? সে ঘর তো কবেই ভেঙে দিয়েছে তোদের সেই বাড়িওয়ালা। আর শুধু তোদেরই ঘর বলছি কেন , ওখানে যত ঘর ছিল সবই ভেঙে এখন সেখানে গাড়ি রাখার গ্যারাজ হয়েছে রে।
-- ইস ! সবাই কোথায় চলে গেছে কে জানে। শোন না , এখান থেকে যখন শ্বশুরবাড়িতে আবার ফিরবো , তখন ওকে বলবো যে তোদের বাড়ি হয়ে যেতে। একটু ঘুর হবে , কিন্তু দ্যাখ না , ওকে আর মেয়েকে নিয়েই তোদের বাড়িতে যাবো।
-- হ্যাঁ , আর এখানে এসে দুতিনদিন থেকে তারপর আবার না হয় যাস বর্ধমানে।
সেই কথামতই নিজের স্বামীর সাথে এসেছিল রুকসানা , কোলে আট মাসের মেয়ে ফিরোজাকে নিয়ে। ছিল সেই ছেলেটার বাড়িতে একদিন। সে বাড়িতে ওর কদর তখনও একইরকম ছিল। পরদিন ফিরে গিয়েছিল বর্ধমানে নিজের শ্বশুরবাড়িতে। যাওয়ার সময় ছেলেটা নিজের টিউশনির থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে কেনা একটা তাঁতের শাড়ি আর বাচ্চার জামা দিয়েছিল রুকসানার হাতে। পরদিন বর্ধমানে ফিরে যাওয়ার আগে রুকসানার স্বামী জামিল সেই ছেলেটার হাত ধরে বলেছিল..
-- কোনো কথা শুনবো না ভাই , এবার তোমায় আসতেই হবে আমাদের বাড়ি।
তখনই না হলেও বছর তিনেক পর গিয়েছিল ছেলেটা বর্ধমানে জামিলের বাড়িতে। না একা যায়নি , সেদিন সকালেই চলে এসেছিল রুকসানার দুই দাদা তাদের হিঙ্গলগঞ্জের বাড়ি থেকে। সেখান থেকেই তিনজনে মিলে গিয়েছিল বর্ধমান। ঠিক সাতদিন আগেই গাড়িতে করে হুগলীর এক বিখ্যাত মাজার দর্শন করে ফেরার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় চির শান্তির দেশে পাড়ি দিয়েছিল রুকসানা আর জামিল। কিভাবে জানি বেঁচে গিয়েছিল তাদের তিনবছরের ছোট্ট মেয়ে ফিরোজা। ঘটনার দিনই রুকসানার দাদারা খবর পেয়ে বর্ধমান পৌঁছেছিল। আর তখনই শুনেছিল যে বাড়ির সবাই বলাবলি করছে যে ওই একরত্তি তিনবছরের মেয়ে ফিরোজা নাকি ভীষণ অপয়া। সেইজন্যেই একসাথে ওর বাবা মা দুজনকেই খেয়েছে। শুধু তাই নয় , সে বাড়ি থেকে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে আর বলে দেওয়াও হয়েছিল যে তাদের কাছে ওই অপয়া মেয়ের কোনো জায়গা হবে না। তার পরদিন পোস্টমর্টেমের পরে দুজনকে কবর দেওয়ার কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে আসলেও , সাতদিনের মাথায় আবার গিয়েছিল রুকসানার দাদারা। উদ্দেশ্য ছিল যে তাদের ভাগ্নিকে সে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে নিজেদের বাড়িতে রাখা। সব শুনে তাদের সাথে এবার গিয়েছিল সেই ছেলেটাও। আসলে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল তার। খালি মনে হচ্ছিল যে আর কদিন আগে সেখানে যেতে পারলে হয়তো দেখা হতো জামিলের সাথে। দেখা হতো রুকসানার সাথে। ওর রুকির সাথে।
তবে সে বাড়ি থেকে ফিরোজাকে নিয়ে আসার সময় হঠাৎ করেই কানে এসেছিল ছেলেটার যে বাড়ির লোক বলাবলি করছে ......
-- বাব্বা , ও মেয়ের যে এইরকম ভাই আছে সেটা তো জানা ছিল না আগে।
*****
আজ বাড়িতে বাজারটা করে দিয়েই মনে হচ্ছে সরে পড়তে হবে। সকাল থেকেই রুনার মুখ ভার হয়ে আছে। গতকালই ফোন করেছিল ফিরোজা যে ও আজ আসবে এবাড়িতে। ওদের দেশের বাড়ি যেখানে সেখান থেকে হায়ার সেকেন্ডারি পাস করার পর ও সুযোগ পেয়েছে কলকাতার এক পলিটেকনিক কলেজে পড়ার। ওর বাড়ির সবাই যদিও চেয়েছিল যে পড়ালেখা করতে হলে ওখান থেকেই করতে , কিন্তু বলতে গেলে ফিরোজা নিজেই একপ্রকার জেদ করেই এই ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা করতে চেয়েছে। ওর দাদী , মানে সাকিনা চাচীও গত হয়েছেন অনেকদিন। তাই আজ ওর সাথে আসগরদা , মানে ওর মামারও আসার কথা কলকাতায়। ওই কলেজে কথাবার্তা শেষ করে ওরা আজ আসবে আমাদের বাড়ি। তারপর আবার ফিরে যাবে হিঙ্গলগঞ্জ। আবার সেই কলেজ শুরু হলে এখানে এসে কলেজের হোস্টেলে এসে থেকে পড়ালেখা চালাবে। সে চালাক , কিন্তু আজ এ বাড়িতে ওরা আসলে রুনা ওদেরকে কিভাবে নেবে কে জানে।
*****
ঠিক নটা নাগাদ বেরিয়েছিলাম বাড়ি থেকে। বাজার অবশ্য তার আগেই করা হয়ে গিয়েছিল। মনে মনে ভেবেই রেখেছিলাম যে আজকের ঝঞ্ঝাট এড়াবার সহজ উপায় হলো বাড়ি থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যাও , আর এমন সময় বাড়ি ফেরৎ আসো যখন ফিরোজা আর আসগরদা আমাদের বাড়ির থেকে বেরিয়ে ওদের বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সেইমতো আজ ঢুকেছি বাড়িতে রাত আটটা নাগাদ। এবং ঢুকতেই খেলাম চমক। ডাইনিং রুমে বসে আমার মায়ের সাথে পা ছড়িয়ে বসে গল্প করছে আসগরদা। পরনে রুনার একটা শাড়ি। সেটাকেই পরে আছে লুঙ্গির মতো করে। আমাকে দেখেই বলে উঠলো....
-- এই তো ভাই তুই এসে গেছিস। দ্যাখ না , বৌমা আজ যেতেই দিলো না। বলে কিনা "অত দূরের পথ আপনারা আজ আর যাবেন না। ও একবারে কাল দুপুরে খেয়েদেয়েই বের হবেন।"
আমার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলাম সেখানে একমনে বসে গল্প করছে রুনা আর ফিরোজা। আমাকে দেখেই একেবারে হইহই করে উঠলো ফিরোজা। আর ঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আমার কাছে এসে চাপা স্বরে বলে উঠলো রুনা...
-- বাপ মা মরা মেয়েটা এসেছে বাড়িতে , আর কোন আক্কেলে তুমি এখন এলে বলোতো।
আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই আবার বললো রুনা...
-- শোনো , কাল তোমার আর অফিসে গিয়ে কাজ নেই। কাল সকালে বাজারটা করে দিয়েই মিস্ত্রির খোঁজ করবে বুঝলে।
-- মিস্ত্রি ? কিসের ? মানে কি হয়েছে ?
-- হয়নি , হবে। আমাদের সিঁড়ির পাশের ঘরটাতে একটু কাজ করিয়ে ওখানে এখন চুনকাম করে নিলেই চলবে।
-- সেকি ! কেন ? খামোখা এখন ওর পিছনে টাকা নষ্ট করার দরকারটাই বা কি ?
এবার আমায় একেবারে চমকে দিয়েই বললো রুনা.....
-- চারদিন পরেই মেয়েটার ক্লাস শুরু হবে। বলি মামাবাড়ি থাকতে তখন কি ও হোস্টেলে থাকবে নাকি ? ওকে বলে দিয়েছি যে ওইঘরে থেকেই ও পড়ালেখা চালাবে।
-- কিন্তু তোমার কোনো অসুবিধা যদি হয়....
-- আমার ? আমার কেন অসুবিধা হবে ? সে তো হবে তোমার।
-- আমার ? আমার আবার কিসের অসুবিধা ?
মুচকি হেসে রুনা উত্তর দিলো.....
-- ও ঘর এই কদিনের মধ্যে ঠিক না হলে তুমি বাপু মায়ের সাথেই শুয়ো। আমি আর ফিরোজা এঘরেই শোবো।
-- সে কি ! মানে ....কেন .....
-- ওসব বুঝিনা। তোমরা পুরুষ জাতটাই পুরো ফাঁকিবাজ। যা বললাম , তাই করবে বুঝলে।
আর অফিসের জামা কাপড় ছাড়ার জন্য বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে শুধু ভাবতে থাকলাম আমি......
"আমার মা , সাকিনা চাচী , রুনা , মায়েদের জাত বুঝি এইরকমই হয়"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন