মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় - মায়াজম

Breaking

২২ অক্টো, ২০২০

মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

                                     অসবর্ণ





_অ দেবযানীবৌদি ! বৌদি গো ! আমার কোনো ক্ষতি হবে না তো গো?

_বালাই ষাট ! গজ গজ কত্তে কত্তে কালোজিরে দিয়ে চা করা আর বাসন তোবড়ানো ছাড়া তো তেমন মন্দ কাজ তুমি করোনি কখনো!

_না... আসলে তোমার বাড়ির কাজ সেরে বেরিয়ে সামনের বিল্ডিংয়ের দিকে গেলেই একটা কাক সমানে আমার খোঁপায় ঠুকরে দেয়...চাঁপা গাছে বাসা করেছে...মনটা বড়ো কু গাইছে জানো !
_কু না কুহু কী গাইছে তোমার মন ? যাগ্গে...কাল থেকে তুমি বরং বিনুনি করে আসবে আর ঐ মোটা গার্ডারটা মোট্টে বাঁধবে না...
পরদিন থেকে কিন্তু অক্ষত থাকলো মালতীর বিনোদবেণী...বরং বেণীর গোড়ায় একটা চাঁপাফুল গুঁজে দিতে এয়েছিলো পুরুষ কাকটা...দেবযানীর সঙ্গে চোখাচুখি হওয়ায় অপ্রস্তুত হয়ে উড়ে গেলো বেণীমাধব...তাছাড়া বাসায় তার আসন্নপ্রসবা বাসন্তীবধূ একা আর কানের গোড়ায় চাঁপাপাতার আড়ালে একটা খিল্লিকোকিলের নখড়া ভেসে আসছে । কাঞ্চনফুলের মৃদু সুগন্ধ ফাগুনের বৈঠা বেয়ে অপরাহ্নের ঠোঁটে তরী বাঁধে।
দেবযানী কথা বলছে এক প্রতিবেশিনীর সঙ্গে। রোদ ছিলো বলে মাথায় ছাতা...সমানে ছাতার উপর ঠুকরে গেলো আরেকটা ছোকরা কাক

_কী ব্যাপার গো দিদি ?

প্রতিবেশিনী বললেন
_তুই ওর রাস্তাটা ব্লক করেছিস, সরতে বলছে।ওর জল খাওয়ার ভাঁড় আর লেড়ো বিস্কুট খাওয়ার সময় হয়েছে।
ব্যালকনির একটি নির্দিষ্ট অংশ বায়সকিশোরের ডাইনিং। সেখানে ও সোজাসুজি উড়ে এসে বসবে, কিন্তু দেবযানীর ছাতা সে পথে বাধা। কাজেই পোতিবাদী ঠোক্কর...
এমনিতেই দেবযানীর মহেন্দ্র দড় আমলের সেই কালোছাতায় ফুটো বেশী কাপড় কম...বৃষ্টি ছাতার অন্দর আর বাহিরে কোথায় বেশী ঝরছে বোঝা যায় না। তার উপর ডান্ডাখানা সংসদীয় মিলিজুলি নড়বড়াতন্ত্রের মতো। বৈদেশিক ঝড়ে লটর পটর লটর পটর...

গেলো সোমবার কবির খাতায় রিমঝিম, বুঁচির হারমোনিয়ামে কাজরী, ইয়োসোনোফিল গোঁফে ফ্যাঁচফ্যাঁচে রুমাল , অফিসযাত্রীর কার্ড পান্চিংএ হাফ সি.এল আর অবসরপ্রাপ্ত দক্ষ বেকার তৎসহ তাঁর গিন্নীর হাঁড়িতে ভুনিখিচুড়ির খুশি...

হড়পা-হাওয়ার উল্টোস্রোতে রডডেনড্রনগুচ্ছ চেপ্টে রইলো শেষের কবিতায় । উল্টে গিয়ে পাল্টে গেলো দেবযানীর প্রাগৈতিহাসিক ছত্র। তার ছ্যাঁদা এতো বেশী যে ছাঁকনিও বলতে পারেন আপনারা...সাঁইইই করে উড়ে গেলো চাঁদিপুরের মিসাইল...গোঁত্তা খেলো রেল্লাইনে...তামাম পূর্ব রেলওয়ে হাহাহিহি...পাবলিক এড্রেস সিস্টেমে যাত্রীগণ ধিয়ান সে শুনিয়ে...ডাউনলাইনে ছেঁড়া ছাতা...সাবধান...থ্রু ট্রেন ঝমঝম...কানে রেল্লাইন গুঁজে কেউ মোবাইল পারাপার করবেন্না !

দেবযানীর হাতে বেওকুব ছাতার রড। জরাসন্ধর বাকী আদ্দেকটা আহত চিলের মতো থেবড়ে পড়ে আছে ডাউন লাইনে। বনদফতরের লোককে কোনো উজবুকানন্দ পরিবেশকর্মী বারো তলার ছাদ থেকে দেখে খবর দিয়েছিলো। বনবাবু আর বনবিবির নুতন চাকরি। বড়োবাজারমুলুকে ওদের চারপুরুষের বাস...বৃহৎ চতুষ্পদী প্রাণী বলতে শুধু কলকাতা-পুরী ভলভো বাস দেখেছে , এছাড়া মিলেনিয়াম পার্কের রয়াল বেঙ্গল গিরগিটি...ব্যাস আর কোনো কোনো জংলী প্রাণী দ্যাখে নি। তারা এসে ডানাভাঙা চিলকে ওঠাতে গিয়ে দ্যাখে তার সারা গায়ে স্টিলের সরু সরু শিক ঢোকানো...
_মাই গড এত্ত নিষ্টুরও কেউ হয় ! ইস ইস ইস !!

দেবযানী মাজাভাঙা জরাসন্ধকে বনবাবুদের হাত্থেকে কেড়ে নিয়ে সারাতে দিয়ে আসে আর পরদিন ফেরৎ পায়।

আনমনে ধানভানা ভোলাগান ছেড়ে এবার ছাতা বন্ধ করে দেবযানী। বায়সকিশোর রাস্তা পায়।জলের মধ্যে লেড়ো বিস্কুট চুবিয়ে এমন চুকুর চুকুর যে মিছ্লিলালের চায়ের ঠেকস্যাঙাতও হার মানবে।

দেবযানী জাতিস্মর। গেলোজন্মে সে ছিলো এক বুড়ির পোষা বাঁদর। তৈলাক্ত বংশদন্ড ঘাড়ে সেই বাঁদরটা জানতে চায়
_এইখানেই পুঁতি তাইলে ? ঘন্টায় ষাটবার উপরনামো...হাঁফিয়ে গেলে নেবু শরবত, ঠিকাচে ?

দেবযানীর মনে একটা কৌতুহল জাগে...এই বায়সকিশোরের বাপ্কে ঠেকের চা কিম্বা চুল্লু খাইয়ে এগদিন দেখতে হবে কী করেন তিনি...ফচকে শাখামৃগ ডিউটি পেয়ে গ্যাছে ভিস্কির বোতল খোঁজার। সে পিছনে হাদ্দিয়ে ভাঁটিখানার তরলিত গড়গড়ানন্দসমাবেশের দিকে তাকিয়ে থাকে...সুখে থাকতে ভূতের কিলের রেশন দোকানে লাইন দেখতে তার হেভ্ভি ফুত্তি...

দিবাভাগে কেন্নো অবতার...ঠেকফেরৎ প্লাস্টিক পাউচের চুল্লুরাত্রি বৌয়ের কাছে ঘণীভূত শের আফগান...বোতল স্যাঙাতের আড়াইশো মিলিজুলিলিটার বীররস টলমলে পায়ে সুগম্ভীর আত্মশ্লাঘা প্রকট করে...

-জানিস আমি ক্যা ?

খ্যানখেনে মালতীলতা উচ্চকিতা ফণা ফোঁস ফোঁস যাকে গতজন্মের অশেষ কর্মফলে আমি লাভ করেছি যে পরম নিষ্ঠাভরে আমার বোন চায়নার ছয়টি কাপ দু হপ্তায় ভেঙেছে চিল্লে ওঠে
_মুড়ো ঝ্যাঁটা !!

শের আফগান থেকে একেবারে মুড়ো ঝ্যাঁটায় ডিমোশন !! অমন সোমসারে থাকার চাইতে হুলোর সঙ্গে টানাবাসে হাওড়া থেকে আন্দামান চলে গেলেই ভালো হতো! চরম মানসিক আঘাত সইতে না পেরে টইটম্বুরানন্দ খোলা বারান্দায় ভোঁস ভোঁস...আর মশার কামড়।

দেবযানী গালে হাদ্দিয়ে ভাবতে বসে...
গার্জেন কাক্কে এগদিন শ্রীবাস লিগাল কিম্বা সিদ্ধির শরবত খাইয়ে দেখলে কেমন হয়?
ও কি কুহুকুহু কোয়েলিয়া ব'লে নিজের পোয়াতি বৌকে গান শোনাবে ? নাকি মাতৃভাষায় তেড়ে যাবে কাকের বাসায় ডিম পেড়ে যাওয়া ঘোড়েল কোয়েলকূটবুদ্ধিকে ?

এর মধ্যে বেশকিছুদিন কেটে গেছে...ডিম ফোটা দ্বিজরা চোখ বুজে হাঁ করে বাপ্ মায়ের এনে দেওয়া থ্রী কোর্স মিল্ খায়...প্রথমে রোঁয়া রোঁয়া দেয়ালা, পরে পালক পালক ব্যক্তিস্বাধীনতা... তারপর একদিন বুলি ফোটে...একদল কঃ কঃ আরেকজন কুহু... ব্যাস কাকিমা কাকু কুহুখুকীকে ঠুকরে নিচে ফেলে দেয়...কিন্তু সে তদ্দিনে বসন্তবাহারের উড়াল ডানা...যেতে যেতে

_দেবদাআআআ দেবদাআআআ গোওও...পারোকে পারলে ভুলে যেয়ো যেনওও... তোমারআমার সম্পর্ক কাকু কাকিমা কখনো মেনে নেবেন্না গোওও !!

মাথায় বেড়েছে বায়সপুত্র...
বয়ঃসন্ধিক্ষণের কিশোরকাক...নরমপাকের শাসনে বাপ্ আর মা তাকে সবসময় চোখে চোখে রাখে। জলে ভেজানো লেড়ো বিস্কুট একবার মাম্মা খাইয়ে দেয় তো আরেগবার ড্যাডি। আর পাঁচিলের উপর থেকে দেবযানীকে বলে,
__নিজের হাতে কিচ্ছুটি দাঁতে কাটতে চায় না পাপাইটা...ইঁদুরের ন্যাজ শুদ্ধ খাইয়ে দিতে হয় !

কিন্তুক জৈবনের ধম্ম যাবে কোথা ! চ্যাংড়াছোঁড়া দু কলম উড়তে শিখেই সেই কোকিলানীর পরেমে গিরে গ্যালো...দিবস নিশি কানে বাজে " পারোকে পারলে ভুলে যেয়োওও দেবদাআআ...তোমার মা আমাকে ঠুকরে ফেলে দিয়েছে... ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ !! "

বাপ্ মা ত্যাজ্যপুত্তুর করে দেবে বলছে । এই অসবর্ণ পিরীতি কোনোমতেই মেনে নেবেনা বায়স সমাজ।গাঁওবুড়া বলেছে বিয়ে হলে ধোপা নাপিত রেশন করোনা ভ্যাকসিন সব বন্ধ কদ্দেবে।

_ও মেইয়ে আমাদের বংশের বৌ হওয়ার উপযুক্ত নয়... বাপ্ ভাইরা মুজরো ক'রে বেড়ায় আগ্রা আতারৌলী,পাতিয়ালা, মাইহারে। নিজেদের ঘরবাড়ির ঠিক নাই। আমাদের খোকার দালানকোঠায় থাকার ওব্যেস...জামাইষষ্ঠীর নেমন্তন্নে কোথা গিয়ে উটবে ?

শাওনজলধরনিন্দিত ডানাদুটি ঝাপ্টে ওঠে নবযৌবনসম্পন্ন বায়সকিশোর
_ইস্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে আম্রা বে করবো...দুই নম্বর সেকশনে মন্তরের ডেফিনেশন আর মন্তর দুটোই দেবা আছে...তোমার কুহু আমার হোক আমার কঃ কঃ তোমার। নরদেবারি মাঙ্গলিক রাশিনাম ছলনাময়ী আর ভৌমদোষ...হরধনুরাম, ঝান্ডাধারীবাম কিম্বা মাইথন ড্যামে জল ছাড়লে কলকাতায় বৃষ্টি হয় যে কোনো যত মত তত পথ মত , ধর্ম অর্থ অনর্থ মোক্ষের পাত্র পাত্রীকে কোষ্ঠীবিচার ছাড়াই এই নাও তোমার বৌমা...দুভরি বাইশ ক্যারেটে মুখানি দ্যাখো।

ইঁচড়েপাকার কথা শুনে কাকিমা হাউইয়ের বেগে ছেলেকে তাড়া কল্লে , ঠোঁটে মেজোজায়ের বাসার মুড়োঝাঁটাগাছি...মেজোজা চিল্লে ওঠে রাগে...তার বাসার ব্যালকনিরর খুঁটি বরজায়ের ঠোঁটে...যাত্রাদলের নায়কের গোঁফের আঠার একদিক খুলে গিয়ে ঝুললে যেমন দ্যাখায় ঠিক তেমনি লাগছে মেজকাকীর বাসার ব্যালকনি...
_দূর হ আঁটকুড়ির বিটি ! ফের যদি আমার দুয়োরে ঘুরঘুর কত্তে দেকিচি তোর ঠোঁট আমি খোঁড়া কোদ্দবো।

জোরালো সওয়াল করলেন পাপাইয়ের বড়োজাঁইম্বু
__কেননা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিয়ে হলে আই কিউ কমে যায়, জিনের রোগ হয়...সাম্রাজ্য আর সম্পত্তি হাতছাড়া যাতে না হয় সেজন্য কাজিনদের মধ্যে বিয়ে হতো...গ্লাডিয়েটর সিনেমার রোমান সম্রাট আর মিশরের ফ্যারাওরা সব নিকেশ হয়ে গেলো... ওঙ্গগোরাঙ্গাওয়ের সিংহরা ধুঁকছে...কিন্তু জিন ভারী একবগ্গা...সে জমি জমা গয়নাগাটি সিংহাসন কিচ্ছু বোঝে না...তাই বলছি কি... কুহু খুকীর সঙ্গেই আপনি বিয়ে দিন শালাবাবুর। বায়স সমাজের আর্কিটেকচার আর কোয়েলসমাজের বসন্তবাহার সঙ্গীতসুধা...দুইএর মিলনে মাধ্যমিকে রচনা আসুক বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য বাক্য মানিক্য ।

চন্ডীমণ্ডপের সিনিয়র গম্ভীর থেলোহুঁকো...ভুড়ুক ভুড়ুক ভুস ভুস...
_ইহা অনুলোম বিবাহ নাকি প্রতিলোম ?বাবাজীবন কী বল গো ?

_আজ্ঞে জ্যাঠামশাই...যদি ঐহিক জীবনের কথা বলেন তাহলে আমার শ্বাশুড়িমায়ের নামে এই অমলতাসের স্বরচিত ফ্ল্যাটবাড়ি...অক্লান্ত পরিশ্রম ক'রে ভদ্রাসন সাজিয়েছেন...রায়দের কাপড়মেলার ক্লীপ, সুনীলবাবুরদাঁতের পাটি, পটাইয়ের ভিস্কির ছিপি, মন্টুর গ্লিসারিন সাবান, বেসিন ঘষার ব্রাশ কী না আছে আমার শ্বশুরবাড়িতে ! কিন্তু যদি সঙ্গীতচুয়াচন্দনে ঈশ্বরা ধনার কথা বলেন তাহলে কুহুখুকীরা বংশগৌরবে আমাদের থেকে এগিয়ে। কাজেই অনুলোম প্রতিলোম খুবই রিলেটিভ টার্ম।

কাকাদাদু হিয়ারিং এড খুঁজতে খুঁজতে
_বহুদিনপর আজাম্রা চুহা চাউমিন খাবোওও !!

_আমার দিদমা এখনো বেঁচে আছেন...কোকিল নাতবৌ তিনি কিছুতেই মেনে নেবেন্না। মোটকথা আমি এই বিয়েতে নাই...

বলতে বলতে উড়ে গেলো পাপাইয়ের মা...আর রাগে উত্তেজনায় হাউসিংয়ের রায়দার মাথায় পটি করে দিলো। রায়দার নটা পাঁচের লোকাল মুলতুবি...গৃহমুখী মস্তক ফের শ্যাম্পুফেননিভ...কপাল গড়িয়ে নাক গড়িয়ে গোঁফ গড়িয়ে...ওয়াক ওয়াক থু থু...মিনু একটা গামছা দাও তো ?

এক পণ কাঠ আর পাঁচকাহন খড় পোড়ানোর পর পাপাইয়ের তীক্ষ্ণচঞ্চু মাকে ম্যানেজ করা গেছে...কিন্তু কেঁদে কেঁদে তাঁর চক্ষু লাল...নির্ঘুম বাসিমুখে একেওকে ঠুকরে দেন আর গজগজ করেন ,
_অমন বেটা গভ্ভে ধরার থেকে বাঁজা হওয়া ভালো...বংশের মুকে চুনকালি দিয়ে দিলে গা... ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ !

বড়োমেয়ের ঘরের নাতনী জীবনশৈলী পড়ছে, ঠোঁটে পেন কামড়ে শুধোয়,
_দিদুন তুমি কি মাম্মেল ? মামা সিজারিয়ান বেবি না নরম্যাল গো !

যাইহোক তিরিশদিন আগে বড়োজাঁইম্বুকে নিয়ে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের চেম্বারে নোটিশ দিয়ে গেছে পাপাইখোকা দাঁড়কাপ্রসাদ। আজ চল্লিশতম দিন...সঙ্গে আছে হাঁড়িচাচাপ্রসাদ চুণীচক্ষু আর শামুকখোল। সাক্ষ্য দেবে। বড়োজাঁইম্বু তো আছেনই। কুহু খুকীর সাথে এসছে ঘুঘুবৌঠান , দোয়েল আর শ্যামা।

কুহুর মা ঘোড়েলমহিলা...মওকা বুঝে হাত কচলে বড়োজাঁইম্বুর কাছে কথাটি পেড়েই দিলে...
__ইয়ে... বলচি কী বাওয়াজীবন ( হিন্দুস্তানী ক্ল্যাসিক্যাল গানের এফেক্ট ওর উচ্চারণে)...বর কনের ফুলশয্যে কোথা হবে ? আর বাবা একটি অনুরোধ...আমার মেইয়ের গানের রেওয়াজটা যেন বন্দ না হয়।

এগ্গলা ঘোমটায় বধূবরণের ডালা ছেড়ে তেড়ে এলেন বেহান...
_ক্যানে লো আঁটকুড়ির বিটি ? মুজরো করার শখ তো নিজের বাসায় গিয়ে কর না লো ? ওওওহ্ তোরা তো আবার উড়নচন্ডী লক্ষ্মীছাড়ি...ফাগুন চোতে নীপবনে মধুর মধুর আর বিয়োনোর বেলা আমার ফ্যালাট ? মেইয়েজামাইকে একটা ফ্যালাট কিনে দিতি পারবিনি ?

যাগ্গে...ছাদনাতলা পয্যন্ত গড়িয়েছে যখন ফুলশয্যেও হবে... ম্যারেজটা তো কনজামেটেড হোক।

বড়োজাঁইম্বু শেলেজকে রায়বাবুর মোটরবাইকের আধখানা সিট্ যোতুক দিয়েছে...কোণে লেখা " নব দম্পতিকে আশীর্বাদ সহ ইতি বায়সপ্রতাপ কুচকুচে "।

কুহুখুকির ফুলশয্যে ওখেনেই হবে।

_রেক্সিনটা একটু খোবলানো কিন্তু খুব নরম...দেড়শো ঠোঁট তুলো আর ফটিকদাদুর নারকেল ছোবড়া চারশো আঠাশ ঠোঁট...তোমার বড়ো ননদ নিজের হাতে এটা বানিয়ে দিয়েছেন। নাও ধরো।

চমৎকার ফুলশয্যা হয়েছিলো। আড়ি পেতেছিলেন কুহুখুকির বড়ো জা, কাকাতো ননদ...

কানে আসে নববধূর মিঠাস চেতাবনি...
_বেশী তাপে কিন্তু চুমুর ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায় !!

উদিকে কুহুখুকির শাশুমা ফোঁৎ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন আপন জননীর কাছে,
_পাপাই আমার পর হয়ে গ্যালো মাগো ! সারাদিনে এগবার খোঁজ নিলে না নান্নীমুখ ক'রে মায়ের প্রেসার ফল করেছে কিনা!

একফোঁটাও জল মেশানো নেই...গাঢ় মাতৃস্নেহপদার্থ ভাসছে উপরে...মন্দ মন্দ দখিনা পবন বইছিলো...দেবযানী দেখলো খাঁটি অভিমানের উপরে পুরু সর পড়ে গেছে ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র